ইসলামে নারীদের মুখ ঢাকার কোনো বিধান নেই। কোর’আনে পর্দা সংক্রান্ত বিধানসমূহ স্পষ্টভাবে উল্লিখিত আছে এবং পর্দার নির্ধারিত সীমারেখার কম বা বেশি পর্দা করা মানে সীমালঙ্ঘন। কেননা দীন নিয়ে বাড়াবাড়ি নিষিদ্ধ (সুরা আন নিসা ১৭১, সুরা আল মায়েদা ৭৭)। হেজাব অর্থ আবরণ, বিভাজন, আলাদা, পর্দা। কোর’আনে হেজাব শব্দটি নারীদের পোশাক হিসেবে ব্যবহার করা হয় নি। সুরা নূরের ৩১ নম্বর আয়াতে আল্লাহ মো’মেন নারীদেরকে সাধারণত প্রকাশমান অঙ্গসমূহ ছাড়া গোপন সৌন্দর্য প্রদর্শন করতে নিষেধ করেন এবং বক্ষদেশ ওড়না দ্বারা ঢেকে রাখতে বলেন। আয়াতটিতে ‘খুমুরিহিন্না’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে এবং এখানে খুমুরের মাধ্যমে স্রষ্টা নারীদের বক্ষদেশ ঢেকে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। ‘খুমুরিহিন্না’ শব্দটি ‘খুমার’ শব্দ থেকে এসেছে, (বহুবচন খিমার) যার অর্থ শার্ট, শাল, ব্লাউজ বা যে কোনো আবরণ। খেয়াল করুন, এই আয়াতে মুখ বা চুল নয় বরং বুক ঢেকে রাখার কথা বলা হয়েছে।
সুরা আহযাবের ৫৯ নম্বর আয়াতে রসুলকে (সা.) বলা হয়েছে তিনি যেন তার স্ত্রী ও কন্যা এবং বিশ্বাসী নারীদেরকে বলেন, তারা যেন তাদের ‘জালাবিবের’ কিয়দংশ দিয়ে নিজেদের জুয়ুব (বক্ষদেশ) ঢেকে নেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। এখানে ব্যবহৃত ‘জালাবিব’ শব্দটি হল ‘জিলবাব’ এর বহুবচন যার অর্থ হল শার্ট, চাদর, ওড়না বা আলখেল্লা। জালবিব শব্দ দ্বারা যদি মুখমণ্ডল ঢেকে রাখা বুঝাত, তবে মহাজ্ঞানী আল্লাহ সেই শব্দ ব্যবহার করতেন। কারণ তিনি কোর’আনের নির্দেশগুলোকে সুস্পষ্ট (মুবিন, মুহকাম) বলেছেন। উল্লিখিত আয়াতে মুখ (ওয়াজহু, উজাহ, কুবাল); মাথা (রা’আস); বা চুল (শা’আর) এর কোনো উল্লেখ নেই। কোর’আনে এমন একটাও আয়াত নেই যেখানে নারীদের মুখমণ্ডল ঢেকে রাখার জন্য বলা হয়েছে, বরং উল্লেখিত আয়াতে নির্দেশিত হয়েছে যে, নারীরা তাদের মুখমণ্ডল ঢেকে রাখবে না। শরীরের সর্বাধিক প্রকাশিত অংশ হলো মুখমণ্ডল, যা দ্বারা একজন মানুষকে আলাদাভাবে চেনা যায়। কান ও চোখ সামান্যতম ঢেকে রাখা হলে দেখা ও শোনার কাজ বাধাগ্রস্ত হয়। মুখ আবৃত থাকলে খাওয়া ও পান করাও সম্ভব নয়। এছাড়া মুখমণ্ডলে পর্দার ব্যবহার নানা ধরণের জটিলতা সৃষ্টি করে। অনেক মাদকব্যবসী, দেহ ব্যবসায়ী, প্রতারক চক্রসহ বিভিন্ন নারীদেরকে দেখা যায় পর্দা করে সহজে এসব অপকর্ম করে। মানুষের সৃষ্টি করা বিকৃত পর্দাপ্রথা এসব অপরাধগুলোকে সহজ করে দিচ্ছে। কিন্তু দয়াশীল সৃষ্টিকর্তা দীনে কোনো জটিলতা রাখেননি (সুরা আল হাজ্ব ৭৮)।
প্রকৃতপক্ষে, কোর’আনে উল্লেখিত পর্দার আয়াতগুলো দ্বারা মুখমণ্ডল ঢেকে পর্দা করা আল্লাহর বিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন, তবে ধুলা-বালি, রোগজীবাণু থেকে বাঁচার জন্য বা আত্মপরিচয় গোপন করার জন্য ঢাকলে সেটা ভিন্ন কথা। আল্লাহর রসুলের যুগেও নারীরা তাদের মুখ খোলা রেখে সকল কাজে অংশগ্রহণ করতেন। নবীজী (সা.) বলেন, ‘মেয়েরা বড় হলে চেহারা ও হাত ছাড়া আর কিছু দেখানো উচিত নয় (আবু দাউদ ৪০৯২)। এখনও হজের সময় নারীদের মুখমণ্ডল খোলা রাখা বাধ্যতামূলক। তাছাড়া যদি নারীর শরীর আপাদমস্তক আবৃত রাখা বাধ্যতামূলকই হতো তবে বিশ্বাসী পুরুষদের দৃষ্টি সংযত ও নত রাখার নির্দেশ (সুরা নূর ৩০) দেওয়ার প্রয়োজনই হতো না।