আব্দাল্লাহ ইবনে ওমর (রা:) এবং আনাস ইবনে মালিক (রা:) বলেন, ‘আমরা একদিন রসুলাল্লাহ এর দরজায় বসা ছিলাম। তিনি বললেন, ‘এই দরজা দিয়ে তোমাদের নিকট একজন জান্নাতি মানুষ প্রবেশ করবে।’ তখন আমরা সকলেই ধারণা করেছিলাম যে, নবী পরিবারের কেউ ঐ দরজা দিয়ে প্রবেশ করবেন। কিন্তু না, আমরা দেখলাম যে, ঐ দরজা দিয়ে প্রবেশ করলেন সা’দ বিন আবি ওয়াক্কাস (রা:)। পরের দিন ভোরে রসুলাল্লাহ আবার ঐ কথা বললেন। সেদিনও যথানিয়মে সা’দ (রা:) প্রবেশ করলেন। তারপর রসুলাল্লাহ তাই বললেন। সেদিনও পূর্বের ন্যায় সা’দ (রা:) প্রবেশ করলেন। তারপর রসুলাল্লাহ মজলিস শেষে উঠে যাবার পর আব্দাল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা:) উঠে এসে বললেন, ‘আমি আমার পিতার সাথে রাগ করেছি আর কসম করে বলেছি যে, তিন দিন আমি তার নিকট যাব না। আপনি যদি আমাকে আশ্রয় দেন, যাতে আমি আমার কসম পালন করতে পারি, তবে খুব ভালো হয়।’ সা’দ (রা:) রাজী হলেন। আব্দাল্লাহ ইবনে আমর (রা:) সা’দ (রা:) এর বাসায় এক রাত কাটালেন। তিনি দেখলেন যে, ফজর পর্যন্ত সা’দ (রা:) শোয়া থেকে ওঠেন নি। তবে তিনি এতটুকু করেছেন যে, বিছানায় গিয়ে আল্লাহর যেকর ও আল্লাহু আকবার পাঠ করেছেন। ফরদ সালাহ
কায়েমের পর তিনি খুব ভালোভাবে ওজু করেছেন এবং সওম না রেখে ভোর করেছেন। অর্থাৎ সেদিন তিনি সওম রাখেন নি।
আব্দাল্লাহ ইবনে আমর (রা:) বলেছেন, ‘আমি এক নাগাড়ে তিন দিন তিন রাত তাঁকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছি। আমি দেখেছি যে, এই তিন দিনে এর অতিরিক্ত কোন আমল তিনি করেন নি। তবে আমি দেখেছি যে, তিনি ভালো ছাড়া কোন মন্দ কথা বলেন নি। তিন রাত শেষ হওয়ার পর আমি যখন তাঁর এই আমলকে নিতান্ত তুচ্ছ ও স্বল্প হিসাবে সাব্যস্ত করতে যাচ্ছিলাম তখন আমি তাঁকে বললাম, ‘মূলত আমার এবং আমার বাবার মধ্যে কোন মনোমালিন্য ও রাগারাগি হয় নি। একে একে তিনদিন তিন মজলিসে রসুলাল্লাহ যখন বললেন, ‘তোমাদের নিকট এখন একজন জান্নাতি লোক প্রবেশ করবেন এবং তিন দিনই সে সময়ে আপনি প্রবেশ করলেন, আমি সিদ্ধান্ত নিলাম যে, আমি আপনার সান্নিধ্যে থাকব, আপনার দৈনন্দিন আমলগুলি দেখব এবং আমিও অনুরূপ আমল করব, যাতে আপনি যে মর্যাদা ও সম্মান লাভ করেছেন, আমিও তা অর্জন করতে পারি। কিন্তু আমি তো আপনাকে খুব বেশী আমল করতে দেখলাম না। তাহলে বলুন তো কিসের ভিত্তিতে আপনি রসুলাল্লাহ ঘোষিত ঐ মর্যাদা লাভ করলেন?’
সা’দ (রা:) বললেন, ‘মূলত আমার আমল তুমি যা দেখেছ তার বেশি কিছু নয়।’ আব্দাল্লাহ (রা:) বলেন, ‘এরপর আমি বিদায় নিতে যাচ্ছিলাম। তিনি আমাকে ডাকলেন এবং বললেন, ‘আমার আমল তা-ই যা তুমি দেখেছ তবে একটু ব্যতিক্রম এই যে, আমি কোন মুসলিমের প্রতি বিরূপ মনোভাব পোষণ করি না, কারও অকল্যাণ কামনা করি না এবং কারো সাথে মন্দ কথা বলি না। আব্দাল্লাহ (রা:) বললেন, ‘হ্যাঁ, এটিই আপনাকে ঐ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছে। আর আমি তেমনটি করতে পারি না।