-এনামুল হক বাপ্পা
হেযবুত তওহীদের ময়মনসিংহ অঞ্চলের আমির এনামুল হক বাপ্পা বলেন, আজ একটা মহাসত্য আমাদের এই ষোল কোটি বাঙালিকে হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করতে হবে; সেটা হলো আমাদের সমাজ, আমাদের দেশ এক ঘোরতর সংকটে নিমজ্জিত। আমাদের অমূল্য সম্পদ ধর্মবিশ্বাস অর্থাৎ ঈমানকে একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী বার বার ভুলপথে প্রবাহিত করে একাধারে ধর্মকে কালিমালিপ্ত করছে ও জাতির অকল্যাণ সাধন করছে। তাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সরলপ্রাণ ধর্মবিশ্বাসী মানুষগুলো আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালীন মুক্তির আশায় ধর্মের নামে নৈরাজ্য সৃষ্টিতে ব্যবহৃত হচ্ছে। এতে না ব্যক্তি উপকৃত হয়েছে, না জাতি উপকৃত হয়েছে, এর দ্বারা ধর্মবিশ্বাসী মানুষগুলো ইহকাল ও পরকাল- উভয়জীবনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ধর্মব্যবসায়ীদের অযৌক্তিক সব কর্মকাণ্ডের কারণে দুর্নাম হচ্ছে ধর্মের। এক শ্রেণির মানুষ ধর্মের নামে এসব অন্ধত্ব দেখে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ধর্মবিশ্বাসকে অবজ্ঞার দৃষ্টিতে দেখছেন, তারা ধর্মকেই অচল, অপ্রয়োজনীয়, পরিত্যাজ্য বলে প্রচারণা চালাচ্ছেন। গতকাল এক বিবৃতিতে হেযবুত তওহীদের টাঙ্গাইল অঞ্চলের আমীর এনামুল হক বাপ্পা একথা বলেন। তিনি আরও বলেন, আমরা বলতে চাই আমাদের ধর্মবিশ্বাস অর্থাৎ ঈমান আমাদের একটা শক্তিশালী চেতনা, জাতীয় সম্পদ; আমরা এই শক্তিতে বলীয়ান। এই ঈমানকে দেশ জাতি এবং সমাজের কল্যাণে, জাতির ঐক্য উন্নতি প্রগতিতে কাজে লাগানো সম্ভব। আজ ধর্ম ও এবাদতের মানে কেবল উপাসনা-আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ করে রাখায় এ থেকে ধর্মব্যবসায়ীরা লাভবান হলেও জাতি কিছুই পাচ্ছে না। মানুষ কেবল দেহসর্বস্ব প্রাণী নয়, তার একটি আত্মাও আছে। তার কেবল জাগতিক জীবন নয়, একটি পরকালীন জীবনও আছে। কাজেই সকল ধর্মই মানুষের উভয় জগতের কল্যাণ সাধনের জন্যই এসেছে, কেবল দুনিয়া বা কেবল পরকালের জন্য নয়। রাত জেগে স্রষ্টার সান্নিধ্য লাভের জন্য প্রার্থনা করা, তাহাজ্জুদের নামাজ পড়া যেমন সওয়াবের কাজ, তেমনি মানুষ যেন নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারে, নির্ভয়ে চলাচল করতে পারে, দু®কৃতকারীরা ধ্বংসাত্মক কাজ না করতে পারে সে লক্ষ্যে রাত জেগে পাহারা দেওয়াও বড় সওয়াবের কাজ। এবাদতের প্রসঙ্গ টেনে তিনি আরও বলেন, মানুষকে সুখ-শান্তি, নিরাপত্তার মধ্যে রাখার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানোই মানুষের প্রকৃত এবাদত। এই এবাদত করলেই সে পরকালে জান্নাত পাবে। কিন্তু জাতীয়-সামাজিক উন্নয়নের কাজকে আজ ধর্মীয় কাজ বলে কোথাও শিক্ষা দেওয়া হয় না, ধর্মের এ দিকটিকে ঢেকে ফেলা হয়েছে। ধর্মের কোনো বাস্তবমুখী, জীবনমুখী চর্চা আমাদের সমাজে নেই, আছে কেবল সংকীর্ণতা, আত্মকেন্দ্রিক পরকালমুখিতা, সহিংসতা, সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ। জাতির ঐক্য নষ্ট করা যে কুফর তা শেখানো হয় না, ষোল কোটি মানুষ প্রায় সকলেই ধর্মবিশ্বাসী হলেও সর্বত্র চলে অনৈক্যের শিক্ষা, অপরের বিষোদগার ও ষড়যন্ত্র করে জয়ী হওয়াই যেন এক শ্রেণির রাজনীতিক ও ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের লক্ষ্য। আজ কেবল মসজিদে, মাদ্রাসায় দানকেই বলা হয় আল্লাহর রাস্তায় দান। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে যে রাস্তায় মানুষ চলাচল করে সেই রাস্তা নির্মাণের জন্য দান করাও আল্লাহর রাস্তায় দানের অন্তর্ভুক্ত। এই শিক্ষা দেওয়া হয় না। এই শিক্ষা না থাকায় কেউই জাতীয় উন্নয়নের কাজে অংশ নেওয়াকে এবাদত বলে মনে করছেন না। আজ যদি ধর্মের এই প্রকৃত উদ্দেশ্য ও শিক্ষাকে মানুষের সামনে তুলে ধরা যায় তাহলে আমাদের দেশে যে সম্পদের প্রাচুর্য আল্লাহ দান করেছেন, তা দিয়েই আমরা উন্নতির শিখরে পৌঁছতে পারব। ধর্মবিশ্বাসের মতো এত বড় সম্পদ আজ পচে গলে নষ্ট হচ্ছে।