এস.এম.সামসুল হুদা:
এসলামের কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রোয়েছে যার মধ্যে আজান অন্যতম। জুম’আ, হজ্জ, ঈদ, কোরবানি ইত্যাদি এবাদত যেমন আল্লাহর হুকুমত, সার্বভৌমত্বের সঙ্গে সম্পর্কিত (Sovereignty related) আজানও তেমনই একটি বিষয়। প্রতিদিন মো’মেনদেরকে সুবহে সাদেক থেকে শুরু কোরে রাতের বেলায় এশা পর্যন্ত আজানের মাধ্যমে মোট পাঁচবার সালাহর জন্য আহ্বান করা হয়। আজান মোমেনের অন্তরে আল্লাহর কথা স্মরণ কোরিয়ে দেয়। স্মরণ কোরিয়ে দেয় তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্যের কথা। পাশাপাশি এ আহ্বান মো’মেনের অন্তরে একটি চেতনার সৃষ্টি করে। তাই আজান শুনেই মো’মেন মাত্রই মসজিদে যাওয়ার জন্য উদ্বেলিত হোয়ে উঠেন। আল্লাহর সার্বভৌমত্ব কোন এলাকায় প্রতিষ্ঠিত আছে তার প্রমাণ হয় আজানের ঘোষণার মাধ্যমে। একবার রসুলাল্লাহ খায়বার অভিযানের আগে নির্দেশ দিয়েছিলেন যে যদি ফজরের সময়ে গিয়ে ঐ জনপদে আজান শুনতে না পাও তাহোলে আক্রমণ কোরবে, আর যদি আজান শুনতে পাও তাহোলে বিরত থাকবে।
আজানের ইতিহাস: আজানের প্রচলন হোয়েছে রসুলাল্লাহ (সা:) এর মদিনায় হেজরতের পর। তিনি মক্কায় সালাহ কায়েম কোরতেন আজান ও ইকামাত ছাড়াই।” সহিহ ইবনে খুজাইমা : (১/১৮৯)। মদিনা জীবনের শুরুতে সালাতের সময় হোলে মো’মেনগণ নিজের পক্ষ থেকে মসজিদে এসে উপস্থিত হোতেন। আজান, আহবান বা অন্য কোন মাধ্যমে ডাকাডাকি ছাড়াই। ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “মো’মেনগণ যখন মদিনায় আগমন কোরে জড়ো হোতেন, তখন সালাতের সময়ের জন্য প্রতীক্ষা কোরতেন। এসময় সালাতের জন্য ডাকাডাকি হতো না। একদিন সবাই এ নিয়ে আলোচনা কোরলেন। কেউ বোললেন, তোমরা নাসারাদের ন্যায় ঘণ্টার অনুসরণ করো। কেউ বোললেন- না, বরং শিঙ্গা বাজাও যেমন ইহুদিরা বাজায়। ওমর (রাঃ) প্রস্তাব কোরলেন, একজন লোক পাঠানো হোক, সে ‘সালাত’ ‘সালাত’ বোলে ঘোষণা দেবে। কিন্তু এর কোনটাই গ্রহণ করা হোল না। রসুলাল্লাহ (সা:) এ বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তিত হোয়ে বাড়ি ফিরলেন। এরই মধ্যে আব্দুল্লাহ বিন জায়েদ বিন আবদে রাব্বিহিও (রা:) বাড়ি ফিরলেন। বাড়ি গিয়ে তিনি স্বপ্নযোগে আজান শিক্ষালাভ করেন। তিনি সত্ত্বর রসুলাল্লাহর (সা:) কাছে গমন কোরলেন এবং তাঁকে আজান বিষয়ে স্বপ্ন সম্পর্কে সংবাদ দিলেন। তিনি রসুলাল্লাহকে (সা:) বোললেন, “হে আল্লাহর রসুল, আমি অর্ধ ঘুম ও নিদ্রাবস্থায় ছিলাম, আমার কাছে এক আগমনকারী আসলেন অতঃপর আমাকে আজান শিক্ষা দিলেন। এ বিষয়ে ওমর (রাঃ) ও একটি স্বপ্ন দেখতে পান। অতঃপর রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জানানো হয়। তিনি বোললেন : “তুমি আমাকে কেন সংবাদ দাও নি?” ওমর (রাঃ) বোললেন, “আব্দুল্লাহ বিন জায়েদ আমার আগে বোলে ফেলেছে, তাই আমার বোলতে লজ্জা বোধ হোল।” রসুলাল্লাহ (সা:) বোললেন, “হে বেলাল! দাঁড়াও, দেখ আব্দুল্লাহ বিন জায়েদ কি বলে, তুমি তার অনুসরণ করো।” অতঃপর বেলাল (রাঃ) সর্বপ্রথম আজান দিলেন।
আজানের বাণী
আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার
আশহাদু আল্লাহ এলাহ এল্লাল্লাহ, (২)
আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসুলাল্লাহ (২)
হাইয়্যা আলাস সালাহ, (২)
হাইয়্যা আলাল ফালাহ, (২)
আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার
লা এলাহ এল্লাল্লাহ।
আজানের তাৎপর্য: আজানের প্রথম লাইন ‘আল্লাহু আকবর’ এর অর্থ হোল আল্লাহ বিরাট, বিশাল। ‘আকবর’ শব্দটি এসেছে কবীর থেকে। কবীর অর্থ বিরাট বিশাল, সুউচ্চ ও মহান। বাস্তবক্ষেত্রে এর প্রয়োগ হোল আল্লাহর এই বিরাটত্ব স্বীকার কোরে নিয়ে সার্বিক জীবনে অন্যকারো হুকুমকে অস্বীকার কোরে একমাত্র তারই দেয়া হুকুমকে মেনে নেয়া। বাস্তবিক ক্ষেত্রে মানুষ যদি তাঁর হুকুমকে প্রত্যাখ্যান কোরে অন্য কারো বিধান মেনে নেয় তাহোলে তাকে আকবর মেনে নেয়ার কোন অর্থ থাকে না। তাই আজান আমাদেরকে আল্লাহর এই বিরাটত্বের শিক্ষা দেয়। যিনি এই ঘোষণা দেবেন তিনি ‘আল্লাহু আকবর’ বলার মাধ্যমে উচ্চ স্বরে মহান আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্বের, সার্বভৌমত্বের, বড়ত্বের ঘোষণা দিচ্ছেন। যারা এই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সাড়া দিলো তাঁরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব, বড়ত্ব, মাহাত্ম্য মেনে নিয়েই ঐক্যবদ্ধ হবে। বাস্তবিক যে স্থানে এই ঘোষণা দেয়া হয় সেই স্থানে আর অন্য কোন শক্তির শ্রেষ্ঠত্ব থাকতে পারে না। এই জন্যই সালাহ কায়েমের সময়- রুকু, সাজদায় যাওয়ার সময়ও এই ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনি দিয়ে রুকু সাজদা করা হয়। অর্থাৎ ঐ শ্রেষ্ঠত্বের, মাহাত্মের সামনে মস্তক অবনত, বিনীত এবং মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া হয়। শুরুতেই যে আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কোরলাম, পরে তাঁর সার্বভৌমত্ব ছাড়া অন্য সার্বভৌমত্ব, আইন, বিধান অস্বীকার কোরে শ্রেষ্ঠত্বের বাস্তব নমুনা দেখালাম। এই জন্য এসলামের প্রবেশের শুরুতেই অন্য সমস্ত আমলের আগেই প্রথমে তওহীদের এই ঘোষণা দিতে হয়।
দ্বিতীয় লাইন, আশহাদু আল্লাহ এলাহ এল্লাল্লাহ হোচ্ছে এসলামের মূল ভিত্তি। এই ভিত্তির উপরেই দাঁড়িয়ে আছে এসলামের সুবিশাল এমারত। এটা মূলত তওহীদের ঘোষণা, এই ঘোষণার অর্থ হোল আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো হুকুম, বিধান, সার্বভৌমত্ব মানি না। এখানে ‘এলাহ’ শব্দের অর্থ ‘তিনি সেই স্বত্বা- যার হুকুম মানতে হবে, শুনতে হবে’, অর্থাৎ এক কথায় হুকুমদাতা, সার্বভৌমত্বের মালিক। এই বাক্যটি একই সাথে একটি শপথ এবং একটি বজ্র ঘোষণা। এই ঘোষণার মাধ্যমে দুনিয়ার বুক এবং মো’মেনের হৃদয় থেকে একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর সকল এলাহ অর্থাৎ হুকুমদাতাকে উচ্ছেদের ঘোষণা দেওয়া হয়।
তৃতীয় লাইন, ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসুলাল্লাহ’ এই ঘোষণা দ্বারা মোহাম্মদ (সা:) বিন আবদাল্লাহ কেই আল্লাহর রসুল হিসেবে স্বাক্ষ্য দেয়া হয়। এর অর্থ- মহান আল্লাহর হুকুমের সমষ্টি হোল কোর’আন, কিন্তু এই হুকমসমূহ যিনি নিয়ে এসেছেন এবং কোন্ হুকুম কিভাবে বাস্তবায়ন কোরতে হবে তার নমুনা, মডেল (Model) অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব হোচ্ছেন একমাত্র শেষ রসুল (সা:)। এখানে অন্য কারো তরিকা, মত, পথ, সুন্নাহ গ্রহণযোগ্য হবে না। আমরা সবাই তাঁর উম্মাহ। তাঁর মাধ্যমেই আমরা আল্লাহর সত্যিকার পরিচয় জানতে পারি এবং তাঁর রেখে যাওয়া দায়িত্ব অর্থাৎ সারা দুনিয়াতে জীবন এবং সম্পদ কোরবান কোরে সংগ্রামের মাধ্যমে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব ভিত্তিক সত্যদীন প্রতিষ্ঠা করাই হোচ্ছে কলেমার বাণীতে তাঁকে রসুল হিসাবে ঘোষণা দেওয়া অর্থ।
“হাইয়্যা আলাস সালাহ” এবং ‘হাইয়্যা আলাল ফালাহ’ এই দুটি বাক্য একসাথে ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন আছে। এখানে এই দুটি বাক্যের অর্থ হোল ‘সালাহর দিকে আসো’, ফালাহ্, ‘সফলতার দিকে আসো’ অর্থাৎ সালাহই সফলতা। এখন দেখা দরকার সালাহ্ই সফলতা কিভাবে?
মহান আল্লাহ আখেরী নবীর উপর দায়িত্ব দিয়েছেন হেদায়াহ্ ও সত্যদীন এই পৃথিবীতে অন্য সমস্ত জীবন ব্যবস্থার উপর প্রতিষ্ঠা করার জন্য। প্রতিষ্ঠা কিভাবে কোরবেন তাও বোলে দিলেন- জেহাদ ও কেতাল। এই জেহাদ কেতাল কোরতে হোলে প্রয়োজন একটা চরিত্রের। চরিত্র অর্জন ছাড়া জেহাদ সম্ভব নয়। সেই চরিত্র হোল আত্মিক, মানসিক, ও শারীরিক। এই সংগ্রাম করার জন্য ৫ দফার একটা কর্মসূচি দান কোরলেন। তা হোল- ঐক্য, শৃঙ্খলা, আনুগত্য, হেযরত ও জেহাদ। কর্মসূচির প্রথম চার দফা ঐক্য, শৃঙ্খলা, আনুগত্য ও হেযরত মো’মেনের চরিত্রে আনয়ন কোরবে সালাহ। দৈনিক ৫ বার নির্দিষ্ট স্থানে (মসজিদে) একজন আমীরের অধীনে একত্রিত হবে। সেই মো’মেনগণ কেউ লম্বা, কেউ খাটো, কেউ বুদ্ধিমান, কেউ কম বুদ্ধিমান, কেউ সামর্থবান, কেউ দরিদ্র। যার অবস্থা যাই হোক না কেন- তাঁরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তাদের প্রভু আল্লাহর সামনে, উম্মাহর ঐক্যের প্রতীক পবিত্র কা’বাকে সম্মুখে রেখে দাঁড়াবে, অর্থাৎ ঐক্যবদ্ধ হোল। মহানবীর দেখানো নিয়ম মোতাবেক লাইন সোজা কোরে, বুক টান টান কোরে, মেরুদণ্ড সোজা কোরে, এক সঙ্গে সকলে উঠা বসা কোরল, রুকু-সাজদা কোরল, কেউ আগেও না কেউ পরেও না। এতে কোরে তাদের চরিত্রে শৃঙ্খলা আসলো। এমামের পেছনে এমামের হুকুম মোতাবেক তাঁরা সালাহ্র যাবতীয় কাজ কোরল। কেউ এমামের বিরুদ্ধাচারণ কোরল না, এমাম যোগ্য কি অযোগ্য প্রশ্ন তুললো না। তাঁর হুকুমের সঙ্গে সঙ্গে এতায়াত কোরল। এতে কোরে তাঁদের চরিত্রে এমন একটা বৈশিষ্ট্য আসলো যে, তাঁদের নেতার, আমীরের হুকুম হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সবাই জান দিয়ে তা বাস্তবায়ন কোরবে। আর আত্মিক শক্তি অর্জনের জন্য মো’মেন যখন সালাতে দাঁড়াবে তখন সে আল্লাহর সামনে দাঁড়াবে, তার মনের ভাব, আকিদা হবে এই যে, ‘আল্লাহ তুমি আমাদের উপর তোমার নবীর মাধ্যমে যে মহা দায়িত্ব অর্পণ কোরেছ, সেই দায়িত্বপূর্ণ করার জন্য যে মহান চরিত্রের, আত্মার বল প্রয়োজন সেই চরিত্র সৃষ্টির জন্য প্রশিক্ষণ নিতে তোমার সামনে দাঁড়িয়েছি। তুমি দয়া কোরে আমাদের সেই চরিত্র, ঐক্য, শৃঙ্খলা ও আত্মিক শক্তি দাও যাতে আমরা সেই মহান দায়িত্ব পালন কোরতে পারি। আমাদের ধন-সম্পত্তি, পুত্র-পরিজন এবং জীবন তোমার জন্য কোরবান কোরতে পারি। আল্লাহর রাস্তায় ধন-সম্পত্তি পরিবার-পরিজন এক কথায় এই দুনিয়া কোরবান কোরে দেওয়ার চেয়ে বড় আত্মিক উন্নতি আর কি আছে?
এই দুই ধরণের গুণ মুসল্লিদের চরিত্রে কায়েমের মাধ্যমে ইস্পাতের মত কঠিন ঐক্য সৃষ্টি, পিঁপড়ার মত শৃঙ্খলা, মালায়েকদের মত আদেশ পালন, আনুগত্য সৃষ্টি করে, আল্লাহর বিরুদ্ধে যা কিছু আছে সে সব কিছু থেকে বিচ্ছিন্ন, হেজরত করায়, শাহাদাতের জন্য আকুল আকাক্সক্ষা জন্মায়, শত্র“র প্রাণে ত্রাস সৃষ্টিকারী দুর্ধর্ষ মোজাহেদ, যোদ্ধার চরিত্র সৃষ্টি করে। ফলে তারা হোয়ে যান এক দুর্দমনীয় অনন্য চরিত্রের মানুষ। যাদের সামনে পৃথিবীর সকল অন্যায় ও জুলুমকারীরা তাসের ঘরের মত ভেঙ্গে পড়ে, ঝড়ের সামনে খড়-কুটোর মত উড়ে যায়। দুনিয়া এবং পরকালীন এই দুই ধরণের সফলতাই তাদের পায়ের তলায় লুটিয়ে পড়ে। কাজেই সালাহর দিকে আস, সফলতার দিকে আস- অর্থাৎ সালাহর মাধ্যমে মো’মেনের চরিত্রে যে গুণের (Attribute) বিকাশ ঘটবে সেই চরিত্রই তাদেরকে সফলতা এনে দেবে।
বর্তমানে আজানের আত্মাহীনতা: আজানের মাধ্যমে যে আহ্বান করা হয় বর্তমানে মো’মেন, মোসলেম ও উম্মতে মোহাম্মদী হিসেবে পরিচিত জাতিটি তা থেকে বহুদূরে অবস্থান কোরছে। আজানের মাধ্যমে আল্লাহর যে বিরাট এবং বিশালত্ব ঘোষণা করা হয়, বাস্তব ক্ষেত্রে বর্তমানে এর কোন প্রভাবই অবশিষ্ট নেই। আল্লাহর বিশালত্বকে ঘোষণার মধ্যেই সীমাবদ্ধ কোরে ফেলা হোয়েছে। বাস্তব ক্ষেত্রে মানুষের তৈরি বিধান মেনে নিয়ে এবং তা প্রতিষ্ঠা কোরতে গিয়ে তারা প্রকারান্তরে আল্লাহর শুধুই মৌখিকভাবে বিশালত্বকে অস্বীকার কোরছে। আর আহ্বান শুনে এই জাতি মসজিদে গিয়ে সালাহ কায়েম করে বটে, কিন্তু এই সালাহ তাদেরকে সফলতা এনে দেয় না। বরং দিন দিন তারা দুনিয়াতে আরো অবহেলিত ও আরো ঘৃণিত জাতি হিসেবে পরিচিতি লাভ কোরছে। আমাদের একটা কথা মনে রাখতে হবে যে, যদি কোন গাড়ি উল্টো দিকে যাত্রা করে তখন ঐ গাড়ির সমগ্র অংশ সহই উল্টো দিকে যাত্রা করে। এর কোন কিছুই তখন সামনে চলতে পারে না। এর সকল নাট-বোল্টসহ সবই পেছনের দিকে চোলতে থাকে। এসলামের তওহীদ অর্থাৎ প্রাণ ‘লা এলাহ এল্লাল্লাহর’ অর্থ যখন “আল্লাহ ছাড়া কোন হুকুম দাতা নাই” এর পরিবর্তে “আল্লাহ ছাড়া কোন মা’বুদ নাই” হোয়ে গেলো- তখনই এসলামের সকল কর্মকাণ্ড হোয়ে গেলো উপাসনা কেন্দ্রীক। দুনিয়ার বুক থেকে যে বাণীর মাধ্যমে গায়রুল্লাহর বিধান উৎখাতের প্রচণ্ড বজ্রধ্বনি ঘোষিত হয় সেখানে তা আজ দাঁড়িয়েছে প্রচণ্ড নিষ্ক্রিয় (Passive) বাণীতে। আজও পাঁচ বেলা নিয়ম কোরে মসজিদে আজান ঘোষিত হয় বটে, কিন্তু মৌখিক ঘোষণা দেয়া এই জাতির অন্তরে তার তেমন কোন প্রভাব ফেলে না। এসলামের সূচনাকালে আজান ঘোষিত হোলে মো’মেনগণ সকল কাজকর্ম বন্ধ রেখে, ব্যবসায়ীগণ দোকান-পাট খোলা রেখেই ছুটতেন মসজিদের পানে। সালাহর শিক্ষা আত্মায় গেথে নেয়ায় তাঁরা পেয়েছিলেন পার্থিব জীবনের সফলতা, বিজয়, এবং দুনিয়ার বুকে কর্তৃত্ব। কিন্তু আজকের দিনে সমানতালে চোলতে থাকে দুনিয়াবী কাজ, চোলতে থাকে হৈ-হল্লা, দুনিয়ার কর্মযজ্ঞ, গাড়ির হর্নের কর্ণ বিদারণ করা শব্দ। সালাহর যে শিক্ষা তা তাদের অন্তরে প্রবেশ করে না। তাই হারিয়ে গেছে এসলামের প্রাণ, হারিয়ে গেছে আজানের আত্মা।
তাহোলে আজান এমন একটা বিপ্লবী ঘোষণা, যে ঘোষণা, আহ্বান, একদিকে আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্বের, বড়ত্বের, সার্বভৌমত্বের, অন্যদিকে দৈনিক ৫ বার গৃহকোণের, দুনিয়াবী ব্যস্ততার অর্ন্তমুখীতা থেকে বের কোরে এনে এক জায়গায় সংগঠিত করার মাধ্যমে বহিঃর্মূখী চরিত্র, ঐক্য, শৃঙ্খলা শিক্ষা দেয়। আজ মোসলেম নামক এই জাতি যেমন তওহীদ ত্যাগ কোরে অর্ধ পৃথিবীতে একটি মরা লাশের মত পড়ে আছে, এদের মসজিদগুলিও প্রাণহীন, কাজেই আজানও প্রাণহীন, মরা।
[সমস্ত পৃথিবীময় অন্যায়, অবিচার, যুদ্ধ ও রক্তপাত ইত্যাদি নির্মূল করে ন্যায়, সুবিচার ও শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৯৫ সনে এমামুয্যামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী হেযবুত তওহীদ নামক আন্দোলনটি প্রতিষ্ঠা করেন। আল্লাহ তাঁকে প্রকৃত এসলামের যে জ্ঞান দান কোরেছেন তা তিনি যতটা সম্ভব হোয়েছে বই-পুস্তক লিখে, বক্তব্যের মাধ্যমে প্রচারের চেষ্টা কোরেছেন। এই নিবন্ধটি যামানার এমামের বিভিন্ন লেখা ও বক্তব্য থেকে সম্পাদিত।]