হাসান মাহদী:
সম্প্রতি বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতি ও বিশেষ করে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন গভীর উদ্বিগ্ন বলে দিল্লিতে এসে জানিয়েছেন মার্কিন ন্যাশনাল ইনটেলিজেন্সের প্রধান তুলসী গ্যাবার্ড। তিন দিনের ভারত সফরে এসে এনডিটিভি-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই মন্তব্য করেন। ‘ইসলামি সন্ত্রাসবাদে’র বিপদ বাংলাদেশকেও প্রভাবিত করছে বলে বার্তা সংস্থা এএনআই-কে দেওয়া দ্বিতীয় আর একটি সাক্ষাৎকারে মন্তব্য করেন তুলসী গ্যাবার্ড।
তুলসী বলেছেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই ইসলামি জঙ্গিবাদের সরাসরি প্রভাব পড়েছে ও এখনও পড়ে চলেছে আমেরিকার মানুষের ওপর। তিনি আরও বলেছেন, আমরা আরও দেখছি এর জন্য কীভাবে ভুগতে হচ্ছে ভারতকে, কীভাবে তা প্রভাব ফেলছে বাংলাদেশে। এখন তা সিরিয়াতে, ইসরায়েলে ও মধ্যপ্রাচ্যের আরও নানা দেশেই প্রভাব ফেলছে।
এখানে লক্ষণীয় বিষয়, তুলসী গ্যাবার্ড বাংলাদেশকে সিরিয়া, ইসরায়েল ও মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিতিশীল ও ইসলামী সন্ত্রাসবাদের উছিলায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া দেশগুলোর সাথে তুলনা করতে কার্পণ্য করেন নি। আতঙ্কের বিষয় হল, ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া, আফগানিস্তানকে লণ্ডভণ্ড করার আগে সে সব দেশের বিরুদ্ধে এমনসব অভিযোগই এসেছিল যা এখন বাংলাদেশ সম্পর্কে করেছেন তিনি। তাহলে কি বাংলাদেশ ইরাক, সিরিয়ার পথ ধওে হাঁটছে? এমন প্রশ্নের উদয় হওয়া স্বাভাবিক।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রায় আট মাস পেরিয়ে গেলেও দেশ এখনো এক অনিশ্চিত ও অস্থির পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলেছে। প্রতিদিন সংবাদমাধ্যমে ধর্ষণ, চুরি, ছিনতাই, খুন এবং অন্যান্য সহিংস অপরাধের খবর প্রকাশিত হচ্ছে। চলতি বছরের গত দুই মাসে (জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি) রাজধানীতে ২৬৯টি নারী-শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। এর বাইরে চুরির ঘটনা ২৬৩টি, ডাকাতি, ছিনতাই ও দস্যুতার ঘটনা ১১৪টি, খুনের ঘটনা ৭৪টি, এগুলো শুধু রাজধানী ঢাকার চিত্র।
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে যেখানে গত বছর প্রথম ছয় মাসে গড়ে ২৭২টি হত্যা মামলা হয়েছে, সেখানে এর পরের সাত মাসে গড়ে ৩১৪টি হত্যা মামলা হয়। চলতি বছরের জানুয়ারিতে অন্তত ২৯৪টি হত্যা মামলা হয়েছে, যা গত বছরের একই মাসে ছিল ২৩১টি। গত দুই মাসে দেশে ধর্ষণের শিকার হয়েছে কমপক্ষে ১০৭ জন। এর মধ্যে ৬৬ জন ১৮ বছরের কম বয়সী। পুলিশ ও গোয়েন্দা প্রতিবেদন বলছে, চলমান সামাজিক অস্থিরতার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘটেছে নারী-শিশু নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনা।
এমন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির ফলে অনেক স্থানে উত্তেজিত জনতা অভিযুক্ত ব্যক্তিদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে না দিয়ে নিজেরাই বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করছে, গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করছে, মব সৃষ্টি করছে যার ফলে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতার পাশাপাশি ধর্মীয় উগ্রবাদও বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিভিন্ন অঞ্চলে মাজার ও উপাসনালয়ে হামলা এবং ধ্বংসযজ্ঞের খবর পাওয়া যাচ্ছে, যা দেশের ধর্মীয় সহাবস্থানকে হুমকির মুখে ফেলছে। ৪ আগস্ট ২০২৪ থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ৯০টির উপরে মাজার (সুফি সমাধিক্ষেত্র/দরগাহ) ও তার সাথে সম্পর্কিত ৪৪টি ভাঙচুর ও হামলার ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনার মধ্যে মাজার ও ভক্তদের ওপর হামলা, সম্পত্তি লুট, অগ্নিসংযোগ ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এছাড়াও ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িটি ভেঙে ফেলার ঘটনাটি ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
সমতলের পাশাপাশি পার্বত্য ও সীমান্ত এলাকাগুলোতেও অস্থিরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। অভ্যুত্থানের মাসখানেক পরেই পাহাড়ি-বাঙালি সংঘর্ষের ফলে খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়ে। পাহাড়ি-বাঙালি বিরোধকে কেন্দ্র করে কয়েকটি প্রাণঘাতী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে, যা পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তোলে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রশাসনকে ১৪৪ ধারা জারি করতে হয়। যদিও বর্তমানে সেই উত্তেজনা নেই, তবু পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের পরিবেশ, অর্থনীতি, নিরাপত্তা ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের জন্য যেমন অপরিহার্য একটি অংশ, তেমনি এটি একটি ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলও। এছাড়া, বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের আরাকান রাজ্য বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ায় নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।
সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে বিভিন্ন মহলে নানা আলোচনা ও গুঞ্জন চলছে, যা রাজনৈতিক অনিশ্চয়তাকে আরও ঘনীভূত করছে। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের একটি বক্তব্য নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘নিজেদের মধ্যে কাদা-ছোঁড়াছুড়ি, মারামারি, কাটাকাটি করলে দেশ ও জাতির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হবে।’
এর প্রেক্ষিতে নৌ-পরিবহন ও শ্রম উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন সেনাপ্রধানের এই বক্তব্যের প্রসঙ্গে বলেন, জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান একজন সোজাসাপ্টা মানুষ এবং কোনো কথা না বুঝে বলেন নি।
প্রশ্ন উঠছে, এই সংকটগুলো কি শুধুই স্থানীয় রাজনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতা নাকি এর পেছনে আন্তর্জাতিক রাজনীতির কোনো প্রভাব রয়েছে? বৈশ্বিক শক্তিগুলোর ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ কি বাংলাদেশের এই অস্থিরতার অন্যতম কারণ? বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপট, আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর কৌশলগত অবস্থান এবং বৈদেশিক স্বার্থের দ্বন্দ্ব বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে কীভাবে প্রভাব ফেলছে, তা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা জরুরি। কারণ দক্ষিণ এশিয়ায় ভূরাজনৈতিক দিক থেকে বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান দখল করে আছে। এটি দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সংযোগস্থলে অবস্থিত হওয়ায় আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এর গুরুত্ব অপরিসীম। বঙ্গোপসাগরের কৌশলগত অবস্থান, প্রতিবেশী বৃহৎ অর্থনীতির দেশসমূহ এবং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শক্তিগুলোর স্বার্থের সাথে সম্পৃক্ততার কারণে বাংলাদেশের ভূ-কৌশলগত (geopolitical) গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাংলাদেশ বর্তমানে ভারত ও চীনের মতো বৈশ্বিক পরাশক্তির মধ্যবর্তী অবস্থানে রয়েছে, যা দেশের কৌশলগত পরিস্থিতি জটিল করে তুলছে। চীন তার “বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (ইজও)” প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক শক্তিশালী করতে আগ্রহী, অন্যদিকে ভারতও তার কৌশলগত প্রভাব বজায় রাখতে চায়। এর ফলে উভয় শক্তির মধ্যে সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষা করা বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে। যদিও বঙ্গোপসাগরের কৌশলগত অবস্থান বাংলাদেশের জন্য এক ধরনের সুবিধা তৈরি করতে পারে, কারণ এটি চীন, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য শক্তির জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক ও সামরিক রুট হিসেবে বিবেচিত। তবে, এই প্রভাবশালী শক্তিগুলোর মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা বাংলাদেশের জন্য এক কঠিন কাজ হতে পারে, কারণ প্রতিটি দেশই এই অঞ্চলে নিজেদের বাণিজ্যিক ও সামরিক স্বার্থ রক্ষা করতে আগ্রহী। বিশেষ করে, চীন ও ভারতের জন্য বঙ্গোপসাগর আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রধান রুট হয়ে উঠতে পারে, এবং এ নিয়ে তাদের মধ্যে দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব চলে আসছে। এর বাইরে চীনের প্রভাব মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সহায়তা চাচ্ছে যা “ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্রাটেজি”র একটি অংশ। যুক্তরাষ্ট্র চীনের অর্থনৈতিক, সামরিক ও কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে একাধিক জোট গঠন করেছে, যার মধ্যে ছটঅউ ও অটকটঝ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। চীন কোয়াডকে এশিয়ার ন্যাটো হিসেবে দেখে এবং এই জোটগুলোর মধ্যকার দ্বন্দ্বের মধ্যে বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে।
এদিকে, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস চীন সফরে চীনের কাছ থেকে বিশাল অংকের বিনিয়োগ, ঋণ ও অনুদানের প্রতিশ্রুতি নিয়ে এসেছেন। একইসঙ্গে তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়নেও মিলেছে প্রতিশ্রুতি। এই সফরের মধ্য দিয়ে দেশে চীনা বিনিয়োগ আরও বাড়বে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। এ ছাড়া প্রধান উপদেষ্টার সফরের মধ্যে দিয়ে ২০২৮ সাল পর্যন্ত চীনে কোটা ও শুল্ক সুবিধা পাবে বাংলাদেশ। যা চীনের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ককে নতুন এক মাত্রায় নিয়ে গেছে।
এই সম্পর্ককে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত কিভাবে দেখবে তা একটি বড় প্রশ্ন। সরকার পতনের পর ভারতের সাথে ঘটা সম্পর্কের টানাপোড়েনকে আরো জটিল করে তুলতে পারে বলে মত বিশ্লেষকদের। আর যুক্তরাষ্ট্রও যে গোসসা করবে না তাও বলা যায় না।
এছাড়া, মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বাংলাদেশ আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ, যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও কূটনীতির গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে উঠেছে। এই সংকটের ফলে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক শক্তির দৃষ্টি বাংলাদেশের দিকে নিবদ্ধ হয়েছে, যা বাংলাদেশের কূটনৈতিক গুরুত্ব বাড়ানোর পাশাপাশি বিভিন্ন চ্যালেঞ্জও সৃষ্টি করেছে। সম্প্রতি মার্কিন ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্সের প্রধান তুলসী গ্যাবার্ড বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন ও ‘ইসলামি খেলাফত’ প্রসঙ্গে মন্তব্য করলে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। ভারত সফরে তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন, হত্যা ও অত্যাচার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন উদ্বিগ্ন। এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশের হিন্দুসহ সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের নিন্দা জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে (পূর্বের টুইটার) একটি টুইট করেছেন। এটি কি স্রেফ রাজনৈতিক বার্তা নাকি বাংলাদেশকে চাপে ফেলতে ভারত বা মোদী সরকারের কোনও কৌশল? এমন প্রশ্নও উঠেছে।
এদিকে গত ২৪-২৫ মার্চ বাংলাদেশ সফর করেন মার্কিন সেনাবাহিনীর প্যাসিফিক বিভাগের ডেপুটি কমান্ড লেফটেন্যান্ট জেনারেল জোয়েল পি. ভওয়েল। তিনি সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানসহ বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। আলোচনায় সামরিক সহযোগিতা, পারস্পরিক নিরাপত্তা স্বার্থ এবং যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদিত সরঞ্জাম সংগ্রহের সম্ভাবনা উঠে আসে। এ সফরের মূল উদ্দেশ্য ছিল ২০২৫ সালের গ্রীষ্মে অনুষ্ঠিতব্য যৌথ সামরিক মহড়া ‘টাইগার লাইটনিং’ নিয়ে আলোচনা। মার্কিন দূতাবাস জানিয়েছে, এই সফর বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র প্রতিরক্ষা সম্পর্ক আরও জোরদার করেছে। বোঝাই যাচ্ছে, বাংলাদেশকে অন্য যেকোন সময়ের থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে, বাংলাদেশে ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক পরিস্থিতি কীভাবে এগোবে, তা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের ভবিষ্যৎ মূলত নির্ভর করবে অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা এবং আন্তর্জাতিক কৌশলগত অবস্থানের ওপর। তাই, বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে জরুরি হলো অভ্যন্তরীণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করা। এজন্য আইনের শাসন পুনরুদ্ধার, আঞ্চলিক শক্তিগুলোর সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ কূটনীতি এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা আবশ্যকীয়।
বাংলাদেশে বর্তমানে যে সংকট চলছে, তা শুধুমাত্র আইন-শৃঙ্খলার সমস্যা নয় বরং এটির মূলে রয়েছে গভীর রাজনৈতিক সংকট। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন যে, রাজনৈতিক সমঝোতা ছাড়া স্থিতিশীলতা অর্জন কঠিন হতে পারে। স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে যে ধারাবাহিকভাবে সংঘাত ও অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে, তা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং একটি দেশের কাঠামোগত সমস্যার বহিঃপ্রকাশ। এই সমস্যার শিকড় প্রোথিত রয়েছে রাজনৈতিক সংস্কৃতি, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর নীতিগত দুর্বল আচরণে।
রাজনৈতিক সমঝোতা ছাড়া স্থিতিশীলতা অর্জন যে কঠিন এ বিষয়ে বিশ্লেষকদের সতর্কবার্তা নতুন নয়। কিন্তু সমস্যাটি আরও জটিল হয়ে উঠেছে যখন দেখা যায় যে, রাজনৈতিক শিবিরগুলোর মধ্যে আস্থার ঘাটতি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং সংলাপের পরিবর্তে সংঘাতের পথ উন্মুক্ত হচ্ছে। এর পেছনে কাজ করছে ক্ষমতা ধরে রাখার রাজনীতি ও যেকোন মূল্যে ক্ষমতায় যাওয়ার মানসিকতা এবং বিরোধী পক্ষকে দমন পীড়ন যা প্রায়শই বড় আকারে সংঘাতে রূপ নেয়। রাজনৈতিক দলগুলো যখন তাদের স্বার্থে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবহার করতে থাকে, তখন রাষ্ট্রের মৌলিক কাঠামোই দুর্বল হয়ে পড়ে। এর ফলে আইনের শাসন ক্ষুণ্ন হয় এবং এটি সংকটকে চক্রাকারে আরও বৃদ্ধি করে। যদি এই সংকট দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে তা কেবল অভ্যন্তরীণভাবে দেশকে দুর্বল করবে না, বরং বহিঃশক্তিগুলোর জন্য বাংলাদেশকে তাদের স্বার্থের খেলার মাঠে পরিণত করার সুযোগ সৃষ্টি করবে।
[লেখক: হাসান মাহদী, কলামিস্ট]