‘প্রতি বছর পৃথিবীতে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয়। কিন্তু শান্তি কোথায়? বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে অপরাধ ও অপরাধীদের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। কখনো ধর্মের নামে, কখনও ক্ষমতার লোভে আবার কখনো বা ক্ষুদ্র ব্যক্তি স্বার্থে সমাজে অরাজকতা সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে মানুষের নাগরিক ও সামাজিক নিরাপত্তা ক্রমেই নাজুক হয়ে পড়ছে। বর্তমান পরিস্থিতে পৃথিবীর সকল মানুষ আতঙ্কিত ও উদ্বিগ্ন। এই সংকটের সমাধানে শুধুমাত্র বিষবৃক্ষের ডালপালা ছাঁটা নয়, পুরো শিকড় উৎপাটনই জরুরি।’
গত ৯ অক্টেবর ২০১৩ বুধবার দৈনিক দেশেরপত্রের সারাদেশব্যাপী ‘গণসচেতনতা বৃদ্ধি’ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে জয়পুরহাট জেলা পরিষদ মিলনায়তনে ‘জঙ্গিবাদ তথা যাবতীয় সন্ত্রাস দমনে আমাদের প্রস্তাবনা’ এবং ‘অন্যায়, অশান্তি দূরীকরণে সিস্টেম পরিবর্তনের বিকল্প নেই’ শীর্ষক এক আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তারা এইসব কথা বলেন। কানায় কানায় পরিপূর্ণ এই অনুষ্ঠানটিতে আমন্ত্রিত অতিথিবর্গের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মহীপুর সরকারী কলেজের অধ্যাপক আঃ মোত্তালিব দেওয়ান, উপসহকারী কৃষি অফিসার বাদল চন্দ্র চাকি, পাঁচবিবি উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ডালিম, জেলা সমবায় অফিসার অমূল্য চন্দ্র সরকার,সদর উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আসমা বেগম, কালাই উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান জেবুন্নেছা, ক্ষেতলাল উপজেলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নুরুন্নাহার হুন্নাহ, পাঁচবিবি থানা প্রেস ক্লাবের সভাপতি আহসান হাবিব, জয়পুরহাট বাস মালিক সমিতির সভাপতি সামিমুল হুদা চৌধুরী, কল্যাণ সমিতির সহ-সভাপতি ও প্রধান শিক্ষিকা লাইলাতুন্নাহার, ক্ষেতলালের খোদবদন মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক আঃ জলিল মণ্ডল, আনছার কমান্ডার তাইজুল ইসলামসহ সমাজের দায়িত্বশীল পর্যায়ের অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
অনুষ্ঠানে যামানার এমাম ২০০৯ সালে জঙ্গিবাদ নিরসনে সরকারকে যে সহযোগিতার প্রস্তাব পেশ করেন, সেই প্রস্তাবনা এবং যামানার এমামের জীবন ও কর্ম নিয়ে নির্মিত কয়েকটি বিশেষ প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়। এ ছাড়াও যামানার এমাম জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নীর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে মনোরম সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দেশেরপত্রের উপদেষ্টা মোহাম্মদ মসীহ উর রহমান বলেন, “পৃথিবীতে একেক জনের মতাদর্শ একেক রকম হলেও প্রকৃতপক্ষে সবাই একই বাবা-মা অর্থাৎ আদম হাওয়ার সন্তান। আজ পৃথিবীর সকলকে একটি জাতির অন্তর্ভুক্ত থাকার কথা ছিল কিন্তু আজ সেই একই বাবা-মায়ের সন্তানদের মধ্যে এত হানাহানি, যুদ্ধ, রক্তপাত কেন? কে আমাদের মধ্যে এই শত শত বিভেদের দেয়াল দাঁড় করিয়ে দিয়েছে, কেন নির্মমভাবে একজন আরেকজনকে হত্যা করে চলেছে, কেন আমাদের সমাজের প্রতিটি স্তরে মিথ্যায় ছেয়ে গেছে, ঘরে-বাইরে, হাটে-বাজারে কোথাও আমাদের নিরাপত্তা নেই কেন?” তিনি বলেন, “আল্লাহ আমাদেরকে একটি চমৎকার ভারসাম্যপূর্ণ জীবনব্যবস্থা দিয়েছেন। আজ থেকে ৩০০ বছর পূর্বে আমরা যখন পশ্চিমা ব্রিটিশদের গোলাম হলাম তখন থেকেই তারা আমাদের উপর তাদের তৈরি আত্মাহীন, বস্তুবাদী জীবনব্যবস্থা চাপিয়ে দিয়েছে, আমরাও আমাদের জাতীয় পরিচয় ভুলে তাদের তৈরি সিস্টেম গ্রহণ করে নিয়েছি। আল্লাহর দেওয়া সেই পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থাকে পুরোপুরি ত্যাগ করে কেবল ব্যক্তি জীবনে কিছু এবাদত বন্দেগী করার চেষ্টা করছি। কিন্তু এই ব্যক্তিগত ধর্মপালন যে জাতীয় জীবনে শান্তি আনতে পারছে না তার প্রমাণ আজকের সমাজ।” তিনি আরো বলেন, “আলো জ্বালালে যেমন অন্ধকার দূরীভত হয়, তেমনি প্রকৃত সত্য প্রকাশ হলে সমাজের সকল অন্যায়-অত্যাচার, ঘুষ, দুর্নীতি, চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি প্রভৃতি দূর হবে। তাই বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমাদের সকল সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে এই বস্তুবাদী সিস্টেমকে পরিত্যাগ করে আল্লাহর দেওয়া অপরূপ, নিখুঁত সিস্টেমটি গ্রহণ করতে হবে। একমাত্র আল্লাহর দেয়া সিস্টেমই পারে সমাজের সকল প্রকার অন্যায় দূর করতে।” তিনি আল্লাহর দেয়া সিস্টেম বাস্তবায়নের মাধ্যমে সমাজের সকল প্রকার অশান্তি দূর করতে সুশীল সমাজকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন দেশেরপত্রের প্রধান বার্তা সম্পাদক এস এম সামসুল হুদা, রাজশাহী বিভাগীয় সার্কুলেশন ম্যানেজার মনিরুয্যামান মনির, কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আকরাম হোসেন এবং সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আ.স.ম.মোজাদির তিতাস।
আনুষ্ঠানে আগত বক্তাগণ