উপনিবেশ যুগ সমাপ্ত হলে ইসলামিক রাজনৈতিক দলগুলোর পুরোধাগণ দেখলেন, এই সময়ে সরকার গঠন করতে হলে ব্রিটিশদের রেখে যাওয়া ধাপ্পাবাজির রাজনীতি (যা ব্রিটিশরা নিজেদের দেশে কোনোদিন অনুসরণ করেনি, এদেশেও করেনি। তারা শেষ দিন পর্যন্ত গণতন্ত্র নয় বরং বন্দুকের জোরেই শাসন চালিয়ে গেছে) যাকে ব্রিটিশরা নাম দিয়েছে ‘নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতি’ সেটা অনুসরণ করেই ক্ষমতায় যেতে হবে। তারা সেই পথেই পা বাড়ালেন। আল্লাহর রসুল হেঁটেছেন আল্লাহর দেখানো পথে, আর রাজনৈতিক ইসলামিক দলগুলো হাঁটতে লাগলেন ব্রিটিশদের দেখানো পথে। এরপর তাদের জন্য অনিবার্য হয়ে উঠল প্রচলিত গণতন্ত্রের সাথে, আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার সাথে ইসলামের সমীকরণ মেলানো। তারা প্রথমেই ব্রিটিশদের গোলাম মুসলমান জাতিকে এটা বললেন যে, “শোনো, ব্যক্তিগত উপাসনায় ব্যস্ত মুসলিমরা। ইসলামে কিন্তু রাজনীতি আছে, আল্লাহর রসুল রাজনীতি করেছেন। সুতরাং মুসলিমরা, তোমরা আমাদেরকে ভোট দিলে তোমাদের সওয়াব হবে, তোমরা জান্নাতে যাবে। আর আমাদের বিপরীত অবস্থানে থাকা অনৈসলামিক দলগুলোকে ভোট দিলে তোমরা জাহান্নামে যাবে।”
এখানে আরেকটি জটিল প্রশ্ন প্রাসঙ্গিকভাবেই চলে আসে। নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত ইসলামি দলও আবার শত শত। তাদের প্রত্যেকের আলাদা মার্কা, আলাদা কর্মসূচি, আলাদা ইশতেহার, আলাদা পতাকা। তারা একদল আরেকদলের এমন বৈরী যে রীতিমত সাপে নেউলে সম্পর্ক। তারা সবাই ধর্মবিশ্বাসী ভোটারদেরকে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকেন। তাহলে এত এত ইসলামি দলের মধ্যে কোন দলের ভোটাররা জান্নাতে যাবেন?
প্রকৃত সত্য হচ্ছে, জান্নাতে যাবে কেবল মো’মেন (আল কোর’আন, সুরা মোহাম্মদ ১২, সুরা তওবা ৭২), আর মো’মেনরা তো হবে এক দলভুক্ত, একটি দেহের ন্যায় (আল হাদিস- মেশকাত), তারা হবে ভাই ভাই (কোর’আন, সুরা হুজরাত ১০) তাদের কর্মসূচি থাকবে একটি (আল হারিস আল আশয়ারী (রা.) থেকে আহমদ, তিরমিযি, বাব উল এমারাত, মেশকাত), তাদের নেতা হবে একজন, তাদের সবার লক্ষ্য হবে একদিকে। কোনো মসজিদে একই সাথে যেমন দুটো জামাত চলতে পারে না তেমনি একই সাথে পৃথিবীতে মুসলমানদের একাধিক ফেরকা, মাজহাব, তরিকা থাকতে পারে না। সালাতের সময় যেমন একজন মাত্র এমামের তাকবির সকল মুসল্লি মানতে বাধ্য থাকেন তেমনি মুসলিম জাতির মধ্যেও একজন মাত্র এমাম (নেতা) থাকবেন যার হুকুম সবাই মানতে বাধ্য থাকবে। সালাতের সময় যেমন প্রত্যেক মুসল্লির কেবলা (লক্ষ্য) থাকে একটি অর্থাৎ আল্লাহর ঘর ক্বাবার দিকে, তেমনি বাস্তব জীবনেও মুসলিম জাতির জীবনের লক্ষ্য হবে একটি, তা হলো মানবজীবনে আল্লাহর দেওয়া জীবনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে শান্তি আনয়ন করা।
কাজেই সফল তারাই হবে, জান্নাতে তারাই যাবে যারা দীন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আল্লাহ ও রসুলের তরিকা (পথ, কর্মসূচি) মোতাবেক চলবে। নিজেদের আবিষ্কৃত বা ব্রিটিশ খ্রিষ্টানদের প্রদর্শিত পথে চলে জান্নাতে যাওয়া যাবে এমন কোনো অঙ্গীকার আল্লাহ দেননি। “ইসলামে রাজনীতি আছে” এ কথাটি প্রতারণামূলক অর্ধসত্য। ইসলাম যেহেতু সামগ্রিক জীবনব্যবস্থা তাই তার একটি রাষ্ট্রনীতি তো থাকতেই হবে কিন্তু ব্রিটিশদের রচিত রাজনৈতিক পদ্ধতি কি আল্লাহর রসুলের পদ্ধতি? আল্লাহর রসুল কি এই ধান্ধাবাজি আর প্রতারণার রাজনীতি করেছেন? কক্ষণো নয়। তারা স্রেফ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর ভোট নিশ্চিত করার জন্য প্রচলিত রাজনীতিকে ইসলামের রূপ দিয়েছে। তাদের চিন্তাবিদ ও আলেমগণ নানা কূটকৌশল (তাদের ভাষায় হেকমত) অবলম্বন করে কোর’আন, হাদিসের বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্ত উক্তি এবং রসুলের জীবনের নানা ঘটনার মতলবি ব্যাখ্যা দিয়ে প্রমাণ করতে চেষ্টা করেছেন যে তাদের সকল রাজনৈতিক কর্মসূচি ও সিদ্ধান্তগুলো ইসলামসম্মত। এভাবে ‘ইসলামে রাজনীতি আছে’ এই শ্লোগানটি দিয়ে ব্রিটিশের রাজনৈতিক পদ্ধতিকে জায়েজ করে ফেলা হলো। রসুলাল্লাহ বলেছেন, ‘যুদ্ধ মানেই হেকমত, কৌশল’। এই হাদিসকে নীতি হিসাবে গ্রহণ করে তারা রাজনৈতিক স্বার্থে সর্বপ্রকার মিথ্যা, শেরক ও কুফরের সাথে আপসও করে চলেছেন এবং নিজেরাও সেসবে লিপ্ত হচ্ছেন।
তারা জনগণকে বুঝ দেওয়ার জন্য বললেন যে, মদিনা ছিল একটি ‘ইসলামিক রাষ্ট্র’ যদিও জাতিরাষ্ট্রের বর্তমান ধারণা ১৪শ’ বছর আগে ছিলই না। ইসলামে নির্দিষ্ট ভূখণ্ডের সীমানা বা নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর ধারণাই নেই। তারা আল কোর’আনকে আধুনিক যুগের ভাষায় শুধুমাত্র ‘সংবিধান’ বলতে চান, কারণ এখন সব দেশে সংবিধান আছে। কোর’আন আর বর্তমানের সংবিধানের মধ্যে যে আসমান জমিন ফারাক সেটা তারা নিজেরা জানলেও জনগণকে সে বিষয়ে বলেন না। কোর’আন কোনো বিজ্ঞানের বই নয়, যদিও এতে বহু বৈজ্ঞানিক সত্য ও তত্ত্ব উল্লেখ করা হয়েছে, কোর’আন দণ্ডবিধি বা শরিয়তের বই নয়, যদিও এতে বেশকিছু দণ্ডবিধি সন্নিবেশিত হয়েছে। কোর’আন কোনো ইতিহাসের বই নয়, যদিও এতে বহু ঐতিহাসিক ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে। কোর’আন সত্য ও মিথ্যার ফারাককারী এক মহা অলৌকিক ও বিস্ময়কর গ্রন্থ, একে আল্লাহ স্বয়ং বলেছেন উপদেশগ্রন্থ। এতে মানুষের আধ্যাত্মিক শুদ্ধতা থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয়, অর্থনৈতিক, সামরিক, বিচারিক অর্থাৎ সামগ্রিক জীবনে শান্তিলাভের মূলনীতিগুলো রয়েছে। সেই চিরন্তন মূলনীতিগুলো পাল্টে ফেললে সেটা আর ইসলাম থাকে না। যুগের সাথে পোশাক পাল্টাতে পারে, যানবাহন পাল্টাতে পারে, প্রযুক্তি পাল্টাতে পারে কিন্তু দীনের মূলনীতিগুলো পাল্টাতে পারে না। তারা মদিনা সনদকে ‘গঠনতন্ত্র’ বলতে চান যেটা আসলে ছিল একটা নিরাপত্তা চুক্তি। এসব পরিভাষা তারা ব্যবহার করে ইসলামকে ঐ ব্রিটিশ রাজনীতির কাঠামোয় ফেলতে চান, জনগণের কাছে নিজেদেরকে ইসলামের খেদমতকারী হিসাবে প্রকাশ করতে চান। তারা যেহেতু মার্কা নিয়ে নির্বাচন করছেন, নির্বাচনকে বলেন জেহাদ আর ব্যালটকে বলেন সেই জেহাদের বুলেট। আল্লাহর রসুল (সা.) বা তাঁর সাহাবিরা কোনো মার্কা নিয়ে নির্বাচন করেননি। ধর্মব্যবসা হারাম জেনেও এর বিরুদ্ধে তারা মুখ খোলেন না। ধর্মব্যবসায়ী ইমামদের পেছনেই নামাজ পড়েন, তাদেরকে হাতে রাখার চেষ্টা করেন। কারণ একটাই- তাদের ভোট দরকার আর ধর্মব্যবসায়ীরা জনগণের ধর্মানুভূতির উপর প্রভাবশালী। এখানে সত্য-মিথ্যা, ন্যায়-অন্যায় কোনো বিষয় না। আল্লাহ সুদ হারাম করেছেন। সুতরাং সুদমুক্ত কোনো ব্যাংকিং পদ্ধতি চালু করা গেলে ধর্মানুরাগীরা সেখানে টাকা গচ্ছিত রাখবেন। তাই তারা কায়দা করে এমন একটি ব্যাংকিং পদ্ধতি চালু করল যাকে জনগণের সামনে ইসলামসম্মত ও হালাল বলে প্রচার করা হলো। ইসলামে যে পুঁজিবাদই হারাম আর ব্যাংক যে পুঁজিবাদেরই কার্যালয় সেটা আর কেউ জনগণকে স্মরণ করিয়ে দিল না। তারা নিজেরা বৈশ্বিক সুদব্যবস্থার সাথে লেনদেন বজায় রাখলেন (এটা ছাড়া উপায়ও নেই), আবার জনগণকেও ইসলামিক ‘পুঁজিবাদ’ ধরিয়ে দিলেন। মানুষের ঈমানকে, ধর্মপ্রিয় মানসিকতাকে ব্যবহার করে তারা এভাবেই স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল ইত্যাদি বহুপ্রকার ব্যবসা করেন। এগুলো তারা করতে পারবেন ঠিকই, আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারবেন ঠিকই, কিন্তু মানুষ কোনোদিন ইসলাম পাবে না। কারণ এগুলোও ধর্মব্যবসার একটি রূপ যা দ্বারা মানবজাতি কেবল প্রতারিতই হয়, ক্ষতিগ্রস্তই হয়।
একটি উদাহরণ দিলে ইসলাম ও রাজনৈতিক ইসলামের পার্থক্যটা হয়তো সুস্পষ্ট হবে। ধরুন দুই ঠিকানায় অবস্থিত সম্পূর্ণ ভিন্ন ধাঁচের দু’টো বাড়ি। এর একটি হচ্ছে ইসলাম আরেকটি হচ্ছে বর্তমানের জাতিরাষ্ট্র। যারা প্রচলিত রাজনৈতিক তরিকায় ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে চান তারা কী করছেন? তারা পশ্চিমাদের দেখানো পথ বেয়ে তাদের বাড়িতেই প্রবেশ করতে চাচ্ছেন। নিয়ত হচ্ছে, একবার ক্ষমতায় যাই। তারপর একটা একটা করে সেই বাড়ির ইট, কাঠ, জানালা, কামরা (বিধিবিধান, নীতিমালা) পাল্টে ফেলব। তারা বুঝতেই পারছেন না যে নতুন বাড়ি নির্মাণ করতে হলে পূর্বের বাড়ির ভিত্তিসহ চূর্ণ করতে হয়।
আল্লাহর বাড়িও আলাদা, আল্লাহর বাড়ির পথও আলাদা। অন্যের বাড়ির পথ দিয়ে আল্লাহর বাড়িতে ঢোকা যাবে না। পরের জমিতে বাড়ি বানালে সেই বাড়ি রক্ষা করা যায় না। আল্লাহ সত্যদীন দিয়েছেন, সেই দীন প্রতিষ্ঠার পথ দিয়েছেন, আলাদা কর্মসূচিও দিয়েছেন। সেগুলো সব বাদ দিয়ে পশ্চিমাদের তৈরি করা পথে ও প্রক্রিয়ায় আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠা হবে না। তারা দুই একটি সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের দেশে জনগণকে মিষ্টি কথায় ভুলিয়ে, স্বপ্ন দেখিয়ে, তাদের ভোটব্যাংক ব্যবহার করে যদিও বা ক্ষমতায় বসতে পারেন, তাদেরকে তিউনিশিয়ার আন নাহ্দার মতো সংস্কারের মাধ্যমে নিজেদের মূল কাঠামোরই পরিবর্তন করতে হবে, প্রচলিত রাষ্ট্রব্যবস্থা, আন্তর্জাতিক নীতিমালাই মেনে চলতে হবে। আজ যেমন বহু কট্টর বামপন্থী দল ভোল পাল্টে গণতান্ত্রিক হয়েছে, তেমনি বহু ইসলামিক দলকেও ভোল পাল্টে সেক্যুলার সাজতে হচ্ছে। একটা পর্যায়ে তারা ইসলামও মানতে পারবে না, আল্লাহর সার্বভৌমত্বও প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না। আর যদি একটুও এদিক সেদিক করে তাহলে পাশ্চাত্য তরিকায় গড়ে ওঠা দেশীয় সেনাবাহিনী আছে, তারা যেভাবে মিশরের ইখওয়ানুল মুসলিমিনকে এক বছরের ব্যবধানে গদিচ্যুত করে নেতাদের গণহত্যা করেছে, ফাঁসিতে ঝুলিয়েছে তেমনটাই করবে। তারা কেউ ক্ষমতায় গিয়ে ‘খলিফা’ পদবি ধারণ করতে পারলেও গলার কাঁটা হয়ে থাকবে বিরোধীদলগুলো যারা নানা ইস্যুতে জ্বালাও পোড়াও করে ‘খলিফা’র ঘুম হারাম করে দেবে, জনপ্রিয়তা নষ্ট করার চেষ্টা করবে। জনপ্রিয়তা নষ্ট হলে পাঁচ বছর পরে ‘খেলাফত’ শেষ। আবার মার্কা নিয়ে নির্বাচনের জন্য রাজপথে বসে অপেক্ষা। এমন ভঙ্গুর ব্যবস্থা, বানরের মতো পিচ্ছিল বাঁশে আরোহণের ব্যবস্থা তো আল্লাহর ‘ইসলাম’ হতে পারে না।
আল্লাহর রসুল যেহেতু একজন রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন তিনি আমাদের জন্য আদর্শ হিসাবে রাষ্ট্রনীতিও রেখে গেছেন। তাঁর মূল নীতি ছিল সর্বদা সত্যের উপর সরল পথে অটল থাকা এবং পরিণতি যা-ই হোক সেটা আল্লাহর উপর সোপর্দ করে দেওয়া। তাতে সম্পত্তির ক্ষতি হয় হোক, জনপ্রিয়তা বাড়ুক বা কমুক সেটা নিয়ে তিনি কখনও চিন্তিত হননি। কোনো প্রলোভনের কাছেই তিনি আত্মবিক্রয় করেননি। যেনতেনভাবে রাষ্ট্রশক্তি অর্জনের চিন্তা যদি তাঁর থাকতো তাহলে মক্কায় থাকতে তো তাঁকে মক্কার শাসক, সুলতান হওয়ার প্রস্তাব করাই হয়েছিল। তিনি তো এটা ভাবতে পারতেন যে, আগে ক্ষমতাটা হাসিল করি, পরে আমার মনের মধ্যে যা আছে সেটা সুযোগ বুঝে বাস্তবায়ন করব। কিন্তু না, তিনি হেকমতের নামে ঐ বক্র পথে হাঁটেননি। তিনি আল্লাহর হুকুমের পক্ষে যাবতীয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলেছেন। সেখানে প্রতিটি নাগরিকই ছিল রাষ্ট্রের ও ধর্মের পাহারাদার। আলাদা কোনো সামরিক বাহিনী ছিল না, আলাদা পুলিশ বাহিনী ছিল না। তিনি ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য কাউকে কোনোদিন মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেন নি। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি নিজের কসম (ওয়াদা) দ্বারা কোন মুসলমানদের সম্পদ কুক্ষিগত করতে চায়, সে নিজের জন্য জাহান্নাম অবধারিত ও জান্নাত হারাম করে ফেলে। এক ব্যক্তি বললো, হে আল্লাহর রসুল (স.) যদি তা খুব নগণ্য জিনিস হয় তবুও? তিনি বললেন, যদি একটা গাছের ডালও হয় তবুও (মুসলিম, নাসায়ী, ইবনে মাযাহ)।
ইসলামের নামে চলমান রাজনীতিতে ইশতেহারের মধ্যে প্রদত্ত শত শত অঙ্গীকার ক্ষমতায় গেলে ভুলে যাওয়া হয়, মনে থাকলেও বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না। সিস্টেমের কারণে চাইলেও অনেক কিছু করা যায় না। তাদের দলীয় নেতৃত্ব কর্মীদেরকে জেহাদের আয়াত, হাদিস ইত্যাদি বলে উদ্বুদ্ধ করেন কিন্তু নিজেরা কর্মীদের মতো কষ্ট করতে চান না। তারা আরাম-আয়েশের মধ্যে জৌলুসপূর্ণ জীবনযাপন করতে ভালোবাসেন। তারা নিজেদের ছেলে মেয়েদেরকে বিদেশে পড়ান। আন্দোলনের চেয়ে আর্থিক সমৃদ্ধি, চাকুরি, ব্যবসা ইত্যাদিই তাদের ব্যস্ততা ও চিন্তার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু আল্লাহ বলেছেন, নিশ্চয়ই যারা আল্লাহর নামে অঙ্গীকার করে ও কসম খেয়ে (ওয়াদা) তার বিনিময়ে তুচ্ছ পার্থিব স্বার্থ হাসিল করে, পরকালে তাদের কিছুই থাকবে না, আল্লাহ তাদের সাথে কথা বলবেন না, তাদের দিকে দৃষ্টি দেবেন না, এবং তাদেরকে পবিত্রও করবেন না। তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। (আল কোর’আন: সুরা আল ইমরান ৭৮)।