মোহাম্মদ আসাদ আলী
ইতিহাসের সূচনা থেকেই মানবসমাজ পরিচালিত হয়ে আসছে ধর্মের রীতি-নীতি, আইন-কানুন ও প্রথা-পর¤পরা দিয়ে। আজ থেকে পাঁচশ’ বছর আগে ইউরোপে রাষ্ট্রপরিচালনায় খ্রিষ্টধর্মের ব্যর্থতা থেকে জন্ম নেয় ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ। ধর্মনিরপেক্ষতা চালু হবার পর থেকেই পশ্চিমা সভ্যতা চেষ্টা চালিয়ে এসেছে মানবজীবন থেকে স¤পূর্ণভাবে ধর্মকে ঝেটিয়ে বিদায় করতে। কিন্তু তাতে সফলতা আসেনি। অদূর ভবিষ্যতে সফল হবার কোনো সম্ভাবনাও নাই দেখে ধর্মকে কোনোভাবে ব্যক্তিজীবনে টিকে থাকার অধিকার দেওয়া হয়েছে। আর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক জীবনে চালু করা হয়েছে ধর্মহীন সিস্টেম।
ধর্মহীনতা জন্ম দেয় মানবিক ভারসাম্যহীনতা। দেহ-আত্মার ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মানুষ পরিণত হয় অস্বাভাবিক বস্তুবাদী ও ভোগবাদী প্রাণিবিশেষে। ধর্মহীন ভোগবাদী জীবনব্যবস্থাগুলো যে মানুষকে শান্তি দিতে পারেনি, স¤পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছে- তা আজ প্রমাণিত। আজকের একবিংশ শতাব্দীতে এসে মানুষ পুনরায় ছুটছে ধর্মের দিকে। ধর্মের সোনালী ইতিহাস তাদের প্রেরণা যোগাচ্ছে। আর ধর্মহীনতা থেকে সৃষ্টি হওয়া হানাহানি-অনৈক্য-রক্তপাত-অশান্তি তাদেরকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। কিন্তু হায়! ধর্মের ছত্রছায়ায় আশ্রয় নিতে যাওয়া এই মানুষগুলোকে শান্তি দিতে ব্যর্থ হচ্ছে প্রচলিত ধর্মগুলোও। ধর্মকে ব্যক্তিজীবনের ক্ষুদ্র পরিসরে ঢুকিয়ে দেবার পর থেকে এক শ্রেণির স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী ধর্মকে কেবল ব্যক্তি ও দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করেছে। সাধারণ মানুষের ধর্মবিশ্বাসকে ভুল খাতে প্রবাহিত করে বিভিন্নভাবে স্বার্থ হাসিল করেছে। তারা সাধারণ মানুষের মধ্যে ধর্মোন্মাদনা সৃষ্টি করে বিরাট ধ্বংসযজ্ঞ ঘটাতে সক্ষম, সরকারের প্রতি চাপ সৃষ্টি করে দাবি দাওয়া আদায়ে সক্ষম হলেও, ধর্মের সহজ-সরল সনাতন রূপ জানা না থাকায় মানুষকে শান্তির সন্ধান দিতে সক্ষম নয়।
ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদে উদ্বুদ্ধ রাষ্ট্র চায় না পুনরায় ধর্মের উত্থান ঘটুক। কিন্তু সাধারণ জনগণ ধর্ম চায়। মানুষের এই ব্যাকুলতাকে উপেক্ষা করেও থাকা যাচ্ছে না। কেননা কিছুদিন পরপরই মানুষের ধর্মীয় সেন্টিমেন্টকে উদ্বুদ্ধ করে তাদেরকে রাষ্ট্রের মুখোমুখী দাঁড় করিয়ে দেওয়া হচ্ছে। রাষ্ট্রশক্তি প্রয়োগ করে সেটাকে দমন করতে গেলেও নতুন বিপত্তি। রাষ্ট্রকে বলা হচ্ছে ধর্মদ্রোহী। ফলে রাষ্ট্রের সামনে উভয়সঙ্কট! যারা ধর্মের কর্তৃপক্ষ সেজে আছে, মানুষের ধর্মীয় সেন্টিমেন্টকে সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করছে তাদের দাবি মানতে গেলে রাষ্ট্রকে পিছিয়ে যেতে হবে শত শত বছর। কেননা ধর্ম স¤পর্কে তাদের যে সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি তা দিয়ে বর্তমানের আধুনিক রাষ্ট্র পরিচালনা করা সম্ভব নয়। আর তাদের দাবিকে অস্বীকার করার অর্থ ধর্মপ্রাণ জনগণের সেন্টিমেন্টকে ব্যবহার করে ধর্মোন্মাদনা সৃষ্টির নতুন নতুন সুযোগ করে দেওয়া।
এমতাবস্থায়, রাষ্ট্রের বুকে জগদ্দল পাথরের মত চেপে থাকা এই সমস্যার সঠিক সমাধান কী? আমরা মনে করি সমাধান হচ্ছে, ধর্মের প্রকৃত রূপরেখা মানুষের সামনে উপস্থাপন করতে হবে। ধর্ম হচ্ছে সত্যের আধার, আর সত্য স্থান-কাল-পাত্রের ঊর্ধ্বে। যে ধর্ম অতীতে শত শত বছর মানুষকে শান্তিময় জীবন উপহার দিতে পেরেছে সেই ধর্ম আজও শান্তি দেওয়ার সক্ষমতা রাখে। ধর্মের সেই অনাবিল রূপটাকে যদি মানুষ উপলব্ধি করতে পারে তাহলে ধর্ম সহযোগেই কল্যাণ রাষ্ট্র গঠন করা সম্ভব। তাতে রাষ্ট্রও উপকৃত হবে, ধর্মপ্রাণ মানুষেরও আত্মার চাহিদা পূর্ণ হবে। রাষ্ট্র ও ধর্মের দ্বন্দ্ব ঘুঁচে যাবে। ধর্মের সেই প্রকৃত রূপরেখাই তুলে ধরছে হেযবুত তওহীদ।