বর্তমানে পৃথিবীতে অনেকগুলো ধর্মের অনুসারী থাকলেও প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ কিন্তু পৃথিবীতে আলাদা আলাদা ধর্ম পাঠান নি। তিনি যুগে যুগে বিভিন্ন জনপদে বিভিন্ন ভাষায় তাঁর মনোনীত নবী-রসুলদেরকে পাঠিয়েছেন মানবজাতিকে সঠিক পথ প্রদর্শনের জন্য। সেই নবীদেরকে যারা গ্রহণ করে নিয়েছেন তারা সত্য পথে উঠেছেন। কিন্তু কালের পরিক্রমায় সেই ধর্ম যখন পরবর্তীতে বিকৃত হয়ে গেছে তখন তাও মানুষকে শান্তি দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এমতাবস্থায় মহান আল্লাহ তার প্রতিশ্রুতি মোতাবেক তাঁর কোনো মনোনীত মহামানবের মাধ্যমে তাদের কাছে আবার সত্য পথের দিক-নির্দেশনা পাঠিয়েছেন। এবারো কিছু মানুষ সেই সত্য তাদের জীবনে গ্রহণ করেছে। আর যারা তা গ্রহণ করে নেয় নি তারা পূর্ববর্তী বিকৃত ধর্মে রয়ে গেছে। এভাবেই কালপরিক্রমায় বিশ্বজুড়ে বহু ধর্ম সৃষ্টি হয়ে গেছে। কিন্তু সব ধর্মই একই বৃক্ষের বিভিন্ন শাখা, তাদের মূল এক জায়গাতেই। আদি পিতা আদম (আ.) ও মাতা হাওয়া থেকে আগত পুরো মানবজাতি আসলে এক জাতি, তারা প্রত্যেকে ভাই-ভাই। তাদের মধ্যে বিরাজিত সকল বিভেদ দূর করে একজাতিতে পরিণত করার জন্যই শেষ রসুলের আবির্ভাব হয়েছিল। পূর্ববর্তী নবীদের আনীত গ্রন্থগুলোর মধ্যে অনেক কিছু মানুষের দ্বারা বিকৃত হয়েছে, অনেক কিছু প্রবিষ্ট হয়েছে, অনেক নবীর নাম ভাষা ও উচ্চারণের তারতম্যের দরুন পরিবর্তিত হয়ে গেছে। কিন্তু ইসলামের একটি মৌলিক নীতি হচ্ছে পূর্ববর্তী সকল নবী ও তাদের প্রতি অবতীর্ণ কেতাবসমূহের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা অর্থাৎ ঈমান আনা।
সাম্প্রদায়িক ঘৃণাবিদ্বেষ এখন সমগ্র বিশ্বকে একটি মহাযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। বহুদেশে সংখ্যাগুরুরা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর বর্বর নির্যাতন নিপীড়ন চালাচ্ছে, স্বদেশ থেকে উৎখাত করছে। প্রতিটি ধর্মের উগ্রপন্থী গোষ্ঠী অপর ধর্মের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ প্রচার করে এবং রাজনৈতিক ইন্ধনে দাঙ্গাময় পরিস্থিতিকে সৃষ্টি করে চলেছে। এসবের বিরুদ্ধে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শক্তিপ্রয়োগের পন্থাই বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে। আক্রান্ত গোষ্ঠীকে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য তাদের উপাসনালয়ে পাহারার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। হামলা হলে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু আমরা মনে করি এগুলো সমস্যার প্রকৃত সমাধান নয়।
আমরা যদি সত্যিই একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিপূর্ণ সমাজ গঠন করতে চাই, প্রতিটি ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব সৃষ্টি করতে চাই তাহলে তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের ক্ষেত্রে একটি ঐক্যসূত্র সৃষ্টি করতে হবে, আন্তঃধর্মীয় বন্ধন তৈরি করতে হবে যেন তারা তাদের বিশ্বাস দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে অপর ধর্মের অনুসারীদেরকে শত্রু জ্ঞান না করে ভাই মনে করতে উৎসাহী হয়।
সেটা কীভাবে সম্ভব হবে? সেটা ধর্মগুলোর মধ্যে বিরাজিত মিলগুলো খুঁজে বের করতে হবে। প্রকৃতপক্ষে ধর্মগুলোর মৌলিক শিক্ষার মধ্যে তেমন কোনো বিরোধ বা বৈপরিত্ব নেই। যে বিষয়গুলোর মাধ্যমে মতভেদ ও শত্রুতা সৃষ্টি করা হয়েছে সেগুলো ধর্মের কোনো মৌলিক বিষয় নয় এবং সেগুলো সৃষ্টি হয়েছে ধর্মের কথিত ধারক বাহক ও স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর দ্বারা। প্রকৃতপক্ষে ধর্ম এসেছে মানবতার কল্যাণে। ধর্মের কোনো বিনিময় চলে না। বিনিময় নিলে ধর্ম বিকৃত হয়ে যায়। কাজেই ধর্মের কাজ সম্পূর্ণ নিঃস্বার্থভাবে করতে হবে এবং বিনিময় নিতে হবে কেবল আল্লাহর কাছ থেকে। সব ধর্মেই এ শিক্ষা রয়েছে। তথাপি ধর্মব্যবসায়ী গোষ্ঠী তাদের কায়েমী স্বার্থে এই বিভক্তির দেওয়াল খাড়া করে রেখেছে। যেমন ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকরা এই উপমহাদেশে ডিভাইড এন্ড রুল নীতির প্রয়োগ করে হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও শত্রুতার সূত্রপাত ঘটিয়েছিল নিজেদের শাসনকে নিরাপদ করার জন্য। তারা দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে দেশবিভাগ করে সেই শত্রুতাকে স্থায়ী রূপ দিয়ে গেছে। এখন হেযবুত তওহীদ চেষ্টা করে যাচ্ছে প্রতিটি ধর্মের মধ্যে যে মিলগুলো রয়েছে সেগুলোকে সামনে নিয়ে এসে সকল সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি মজবুত বন্ধন তৈরি করতে, আন্তঃধর্মীয় ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত করতে, একজনকে আরেকজনের সহযোগী করে তুলতে। আমরা চেষ্টা করছি তাদের বিস্মৃত অতীত মনে করিয়ে দিতে। আমরা বলছি আমি যে স্রষ্টার সৃষ্টি তুমিও সেই স্রষ্টারই সৃষ্টি। স্রষ্টা কখনও দুইজন নয়। সুতরাং তোমার আমার বিরোধের কোনো কারণ নেই। তুমি স্রষ্টার একটি গ্রন্থ চুমু দিচ্ছ, পাঠ করছ, ভাবছ তোমার সওয়াব হবে আর অপর একটি গ্রন্থে আগুন দিচ্ছ তাতে কি স্রষ্টার অসম্মান হচ্ছে না? এ বিষয়গুলো মানুষের সামনে তুলে ধরা হেযবুত তওহীদের কার্যক্রমের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আমরা এ বিষয়ে প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করে সেগুলো সারাদেশে সর্বধর্মীয় সম্মেলন করে ব্যাপকভাবে প্রচার করেছি।