মসীহ উর রহমান:
মানুষের চোখ দুই প্রকার। একটা সাধারণ চর্মচক্ষু- যা দিয়ে আমরা পৃথিবীর রং, রূপ, প্রকৃতি, চন্দ্র, সূর্য, পাহাড়, পর্বত প্রভৃতি দেখি। মানুষের আরেকটি যে চক্ষু রোয়েছে তা হোল অন্তর্চক্ষু। এই চক্ষু দিয়ে আমরা উপলব্ধি করি এক মহাসত্যকে। তা হোল চর্মচক্ষে দেখা এই সৃষ্টির পেছনের আসল রহস্য কি, আসল সত্য কি! এই মহাজগতে সত্য দুই ধরণের। এর একটি সাধারণ চর্মচক্ষু দিয়ে দেখা যায়। অপর মহাসত্যটি এই চর্মচক্ষু দিয়ে দেখা যায় না। এই মহাসত্যকে দেখার জন্য দরকার হয় সেই অন্তর্চক্ষুর। যেমন সূর্য একটা সত্য- এই সূর্য চোখে দেখা যায়। এর আলো, তাপ সবই দেখে উপলব্ধি করা যায়। সকাল বেলায় কিভাবে øিগ্ধ আলো বিকিরণ করে, মধ্যাহ্নে তার প্রখর মূর্তি আবার অস্তগামী সূর্যের অনন্য শোভা এই চোখ দিয়ে দেখা যায়। এই চোখ দিয়ে দেখা যায় একটা সুন্দর গোলাপকে। বহু বর্ণের গোলাপ আমরা দেখি, এর রূপকে উপলব্ধি কোরি। সবুজ বন-বনানী, খোলা মাঠ, বাতাসে দোল খাওয়া ধানের শীষ- এগুলো দেখতে হলেও চোখ থাকতে হয়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এই অবলোকন হৃদয়ে অনাবিল সুখ সৃষ্টি করে। আবার খারাপ জিনিস মনে ঘৃণাবোধের সৃষ্টি করে। এক কথায় ভালো আকর্ষণ করে, মন্দ বিকর্ষণ করে।
অন্যদিকে যে জন্ম থেকে অন্ধ, জীবনে কোনদিন আলো দেখেনি, তাকে শত চেষ্টা করে, শত উদাহরণ দিয়েও আলো কি তা বোঝানো যাবে? তাকে কি বোঝানো যাবে গোলাপ কি, গোলাপের রং লাল, কালো, গোলাপী বলতে কি বোঝায়? সবুজ কি, সবুজ ধানের মাঠ বাতাসে দোল খেলে কেমন দেখায়? যার চোখ আছে সে দেখে হরিণের মায়াবী চোখ, সে দেখে ময়ূরের পেখম মেলার দৃশ্য কেমন মনোহর। যার চোখ নেই তার কাছে সুন্দর অসুন্দরের কোন প্রভেদ নেই। সত্য দেখার জন্য যেমন অন্তর্চক্ষু দরকার তেমনি মিথ্যা দেখার জন্য অন্তর্চক্ষু দরকার। মাকাল ফল বাইরে থেকে দেখতে অতি মনোরম কিন্তু যে জানে এর ভিতরে কি আছে সে কিন্তু কখনোই এই ফল খাবে না। যে জানে না, সে এটা অবশ্যই খেতে চাইবে। মানবজাতির অন্তর্চক্ষু যদি অন্ধ হয় সেও তেমনি বুঝতে পারবে না, কে তার শুভাকাঙ্খী আর কে তার ধ্বংসকামী। এই সভ্যতার অন্তর্চক্ষু নেই, এর অনুসারীরাও তাই সত্য বিমুখ। শত হাজারবার সত্যকে দেখানোর চেষ্টা করা হোলেও তা যেন বৃথা, কারণ ঐ অন্ধের মত অন্তর্চক্ষু না থাকায় সত্যকে তারা দেখে না, বোঝে না। যেহেতু দেখেও না, বোঝেও না। কাজেই সত্য-সুন্দর তার আত্মায় কোন প্রভাবও সৃষ্টি করে না। আল্লাহর রসুল বোলেছেন দাজ্জালের ডান চোখ অন্ধ হবে। [আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ) থেকে বোখারী ও মোসলেম]
দাজ্জালের ডান চক্ষু অন্ধ হবে অর্থ সে ডান চোখ দিয়ে কিছুই দেখতে পাবে না, যা দেখবে সবই বাঁ চোখ দিয়ে। আল্লাহ যা কিছু তৈরি কোরেছেন সব কিছুরই দু’টো বিপরীত দিক আছে। এই মহাসৃষ্টিও দৃশ্য ও অদৃশ্য, আলো ও অন্ধকার, আগুন ও পানি, দিন ও রাত্রি ইত্যাদি বিপরীত জিনিসের ভারসাম্যযুক্ত মিশ্রণ। এই পৃথিবীতে আল্লাহ তাঁর যে খলীফা পাঠালেন সেই মানুষের জন্যও তিনি নির্ধারিত কোরলেন বিপরীতমুখী বিষয়। তার জন্যও তিনি নির্দিষ্ট কোরলেন দেহ ও আত্মা, জড় ও আধ্যাত্মিক, সত্য ও মিথ্যা, সওয়াব ও গোনাহ, ভালো ও মন্দ, ইহকাল ও পরকালের ভারসাম্যযুক্ত সমন্বয়। এই দুইয়ের ভারসাম্যই হোচ্ছে স্বাভাবিক, প্রাকৃতিক। তাঁর এই খলীফার জন্য যে দীন, জীবন-বিধান তিনি তাঁর নবী-রসুলের মাধ্যমে প্রেরণ কোরলেন সেটার এক নাম দীনুল ফিতরাহ, প্রাকৃতিক, স্বাভাবিক জীবন-ব্যবস্থা এবং সেই দীন যারা মেনে চোলবে আল্লাহ তাদের নাম দিলেন মিল্লাতান ওয়াসাতা, ভারসাম্যযুক্ত জাতি (কোর’আন- সুরা বাকারা, আয়াত ১৪৩)। এই ভারসাম্যের দু’দিকের যে কোন দিককে বাদ দিলেই ভারসাম্য নষ্ট হোয়ে যাবে ও অস্বাভাবিক অপ্রাকৃতিক অবস্থার সৃষ্টি হবে এবং আল্লাহ তাঁর খলীফা, মানুষ সৃষ্টি কোরে যে পরীক্ষা কোরতে চান তা ব্যর্থ হোয়ে যাবে। যেমন আজকে হোয়েছে।
পথভ্রষ্ট বনি-ইসরাঈল জাতিকে হেদায়াত করার জন্য প্রেরিত আল্লাহর নবী ঈসার (আঃ) প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবার পর তাঁর শিক্ষাকে ইউরোপের সমষ্টিগত জীবনে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা একটা অচল অবস্থার সৃষ্টি কোরল। রাজনৈতিক, আর্থ-সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাবিহীন একটা ভারসাম্যহীন ব্যবস্থা, যেটার উদ্দেশ্যই ছিলো শুধু আত্মশুদ্ধির পরিত্যক্ত প্রক্রিয়াকে (তরিকা) পুনঃপ্রতিষ্ঠা, সেটা মানুষের সার্বিক জীবনে অচল এটা সাধারণ জ্ঞানেই (Common sense) বোঝা যায়। এই অচল ব্যবস্থাকে চালু করার চেষ্টা ব্যর্থ হোলে ইউরোপ যখন মানুষের সমষ্টিগত জীবনের সার্বভৌমত্ব আল্লাহর হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে নিজেদের হাতে তুলে নিয়ে সংবিধান, রাজনৈতিক, আর্থ-সামাজিক, আইন-কানুন, দণ্ডবিধি তৈরি কোরে নিলো তখন তারা জীবনের ভারসাম্য সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস কোরে ফেললো। দু’চোখ দিয়ে না দেখে এক চোখ অন্ধ কোরে শুধু এক চোখ দিয়ে দেখতে শুরু কোরল। অন্ধ কোরল ডান অর্থাৎ দক্ষিণ চোখটাকে।
ডান এবং বামের মধ্যে ডানকে নেয়া হয় উত্তম ও বামকে নেয় হয় অধম হিসাবে। কেয়ামতের দিন জান্নাতীদের আমলনামা, তাদের কাজের রেকর্ড বই দেয়া হবে ডান হাতে, জাহান্নামীদের দেয়া হবে বাম হাতে (সুরা হাক্কাহ্, আয়াত ১৯, ২৫ ও সুরা ইনশিকাক, আয়াত ৭)। দেহ ও আত্মার মধ্যে আত্মা ডান দেহ বাম, সত্য ও মিথ্যার মধ্যে সত্য ডান মিথ্যা বাম, ইহকাল ও পরকালের মধ্যে পরকাল ডান, ইহকাল বাম, জড় ও আধ্যাত্মের মধ্যে আধ্যাত্ম ডান, জড় বাম ইত্যাদি। ইহুদি-খ্রিস্টান বস্তুতান্ত্রিক সভ্যতার (Judeo-Christian Materialistic Civilization) ডান চোখ অন্ধ অর্থাৎ জীবনের ভারসাম্যের একটা দিক, আত্মার দিক, পরকালের দিক, অদৃশ্যের (গায়েব) দিক, সত্যের দিক সে দেখতে পায় না, তার সমস্ত কর্মকাণ্ড জীবনের শুধু একটা দিক নিয়ে, দেহের দিক, জড় ও বস্তুর দিক, যন্ত্র ও যন্ত্রের প্রযুক্তির দিক, ইহকালের দিক, কারণ শুধু বাম চোখ দিয়ে সে জীবনের ঐ একটা দিকই দেখতে পায়। তাই বিশ্বনবী বোলেছেন, দাজ্জালের ডান চোখ অন্ধ হবে। এই ইহুদি-খ্রিস্টান বস্তুবাদী ‘সভ্যতা’ শক্তিশালী দূরবীন দিয়ে তার বাঁ চোখ দিয়ে এই মহাবিশ্ব, এই বিশাল সৃষ্টিকে দেখতে পায়। কিন্তু তার ডান চোখ অন্ধ বোলে এই সৃষ্টির স্রষ্টাকে দেখতে পায় না; অনুু-পরমাণু থেকে শুরু কোরে বিশাল মহাকাশ পর্যন্ত প্রত্যেকটি বস্তু যে এক অলংঘনীয় বিধানে বাঁধা আছে তা দাজ্জাল তার বাঁ চোখ দিয়ে দেখতে পায়, কিন্তু ডান চোখ নেই বোলে এই মহাবিধানের বিধাতাকে দেখতে পায় না। শিশুর জন্মের আগেই মায়ের বুকে তার খাবারের ব্যবস্থা করা আছে তা দাজ্জালের চিকিৎসা বিজ্ঞান তার বাঁ চোখ দিয়ে দেখতে পায়, কিন্তু যিনি এ ব্যবস্থা কোরে রেখেছেন সেই মহাব্যবস্থাপককে, মহাপ্রভু আল্লাহকে সে দেখতে পায় না, কারণ তার ডান চোখ অন্ধ।
দাজ্জাল তার আত্মাহীন জড়বাদী মতবাদের প্রভাবে মানব জাতির অন্তর্চক্ষুকে একেবারে বন্ধ কোরে দিয়েছে। কাজেই সত্যের কথা যতোই বলা হোক, যতোভাবেই বোঝানোর চেষ্টা করা হোক দাজ্জালের অনুসারীরা আর সত্যকে দেখতে পায় না, বোঝার চেষ্টাও করে না। এই ‘সভ্যতা’ মহাবিশ্বের স্রষ্টাকে মানবজীবনের সামষ্টিক অঙ্গন থেকে নির্বাসিত কোরেছে, মিথ্যার চাদরে দুনিয়াকে আচ্ছাদিত কোরে ফেলেছে। মানুষ তার প্রভাবে আজ প্রায় পশুতে পরিণত হোয়েছে। তা সত্ত্বেও মানুষ এই ইহুদি খ্রিস্টান সভ্যতাকেই ভালোবাসছে, প্রাণপণে তার অনুসরণ-অনুকরণ কোরে যাচ্ছে। এটা তারা কোরছে তাকে চিনতে না পারার কারণে। রসুলাল্লাহ বোলে গেছেন, “দাজ্জালের দুই চোখের মাঝখানে (অর্থাৎ কপালে) কাফের লেখা থাকবে। শুধু মো’মেন, বিশ্বাসীরাই তা দেখতে এবং পড়তে পারবে; যারা মো’মেন নয়, তারা পড়তে পারবে না [আবু হোরায়রা (রাঃ), আবু হোযায়ফা (রাঃ) এবং আনাস (রাঃ) থেকে বোখারী ও মোসলেম]।
এই হাদিসটি শুধু অর্থবহ এবং আকর্ষণীয় নয়, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণও বটে। মো’মেন হোলে লেখাপড়া না জানলেও, নিরক্ষর হোলেও তারা পড়তে পারবেন আর মো’মেন না হোলে, শিক্ষিত হোলেও, পণ্ডিত হোলেও দাজ্জালের কপালে কাফের লেখা দেখতে ও পড়তে পারবেন না, এই কথা থেকেই এটা পরিস্কার যে, দাজ্জালের কপালের ঐ লেখা কাফ্, ফে, রে এই অক্ষরগুলো দিয়ে লেখা নয়। মো’মেনরা নিরক্ষর হলেও ঐ লেখা দেখতে ও পড়তে পারবেন। মো’মেন কারা? আল্লাহ কোর’আনে বোলেছেন- শুধু তারাই মো’মেন যারা আল্লাহ ও তাঁর রসুলকে বিশ্বাস করে, তারপর আর তাতে কোন সন্দেহ করে না, এবং তাদের প্রাণ ও সম্পদ দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ করে; তারাই হোল খাঁটি (সুরা হুজরাত ১৫)।
এখানে মনে রাখতে হবে যে ‘যারা আল্লাহ ও তাঁর রসুলকে বিশ্বাস করে’ এ কথার অর্থ যারা আল্লাহর সর্বব্যাপী সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করে, জীবনের প্রতি বিভাগে, প্রতি অঙ্গনে আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে স্বীকার করে না। দাজ্জালকে রব বোলে স্বীকার কোরে নেয়ায় প্রায় সম্পূর্ণ মোসলেম দুনিয়া আল্লাহর সার্বভৌমত্বকে ব্যক্তি জীবনে কোণঠাসা কোরে রেখে আকিদার (Comprehensive Concept) বিকৃতির কারণে কার্যতঃ মোশরেক ও কাফের হোয়ে গেছে। কাজেই বৃহত্তর জীবনে দাজ্জালের কপালে কাফের লেখা অর্থাৎ দাজ্জাল যে সমষ্টিগত জীবনে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব অস্বীকারকারী কাফের এটা তারা দেখতেও পান না সুতরাং পড়তেও পারেন না। কিন্তু জীবনের প্রতি অঙ্গনে আল্লাহর সার্বভৌমত্বে যিনি বিশ্বাসী, অর্থাৎ মো’মেন তিনি নিরক্ষর হোলেও দাজ্জাল যে কাফের তা দেখতে ও বুঝতে পারেন অর্থাৎ তার কপালে কাফের লেখা পড়তে পারেন।
আজ মোসলেম বোলে পরিচিত এই জাতিটির প্রায় সমস্ত মানুষ দাজ্জালকে রব বোলে স্বীকার কোরে নিয়েছে কিন্তু ওদিকে মহা-পরহেযগার, মুত্তাকী। এমন কি এই জাতির মধ্যে কয়েকটি দেশ আছে যাদের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের কপালে সাজদার কালো দাগ আছে কিন্তু তারা দাজ্জালের আশ্রয়ে থেকে, দাজ্জালের কাছ থেকে অস্ত্রসহ সবরকম সাহায্য নিয়ে তাদের দেশের মধ্যে যারা আল্লাহর সার্বভৌমত্ব, তওহীদ প্রতিষ্ঠা কোরতে চান তাদের বন্দি কোরছেন, নির্যাতন কোরছেন, গুলি কোরে ফাঁসি দিয়ে হত্যা কোরছেন। এর কারণ এসব নেতাসহ মোসলেম বিশ্ব দাজ্জালের শেখানো এই কথা বিশ্বাস কোরে নিয়েছেন যে ধর্ম ব্যক্তিগত বিষয়, সমষ্টিগত নয়, তাই তারা দাজ্জালের কপালে কাফের লেখা দেখতে ও পড়তে পারেন না। কারণ মো’মেন না হওয়ার কারণে তাদের অন্তর্দৃষ্টি অন্ধ, দাজ্জালের মত তাদেরও ডান চোখ অন্ধ।
সমস্ত সত্য ও সুন্দরের আধার হোচ্ছেন আল্লাহ। তিনি হোলেন সমস্ত ন্যায় ও কল্যাণের উৎস। তারপরে সত্য হোল তাঁর সৃষ্টিকূল। তার সৃষ্টির মধ্য দিয়েই তিনি তাঁর মাহাত্ম্য ও সৌন্দর্যের প্রকাশ ঘোটিয়েছেন। তাঁর মধ্যে তাঁর প্রেরিত নবী রসুলগণ অগ্রগণ্য। তারপরে সত্য হোল মো’মেনগণ। সুতরাং আল্লাহর সত্যের প্রকাশ হোচ্ছে নবী রসুল, আল্লাহর নাজেলকৃত সত্যদীন এবং এই দীনের ধারক মো’মেনগণ। দাজ্জালের জড়বাদী ধারণার প্রভাবে যাদের অন্তর্চক্ষু অন্ধ হোয়ে গেছে তাদেরকে হাজার বার বোঝালেও তারা এই সত্যগুলিকে দেখতে পাবে না, এর সৌন্দর্য তাদের কাছে অজ্ঞাতই থেকে যাবে। অন্ধের কাছে যেমন সব রংই অন্ধকার তেমনি অন্তর্দৃষ্টি না থাকায় এই সভ্যতার উপাসকেরা এখন আঁধার ছাড়া আর কিছুই দেখে না। তাদের জন্য আল্লাহর এই কথাই প্রযোজ্য: তাদের হৃদয় আছে কিন্তু তা দিয়ে তারা বোঝে না। তাদের চোখ আছে কিন্তু তা দিয়ে তারা দেখে না এবং তাদের কান আছে কিন্তু তা দিয়ে তারা শোনে না-এরা পশুর মতো, বরং তার চেয়েও ভ্রষ্ট (সুরা আরাফ ১৭৯)।
আমার এ লেখা থেকে পাঠক হয়তো ভাবছেন যারা দাজ্জালের অনুসারী তারা সত্যকে দেখতে পায় না, কিন্তু যারা ধর্ম নিয়ে আছেন তারা নিশ্চয়ই সত্যকে দেখতে পান। কিন্তু না। এই ধারণা গুরুতর ভুল। তারা আসলে ধর্মের অন্তর্নিহিত সত্যকে প্রত্যাখ্যান কোরেছে, ধর্মের খোলস ধারণ কোরে ধর্মকে পুঁজি কোরে খাচ্ছে। ধর্মের অন্তর্নিহিত সত্য কি? সেটি বলার জন্য আল্লাহর একটি আয়াত উল্লেখ কোরছি। এরকম আরও অসংখ্য সত্য দিয়ে স্রষ্টা, আল্লাহ ধর্ম প্রেরণ কোরেছেন। কিন্তু আজকের ধর্মের ধারক বাহকেরা এই ধর্মের মধ্যে বসবাস করেন কিন্তু তাদের দৃষ্টিশক্তি না থাকার কারণে এই বৃহৎ সত্যগুলিও তারা দেখতে পায় না। কেউ দেখিয়ে দেওয়া চেষ্টা কোরলেও সেটা পণ্ডশ্রম, যেমন পূর্বে বোলে এসেছি একজন অন্ধের কাছে লাল সাদা, আলো আঁধারের কোন প্রভেদ নেই। দীনের কয়েকটি মূলনীতি অর্থাৎ সত্য থেকে এই ধর্মজীবী আলেমরা বিচ্যুত। উদাহরণস্বরূপ সুরা বাকারার ১৭৪-১৭৬ নং পর্যন্ত আয়াতগুলি উল্লেখ কোরছি। আল্লাহ বলেন, আল্লাহ যে কেতাব অবতীর্ণ করেছেন যারা তা গোপন করে এবং বিনিমেয় তুচ্ছমূল্য গ্রহণ করে তারা (১) নিজেদের পেটে আগুন ছাড়া কিছুই পুরে না, (২) কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাদের সঙ্গে কথা বোলবেন না, (৩) আল্লাহ তাদের পবিত্রও কোরবেন না, (৪) তারা ক্ষমার পরিবর্তে শাস্তি ক্রয় কোরেছে, (৫) তারা হেদায়াতের পরিবর্তে পথভ্রষ্ঠতা, গোমরাহী ক্রয় কোরেছে, (৬) তারা দীন সম্পর্কে ঘোরতর মতভেদে লিপ্ত আছে (৭) আগুন সহ্য কোরতে তারা কতই না ধৈর্যশীল অর্থাৎ মোটকথা তারা নিকৃষ্টতম জাহান্নামী।
এ আয়াত থেকে যে সত্যগুলি উদ্ভাসিত হয় তা নিুরূপ:
(১) ধর্মকে পুঁজি কোরে ব্যবসা করা যাবে না, কারণ ধর্ম সত্য। সত্য নিয়ে ব্যবসা চলে না, ব্যবসা কোরলে সত্য বিকৃত হোয়ে যায়, অর্থাৎ সেটা মিথ্যায় পরিণত হয়।
(২) ধর্মের কোন বিধানকে মানুষের কাছ থেকে গোপন করা যাবে না। কে সেটা মানবে কে মানবে না সেটা মানুষের ইচ্ছা। কিন্তু স্রষ্টা যে হক তাঁর কেতাবে মানবজাতির জন্য পাঠিয়েছেন মানুষের সামনে প্রকাশ কোরতেই হবে তা অন্যের কাছে যতোই রূঢ় মনে হোক না কেন। সেই বিধান প্রকাশের ফলে যদি নিজের বিরাট ক্ষতি হয় তবু সেটা গোপন রাখা যাবে না।
(৩) এর ছোটখাটো বিষয়ের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ কোরে সেগুলি নিয়ে মতভেদ কোরে ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করা যাবে না।
প্রকৃতপক্ষে ধর্ম কোন উপাসনার বিষয় নয়, এটি হোচ্ছে মানবজীবনে শান্তি আনয়নের পন্থা অর্থাৎ মানবতার পার্থিব কল্যাণ ও শান্তিবিধান এবং পরকালীন মুক্তিই ধর্মের চূড়ান্ত লক্ষ্য। এর দ্বারা যদি মানবজাতি শান্তিই না পায় তবে ঐ ধর্ম থাকা না থাকা সমান কথা। আল্লাহ বোলেছেন, আল্লাহ যা নাজেল কোরেছেন তা যদি জীবনে বাস্তবায়িত না করা হয় তালো সেটা ভিত্তিহীন (সুরা মায়েদা ৬৮)। এই ধর্মজীবীরা দীনকে উপাসনার বস্তু বানিয়ে রেখেছে। দীনের এই নিগূঢ় সত্যগুলির একটিও তাদের দৃষ্টিগোচর হোচ্ছে না, ফলে তারা এর সবকটির বিরুদ্ধাচারণ করেন।
[সমস্ত পৃথিবীময় অন্যায়, অবিচার, যুদ্ধ ও রক্তপাত ইত্যাদি নির্মূল করে ন্যায়, সুবিচার ও শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৯৫ সনে এমামুযযামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী হেযবুত তওহীদ নামক আন্দোলনটি প্রতিষ্ঠা করেন। আল্লাহ তাঁকে প্রকৃত ইসলামের যে জ্ঞান দান কোরেছেন তা তিনি যতোটা সম্ভব হোয়েছে বই-পুস্তক লিখে, বক্তব্যের মাধ্যমে প্রচারের চেষ্টা কোরেছেন। এই নিবন্ধটির লেখক মোহাম্মদ মসীহ উর রহমান যামানার এমামের একজন অনুসারী এবং হেযবুত তওহীদের আমীর।