কামরুল আহমেদ
তথাকথিত নারীবাদী ও প্রগতিশীল একটি শ্রেণি পশ্চিমাদের ভাবধারায় প্রভাবিত হয়ে কর্মক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের সমতার দাবি তোলেন। বাস্তবে তারা নারী ও পুরুষের প্রকৃতিগত বৈশিষ্ট্যকে উপলব্ধি করেন না বলেই একে নারীর অধিকার বলে ভেবে থাকেন। তারা বুঝতে পারেন না যে এটা নারীর অধিকার নয়, বরং অধিকার হারানোর ফল। আমাদের আধুনিক সমাজকাঠামো নারীর সেই স্বাভাবিক অধিকারকে হরণ করে নিয়েছে যার ফলে তাদেরকে এই কঠোর পরিশ্রমের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতে হচ্ছে।
কেউ আপত্তি তুলতে পারেন যে, “পেশাগত জীবনের এই অঙ্গনে কেন সমতা চাই না। দরিদ্র নারী উপোসে দিন কাটাক সেটা নিশ্চয়ই কারো কাম্য হওয়া উচিত নয়। কাজ করার অধিকার সবার আছে। যার যেমন যোগ্যতা সে সেই মোতাবেক কাজ করবে। ভিক্ষে করে খাওয়ার চেয়ে মাটি কেটে খাওয়া ভালো।”
তাদের প্রত্যুত্তরে বলব, আমরা উত্তরাধুনিক হতে গিয়ে, নারী পুরুষ সমান এই ধারণা প্রচার করতে গিয়ে প্রকৃতিকে অস্বীকার করছি। অনেক ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ সমান তো বটেই, অপরাধের শাস্তিতে নারী পুরুষ সমান, ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে নারী পুরুষ সমান। কিন্তু দৈহিক শক্তিতে, উচ্চতায়, মানসিক স্থৈর্য্য, যে চিন্তার গভীরতায়, রুচি-অভিরুচিতে নারী পরুষ কি প্রকৃতিগতভাবে সমান? অবশ্যই নয়। যারা এ সত্যকে মানতে চান না, তাদের সত্যের প্রতি কোনো শ্রদ্ধ নেই। নারী পুরুষ সৃষ্টিগতভাবে, প্রকৃতিগতভাবে ভিন্নতাকে ধারণ করে। সেই ভিন্নতাকে অস্বীকার করা প্রগতি নয়, অন্ধত্ব। নারীকে আল্লাহ এতটাই সৌন্দর্য দান করেছেন যে নারীর চেয়ে সুন্দর আর কিছু আছে কিনা এমন প্রশ্নও বরাবর ওঠে। পক্ষান্তরে আল্লাহ পুরুষকে দিয়েছেন চারিত্রিক ও শারীরিক কঠোরতা। এই কঠোরতার অভাব কারো মধ্যে পরিদৃষ্ট হলে মানুষ তাকে মেয়েলী বলে ধিক্কার দেয়। নারী-পুরুষের এই বৈশিষ্ট্যই তাদের মর্যাদা।
একইভাবে প্রকৃতি নারী ও পুরুষকে ভিন্ন দায়িত্ব অর্পণ করেছে যেভাবে একটি কম্পিউটারের সাথে যুক্ত মনিটর আর প্রিন্টার ভিন্ন দায়িত্ব পালন করে। তাদের মতোই নারী ও পুরুষ একে অপরের সহযোগী। আমরা কি মনিটরের কাছ থেকে প্রিন্টারের কাজ আদায় করতে চাই? আমরা কি তাদেরকে একে অপরের সমান বা প্রতিদ্ব›দ্বী বলে দাঁড় করাতে চাই? তারা উভয়ে মিলে একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যকে পূরণ করবে এটাই আমাদের কাম্য। দুটোই কম্পিউটারের আউটপুট ডিভাইস, একটি দেখাবে সফট কপি, আরেকটি দেবে হার্ড কপি।
কিন্তু যখন সমাজ তার ভারসাম্য হারায় তখন নারীকে পুরুষের কাজ করতে হয় মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য। আমরা চাই সমাজের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে। পশ্চিমা সমাজ পরিবার প্রথাকে নানাভাবে দুর্বল করে দিয়েছে, তারা বিয়ে নামক বন্ধনকেই অস্বীকার করতে চাচ্ছে। তাদের জীবনযাত্রার ব্যয় অত্যাধিক বলে কেউ কারো দায়িত্ব নেবে না, শুধু পশুর মতো একে অপরের সঙ্গে বসবাস করে জৈবিক চাহিদা পূরণ করে যাবে। যে কোনো মুহূর্ত থেকে তারা আবার পৃথক হয়ে যায়। যখন তাদের বয়স বেড়ে যায় তখনও তাদেরকে রোজগার করতেই হয়, নারী পুরুষ উভয়কেই। নারী দ্রুত বার্ধক্যে পৌঁছে শারীরিক কারণে কিন্তু কিছু করার থাকে না। তাদের সন্তানরা বড় হয় এলোমেলো জীবনের মধ্য দিয়ে। বুড়ো হলে তারা ওল্ড হোমে যায়। পশ্চিমা আধুনিকতার দৈন্য না বোঝার দরুন এই করুণ জীবনচর্চা আমাদের সমাজেও বিস্তার লাভ করছে। এই সব বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের নিয়ে ফিচার হয়, করুণ মিউজিক দিয়ে ডকুমেন্টারি তৈরি করা হয়। আমরা টিভিতে সেগুলো দেখি আর আমাদের চোখের পাতা সিক্ত হয়ে ওঠে। তবু সেই পশ্চিমাদের পূজা থেকে আমরা বিরত হই না। আমার কথা হচ্ছে, গোড়ার ভুলটা সংশোধন করা হোক, শাখা প্রশাখা এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে।
ইসলাম নারীকে সমাজের সর্বাঙ্গনে কাজ করার অনুমতি দেয়। যখন পরিবারে পুরুষ সদস্য থাকে না তখন নারীকে জীবিকার প্রয়োজনে বাইরের কাজ করা লাগে। শোয়েব (আ.) এর মেয়েরা পিতা বৃদ্ধ হওয়ার কারণে রাখালের কাজ করতেন। কিন্তু এটা নারীর জাতীয় দায়িত্ব নয়, তাদের মূল কাজ সন্তান ধারণ ও পরবর্তী প্রজন্মকে কাজের লোকে হাতে ছেড়ে না দিয়ে নিজের আদর স্নেহ ভালোবাসা দিয়ে মানুষ করা। জাতির প্রতি এর চেয়ে বড় অবদান আর কিছু নেই। নারীর সৌন্দর্য, কমনীয়তা প্রাকৃতিক সম্পদ। যে সমাজে নারী কঠোর কায়িক শ্রমে নিয়োজিত হয়ে নিজের সেই বৈশিষ্ট্য অর্থাৎ কোমলতা, রূপ-মাধুর্য, সুকণ্ঠকে বিনষ্ট করতে বাধ্য হয় সেই সমাজব্যবস্থার পরিবর্তন করা আগে প্রয়োজন। নারীর কাজের ক্ষেত্র অবশ্যই তার বৈশিষ্ট্যকে সংরক্ষণ করার উপযোগী হতে হবে- এটাই সকলের কাম্য হওয়া উচিত।