হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম:
প্রাকৃতিকভাবে মানুষ শান্তিপ্রিয়। সে চায় শান্তিতে, নিরাপদে জীবনযাপন করতে। অন্যায়, অবিচার, অশান্তি, হানাহানি সে চায় না। শান্তিতে বাস করার এই প্রবণতা মানুষের জন্মগত। কিন্তু সমাজব্যবস্থা, রাষ্ট্রব্যবস্থা ও জীবনব্যবস্থার প্রভাবে মানবসমাজে শান্তি বা অশান্তি বিরাজ করে। জীবনব্যবস্থা যদি ত্রুটিপূর্ণ হয় তাহলে হাজার চাইলেও মানুষ শান্তিতে বাস করতে পারে না। সে তার প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়।
আজকের জাতীয় ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে প্রতিটি মানুষই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা চায়। প্রতিটি মানুষই চায় এমন এক সমাজে বাস করতে, যেখানে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইয়ের ভয় থাকবে না। যেখানে আতঙ্ক থাকবে না। বাজারে গিয়ে তাকে হা পিত্যেস করতে হবে না, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি থাকবে না। তার কষ্টার্জিত অর্থ কেউ লুটপাট করে পাচার করবে না। সে স্বাধীনভাবে কথা বলবে, মতামত প্রকাশ করবে। আদালতে ঘুষ হবে না, অন্যায় হবে না। নির্দোষের উপর অন্যায় চাপিয়ে হয়রানি করা হবে না। যেখানে মানুষ তার পরিবার ও সন্তানদের নিয়ে নিরাপদে বসবাস করতে পারবে। তার সন্তানেরা শিক্ষা লাভ করবে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে তাদের জীবন বিপন্ন হবে না।
কিন্তু শুধু চাইলেই কি হয়? এই ইচ্ছা পূরণ করতে মানবজাতিকে কিছু অত্যাবশ্যকীয় শর্ত পূরণ করতে হবে। আমাদের স্মরণ রাখতে হবে, মানুষ এক উন্নত মস্তিষ্কসম্পন্ন প্রাণী। প্রকৃতির সবকিছুকে বশে এনে কাজে লাগানোর মতো বৈজ্ঞানিক ক্ষমতা, প্রযুক্তি, উদ্ভাবনী শক্তি তার রয়েছে। আবার তার মধ্যে এমন রিপুর তাড়না, হিংসা, লোভ, অহঙ্কার, ক্রোধের শক্তিও রয়েছে, যা দুনিয়াকে ধ্বংস করে দিতে সক্ষম। মানুষ চাইলে একদিকে যেমন পৃথিবীকে জান্নাতের বাগানে পরিণত করতে পারে, তেমনি আরেক দিকে দুনিয়াকে নরককুণ্ডে পরিণত করতে পারে।
মানুষের মধ্যে ভালো-মন্দ যেকোনো কিছু গ্রহণ বা বর্জন করার ইচ্ছাশক্তি আল্লাহই প্রদান করেছেন। তবে আল্লাহ চান মানুষ ন্যায়পথে পরিচালিত হোক এবং সুবিচার, শান্তি ও নিরাপত্তার মধ্যে বাস করুক। এজন্যই তিনি যুগে যুগে তাঁর নবী-রসুলদের পাঠিয়েছেন। নবী-রসুলরা আল্লাহর পক্ষ থেকে হেদায়াহর বাণী নিয়ে মানুষের কাছে এসেছেন। সেই বাণীটি হলো- আল্লাহর হুকুম ছাড়া আর কারো হুকুম ও বিধান মানব না। এই কথার স্বীকৃতি দেওয়াই হলো ঈমান বা তওহীদ।
পবিত্র কোর’আনে আল্লাহ বলেছেন, “যে বিষয়ে আমি নূহকে নির্দেশ দিয়েছিলাম এবং যা আমি তোমার কাছে ওহী হিসেবে পাঠিয়েছি, তেমনি আমি ইবরাহীম, মুসা ও ঈসাকে যে নির্দেশ দিয়েছিলাম তা হলো – তোমরা দীন কায়েম করবে এবং এ নিয়ে কোনো প্রকার মতভেদ করবে না। তুমি যেদিকে মোশরেকদের আহ্বান করছ, তা তাদের কাছে কঠিন মনে হয়; আল্লাহ যাকে চান তাঁর দিকে পরিচালিত করেন এবং যে তাঁর দিকে মুখ ফিরায়, তাকে তিনি হেদায়াত দেন” (সুরা শুরা- ১৩)।
অর্থাৎ, আল্লাহ তাঁর নবী-রসুলদের হেদায়াহ ও দীন দিয়ে প্রেরণ করেছেন। প্রশ্ন হতে পারে, সেই দীনটা কী? দীন হল আল্লাহর প্রেরিত পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। অর্থাৎ মানুষ কীভাবে চলবে, তার অর্থনীতি, আইনব্যবস্থা, প্রশাসন, বিচারব্যবস্থা, ব্যবসা-বাণিজ্য কীভাবে হবে – এগুলো মানুষের সামষ্টিক জীবন পরিচালনার জন্য যা কিছু প্রয়োজন, সবকিছুই এই দীন বা জীবনব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত। তবে আল্লাহ শুধু দীন দিয়ে ক্ষান্ত হননি, বরং তিনি নির্দেশ দিয়েছেন এই দীনকে প্রতিষ্ঠিত করতে। কারণ আল্লাহ জানেন, যদি এই দীন মানবজীবনে প্রতিষ্ঠিত না হয়, তবে মানুষ আজীবন অন্যায়, অবিচার, যুদ্ধ ও রক্তপাতে নিমজ্জিত থাকবে। তাই তিনি বলেছেন, ‘এটা প্রতিষ্ঠা করো’। এটি হলো আল্লাহর দীন পাঠানোর উদ্দেশ্য।
আজ আমাদের দেশের মানুষ শান্তি চায়, স্বস্তি চায়। তারা চলমান রাজনৈতিক সংঘাত, হানাহানি বন্ধ করতে চায়। তবে যে দীন বা জীবনব্যবস্থার মাধ্যমে তারা শান্তি চায়, সেটা দিয়ে শান্তি আসা সম্ভব নয়। মানুষের তৈরি সিস্টেম, ব্যবস্থা বা তন্ত্র-মন্ত্র দিয়ে শান্তি আসবে না। কারণ মানুষের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা রয়েছে, সে ভুলের ঊর্ধ্বে নয়, তাই তার পক্ষে একটি নিখুঁত, নির্ভুল জীবনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। কিন্তু আল্লাহ যেহেতু মানুষকে সৃষ্টি করেছেন, তিনি জানেন কোন সিস্টেম দিয়ে মানুষ সুখে ও শান্তিতে বাস করতে পারবে। এজন্য আখেরী নবী, হুজুর পাক (সা.)-এর মাধ্যমে আল্লাহ মানুষের জন্য এমন একটি জীবনব্যবস্থা পাঠিয়েছেন, যা মানুষকে চিরস্থায়ী শান্তি দেবে। এই দীন চির সতেজ, চির প্রাঞ্জল এবং চির গতিশীল। আল্লাহ এই দীনকে প্রাকৃতিক নিয়মের উপর ভিত্তি করে তৈরি করেছেন। এতে কোনো বাড়াবাড়ি নেই, কোনো সীমালঙ্ঘন নেই, কোনো গোঁজামিল নেই। পৃথিবীর যেকোনো স্থান, কাল, পাত্র ও সময়ের জন্য এটি উপযোগী, কার্যকর ও শান্তিদায়ক।
কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এ জাতি শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে আল্লাহর দেওয়া দীন বাদ দিয়ে মানুষের তৈরি দীন দিয়ে জীবন পরিচালনা করে যাচ্ছে। মানুষের তৈরি দীন, যেমন: গণতন্ত্র, পুঁজিবাদ, সমাজতন্ত্র ইত্যাদির উপর তাদের পূর্ণ আস্থা রয়েছে। অথচ আল্লাহর দেওয়া দীনের উপর তাদের আস্থা নেই। তারা মনে করে, রাজনীতির জটিল ক্ষেত্রে আল্লাহর দেওয়া দীন মানা সম্ভব নয়। তাদের মনে-মগজে, চিন্তা-চেতনায়, মস্তিষ্কে, অবচেতন মনে তারা মানুষের দেওয়া দীন গ্রহণ করে নিয়েছে।
কিন্তু মানুষের তৈরি দীনের ফল কী হবে, তা ইতোমধ্যেই আমাদের সামনে স্পষ্ট হয়ে গেছে। এই জীবনব্যবস্থার মাধ্যমে আমাদের শান্তি লাভের কোনো সম্ভাবনা নেই, সেটা আর বুঝতে বাকি নেই। তাই এখন সময় এসেছে মানুষের তৈরি দীন বা ব্যবস্থাকে বাদ দিয়ে আল্লাহর দেওয়া দীনকে গ্রহণ করার। এখন আমাদের এই সিদ্ধান্তে আসতে হবে যে, মানুষের দেওয়া সিস্টেম আর নয়, আমরা আল্লাহর দেওয়া দীন প্রতিষ্ঠা করব।
কিন্তু তা কীভাবে প্রতিষ্ঠা করব? এর সরল জবাব হচ্ছে আল্লাহর রসুল (সা.) যে পদ্ধতিতে দীন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, ঠিক সেই পদ্ধতিতে। সেই পদ্ধতিটি হচ্ছে জেহাদ বা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা, আপোষহীন সংগ্রাম। তবে আজকের দিনে জেহাদের ভুল ব্যাখ্যা দেওয়া হচ্ছে। সাম্প্রদায়িক হামলা ও সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডকে জেহাদ বলে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। জেহাদ এবং সন্ত্রাস এক নয়, দুটি সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়। জেহাদ হচ্ছে দীন প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা মানুষের কাছে ব্যাখ্যা করা সেটা হতে পারে মুখে বলে, লিখে, বক্তৃতা দিয়ে, বা যুক্তি উপস্থাপন করে। আল্লাহর রসুল (সা.) এবং তাঁর উম্মাহ সারা জীবন ধরে এই জেহাদ করে গিয়েছেন। অন্যদিকে, সন্ত্রাস হচ্ছে হিংসাত্মক কাজ করে, বোমা ফাটিয়ে, ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে ভয় ও আতঙ্ক সৃষ্টি করা। এই দুটি বিষয় একে অপরের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। অথচ আজ ইসলামের পবিত্র জেহাদকে সন্ত্রাস বলে প্রচার করা হচ্ছে এবং জেহাদের বিরুদ্ধে নেতিবাচক মনোভাব গড়ে তোলা হচ্ছে। বাস্তবে, জেহাদ কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নয়, কোনো সাম্প্রদায়িক হামলা নয়, মানুষের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি করার প্রচেষ্টা নয়। জেহাদ হচ্ছে সমাজে শান্তি ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার পবিত্র আমল।
এ ব্যাপারে পবিত্র কোর’আনে আল্লাহ বলছেন, আর তাদের সাথে যুদ্ধ করতে থাক যতক্ষণ না ফেতনা নির্মূল হয় এবং আল্লাহর সমস্ত হুকুম প্রতিষ্ঠা হয়। (সুরা আনফাল: ৩৯)। তিনি আরো বলেছেন, “তোমাদের কী হল যে, তোমরা আল্লাহর রাহে লড়াই করছ না দুর্বল সেই পুরুষ, নারী ও শিশুদের পক্ষে, যারা বলে, হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদিগকে এই জনপদ থেকে নিষ্কৃতি দান কর; এখানকার অধিবাসীরা যে, অত্যাচারী! আর তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য পক্ষালম্বনকারী নির্ধারণ করে দাও এবং তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য সাহায্যকারী নির্ধারণ করে দাও। (সুরা নিসা ৭৫)। সুতরাং, বোঝা গেল যে, সমাজের অসহায়-নিপীড়িত মানুষকে রক্ষা করাই হচ্ছে জেহাদের প্রকৃত উদ্দেশ্য। আর এই জেহাদের মাধ্যমেই আল্লাহর সত্যদীন প্রতিষ্ঠিত হবে। সুতরাং, এই জেহাদ করতে হবে- অর্থাৎ মানুষকে বুঝিয়ে, বলে, লিখে ইত্যাদি বিভিন্ন উপায়ে আল্লাহর সত্যদীনের রূপরেখা উপস্থাপন করতে হবে। তওহীদের শিক্ষা, ইসলামের আকিদা, ইসলাম কী চায় এবং কেন চায়- এগুলো প্রাঞ্জলভাবে মানুষের সামনে তুলে ধরতে হবে। আর এই তুলে ধরার প্রক্রিয়াটি হবে উত্তম যুক্তি ও হিকমতসহকারে, সুন্দর ভাষণের মাধ্যমে, ভদ্রভাবে ও শালীনভাবে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলছেন: ‘তুমি তোমার রবের পথে হিকমত ও সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে আহবান কর এবং সুন্দরতম পন্থায় তাদের সাথে বিতর্ক কর। নিশ্চয় একমাত্র তোমার রবই জানেন, কে তার পথ থেকে ভ্রষ্ট হয়েছে এবং হেদায়াতপ্রাপ্তদের তিনি খুব ভাল করেই জানেন’ (সুরা আন-নাহল ১২৫)।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, এখানে জোরাজুরি বা চাপ প্রয়োগ নিষেধ করা হয়েছে। আল্লাহ বলেছেন, ‘এই দীনে কোনো জবরদস্তি নেই।’ (সুরা বাকারা ২৫৬)। এর মানে হলো, মানুষকে দীন গ্রহণে বাধ্য করা যাবে না। তবে, সেই সাথে আল্লাহ আমাদের সংকল্পের দৃঢ়তা (সবর) নিয়ে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন। কারণ দীনের প্রচার করতে গিয়ে জানমালের ক্ষতি হতে পারে, সম্পদের ক্ষতি হতে পারে। তাই আল্লাহ সুরা বাকারা ১৫৫ আয়াতে বলেছেন, ‘আর অবশ্যই আমি তোমাদের পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, জান-মালের ক্ষতি ও ফল-ফসলের ধ্বংসের মাধ্যমে। আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও।’
তাহলে আমাদের দীনের প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে ধৈর্য, সবর, দৃঢ়তা ও আত্মপ্রত্যয়ের সঙ্গে। এভাবে কাজ করলে ধীরে ধীরে মানুষের মন-মানসিকতা, চিন্তা-চেতনা আল্লাহর দীনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়ে উঠবে। তারা উপলব্ধি করবে যে, এতদিন যা তারা করেছে তা ভুল ছিল। এরপর, যারা আল্লাহর হুকুমের প্রতি আস্থা রাখবে এবং সমর্থন দেবে, তাদেরকে একটি সুসংগঠিত কর্মসূচির মধ্যে আনতে হবে। কারণ জেহাদ করতে সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি থাকা আবশ্যক এবং সেটাই আল্লাহ তাঁর রসুল (সা.)-এর মাধ্যমে আমাদের দিয়েছেন। রসুল (সা.) বলেছেন, “আল্লাহ আমাকে পাঁচটি কাজের আদেশ দিয়েছেন, আমিও তোমাদেরকে সেই পাঁচটি কাজের আদেশ দিচ্ছি।
এই পাঁচটি কর্মসূচি হলো-
১. তওহীদের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হওয়া
২. নেতার আদেশ শোনা (শৃঙ্খলা বজায় রাখা)
৩. নেতার নির্দেশ পালন করা
৪. হিজরত করা (শিরক ও কুফর পরিত্যাগ করা)
৫. আল্লাহর রাস্তায় জীবন ও সম্পদ উৎসর্গ করে জেহাদ করা
রসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি এই ঐক্যবন্ধন থেকে এক বিঘত পরিমাণও বিচ্যুত হলো, সে তার গলদেশ থেকে ইসলামের বন্ধন খুলে ফেলল, যদি না সে তওবা করে ফিরে আসে। আর যে ব্যক্তি জাহেলিয়াতের কোনো বিষয়ের দিকে আহ্বান করল, সে নিজেকে মুসলিম বলে দাবি করলেও, নামাজ পড়লেও এবং রোজা রাখলেও সে জাহান্নামের জ্বালানি হবে।’ (আল হারিস আল আশআরী (রা.) থেকে আহমদ, তিরমিযি, মেশকাত)
এই কর্মসূচি জাতিকে এক নেতৃত্বের অধীনে আনুগত্য করতে শেখাবে এবং জীবনের একটি সুস্পষ্ট লক্ষ্য দেবে। তখন সমগ্র জাতি সংগ্রাম করে আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠা করবে – যেভাবে রসুলাল্লাহ (সা.) আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই দীন সেই পশ্চাৎপদ, অশিক্ষিত, কুশিক্ষায় নিমজ্জিত, দারিদ্র্যপীড়িত, অজ্ঞ, কুসংস্কারাচ্ছন্ন ও অনৈতিকতায় ডুবে থাকা আরবদের সম্পূর্ণ বদলে দিয়েছিল। যারা একসময় ছিল জগতের সবচেয়ে অনগ্রসর, তারাই হয়ে উঠেছিল মানব ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতার প্রতিষ্ঠাতা, জ্ঞান-বিজ্ঞান, ন্যায়বিচার ও শৃঙ্খলার ক্ষেত্রে অনন্য। আরবদের এই অভূতপূর্ব উত্থান আজও গবেষকদের কাছে বিস্ময় ও কৌতূহলের বিষয়। যারা বংশানুক্রমে তুচ্ছ বিষয় নিয়ে রক্তক্ষয়ী দ্বন্দ্বে লিপ্ত থাকত, ইসলাম তাদেরকে ভাই বানিয়ে দিল। যারা ছিল চরম উশৃঙ্খল, ইসলাম তাদের ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে পোশাক-পরিচ্ছন্নতা, পারিবারিক সম্পর্ক, সামাজিক আচার-আচরণ, সামরিক কৌশল ও জাতীয় নেতৃত্ব- সমস্ত ক্ষেত্রে অনন্য শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করল। ফলে তারা অন্য জাতির সামনে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে উঠল।
কাজেই আমরাও মানুষকে আল্লাহর দেওয়া সেই দীন গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি। কারণ, আল্লাহর কাছে একমাত্র গ্রহণযোগ্য দীন হলো ইসলাম (সুরা আলে ইমরান ১৯)। ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো জীবনব্যবস্থা গ্রহণ করলে মানুষ প্রকৃত শান্তি পাবে না, পৃথিবীতেও পাবে না, পরকালেও পাবে না। তাই পৃথিবীতে ও পরকালে শান্তি পেতে হলে আমাদের অবশ্যই পৃথিবীতে আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। প্রশ্ন উঠতে পারে, আজকে তো বহুরকমের ইসলাম সমাজে দেখা যায়। এর মধ্যে কোনটা আল্লাহর দীন। এ বিষয়ে আমাদের কথা হচ্ছে, আল্লাহ কোর’আনে যা স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন এবং যা রসুলাল্লাহ (সা.) তাঁর জীবনচর্চার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করেছেন, সেটিই একমাত্র বিশুদ্ধ ইসলাম। তাই, আমরা সবাইকে আল্লাহর দীন গ্রহণ করে একটি শান্তিপূর্ণ ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনের আহ্বান জানাচ্ছি।
সম্পাদনা: আদিবা ইসলাম
ইমেইল- hezbuttawheed.official@gmail.com
যোগাযোগ: ০১৭১১০০৫০২৫, ০১৭১১৫৭১৫৮১, ০১৭১১২৩০৯৭৫