হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

আসুন ঐক্যহীনতা নামক ‘কুফর’ থেকে মুক্ত হই

আতাহার হোসাইন

একটি জাতির ঐক্য এতটাই প্রয়োজনীয় বিষয় যে একটি জাতি একটি সংগঠন যতো শক্তিশালীই হোক যতো প্রচণ্ড শক্তিশালী অস্ত্র-শস্ত্র, ধন-সম্পদের অধিকারীই হোক, যদি তাদের মধ্যে ঐক্য না থাকে তবে তারা কখনই জয়ী হোতে পারবে না। অতি দুর্বল শত্র“র কাছেও তারা পরাজিত হবে। তাই আল্লাহ কোর’আনে বহুবার এই ঐক্য অটুট রাখার জন্য তাগিদ দিয়েছেন। এই ঐক্য যাতে না ভাঙ্গে সে জন্য তার রসুল (দ:) সদা শংকিত ও জাগ্রত থেকেছেন এবং এমন কোন কাজ যখন কাউকে কোরতে দেখেছেন, যাতে ঐক্য নষ্ট হবার সম্ভাবনা আছে তখন রেগে গেছেন।
রসুলাল্লাহ (দ:) তাঁর আসহাবদের মধ্যে যে কোন বিষয়ে মতবিরোধ দেখলে রেগে লাল হোয়ে যেতেন। তিনি বোলেছেন- যে কোন প্রকার মতবিরোধই কুফর (হাদিস-আব্দাল্লাহ বিন আমর (রা:) থেকে- মোসলেম, মেশকাত)। খুব স্বাভাবিক, মতভেদ থেকে জাতির ঐক্য নষ্ট ও পরিণামে যে জন্য জাতির সৃষ্টি সেই সংগ্রামে শত্র“র কাছে পরাজয় ও পৃথিবীতে এই দীনকে প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থতা, এজন্যই যে কোন প্রকার মতভেদ ও অনৈক্যই কুফর। অর্থাৎ মো’মেন থাকার পূর্বশর্ত হোল ঐক্যবদ্ধ থাকা। তবুও ইতিহাস এই যে, যে কাজকে রসুলাল্লাহ (দ:) কুফর বোলে আখ্যায়িত কোরেছেন সেই কাজকে মহা সওয়াবের কাজ মনে কোরে করা হোয়েছে এবং হোচ্ছে অতি উৎসাহের সাথে এবং ফলে বিভিন্ন মাজহাব ও ফেরকা সৃষ্টি হোয়ে জাতির ঐক্য নষ্ট হোয়ে গেছে এবং জাতির শত্র“র কাছে শুধু পরাজিতই হয় নি তাদের ক্রীতদাসে পরিণত হোয়েছে।
বিদায় হজ্বে বিশ্বনবীর (দ:) ভাষণ মনযোগ দিয়ে পড়লে যে বিষয়টা সবচেয়ে লক্ষণীয় হোয়ে ওঠে সেটা তার জাতির ঐক্য সম্বন্ধে তার ভয় ও চিন্তা। স্বভাবতঃই কারণ জীবনের সবকিছু কোরবান কোরে অসহনীয় অত্যাচার সহ্য কোরে সারা জীবনের সাধনায় একটি জাতি সৃষ্টি কোরলে এবং সেই জাতির উপর তার আরদ্ধ কাজের ভার ছেড়ে পৃথিবী থেকে চলে যাওয়ার সময় একটা মানুষের মনে ঐ ভয়, ঐ শংকাই সবচেয়ে বড় হোয়ে দাঁড়াবে। কারণ ঐক্য ভেঙ্গে গেলেই সবশেষ, জাতি আর তার আরদ্ধ কাজ কোরতে পারবে না, শত্র“র কাছে পরাজিত হবে। তাই তাকে বিদায় হজ্বের ভাষণে বোলতে শুনি- হে মানুষ সকল! আজকের এই দিন (১০ই জিলহজ্ব), এই মাস (জিলহজ্ব) এই স্থান (মক্কা ও আরাফাত) যেমন পবিত্র, তোমাদের একের জন্য অন্যের প্রাণ, সম্পদ ও ইজ্জত তেমনি পবিত্র (হারাম)। শুধু তাই নয় এই দিন, এই মাস ও এই স্থানের পবিত্রতা একত্র কোরলে যতোখানি পবিত্রতা হয়, তোমাদের একের জন্য অন্যের জান-মাল-ইজ্জত ততোখানি পবিত্র (হারাম)। খবরদার! খবরদার! আমার (ওফাতের) পর তোমরা একে অন্যকে হত্যা কোরে কুফরী কোর না। শেষ নবী (দ:) এই সাবধান বাণী একবার নয়- পুনঃপুনঃ উচ্চারণ কোরলেন এবং শেষে আসমানের দিকে মুখ তুলে বোললেন – হে আল্লাহ! তুমি সাক্ষী থাক- আমি আমার দায়িত্ব পৌঁছে দিলাম। হে আল্লাহ তুমি সাক্ষী থাক- আমি আমার দায়িত্ব পৌঁছে দিলাম। এখানে লক্ষ্য কোরুন নিজেদের মধ্যে মারামারি কাটাকাটিকে, অর্থাৎ জাতির ঐক্যকে নষ্ট বা ক্ষতি করাকে শেষ নবী (দ:) কোন্ শ্রেণির গোনাহের পর্যায়ে ফেলছেন। একেবারে কুফরের পর্যায়ে। তাই আল্লাহর রসুল দ্ব্যার্থহীন ভাষায় ঘোষণা করেন, ‘যে ব্যক্তি এই উম্মতের ঐক্য ও সংহতির মধ্যে বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি কোরতে চায় তাদের ঐক্যের মধ্যে ফাটল ধরাতে চেষ্টা করে, তলোয়ার দ্বারা তোমরা তাকে শায়েস্তা করো, সে যেই হোক না কেন (হাদিস, আরফাজা (রা:) থেকে মোসলেম)।
রসুলাল্লাহর সেই সাবধান বাণীর কোন তোয়াক্কা না কোরে আমরা আজ খ্রিস্টানদের চাপিয়ে দেওয়া অকার্যকর, ব্যর্থ সিস্টেম তথা গণতন্ত্র গিলে খেয়ে এখন নিজেরা নানা দলে বিভক্ত হোয়ে অনৈক্য আর মতভেদেই শুধু লিপ্ত নই একেবারে ভাইয়ে-ভাইয়ে রক্তপাত আর খুনাখুনিতে মহা ব্যস্ত। গণতন্ত্র আর রাজনীতির বিষাক্ত ছোবলে আমরা যেন একেক জন হিংস্র ড্রাকুলা হোয়ে গেছি, রক্ত পান না কোরলে আমাদের আর চলে না। যেখানে প্রতিটা মোসলেম একে অপরের ভাই হবার কথা, একে অন্যের জন্য জীবন উৎসর্গ করার কথা সেখানে আমরা নানা দলে উপদলে বিভক্ত হোয়ে একে অন্যের শত্র“তে পর্যবসিত হোয়েছি। একপক্ষ সাধারণ মানুষকে পুড়িয়ে মারছে, জনগণের সম্পত্তি জ্বালিয়ে দিচ্ছে, ভাংচুর কোরছে, অবরোধ আর হরতালের নামে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের পেটে লাথি মারছে আর অপরপক্ষ সশস্ত্র বাহিনী দিয়ে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে মারছে ঐ সাধারণ জনগণকেই। আমরা আল্লাহর দেওয়া সিস্টেম পরিত্যাগ কোরে, দাজ্জালের তৈরি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে অনৈক্য আর বিভেদের যে প্রাচীর নিজেদের মধ্যে নির্মাণ কোরেছি তাতে আপাদমস্তক ডুবে আছি কুফরীর মধ্যে অর্থাৎ ক্রয় কোরে নিয়েছি জাহান্নাম। আমাদের আবাসভূমি পৃথিবীকে তো স্বাক্ষাৎ নরকপুরীতে পরিণত কোরেছিই এখন এভাবেই যদি মৃত্যুবরণ করি তবে আখেরাতেও নিশ্চিত জাহান্নাম। কাজেই সময় এসেছে অনৈক্য আর বিভেদেরে এই প্রাচীর ভেঙ্গে একজাতি, একপ্রাণ হবার। তাই ঐক্যহীনতা নামক কুফর থেকে মুক্ত হোয়ে গণতন্ত্রকে ছুড়ে ফেলে আল্লাহর দেওয়া সিস্টেম বা জীবনব্যবস্থা গ্রহণ কোরে সুখি-সমৃদ্ধ ও বজ্রকঠিন ঐক্যবদ্ধ জাতি গড়তে আহ্বান কোরছে হেযবুত তওহীদ।

লেখাটি শেয়ার করুন আপনার প্রিয়জনের সাথে

Email
Facebook
Twitter
Skype
WhatsApp
সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...