যে কোনো দেশে অভ্যন্তরীণ সঙ্কট সৃষ্টি হলে বা বৈদেশিক আগ্রাসনের শিকার হলে সে দেশের জনগণকেই তার চরম মূল্য দিতে হয় বলে মন্তব্য করেছেন হেযবুত তওহীদের সাহিত্য সম্পাদক রিয়াদুল হাসান। এ জন্য তিনি জনগণকেই সবার আগে সজাগ ও সচেতন হবার আহ্বান জানান। রাজধানীর ভাটারা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে আয়োজিত একটি আলোচনা সভায় মুখ্য আলোচক হিসেবে বক্তব্য দানকালে তিনি এ কথা বলেন। আসন্ন সঙ্কট মোকাবেলায় জনসাধারণকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদেরকে সমাজ ও রাষ্ট্র নিয়ে ভাবতে হবে। কেবল পাঁচ বছর পরপর একটি ভোট দিয়ে আর ট্যাক্স দিয়ে নিজেদের সব দায়িত্ব রাষ্ট্রের উপর চাপিয়ে নিশ্চিন্ত হয়ে থাকলে চলবে না। সরকার হচ্ছে একটি রাষ্ট্রের মাথা আর দেহ হচ্ছে জনগণ। তাই জনগণের বিরাট দায়িত্ব রয়েছে। আমরা মনে করি, আমাদের চারপাশে যে অপরাধ হচ্ছে তার সমাধান করবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কিন্তু কেবল আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে সব অপরাধ নির্মূল করা সম্ভব নয়। আজ আমরা দেখছি- ঘুমাতে দিচ্ছে না বলে মা তার দুই বছরের শিশু সন্তানের গলা ব্লেড দিয়ে কেটে ফেলে হত্যা করছে। বাবা তার সদ্যজাত শিশুকে পাঁচ তলা বিল্ডিং-এর উপর থেকে ছুঁড়ে ফেলছে, খাবারে বিষ দিয়ে বাবা মা দুজনকেই হত্যা করে ফেলছে তাদের কিশোরী কন্যা। এভাবে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে যখন অপরাধ প্রবেশ করে তখন পুলিশ দিয়ে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ কীভাবে করবেন? আবার পুলিশই যখন দুর্নীতি করছে, মানুষকে বিনা বিচারে হত্যা করছে তখন তার সমাধান কে করবে? তাই জনগণেরও কিছু করার আছে, তাদেরও দায়িত্ব আছে।
তিনি বলেন, জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে তার আরও কারণ আছে। আমাদের দেশ এখন দুইভাবে ক্ষতির মুখোমুখী দাঁড়িয়ে আছে। অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্রকারীদের দ্বারা ও বহিঃশত্র“র দ্বারা। অভ্যন্তরীণ শত্র“রা যখন বিভিন্ন রাজনৈতিক ইস্যুতে বা ধর্মীয় দাঙ্গা বাধিয়ে দেয় তখন জনগণকেই প্রাণ হারাতে হয়, যখন গাড়িতে পেট্রোল বোমা ছুড়ে মারা হয় তখন জনগণকেই জ্বলতে হয়, দ্রব্যমূল্য বাড়লে জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, রাস্তাঘাট কেটে ফেললে, হরতাল-অবরোধের নামে ধ্বংসযজ্ঞ চালালে জনগণেরই ক্ষতি হয়। সুতরাং জনগণকে রাষ্ট্রের ভালো মন্দ, শান্তি – শৃঙ্খলা নিয়ে ভাবতে হবে। কোন কাজে অশান্তি হয় তা বুঝে তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। আর বহিঃশত্র“র আক্রমণ হলে, দেশটা যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হলে কী হয় সেটা তো আমরা দেখতেই পাচ্ছি ইরাক, সিরিয়া, আফগানিস্তানের দিকে তাকালে। পশ্চিমা অস্ত্রব্যবসায়ী সাম্রাজ্যবাদীদের হাতে পড়ে দেশগুলো ধ্বংস হয়ে গেল। বোমার আঘাতে চুরমার হয়ে গেল মসজিদ, মন্দির, গির্জা, সিনাগগ সব। সম্মানী, জ্ঞানী, গুণী, ধনী-গরীব, ইতর ভদ্র কারো আর কোনো ব্যবধান রইল না। সবাই আক্রান্ত হল। প্রায় চার লক্ষ মানুষ বোমার আঘাতে, গুলি খেয়ে নিহত হলো, আহত হল লক্ষ লক্ষ। তারা সবাই উদ্বাস্তু হলো, নিজেদের পায়ের নিচের জমিটুকু হারিয়ে পথে নামলো, সাগরে ভাসলো। প্রতিদিন তাদের শিশু সন্তানেরা সাগরে ডুবে মরতে লাগল। ভয়ঙ্কর তুষার ঝড়ের মধ্যেও তারা খোলা আকাশের নিচে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বাস করছে, ইউরোপের পথে পথে ঘুরছে ভিক্ষার আশায়। একদিন তাদের সব ছিল, আজ কিছুই নেই। সেখানে না খেয়ে হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে। মান-সম্মান সব ধূলায় মিশে গেছে। সিরিয়া কত উন্নত দেশ ছিল আজ তা একটি ধ্বংস স্তূপ। কে মরেছে? জনগণ। সুতরাং জনগণকে আর মুখ বুঁজে বসে থাকলে চলবে না, যেভাবেই হোক বাংলাদেশকে সিরিয়া হওয়া থেকে বাঁচাতে হবে। ঐক্যবদ্ধভাবে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রকে রুখে দিতে হবে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মো. আব্দুল মান্নান শিকদার (কার্যকরী সভাপতি, ভাটারা থানা শ্রমিক লীগ) ও রফিকুল ইসলাম রফিক (সাধারণ সম্পাদক, শ্রমিক লীগ, ভাটারা থানা), শ্রী চণ্ডিচরণ রায় (দফতর সম্পাদক, ভাটারা ইউনিয়ন, জাতীয় শ্রমিক লীগ, ঢাকা মহানগর উত্তর) প্রমুখ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। তারা হেযবুত তওহীদের বক্তব্যের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন এবং দেশ ও জাতির এই ঘোর সংকটকালে প্রত্যেকের উচিত এই কাজে এগিয়ে আসা বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।