আমাদের আজকের আলোচনার প্রসঙ্গ – ইসলামে নারীশিক্ষা। শিক্ষা ছাড়া কোনো জাতি সভ্য হতে পারে না। ইসলাম এসেছে মানবজাতিকে সভ্যতা উপহার দিতে, তাই ইসলামে নারী ও পুরুষ সকলের জন্য জ্ঞান অর্জন করা বাধ্যতামূলক। রসুলাল্লাহ বলেছেন, প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর জন্য জ্ঞান অন্বেষণ করা ফরজ (ইবনে মাজাহ)। এমনও বলা হয়েছে যে, জ্ঞানের অনুসন্ধান করতে যদি আরব থেকে সুদূর চীনদেশেও যেতে হয়- যাও।
বাবা আদমকে সৃষ্টি করার পর আল্লাহ তাঁকে এই বিশ্বজাহানের সকল বস্তুর নাম অর্থাৎ বিজ্ঞান শিক্ষা দিলেন (সুরা বাকারা, ৩১)। যার দরুন তিনি অন্যান্য সকল সৃষ্টির মধ্যে শ্রেষ্ঠ বলে প্রমাণিত হলেন। সকল মালায়েক তাঁকে সেজদা করে তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব মেনে নিল, তাঁর সেবায় নিযুক্ত থাকার ঘোষণা করল। আল্লাহ আদম (আ.)-কে যে জ্ঞান দান করেছিলেন, সেই জ্ঞান কেয়ামত পর্যন্ত আদম সন্তানদের গবেষণার মাধ্যমে আবিষ্কৃত হতে থাকবে। সেই প্রথম মানুষ থেকে হাজার হাজার বছর পেরিয়ে মানবজাতি নানা সভ্যতার ধাপ অতিক্রম করে আজ যেখানে এসে উপস্থিত হয়েছে, এ সবই সম্ভব হয়েছে জ্ঞানের বিস্তারের মাধ্যমে। মানুুষ তার উদ্ভাবিত জ্ঞানকে সংরক্ষণ করে পরবর্তী প্রজন্মের হাতে তুলে দিয়েছে। পরবর্তী প্রজন্ম সেই জ্ঞানকে আরো বৃদ্ধি করে তুলে দিয়ে গেছে তার পরবর্তী প্রজন্মের হাতে। মানুষ ছাড়া অন্য কোনো প্রাণীই সেটা করতে পারে নি। তাই হাজার হাজার বছর ধরে তারা একই জীবনযাপন করে চলেছে।
আল্লাহর রসুল ছিলেন জীবন্ত কোর’আন, জীবন্ত ইসলাম। আজ আমরা যদি ইসলামের সঠিক শিক্ষাটি লাভ করতে চাই, আমাদেরকে দেখতে হবে যে আল্লাহ কোর’আনে কী বলেছেন এবং রসুলাল্লাহ (সা.) ও তাঁর হাতে গড়া উম্মাহ আল্লাহর কোন হুকুমের চর্চা কীভাবে করেছেন। তাঁদের চলে যাওয়ার কয়েক শতাব্দী পরে দীনের প্রতিটি বিষয়ের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে লক্ষ লক্ষ মাসলা-মাসায়েল উদ্ভাবন করা হয়েছে। সেগুলো যদি রসুলাল্লাহ ও তাঁর আসহাবদের আমলের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয় তাহলে সেগুলোকে গ্রহণ করা যাবে না। এবার আসা যাক মূল প্রসঙ্গে।
সর্ব অঙ্গনে নারীর অংগ্রহণের অধিকার
আল্লাহর রসুল (সা.) কে আল্লাহ দায়িত্ব দিয়েছেন সমগ্র মানবজাতিকে আল্লাহর হুকুম দিয়ে শাসন করার জন্য; এ লক্ষ্যে সমগ্র পৃথিবীতে আল্লাহর তওহীদভিত্তিক সভ্যতা প্রতিষ্ঠা করার জন্য। এই অতি বৃহৎ কাজটি করতে হলে এতে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রত্যেকটি মানুষকে সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়ে আপ্রাণ প্রচেষ্টা বা জেহাদ করতে হবে। সমাজের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারী। তাদেরকে পেছনে ফেলে রেখে একটি জাতি কখনোই অগ্রসর হতে পারবে না, এটা সাধারণ জ্ঞান। তাই আল্লাহর রসুল ইসলামে শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের মধ্যে কোনোরকম ভেদাভেদ করেন নি। নারী ও পুরুষ উভয়কেই তিনি মানুষ হিসাবে দেখেছেন এবং আল্লাহ তাঁকে যে মহা দায়িত্ব অর্পণ করেছেন সেটা পালন করার ক্ষেত্রে তারা যেন তাঁকে সহযোগিতা করতে পারেন, এজন্য উভয়কেই সকল অঙ্গনে কাজ করার জায়গা, সুযোগ ও উৎসাহ প্রদান করেছেন। নারীদেরকে বুদ্ধিহীন, দুর্বল ইত্যাদি বলে অবজ্ঞা করেন নি। ফলে অনেক নারী সাহাবিই তাদের নিজেদের মধ্যে থাকা সম্ভাবনাকে বিকশিত করে জাতির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। মদিনার প্রথম হাসপাতালটির অধ্যক্ষ ছিলেন একজন নারী সাহাবি রুফায়দাহ আসলামিয়া (রা.)। শিফা বিনতে আব্দুল্লাহ (রা.) আইন ও বিচার সংক্রান্ত বিষয়ে এতটাই জ্ঞানের পরিচয় দিয়েছিলেন যে, ওমর (রা.) তাকে ইসলামী আদালতের ‘ক্বাজাউল হাসাবাহ’ (Accountability court) অর্থাৎ বিচারিক ব্যবস্থাপনা এবং ‘ক্বাজাউস সুক’ (Market administration) অর্থাৎ বাজার বাজার ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব প্রদান করেছিলেন। রসুলাল্লাহ নারীদেরকে যুদ্ধের বিপদসংকুল ময়দানেও নিয়ে গেছেন, যেখানে তারা অসম সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। অনেক ক্ষেত্রে বীরত্বের দিক থেকে তারা পুরুষ যোদ্ধাদেরকেও ছাড়িয়ে গেছেন। নারী সাহাবী উম্মে আম্মারা (রা.) ওহুদ, বনি কুরাইজা, হুদায়বিয়া, খায়বর, হুনাইন ও ইয়ামার যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ওহুদের যুদ্ধে রসুল (সা.) এর জীবন রক্ষায় একাই একটি প্রতিরক্ষা বলয় হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন; যার দরুন মহানবী (সা.) তাঁকে ‘খাতুনে ওহুদ’ বা ‘ওহুদের রানি’ উপাধি দিয়েছিলেন।
অথচ আজকে আমরা দেখতে পাচ্ছি, ইসলামের দোহাই দিয়ে নারীদেরকে সর্বপ্রকার মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। বিশ বছর পর আবারও তালেবানরা আফগানিস্তানের শাসন ক্ষমতা অধিকার করেছে। শুরুতে তারা পূর্বের কট্টরপন্থা থেকে সরে আসার আভাস দিলেও বাস্তবে খেলাফতের নামে রসুলাল্লাহর প্রতিষ্ঠিত ইসলামের ঠিক বিপরীত ব্যবস্থাই প্রতিষ্ঠা করছে।
ইতোমধ্যেই আফগানিস্তানে নারীদেরকে বিভিন্ন জায়গা থেকে পদচ্যুত করা হচ্ছে। তালেবান জ্যেষ্ঠ নেতা ওয়াহেদউদ্দিন হাশিমি বলেছেন, পুরুষের পাশাপাশি কাজ করা আফগান নারীদের উচিত নয় (১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১, বিডি নিউজ ২৪.কম)। মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয়টিই ভেঙে দেওয়া হয়েছে। তার জায়গায় তারা এমন একটি বিভাগ চালু করেছে যার প্রধান কাজ কঠোর ধর্মীয় অনুশাসন প্রয়োগ করা (বিবিসি, ১৮ সেপ্টম্বর ২০২১)। অন্তর্বর্তীকালীন মন্ত্রিসভায় একজন নারীকেও জায়গা দেওয়া হয়নি। কিছু নারী সাহস করে সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছিলেন। তাদেরকে বেধড়কভাবে মারধোর করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তালেবানের মুখপাত্র সৈয়দ জেকরুল্লাহ হাশিমি আফগানিস্তানের সংবাদমাধ্যম টোলো নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, নারীরা মন্ত্রী হতে পারবেন না; তাদের কাজ শুধু সন্তান জন্ম দেওয়া। (১০ সেপ্টেম্বর দৈনিক সমকাল)
প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে কি রসুলাল্লাহর নারী সাহাবিরা কি মা হন নি, সন্তানদের লালন-পালন করেন নি? অবশ্যই করেছেন।
আফগানিস্তানে নারীদের জন্য সব ধরনের খেলাধুলাও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তালেবানের সাংস্কৃতিক কমিশনের উপ-প্রধান, আহমদুল্লাহ ওয়াসিক জানান, “নারীদের জন্য খেলাধুলা করাটা গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়। ক্রিকেট আর অন্য যেসব খেলায় নারীদের বেপর্দা হওয়ার সুযোগ থাকে সেসব খেলা ইসলাম অনুমোদন করে না। গণমাধ্যমের এই যুগে সহজেই ছবি আর ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। আর সেসব পুরুষরাও দেখেন। ইসলাম নারীদের এভাবে চলাফেরার অনুমোদন দেয় না।” (৮ সেপ্টম্বর ২০২১, দৈনিক কালেরকণ্ঠ)। অথচ যেসব খেলায় মানুষের শারীরিক সক্ষমতা ও সামর্থ্য বৃদ্ধি পায় সেগুলোকে ইসলাম উৎসাহিত করে। রসুলাল্লাহ স্বয়ং আম্মা আয়েশার (রা.) সঙ্গে একাধিকবার দৌড় প্রতিযোগিতা করেছেন। (সুনানে আবু দাউদ- ২৫৭৮)
নারী-পুরুষের সহশিক্ষা প্রসঙ্গে
এই রসুলাল্লাহর তাঁর জাতির নারীদেরকে প্রশিক্ষিত করে তুললেন, তিনি কি নারীদের জন্য আলাদা কোনো শিক্ষালয়ের ব্যবস্থা করেছিলেন? না। তাঁর শিক্ষাকেন্দ্র ছিল মসজিদে নববী। সেখানে নারী ও পুরুষ প্রত্যেকের অবাধ যাতায়াত ছিল। নারী-পুরুষ সকলে একসঙ্গে বসে রসুলাল্লাহর ভাষণ শুনেছেন, প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা গ্রহণ করেছেন। মসজিদে নববীতে নারীদের জন্য পর্দা ঘেরা পৃথক কোনো বসার জায়গা রসুলাল্লাহ তৈরি করেন নি, সাহাবিরাও করেন নি। কিন্তু আজকে আমরা দেখি পর্দার অজুহাতে সহশিক্ষাকে হারাম করা হচ্ছে। হাজার হাজার বক্তা সহশিক্ষার বিরুদ্ধে বয়ান করছেন, হাজার হাজার প্রবন্ধ লেখা হচ্ছে সহশিক্ষার কুফল সম্পর্কে। কিন্তু কেউই রসুলাল্লাহ নিজে যে শিক্ষাদান পদ্ধতি হাতেকলমে দেখিয়ে দিয়ে গেলেন সেটার উল্লেখ করছেন না, সেটাকে মান্য করার জন্য উপদেশ দিচ্ছেন না। যেসব কারণে সহশিক্ষা নিষিদ্ধ করা হচ্ছে, সেই কারণগুলোকে দূর করার চিন্তা কেউ করছেন না। সহজ উপায় হিসাবে নারীদেরকে শিক্ষা থেকেই বঞ্চিত করে রাখা হচ্ছে।
সম্প্রতি আফগানিস্তানে আমরা দেখলাম মেয়েদেরকে হাইস্কুল থেকে বাদ দেওয়া হলো। ঠিক একই মনোভাব আমরা দেখেছিলাম একজন মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড পরিচালকের বক্তব্যে। তিনি বলেছিলেন, মেয়েদের ফোর-ফাইভের বেশি পড়াশুনা করার দরকার নেই।
ভালো কথা, মেয়েরা উচ্চশিক্ষা নেবে না, খেলাধুলা করবে না, ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হবে না, পর্দার অন্তরালে থাকবে। মাতৃত্ব করবে। তাহলে মেয়েরা তাদের চিকিৎসার জন্য কি পুরুষ চিকিৎসকদের কাছে যাবে? তখন কি পর্দার খেলাফ হবে না? ধর্ম এসেছে মানুষের জীবনের সংকটগুলোর সমাধান করতে। আজকে ধর্মের বিকৃত ব্যাখ্যার মাধ্যমে ধর্মকেই একটা ভয়াবহ সংকটে পরিণত করেছেন আমাদের ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ, শায়েখ ও মুফতিগণ। এই কট্টরপন্থী জবরদস্তিমূলক মানবতাহীন কথিত ধর্মীয় শরিয়তের ভয়ে ভীত আফগানিস্তানের বহু বাসিন্দা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। তালেবানদের ইসলাম তাদের মন জয় করতে পারে নি, বরং আতঙ্কিত করেছে। গর্ভবতী মা পালিয়ে যাওয়ার পথে বিমানে সন্তান জন্ম দিয়েছেন।
তালেবান নিয়ন্ত্রণ শুরু হওয়ার মাত্র এক মাসের মধ্যেই ভেঙে পড়েছে আফগানিস্তানের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। বেঁচে থাকার আকুতিতে আফগানিস্তানের হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন হাজারো মানুষ। নেই প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম। নেই প্রাণরক্ষাকারী ওষুধ। জ্বালানী তেলের অভাবে বন্ধ জেনারেটর সেবা। আর এর সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে সন্তান জন্ম দেয়া মা এবং নবজাতকের চিকিৎসা খাতে।
ধাত্রীদের মাধ্যমে প্রসব করানো হচ্ছে, পুরুষ চিকিৎসদের সেবা তারা নিতে পারছেন না। আফগান নারীদের কাছে সন্তান প্রসব এখন ‘আতঙ্ক’। (২০ সেপ্টেম্বর ২০২১, একুশে টিভি)। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে বিশ্বে কোন নারীর মা হওয়ার জন্য বিশ্বে সবচেয়ে বিপজ্জনক রাষ্ট্র আফগানিস্তান। সবচেয়ে বেশি মাতৃ ও শিশু মৃত্যুর হার আফগানিস্তানে। সেখানে প্রতি দশ হাজার জীবিত নবজাতক জন্ম দিতে গিয়ে মারা যান ৩৮ জন নারী।
তালেবানের নতুন আইনে নারী রোগীদের সেবা দিতে আতঙ্কে আছেন পুরুষ চিকিৎসকরা। উপরন্তু নিষিদ্ধ করা হয়েছে জন্মনিয়ন্ত্রণ। জাতিসংঘ খাদ্য কর্মসূচি সংস্থা-ইউএনএফপিএ’ বলছে, “আন্তর্জাতিক সাহায্য বন্ধ হলে, আফগানিস্তানে আগামী চার বছরে মৃত্যু হবে, অন্তত ৫১ হাজার প্রসূতির। অনাকাঙ্খিত গর্ভধারণ হতে পারে, প্রায় অর্ধকোটি। পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক সেবা বঞ্চিত হবেন কোটি মানুষ।” (২৪ সেপ্টেম্বর ২০২১, চ্যানেল ২৪)
অথচ রুফায়দাহ আসলামিয়া (রা.) ও অন্যান্য নারী সাহাবীরা তো আত্মীয়-অনাত্মীয় নির্বিশেষে যুদ্ধাহত যেকোনো পুরুষ সাহাবীদেরকেই চিকিৎসা করতেন। এবং সেটা করতেন মসজিদে নববীর প্রাঙ্গনে। তখন তো কেউ পর্দার খেলাফ হবে এমন ফতোয়ার ঝাণ্ডা ওড়ান নি। তাহলে আজ এটা কোন ইসলামের চর্চা আমরা দেখতে পাচ্ছি?
একটি সাধারণ জ্ঞানের প্রশ্ন করি। বলুন তো, পৃথিবীর প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়টি কে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন? Who founded the first university in the world লিখে গুগোলে সার্চ করলেই জবাবটা পেয়ে যাবেন। তিনি হচ্ছেন ফাতেমা আল ফিহরি। মরোক্কোর ফেজ শহরে ২৫৪ হিজরি সন মোতাবেক ৮৫৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মুসলিম-অমুসলিম শিক্ষার্থীগণ এখানে পড়তে আসতেন এবং জ্ঞানবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা নিয়ে পড়াশুনা করে সনদলাভ করতেন।
আজকে আমরা ফতোয়াবাজদের বয়ানে যে ইসলামের পরিচয় পাচ্ছি সেখানে এটা চিন্তারও বাইরে যে, একজন নারী নিজেই কেবল উচ্চশিক্ষা লাভ করছেন তা-ই নয়, উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণার জন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছেন। সেটা ছিল মুসলিম সভ্যতার স্বর্ণযুগ। ক্লাস ফোর-ফাইভ পর্যন্ত পড়ার ইসলামের জন্ম তখনও হয় নি। মুসলিম সভ্যতার কেন্দ্র বাগদাদ, কর্ডোভা ও মিশরের বড় বড় মাদ্রাসা অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে জ্ঞান আহরণ করে যখন ইউরোপে জ্ঞানের চর্চা শুরু হলো, সেখানে মধ্যযুগীয় বর্বরতার অবসান হলো। সেখানেও গড়ে উঠতে লাগল মেডিক্যাল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি, তখন ইউরোপীয় ছাত্ররা মুসলিম সভ্যতার মহান শিক্ষক ও দার্শনিকগণ যে ধরনের পোশাক পরতেন, তারাও সেই পোশাক পরিধান করাকেই গৌরবের পরিচায়ক বলে মনে করতেন। আজও পাশ্চাত্যের অনুকরণে পরিচালিত আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে যারা গ্রাজুয়েট হন তারা সনদ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যে গাউনটি পরেন সেটা আরবীয় পোশাকের অনুকরণেই তৈরি। মুসলিম স্বর্ণযুগের মহান চিকিৎসক ইবনে সিনার পোশাকের অনুকরণেই ইউরোপীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গ্রাজুয়েটদের জন্য এই ধরনের গাউনের প্রচলন ঘটিয়েছিল।
নারী ও পুরুষ উভয়ই বাবা আদমের সন্তান। তাই বাবা আদমকে আল্লাহ যে জ্ঞান শিক্ষা দিয়েছিলেন তার উত্তরাধিকার নারী-পুরুষ উভয়ই। এখানে কেউ ফতোয়া দিয়ে কাউকে জ্ঞান-অর্জন থেকে বিরত রাখতে পারে না, জ্ঞানকে কুক্ষিগত করে ব্যবসায়িক পণ্যেও পরিণত করতে পারে না। জ্ঞানের এই রাজ্যে সবার সমান অধিকার।