আজকের পৃথিবীতে বিভিন্নভাবে ইসলামের বিরুদ্ধে কথা বলা হয়, খুটিয়ে খুটিয়ে ইসলামের ত্র“টি বের করে এর বদনাম করা হয়। আজকে যে ইসলামটা দুনিয়াময় চালু আছে, এটা আল্লাহ ও রসুলের (সা.) প্রকৃত ইসলাম নয়। বিগত ১৩০০ বছরের কাল পরিক্রমায় বিকৃত হতে হতে ইসলাম আজ চূড়ান্তভাবে বিকৃত। আর এই চূড়ান্ত বিকৃতির সূত্রপাত ঘটায় ব্রিটিশ খ্রিস্টানরা ঔপনিবেশিক আমলে। তারা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করে খ্রিস্টান প্রিন্সিপালদের তত্ত্বাবধানে তাদের নিজেদের তৈরি করা একটা বিকৃত ইসলাম শিক্ষা দেয় এবং জাতির মধ্যে একটি ধর্মব্যবসায়ী মোল্লা শ্রেণির উদ্ভব ঘটায়। এই ধর্মব্যবসায়ী মোল্লা শ্রেণিটি সেই বিকৃত ইসলামটাই মাদ্রাসা থেকে শিখে এসে মসজিদে, মাদ্রাসায়, খানকায়, ওয়াজ নসীহতে সাধারণ মানুষকে শিক্ষা দেয়। এভাবে গত কয়েক শতাব্দী ধরে ব্রিটিশদের তৈরি করা বিকৃত ইসলামটিই এই জাতির মধ্যে চর্চা করা হচ্ছে। আজকে যে বিভিন্ন মহল থেকে ইসলামের বদনাম করা হচ্ছে, ইসলামকে পশ্চাদপদ, বর্বর ধর্ম বলে গালি দেওয়া হচ্ছে সেটা এই বিকৃত ইসলামের রূপটিকে দেখেই করা হচ্ছে। যারা গালি দিচ্ছেন তারা প্রকৃত ইসলাম দেখেন নি, তারা তাদের সামনে ইসলাম হিসাবে যেটাকে দেখছেন সেটাকেই গালাগালি করছেন।
সত্যিকার অর্থেই বিকৃত ইসলামের এই ধারক বাহক তথা ধর্মজীবী মোল্লা শ্রেণির মনোভাব সাংঘাতিক পশ্চাদপদ, বিকৃত। নারীদের ব্যাপারে তাদের যে দৃষ্টিভঙ্গি আমরা দেখতে পাই তা ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি নয়, এটা তাদের নিজস্ব বিকৃত দৃষ্টিভঙ্গি। এই বিকৃত দৃষ্টিভঙ্গিকে ইসলাম হিসাবে চালিয়ে দেওয়ার কারণে পশ্চিমা প্রভাবাধীন গণমাধ্যমগুলি বিকৃত ইসলামের কূপমণ্ডূকতার দিকে আঙ্গুল উঁচিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে যে ইসলাম নারীদের অবরুদ্ধ করে রাখে, মানুষের বাক-স্বাধীনতায়, চিন্তার স্বাধীনতায়, চলাফেরার স্বাধীনতায় বিঘœ ঘটায়, তাই যে কোনভাবেই হোক ইসলামের উত্থানকে রোধ করতে হবে।
ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ, শাশ্বত ও প্রাকৃতিক দীন। সুতরাং ইসলামের প্রতিটি বিধি-বিধান প্রাকৃতিক, যৌক্তিক ও চিরন্তন। কিন্তু প্রকৃত ইসলামের সাথে বর্তমানের কূপমণ্ডূক ধর্মব্যবসায়ীদের কাছে কুক্ষীগত বিকৃত ও বিপরীতমুখী ইসলামের তুলনা করা নিতান্তই বোকামী হবে। ১৩০০বছর আগে হারিয়ে যাওয়া আল্লাহ রসুলের সেই প্রকৃত ইসলামে নারীদের ক্ষমতায়ন ও বর্তমানে বিকৃত ইসলামের ধ্বজাধারীরা নারীদেরকে কিভাবে গৃহবন্দি করে রেখেছে তা তুলে ধরাই আমার আজকের আলোচ্য বিষয়।
বিকৃত ইসলামে নারীদের গৃহবন্দি অবস্থা অযৌক্তিক:
আজকের বিকৃত ইসলামের কূপমণ্ডূক ধর্মজীবী আলেম-মোল্লারা নারীদের ব্যাপারে ইসলামের যে ধারণা প্রচার করে থাকে তা প্রকৃত ইসলামের একেবারে বিপরীত। তারা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীকে পুরুষের অধীন করে রাখার পক্ষে ফতোয়া দিয়ে থাকেন। তারা বলে থাকেন ইসলামে নারী নেতৃত্ব হারাম। তারা এটা বুঝতে সক্ষম নয় যে, যার নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্যতা বেশি সে পুরুষই হোক আর নারীই হোক, তাকেই নেতা মনোনীত করা যাবে। অযোগ্য পুরুষকে নারীর কর্তা করতে হবে এমন সিদ্ধান্ত ইসলাম সমর্থন করে না। যেমন একটি প্রতিষ্ঠানে এক হাজার জন কর্মকর্তা, কর্মচারী আছে। সেখানে যদি জ্ঞান, যোগ্যতা, দক্ষতায় কোনো নারী অন্যদের থেকে এগিয়ে থাকে সেখানে সেই নারীকে প্রধান অর্থাৎ নেতৃত্বদানকারী হিসাবে মেনে নিতে বাধা কোথায়? সেই হিসাবে একজন নারী কোনো এলাকার রাজনৈতিক প্রশাসকও (Governor) হতে পারেন।
তথাকথিত প্রগতিশীলরা মোল্লা শ্রেণির মূর্খতাকে অসার প্রমাণ করতে গিয়ে আল্লাহ-রসুলকেই দোষারোপ করছেন। প্রচলিত ইসলামের বোরখা পরিহিতা কিম্ভুতকিমাকার নারীমূর্তি দেখেই তারা ধরে নিয়েছেন যে ইসলাম নারীকে বুঝি এভাবেই অথর্ব, জড়বুদ্ধি, অচল, বিড়ম্বিত করেই রাখতে চায়। তারা নিজেরাও পাশ্চাত্য জড়বাদী ‘সভ্যতা’ দাজ্জালের প্রভাবে অন্ধ হয়ে আছেন। তাই ইসলামের বিরোধিতা করা তাদের মজ্জাগত অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। সত্য-মিথ্যার পার্থক্য করার জ্ঞান তাদের লুপ্ত হয়ে গেছে। নইলে তারা বুঝতে পারতেন যে – এই ধর্মজীবী মোল্লাদের সঙ্গে আল্লাহ রসুলের ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই, কেবল সম্পর্ক নেই নয়, এই মোল্লারাই ইসলামের সবচেয়ে বড় শত্র“। তারা যে ইসলামটি বিক্রি করে খাচ্ছেন তার প্রতিটি দিক আল্লাহ-রসুলের প্রকৃত ইসলামের বিপরীত দিকে ধাবিত হচ্ছে। সত্য ইসলামের নারী কেমন ছিল সেটা তাদের ধারণারও বাইরে।
আজ ইহুদি খ্রিস্টান ‘সভ্যতা’র গলায় সুর মিলিয়ে নারীবাদীরা হিংস্র মুখভঙ্গি প্রদর্শন করে বলেন, নারীকে সর্বক্ষেত্রে পুরুষের সমান অধিকার দিতে হবে। তারা জানেন না যে প্রকৃতপক্ষে ইসলাম নারী ও পুরুষের অধিকার তো দিয়েছেই, তাদেরকে এমন সম্মানিত করেছে যে কোনো জীবনব্যবস্থাতে এর ভগ্নাংশও দেওয়া হয় নি, অপরদিকে পশ্চিমা সভ্যতা বিজ্ঞাপনী প্রচারণা ও অশ্লীল সংস্কৃতির দ্বারা নারীদেহকে কর্পোরেট পণ্যে পরিণত করেছে।
প্রকৃত ইসলামে নারীর ক্ষমতায়ন:
যেহেতু উপার্জন করা পুরুষের কাজ, তাই বলা যায় জীবিকার যুদ্ধক্ষেত্রে মেয়েরা দ্বিতীয় সারির সৈনিক। কখনও কখনও যদি অবস্থার প্রয়োজনে নারীকে প্রথম সারিতে গিয়ে জীবিকার লড়াইতে অবতীর্ণ হতে হয় সেটার সুযোগ আল্লাহ রেখেছেন। রসুলাল্লাহর অনেক নারী আসহাব পরিবারে পুরুষ সদস্য না থাকায় বা পুরুষ সদস্যরা জিহাদে অধিক ব্যস্ত থাকায় নিজেরাই কৃষিকাজ করে, কুটির শিল্পের মাধ্যমে উপার্জন করতেন, অনেকে ব্যবসাও করতেন।
এবার আসা যাক সত্যিকার যুদ্ধের ক্ষেত্রে। রসুলাল্লাহর সময় নারীরা প্রায় সকল যুদ্ধেই অংশগ্রহণ করেছেন। তারা আহতদের চিকিৎসা দিয়েছেন, নিহতদের দাফনে সহায়তা করেছেন। যুদ্ধক্ষেত্রে আহত সৈন্যদেরকে পানি পান করিয়েছেন। আনাস (রা.) উহুদ যুদ্ধের স্মৃতি বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, “সেদিন আমি আয়েশা বিনতে আবু বকর (রা.) এবং উম্মে সুলাইমকে (রা.) দেখেছি, তাঁরা উভয়েই পায়ের কাপড় গুটিয়ে নিয়েছিলেন। আমি তাদের পায়ের গোছা দেখতে পেয়েছি। তারা মশক ভরে পিঠে বহন করে পানি আনতেন এবং (আহত) লোকদের মুখে ঢেলে দিতেন। আবার চলে যেতেন এবং মশক ভরে পানি এনে লোকদের মুখে ঢেলে দিতেন (বোখারী শরীফ, হাদিস নং ৩৭৬৭)। এখানে কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্রের সবচাইতে বিপদসঙ্কুল পরিবেশের কথা বলা হয়েছে, বাড়িঘরের স্বাভাবিক পরিস্থিতির কথা বলা হয় নি। তাছাড়া মসজিদে নববীর এক পাশে যুদ্ধাহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছিল, যার প্রধান ছিলেন একজন নারী রুফায়দাহ (রা.)। কোনো যোদ্ধাকে যদি রসদ ও এই সেবাগুলি দিয়ে সাহায্য না করা হয় তবে সে কখনও প্রথম লাইনে থেকে যুদ্ধ করতে পারবে না। যে কোনো সামরিক বাহিনীর কাছে জিজ্ঞাস করে দেখতে পারেন এই কাজের ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
শুধু এটুকুই না, যুদ্ধে এমন এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় যখন মেয়েদেরকেও অস্ত্র হাতে নিতে হয়, সম্মুখ সমরে অবতীর্ণ হতে হয় [সংসার সমরাঙ্গণেও এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে নারীকে প্রথম সারিতে অর্থাৎ উপার্জন ও পরিবার ভরণপোষণের কাজে নামতে হবে]। যুদ্ধক্ষেত্রের এই বিশেষ পরিস্থিতিতে যেন মেয়েরা এগিয়ে আসতে পারে এবং পুরুষের পাশে দাঁড়িয়ে সমানভাবে যুদ্ধ করে যেতে পারে সে সুযোগ আল্লাহ রেখেছেন। তার প্রমাণ ইতিহাস। উহুদের যুদ্ধে যখন মুসলিম বাহিনী বিরাট বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়, বহু সাহাবী শহীদ হয়ে যান, স্বয়ং রসুলাল্লাহ মারাত্মকভাবে আহত হন, কাফেররা প্রচার করে দেয় যে, রসুলাল্লাহও শহীদ হয়ে গেছেন এমনই বিপজ্জনক মুহূর্তে মেয়েরা আর দ্বিতীয় সারিতে থাকলেন না, তারা অস্ত্র হাতে নিয়ে রসুলাল্লাহকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য কাফের সৈন্যদের বিরুদ্ধে বিপুল বিক্রমে ঝাঁপিয়ে পড়েন। উহুদ যুদ্ধে নারী সাহাবী উম্মে আম্মারার (রা.) ভূমিকা ছিল প্রায় অবিশ্বাস্য। এ সম্পর্কে রসুলাল্লাহর (সা.) উক্তিই যথেষ্ট। তিনি বলেছিলেন, ‘উহুদের দিন ডানে-বামে যেদিকেই নজর দিয়েছি, উম্মে আম্মারাহকেই লড়াই করতে দেখেছি।’ তিনি যেভাবে যুদ্ধ করেছিলেন তা নজিরবিহীন। এক শত্র“ সৈন্যের তরবারির কোপ পড়ল তার মাথায়। তিনি ঢাল দিয়ে তা প্রতিহত করলেন। তিনি আঘাত করলেন তার ঘোড়ার পায়ের উপর। অশ্ব ও অশ্বারোহী দুজনেই পড়ে গেল মাটিতে। মহানবী এই দৃশ্য দেখে তার পুত্র আব্দুল্লাহকে (রা.) সাহায্যের নির্দেশ দিলেন। তিনি পতিত সৈন্যকে শেষ করলেন। এলো অন্য এক শত্র“। সে আঘাত হানলো আব্দুল্লাহর (রা.) বাম বাহুতে। মা পুত্রের ক্ষতস্থান বেঁধে দিলেন। আর ছেলেকে আমৃত্যু লড়াই করার জন্য উদ্দীপ্ত করলেন। এই অপূর্ব দৃশ্য দেখে রসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘হে উম্মে আম্মারাহ! তোমার মধ্যে যে শক্তি আছে, তা আর কার মধ্যে থাকবে?’
নবী করিম (সা.) নিজ হাতে সেদিন এই বীরাঙ্গণার ক্ষতস্থানে পট্টি বেঁধে দিয়েছিলেন। তাঁর কাঁধ থেকে গল গল করে রক্ত গড়িয়ে পড়ছিল। বেশ কয়েকজন বীর সৈনিকের নাম উল্লেখ করে তিনি মন্তব্য করলেন, ‘আল্লাহর কসম! আজ তাদের সবার চেয়ে উম্মে আম্মারাহ বেশি বীরত্ব দেখিয়েছেন। এর অনেক পরে ইয়ারমুকের যুদ্ধে খালিদ বিন ওয়ালীদের অন্যতম এক বাহু দেরার বিন আজওয়ার যখন শত্র“র হাতে আটকা পড়েন তখন তারই আপন ভগ্নী খাওলা ঘোড়ায় চড়ে এমন লড়াই শুরু করেন যে স্বয়ং সেনাপ্রধান খালিদ (রা.) বার বার জিজ্ঞেস করেন, “কে এই বীর?” খাওলা শত্র“ শিবিরে আক্রমণ চালিয়ে শেষ পর্যন্ত তার ভাইকে উদ্ধার করেই ছাড়েন। পাঠক, এমন অসংখ্য উদাহরণের মধ্য থেকে কয়েকটি মাত্র উল্লেখ করলাম, আশা করি সত্যপ্রিয় পাঠকের বোঝার জন্য এ ক’টিই যথেষ্ট হবে যে, রসুলাল্লাহর সময়ে নারীরা প্রথম সারির ভূমিকাও কিভাবে পালন করেছেন। মাসলা মাসায়েলের জটিল জাল বিস্তার করে কোনকাজেই তাদের অংশগ্রহণের বাধা সৃষ্টি করা হয় নি।
একটি জাতির প্রায় অর্ধাংশই নারী। জাতির অর্ধেক জনগোষ্ঠীকে অচল করে রাখা আর এক পায়ে হাঁটার চেষ্টা করা একই কথা। সেই জাতির কোনদিনই উন্নতির কোনো সম্ভাবনা নেই। তাই জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলাম নারী ও পুরুষের অংশগ্রহণের একটি সুন্দর সমন্বয় সাধন করেছে। নারীর নেতৃত্ব প্রদানের যোগ্যতাকে ইসলাম মোটেও অস্বীকার করে না। যদি অবস্থার প্রেক্ষাপটে কোনো নারীকে দ্বিতীয় সারি থেকে প্রথম সারিতে আসতে হয় এবং সেখানে তিনি যদি তার জ্ঞান, প্রতিভা, যোগ্যতা, দক্ষতা, সামর্থ্যবলে নেতৃত্বদানের উপযুক্ত বলে সাব্যস্ত হন, সেক্ষেত্রে অবশ্যই তিনি বহু পুরুষের উপরও নেত্রী হিসাবে নিয়োজিত হতে পারবেন। প্রকৃত ইসলামের দৃষ্টিতে নারী হওয়া নেতৃত্বলাভের ক্ষেত্রে কোনো অযোগ্যতা নয়। ইসলামের ইতিহাসের একটি দুঃখজনক অধ্যায় উটের যুদ্ধ। এই যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রা.)। বহু সাহাবী তাঁর অধীনে থেকে যুদ্ধ করেছেন। যুদ্ধটির বিভিন্ন দিক নিয়ে ঐতিহাসিকরা সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করেছেন, কিন্তু “ইসলামে নারী নেতৃত্ব হারাম” বলে তখন তাঁর পক্ষে বিপক্ষে যুদ্ধরত কোনো সাহাবী ফতোয়া দিয়েছেন বলে ইতিহাসে পাওয়া যায় না। এই কথাটি আবিষ্কার করেছেন বিকৃত আকিদার মোল্লারা যারা উম্মাহর মূল কাজ, তাকে সৃষ্টি করার উদ্দেশ্য সম্পর্কে অন্ধ।
মূল কথা হচ্ছে, যেখানে যুদ্ধক্ষেত্রের মতো বিপদসঙ্কুল এবং সবচাইতে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে পুরুষ সাহাবীদের পাশাপাশি নারী সাহাবীরা অংশ নিয়েছেন, সেখানে অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় এবং অন্যান্য কাজে যে নারীদের অগ্রণী ভূমিকা ছিল তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তারা কখনই পুরুষদের চেয়ে কোনো অংশে পিছিয়ে ছিলেন না। তারা পূর্ণ সম্মান ও মর্যাদার সঙ্গে জাতীয় ও সামাজিক প্রয়োজনে নিশ্চিন্তে, নির্বিঘেœ যে কোনো ভূমিকা রাখতে পারতেন। কেবল একটি পদ নারীকে দেওয়া বৈধ নয়, সেটি হলো- উম্মতে মোহাম্মদী নামের যে মহাজাতিটি সৃষ্টি হবে সেই জাতির ইমামের পদ। আল্লাহ নারী ও পুরুষের দেহ ও আত্মার স্রষ্টা, সচেতন মন ও অবচেতন মনের স্রষ্টা। এদের উভয়ের দুর্বলতা সম্পর্কে সবচেয়ে ভালো জানেন মহান আল্লাহ। তিনি জানেন যে নারীর শারীরিক গঠন যেমন পুরুষের তুলনায় কোমল, তার হৃদয়ও পুরুষের তুলনায় কোমল, আবেগপ্রবণ ও সংবেদনশীল। সহজেই তার চিত্তচাঞ্চল্য ঘটে, তার স্থৈর্য্য, দূরদর্শিতা পুরুষের চেয়ে কম, তাকে প্রভাবিত করা সহজতর। ইবলিস নারীকেই প্রথম আল্লাহর হুকুম থেকে বিচলিত করেছিল। এ কারণেই আল্লাহর অগণ্য নবী-রসুলের মধ্যে একজনও নারী নেই। সুতরাং পৃথিবীময় উম্মতে মোহাম্মদী নামক যে মহাজাতি হবে সেই মহাজাতির ইমাম কেবল নারী হতে পারবেন না, স্বীয় যোগ্যতাবলে অন্যান্য যে কোনো পর্যায়ের আমীর বা নেতা সে হতে পারবে। শুধু নারী হওয়ার কারণে কেউ নেতৃত্ব দিতে পারবে না এটা ইসলামের দৃষ্টিতে যোগ্যতা অযোগ্যতার মাপকাঠি নয়।