কিছুদিন আগে ফেসবুকে একজনের প্রশ্নের জবাব দিচ্ছিলাম। এক পর্যায়ে তিনি আমাকে ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিকদের সাথে ডিবেট করতে প্রস্তাব দিলেন। কী মনে করে দিলেন তিনিই ভালো জানেন। হয়ত তিনি মনে করেছেন আমাদের আদর্শিক লেখা ও বক্তব্যগুলো ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিকরা খণ্ডন করতে পারবেন বা তাদেরটা আমরা খণ্ডন করতে পারব। যাহোক আমি তাকে বলেছিলাম হেযবুত তওহীদের সদস্যদেরকে ইসলামবিদ্বেষীদের সাথে বাহাস-বিতর্কে বসানোর কোনো ইচ্ছা থাকলে সে ইচ্ছা যেন তিনি এখনই ধুয়ে মুছে ফেলেন, ওটা কখনই হবার নয়। কেন হবার নয় তা ব্যাখ্যাসমেত তাকে বুঝিয়ে দিয়েছিলাম এবং সেটাই বজ্রশক্তির পাঠকদের কাছে তুলে ধরব আজকে। আশা করি এই লেখাটি পড়ার পর পাঠকরা ইসলামবিদ্বেষীদের ব্যাপারে হেযবুত তওহীদের আদর্শিক অবস্থান সম্পর্কে একটা ধারণা পাবেন।
১. ইসলামবিদ্বেষীদের প্রধান বিতর্কের বিষয় হচ্ছে, আল্লাহ আছেন কি নেই? প্রথমত, আল্লাহ আছেন কি নেই এটা কেউ বিতর্ক করে বা যুক্তি দিয়ে সন্দেহতাতীতভাবে প্রমাণ করার সামর্থ্য রাখে না। আমরা যেমন বিশ্বাস করি যে, আল্লাহর অস্তিত্ব আছে, তিনি সমস্ত সৃষ্টিজগতের ইলাহ ও রব এবং এর পক্ষে বহু যুক্তি উত্থাপন করতে সক্ষম, একজন নাস্তিক তেমন বিশ্বাস করে আল্লাহর অস্তিত্ব নেই, সৃষ্টিজগত এমনি এমনিই অপরিকল্পিতভাবে তৈরি হয়ে গেছে। দু’টোই কিন্তু বিশ্বাস। আস্তিকরা যেমন আল্লাহর আরশে গিয়ে আল্লাহকে দেখে আসে নি, নাস্তিকরাও তেমন স্রষ্টা তো দূরের কথা, সৃষ্টিরই একটি অতি সামান্য অংশের আংশিক জ্ঞান অর্জন করেই অনুমান করে নিচ্ছে আল্লাহ বলে কেউ নেই। যদি যুক্তিকেই একমাত্র কষ্টিপাথর হিসেবে ধরা হয় তাহলে দেখা যাবে নাস্তিকতার স্বপক্ষের যুক্তির তুলনায় আস্তিকতার স্বপক্ষের যুক্তিই বহুগুণ শক্তিশালী। তবে যতই শক্তিশালী হোক, কেউ যদি বলেন আল্লাহকে স্বচক্ষে দেখাতে পারলে প্রমাণিত হবে আল্লাহ আছেন, তাছাড়া নয়, তাহলে তাকে স্বচক্ষে দেখিয়ে আল্লাহর অস্তিত্ব প্রমাণের সামর্থ্য আমাদের কারোই নেই এবং আল্লাহ সেটা চানও না। আল্লাহ যদি নিজেকে চাক্ষুস দেখিয়েই মানুষের ঈমান আনাতে চাইতেন তাহলে মানুষ নামের এই সৃষ্টিটি আশরাফুল মাখলুকাত বা সৃষ্টির সেরা জীব হতে পারত না। আল্লাহ সর্বশক্তিমান। তিনি ইচ্ছে করলে এই মুহূর্তে তাঁকে না দেখেই পৃথিবীর সমস্ত মানুষ তাঁর প্রতি ঈমান আনবে (আন’আম: ৩৫) কিন্তু তিনি তা করবেন না। কারণ মানুষকে আল্লাহ যুক্তি, বুদ্ধি, উপলব্ধির শক্তি দিয়েছেন এই কারণে যে, মানুষ এগুলো ব্যবহার করে আল্লাহর অস্তিত্ব উপলব্ধি করবে। যারা এই শক্তির ব্যবহার করবে না, অযৌক্তিক দাবি করে বলবে আল্লাহ থাকলে তিনি কেন আমাদের সামনে আসেন না, তারা আল্লাহর দেওয়া বিশেষ নেয়ামত যুক্তি বুদ্ধি উপলব্ধির শক্তিকে খাটাতে চান না। তারা ধোঁয়া দেখেন কিন্তু যেহেতু যুক্তির শক্তিকে ব্যবহার করতে পারেন না কাজেই এই সহজ বিষয়টি তাদের বুঝে আসে না যে, আগুন না থাকলে ধোঁয়া আসতে পারে না, স্রষ্টা না থাকলে সৃষ্টি হতে পারে না। এই যুক্তিজ্ঞানহীন ব্যক্তিদের সামনে আল্লাহর অস্তিত্ব প্রমাণ করানোর সাধ্য আর যাই হোক আমাদের নেই! এদের ব্যাপারে আল্লাহ বলেছেন, ‘আমি যদি তাদের কাছে ফেরেশতাদেরকে অবতরণ করতাম এবং তাদের সাথে মৃতরা কথাবার্তা বলত এবং আমি সব বস্তুকে তাদের সামনে জীবিত করে দিতাম, তথাপি তারা বিশ্বাস স্থাপনকারী হত না (আন’আম: ১১১)।
দ্বিতীয়ত, আল্লাহ থাকা বা না থাকার অর্থাৎ আস্তিকতা বা নাস্তিকতার বিষয়টি এমন নয় যে, এই বিষয়ে সবাই একমত না হলে হেযবুত তওহীদ যে উদ্দেশ্যে সংগ্রাম করে যাচ্ছে তা বাধাগ্রস্ত হবে। কখনই তা নয়। হেযবুত তওহীদ সম্বন্ধে যাদের মোটামুটি ধারণা আছে তারা জানেন আমরা বাস্তব সঙ্কট নিয়ে কথা বলি এবং তার সমাধান হিসেবে প্রকৃত ইসলামের যৌক্তিকতাকে তুলে ধরি বাস্তবসম্মত কারণেই। আল্লাহ থাকলেও ইসলাম বাস্তবসম্মত জীবনব্যবস্থা, না থাকলেও বাস্তবসম্মত ও সফল জীবনব্যবস্থা এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। কোনো দেশের সবাই আল্লাহ ও রসুলে বিশ্বাসী না হয়েও যদি কোর’আনের পথনির্দেশনা ও মহানবীর আদর্শ মোতাবেক নিজেদের সমষ্টিগত জীবন পরিচালনা করার সিদ্ধান্তে নেয় তারা অন্তত পার্থিব দিক দিয়ে সফলকাম হবেই। আপনি ন্যায় ও সত্যের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হোন এবং এই সাক্ষ্য দিন যে, সমাজের ক্ষতি হয় এমন কোনো কাজ করব না, ব্যস, সমাজ জীবনে আপনার কাছে ইসলাম এর বেশি কিছু প্রত্যাশা করে না। এইটুকুর বিনিময়ে ইসলাম আপনাকে দেবে ন্যায়, শান্তি, সুবিচার ও নিরাপত্তা। হেযবুত তওহীদ আস্তিক-নাস্তিক নির্বিশেষে সবার কাছে এই দাবিটুকুই কেবল করে চলেছে। তবে হ্যা, পৃথিবীতে আল্লাহর অস্তিত্ব অবিশ্বাস করে ও আল্লাহকে একমাত্র ইলাহ হিসেবে স্বীকৃতি না দিয়ে মৃত্যুবরণ করলে কেউ পুলসিরাতের বৈতরণী পার হতে পারবেন না। নাস্তিকরা তখন আল্লাহকে তাদের যুক্তি, বুদ্ধি, উপলব্ধির শক্তি ব্যবহার না করার কৈফিয়ত দিবেন, সেটা আল্লাহর সাথে তাদের বোঝাপড়া। তা নিয়ে আমাদের মাথা না ঘামালেও চলছে!
২. এবার আসুন দ্বিতীয় প্রসঙ্গে। নাস্তিকদের কথা হচ্ছে ইসলাম মোহাম্মদ (সা.) এর নিজের তৈরি জীবনব্যবস্থা (নাউজুবিল্লাহ)। কারণ কেউ কোনোদিন জিবরাইল (আ.) কে দেখে নাই, মিরাজেও একমাত্র রসুল (সা.) গিয়েছিলেন, অন্য কেউ যায় নাই ইত্যাদি। এই অভিযোগ শুনে ইসলামের পণ্ডিতরা আপ্রাণ চেষ্টা চালাতে থাকেন এটা প্রমাণ করতে যে, ‘না- ইসলাম মোহাম্মদ (সা.) এর নিজের তৈরি হতেই পারে না! কেউ কেউ আবার কোর’আন থেকে উদ্ধৃতি দেন যেখানে আল্লাহ নিজেকে কোর’আনের রচয়িতা বলেছেন!’ এগুলোও অহেতুক নিষ্ফল বিতর্কমাত্র। আপনাকে বুঝতে হবে যুক্তিবোধহীন ইসলামবিদ্বেষীদের সামনে আল্লাহর অস্তিত্ব প্রমাণ যেমন অসম্ভব, তেমনি ইসলাম যে মহানবীর নিজস্ব মস্তিষ্কপ্রসূত দ্বীন নয়, আল্লাহরই প্রেরিত দ্বীন সেটাও অনন্তকাল ধরে চেষ্টা করলেও ইসলামবিদ্বেষীরা যেমন প্রমাণ চায় তা কেউ দিতে পারবে না। আমাদের কথা হচ্ছে, একটা সিস্টেম ভালো কি মন্দ তা নির্ভর করে ঐ সিস্টেম প্রয়োগে সমাজে ন্যায়, শান্তি, সুবিচার আসে কিনা তার উপর। যদি শান্তি এনে দিতে পারে তাহলে ঐ সিস্টেমের প্রণেতা আল্লাহ নাকি মানুষ তা নিয়ে বাহাস করা রীতিমত আহাম্মকী ছাড়া কিছু নয়। বৃক্ষ তোমার নাম কী? ফলে পরিচয়। ইসলামের ফল হয়েছিল শান্তি এটা তো ইতিহাস। প্রকৃত ইসলাম যখন আরবে প্রতিষ্ঠিত হলো সমাজ থেকে অন্যায়, অবিচার, কুপ্রথা, রক্তপাত ধুয়ে মুছে গেল। এমন সামাজিক নিরাপত্তা এলো মাসের পর মাস আদালতে কোনো অপরাধসংক্রান্ত মামলা আসত না। এমন অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা এলো যাকাতের সম্পদ নিয়ে মানুষ পথে পথে ঘুরত কিন্তু গ্রহণ করার মত লোক পাওয়া যেত না। পরবর্তীতে ইসলামের অনেক অপব্যবহার হয়েছে যেটা বর্তমান কালেও অনেক আদর্শের ক্ষেত্রে হচ্ছে। এই অপব্যবহারটা বন্ধ করতে পারলে আজও ইসলাম দিয়েই সমাজে ন্যায়, শান্তি, সুবিচার প্রতিষ্ঠা সম্ভব। পক্ষান্তরে পশ্চিমাদের অনুকরণে রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থা থেকে ইসলামকে নির্বাসনে পাঠানোর পর ধর্মহীন যে রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থা আমরা কার্যকর করেছি তা শান্তির ‘শ’ দিতে পারে নি এবং পারবেও না কোনোদিন। সুতরাং ইসলাম আল্লাহর বানানো নাকি মানুষের বানানো সেটা নিয়ে নাস্তিকদের সাথে নিষ্ফল বিতর্কে যাবার মানে হয় না, শান্তি আনয়নে ইসলাম অনন্য এই সত্যটুকু মেনে নিলেই হয় এবং এই কথাটির দিকেই আমাদের আহ্বান, আস্তিকের প্রতিও, নাস্তিকের প্রতিও।
৩. ইসলামবিদ্বেষীরা বলেন রসুল রক্তপাত করেছেন, যুদ্ধ করেছেন, এগুলো মেনে নেওয়া যায় না। এই নিয়ে অনেক বিতর্কও করেছেন ধর্মীয় নেতাদের সাথে। অথচ এটাও কোনো বিতর্কের বিষয়ই নয়। প্রথমত, অন্যায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার অধিকার প্রত্যেক মানুষের আছে। শুধু অধিকার নয়, এটা মানুষের কর্তব্য, এটা পশুর সাথে তার পার্থক্যরচনাকারী। রসুল (সা.) যখন নিশ্চিত হলেন যে, তাঁর কাছে যে আদর্শটি আছে তা প্রয়োগ করলে পৃথিবীর সমস্ত অন্যায়, অবিচার, যুদ্ধ, রক্তপাত, শোষণ, বঞ্চনা বন্ধ হয়ে যাবে তখন তিনি সেটাকে প্রতিষ্ঠার জন্য সবকিছু করেছেন এবং তা অবশ্যই মানবজাতির স্বার্থেই। অন্যায়কারী, অত্যাচারী রাষ্ট্রশক্তির অধিকারীরা জনগণের ভালো-মন্দ ভেবে তাঁর বিনীত অনুরোধ মেনে নিয়ে ঐ আদর্শকে কার্যকরী করবে না, তারা তাদের কায়েমী স্বার্থকেই রক্ষা করবে তা তিনি ভালো করেই জানতেন, ওপথে তিনি বহু প্রচেষ্টাও করেছেন। কিন্তু শেষাবধি যুদ্ধ রসুলকে করতে হয়েছে এবং তিনি যুদ্ধ করেছেন বলেই অর্ধপৃথিবীর মানুষ ইসলামের মত সুমহান আদর্শের ছায়াতলে আসার সৌভাগ্য লাভ করেছিল। দ্বিতীয়ত, কোনো আদর্শই শক্তি প্রয়োগ ছাড়া প্রতিষ্ঠা করা যায় নি, গনতন্ত্রও না, সমাজতন্ত্রও না, ইসলামবিদ্বেষীরা শুধু দেখতে পায় ইসলামকে। ইসলামের যুদ্ধনীতি দেখে তারা আঁতকে ওঠেন, কিন্তু পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীদের বিশ্বব্যাপী রাষ্ট্রীয় ভায়োলেন্স তাদের কাছে কোনো বিষয়ই নয়। তালেবানরা আফগানিস্তানে ইসলাম প্রতিষ্ঠার কথা বলে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে সেটা তারা ভালোমতই দেখতে পান, কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অজুহাতে ইরাক, লিবিয়া, সিরিয়া, আফগানিস্তানকে গণকবর বানিয়ে ফেলল সেটা তারা দেখতে পেলেন না। স্বভাবতই পুঁজিবাদী গণতন্ত্র তাদের কাছে হুমকি নয়, হুমকি কেবল কোর’আন আর হাদিস। এই প্রায়ান্ধদের সাথে কীসের বিতর্ক করবেন? এরা যুক্তির শক্তি ব্যবহার করে অমন ইসলামবিদ্বেষী হলে একটা কথা ছিল, উপযুক্ত যুক্তি দিয়ে বোঝানো যেত। কিন্তু এদের যুক্তিবোধেই সমস্যা, বিতর্ক করবেন কীসের ভিত্তিতে? না, যারা ভাবছেন যুক্তি দিয়ে, বাহাস করে এদেরকে ইসলামের মাহাত্ম্য বোঝাবেন তারা ভুল ভাবছেন, তার চেয়ে আল্লাহর দেওয়া নির্ভুল জীবনব্যবস্থাটি প্রতিষ্ঠা করুন এবং তার মাধ্যমে এমন ন্যায়, শান্তি ও সুবিচার আনয়ন করুন যেটা অন্য কোনো জীবনদর্শন ব্যর্থ হয়েছে। তাহলে সেটাই হবে ইসলামবিদ্বেষীদের সমুচিত জবাব!
৪. ইসলামবিদ্বেষীরা আল্লাহ-রসুলের বিরুদ্ধে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাক্যব্যয় করতে পারেন, বিতর্কের নামে প্রচলিত ইসলামকে আক্রমণ করতে পারেন, কিন্তু আল্লাহকে বাদ দিয়ে মানুষ কাকে তাদের ইলাহ হিসেবে গ্রহণ করবে, প্রচলিত ইসলামের বিকল্প হিসেবে কোন আদর্শকে গ্রহণ করে নিবে সেই রূপরেখার ব্যাপারে এক মিনিটও সময় দিতে রাজি নন। কারণ তারা এই বিষয়ে কপর্দকশূন্য, ভাণ্ডার খালি, তাই ওপথ মাড়ান না। কিন্তু হেযবুত তওহীদের মূল কাজ এটাই, মানুষের বাস্তব সঙ্কটের বাস্তব সমাধান তুলে ধরা। এই কাজটি যদি ইসলামবিদ্বেষীরা করতেন, যদি আমাদের প্রস্তাবিত আদর্শের বিপরীতে তারা অন্য কোনো আদর্শ প্রচার করতেন তাহলে এই দুই আদর্শের মধ্যে তুলনামূলক আলোচনার একটা সুযোগ থাকত। যেহেতু তা নয়, তাদের লক্ষ্য ও আমাদের লক্ষ্য, তাদের পথ ও আমাদের পথ সমান্তরাল নয়, কাজেই তাদের পুরো ব্যাপারটাই হেযবুত তওহীদের কাছে অবান্তর!
আমরা কী করছি? হাজার বছরের বিকৃতির জঞ্জাল সরিয়ে আল্লাহ-রসুলের প্রকৃত ইসলামকে মানুষের সামনে তুলে ধরতে চেষ্টা করছি যেটা কিনা একাধারে মানুষের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, পারিবারিক সঙ্কটের সুষ্ঠু ও ভারসাম্যপূর্ণ সমাধান এনে দিতে পারে। পক্ষান্তরে ইসলামবিদ্বেষীরা সমস্যার জটেই আটকে আছেন, সমাধান নিয়ে ভাবার আগ্রহ ও সামর্থ্য কোনোটিই তাদের নেই। ভোগবাদী স্বার্থপরতার যুগে মানুষ যখন আপন পিতা-মাতার গলায় ছুরি চালাচ্ছে, তখন আমরা প্রকৃত ইসলামের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে মানুষের কল্যাণে নিজেদের জীবন-স¤পদ উৎসর্গ করে যাচ্ছি। ইসলামবিদ্বেষীরা কয়জনকে জীবন-স¤পদ উৎসর্গ করা শেখাতে পেরেছেন? হিমালয় পর্বত অতিক্রম করা সহজ, কিন্তু মানুষকে নিঃস্বার্থ বানানো কঠিন। মানুষ মারা সহজ, জীবন দেওয়া কঠিন। সমালোচনা করা সহজ, সঠিক পথ দেখানো কঠিন। আমরা সেই কঠিন কাজটি কাঁধে তুলে নিয়েছি।
৫. যুক্তির আদালতে কেবল ইসলামবিদ্বেষীরাই কাঠগড়ায় দাঁড়াবে কিন্তু যাদের অন্ধত্ব ও কূপমণ্ডূকতা দেখে মানুষ নাস্তিকতার দিকে ধাবিত হলো সেই ধর্মব্যবসায়ীরা হিসাবের বাইরেই থেকে যাবে তা হবার নয়। ধর্মের নামে অযৌক্তিক ও হাস্যকর কর্মকাণ্ড, ধর্মান্ধতা, সাম্প্রদায়িকতা, বিজ্ঞানহীনতা, ধর্মব্যবসা, সন্ত্রাস ইত্যাদি দেখে চিন্তাশীল মানুষমাত্রই বিচলিত হন! ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা হারাতে থাকেন। মনে করেন ধর্ম বুঝি এমনই। শেষাবধি তারা ধার্মিক থাকতে পারেন না ধর্মের নামে এসব অহেতুক অযৌক্তিক বানোয়াট কর্মকাণ্ড দেখে। সম্প্রতি আমাদের দেশেরই অন্তত একজন জনপ্রিয় ইসলামিক স্কলার এবং একজন মুফতির ইসলাম ত্যাগ করে নিজেকে নাস্তিক ঘোষণা করার খবর ইন্টারনেটে বহুল আলোচিত হয়েছে। ইসলাম ত্যাগের পর থেকে তারা ইসলামের বিরুদ্ধে অবিশ্রান্তভাবে লেখালেখি ও বক্তৃতা করে যাচ্ছেন এবং মানুষকে বোঝাবার চেষ্টা করছেন ইসলামের ব্যাপারে অগাধ পাণ্ডিত্য অর্জনের পরেও আমরা ইসলাম ত্যাগ করেছি কারণ ইসলামে নীতি-নৈতিকতা বলে কিছু নাই, মানবতা নাই ইত্যাদি। তারা ধার্মিক বলে নিজেদের দাবি করলেও আদতে তারা প্রকৃত ধর্ম দেখেন নি, বোঝেনও নি। তারা সারাজীবন ইসলামের নামে যে ধর্মবিশ্বাসটি দেখে এসেছেন এবং নিজেরাও লালন করে এসেছেন সেটা আল্লাহ-রসুলের প্রকৃত ধর্ম নয়, সেটা লেবাসী ধর্ম, প্রতিষ্ঠাননির্ভর আনুষ্ঠানিকতাসর্বস্ব একটা বিশ্বাসমাত্র। ধর্মের আত্মাটাই সেটাতে ছিল না। তাই ঐ ধর্মের জ্ঞানে মহাপণ্ডিত হলেও বিবেকের কাছে তারা ছিলেন দেউলিয়া। বিবেকের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে প্রশ্নে প্রশ্নে জর্জরিত হয়েছেন এবং স্বভাবতই সেই প্রশ্নের জবাব তারা যেখানে বিকৃত ধর্ম শিখেছেন তারা দিতে পারে নি। সেখান থেকেই অংকুরিত হয়েছে সংশয়ের বীজ, কালক্রমে আজ যা মহীরুহ। হেযবুত তওহীদ সেই সংশয়ের পথটাই রুদ্ধ করে দিচ্ছে আল্লাহ-রসুলের প্রকৃত ইসলামের আদর্শ প্রচারের মাধ্যমে, ধর্মব্যবসার গুমর ফাঁস করে দেওয়ার মাধ্যমে, জঙ্গিবাদের অসারতা প্রমাণের মাধ্যমে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সব ধর্মের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করার মাধ্যমে, যুক্তিবুদ্ধির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে; কী প্রয়োজন একজন একজন করে নাস্তিক খুঁজে বিতর্ক করতে থাকার?
এক কথায় আদর্শ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে আজ সামনে আমাদের উত্তাল সমুদ্র, আর পেছনে কুয়ো, পুকুর, খাল ইত্যাদি। ইসলামবিদ্বেষীরা পড়ে আছেন ঐ কুয়ো আর পুকুর নিয়ে। কুয়োর বাসিন্দারা কুয়োকেই সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞান করছেন, পুকুরের বাসিন্দারা পুকুরকে! কেউই জীবনে সমুদ্র দেখেন নি, বোঝেনও নি। তাদেরকে সমুদ্র বোঝানোর বিতর্কে গিয়ে লাভ নেই। যদি কোনোদিন সমুদ্র দেখার সৌভাগ্য তাদের হয় তাহলে নিজেরাই দেখবেন সমুদ্রের উন্মত্ততা, গভীরতা ও বিশালতাকে এবং এক বাক্যে মেনে নিবেন এটাই সর্বশ্রেষ্ঠ। বাহাসও লাগবে না, বিতর্কও লাগবে না।