হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

ইন্টারনেটে প্রশ্নোত্তর

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ব্লগে উত্থাপিত প্রশ্নের উত্তর 
উত্তর: আমাদের প্রথম কথা হল এই যে অন্য ধর্মের নবী রাসুল অবতার বা ধর্মগ্রন্থগুলিকে নিয়ে যারা ব্যঙ্গচিত্র আঁকে বা চলচ্চিত্র বানায়, এই কাজগুলো যারা করে আমরা মনে করি তারা আসলে সুস্থ মানুষ না। তারা সমাজের শত্র“, মানবতার শত্র“। যে কারও বাবা-মাকে নিয়ে অশোভন উক্তি করলে মানুষ তাতে ক্ষুব্ধ হবে এটা যেমন যুক্তিযুক্ত তেমনি প্রাণাধিক প্রিয় নবীকে নিয়ে কটূক্তি করলেও যারা তাঁর অনুসারী তাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হবে, এটাও যুক্তিযুক্ত। তবুও যারা এটা করে তারা মূলত একটি দাঙ্গাময় পরিস্থিতি সৃষ্টির হীন উদ্দেশ্যে কাজটি করে। পরে যখন কেউ সহিংসতা ঘটিয়ে ফেলে তখন পুরো মুসলিম জাতির উপর সন্ত্রাসের লেবেল এঁটে দেওয়া হয়। একটি ঘটনা যখন ঘটে তখন সেটা চলে যায় রাজনীতিক ধান্ধাবাজদের নিয়ন্ত্রণে, তারা এর থেকে ফায়দা লোটার চেষ্টা করে। আমাদের কথা হচ্ছে, ভিন্ন ধর্মের কোনো বিষয় নিয়ে কারো বক্তব্য থাকলে সেটাকে যৌক্তিক তথ্য উপাত্ত ইতিহাস দিয়ে তুলে ধরার সব পথ খোলা আছে। কিন্তু তা না করে এভাবে কটাক্ষ করা হয় শুধুমাত্র একটি ইস্যু সৃষ্টির জন্য। শার্লি হেবদো পত্রিকাটি ছিল পেছনের সারির একটি অখ্যাত সাপ্তাহিক, সেটার নাম এখন বিশ্বের সবাই জানে, ৬০ লক্ষ কপিও নাকি ছাপা হয়েছে। এটাই হল ব্যক্তিগত ও রাজনীতিক স্বার্থে ধর্মের অপব্যবহার। আমরা এসব কাজের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই।
পক্ষান্তরে যারা রসুলাল্লাহকে অপমান করলেই ফুঁসে উঠে হামলা চালিয়ে বসেন তাদেরকে আমরা রসুলাল্লাহর জীবনাদর্শ স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। রসুলাল্লাহর আড়ালে নয় একেবারে সামনে গালাগালি করা হয়েছে শত শতবার, তাঁর গায়ে থুথু ছেটানো হয়েছে, তাঁর পিঠে উটের নাড়ি-ভুঁড়ি চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে, তাঁকে মুরতাদ, কাফের, পাগল, জাদুকর, মিথ্যাবাদী ইত্যাদি বলে অপবাদ প্রচার করা হয়েছে। আল্লাহর রসুল কি পারতেন না তাঁর আসহাবদেরকে নির্দেশ দিয়ে রাতের অন্ধকারে আবু জেহেল, আবু সুফিয়ানের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিতে, বা তাদেরকে চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে হত্যা করে ফেলতে? অবশ্যই পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেন নি, তিনি দীর্ঘ ১৩ বছর অত্যাচারিত, নির্যাতিত হয়েও যুক্তি দিয়ে মানুষকে বুঝিয়ে গেছেন যে, আল্লাহর হুকুম ছাড়া আর কারও হুকুমে শান্তি আসবে না। এক সময় সত্যিই তাঁর আহ্বান মানুষ মেনে নিল, একদিন যারা তাঁর বিরোধিতা করেছে তারাই নবীর ডান হাত বাঁ হাতে পরিণত হলো। জোর করে রাষ্ট্রশক্তি দখল করার মধ্যে কোনো কৃতিত্ব নেই, সেখানে শান্তি আসে না। বার বার বিদ্রোহ হয়। কিন্তু মন জয় করার মধ্যে কৃতিত্ব আছে। রসুলাল্লাহ সেটা করেছিলেন, এজন্য আজও তাঁর জন্য মানুষ জীবন দিতে প্রস্তুত, আর ঐ আবু জেহেলদের বংশ নির্বংশ হয়ে গেছে। এই সত্যটি এসব জঙ্গিবাদীদেরকে বুঝতে হবে যে তারা রসুলাল্লাহর প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শন করতে গিয়ে যা করছেন তাতে না ইসলামের কোনো উপকার হচ্ছে, না উম্মাহর কোনো উপকার হচ্ছে। উল্টো বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে দেশে দেশে মুসলমানরা নিজেদের বাসে ট্রেনে আগুন দিয়ে নিজেদের স¤পদই ধ্বংস করে ফেলছে, নিজের পায়ে কুড়াল মারা আর কাকে বলে? এর চেয়ে বড় মূর্খতা আর কী হতে পারে। সুতরাং এটা সঠিক পন্থা নয়। আগে তাদের নিজেদেরকে সত্যের পক্ষে, হকের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হওয়া উচিত। তারপর প্রতিপক্ষের এ মন্তব্যগুলিকে যুক্তি দিয়ে ন্যায়সঙ্গতভাবে প্রতিহত করা, মিথ্যা অভিযোগ খণ্ডন করা। সাম্প্রদায়িক উস্কানি দেওয়া যেহেতু প্রচলিত আইনেও বৈধ নয়, যারা এমন কাজ করবে তাদের বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয়ও নেয়া যেতে পারে।
এই মুসলমানরা যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী বিক্ষোভ করে মুসলিম দেশে আগ্রাসন চালানোর প্রতিবাদে। কিন্তু তারা নিজেরাই যে নিজেদেরকে ধ্বংস করছে গত ১৩০০ বছর ধরে, এর সমাধান কে করবে? সিরিয়াতে কে কাকে মারছে, ইরাকে কে কাকে মারছে? সেখানে তো মুসলমান মুসলামনের বুকে গুলি চালাচ্ছে। সেখানে তো পাশ্চাত্য আগ্রাসন বর্তমানে নেই। গত দুই বছরে সিরিয়াতে মারা গেল ২ লক্ষ ২০ হাজার মুসলমান। এই শিয়া বনাম সুন্নি দাঙ্গায় ইরাকে, আফগানিস্তানে, পাকিস্তানে কত কোটি মানুষ মারা গেছে আজ পর্যন্ত তার ইয়ত্তা নেই। এই সন্ত্রাসবাদীদের প্রতি কথা হচ্ছে, আগে দয়া করে ১৬০ কোটি মুসলিম জাতির মধ্যে প্রাণ সঞ্চার করুন, শিয়া-সুন্নি, হানাফি-হাম্বলী নিয়ে হানাহানি বন্ধ করুন, সবাইকে নিয়ে একটি ই¯পাতকঠিন ঐক্যবদ্ধ জাতি গড়ে তুলুন, দেখবেন এসব কার্টুন আঁকা এমনিতেই বন্ধ হয়ে যাবে। এই জাতিটি ১৪০০ বছর আগে যখন একটি অখণ্ড জাতি ছিল তখন কি কেউ রসুলাল্লাহর বিরুদ্ধে কটূক্তি করার সাহস পেত? এটা হচ্ছে কবিগুরুর ভাষায়, নির্বিষ সর্পের ব্যর্থ ফনা আস্ফালন।
অনেকে অভিযোগ করেন, আমরা হেযবুত তওহীদ কেন কোনো প্রতিবাদ, বিক্ষোভ করি না? করি না, কারণ আমাদের দৃষ্টি এগুলো অন্তঃসারশূন্য ও অর্থহীন। ১০০ বছর আগেও রসুলাল্লাহর নামে বহু অপপ্রচার করা হয়েছে, তখনো অনেক বিক্ষোভ হয়েছে। এখনো হয়। এসব করে কি অপপ্রচার কমেছে? না। বরং আরো বেড়েছে। তাই এ পথে আরো হাজার বছর চেষ্টা চালিয়ে লাভ হবে না, উল্টো ক্ষতি হবে। আমরা মনে করি, সত্যটা তুলে ধরা, সত্যের পক্ষে মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করাই আমাদের মুখ্য কর্তব্য। আর যারা ধর্মব্যবসা করেন তাদের তো রসুলাল্লাহর পবিত্র নামই মুখে আনা উচিত নয়। যে কাজ আল্লাহ হারাম করেছেন তারা সেটাকেই ধর্ম বানিয়ে নিয়েছেন। তারা যখন রসুলাল্লাহকে অবমাননা করার প্রতিবাদ করে সেটাকে বক ধার্মিকতা আর নিজেদের জাহির করার চেষ্টা ছাড়া আর কিছুই আমরা মনে করি না।

লেখাটি শেয়ার করুন আপনার প্রিয়জনের সাথে

Email
Facebook
Twitter
Skype
WhatsApp
সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...