মুস্তাফিজ শিহাব
প্রচলিত ইসলামের ধ্যান-ধারণা মোতাবেক অনেকেই আলেম চিহ্নিত করেন লেবাসের মাধ্যমে। এর ফলে নির্দিষ্ট লেবাসধারী নয় এমন কেউ যদি ইসলামের কোন বিষয়ে পরামর্শ দেন তখন তারা সেই পরামর্শকে গ্রহণ করেন না। তারা কোর’আন, হাদীসের সাথে মিলানো তো দুরে থাক অনেকসময় লেবাস নেই বিধায় তাকে কথা বলার সুযোগ পর্যন্ত দেয়া হয় না। কিন্তু ইসলামে এ ধরনের নির্দিষ্ট কোন লেবাসের উল্লেখ নেই। নির্দিষ্ট লেবাসকে অনেকে আল্লাহর রসুল (স.) এর সুন্নাহ বলেও ধারণা করে থাকেন। কিন্তু আল্লাহর রসুলের প্রকৃত সুন্নাহ তাঁর লেবাস কে ঘিরে নয়, তাঁর সামগ্রিক জীবনের কর্মকাণ্ডকে ঘিরে।
মহান আল্লাহ তাঁর রসুলকে প্রেরণ করেছেন হেদায়াহ ও সত্যদীন দিয়ে যাতে তিনি এই দীনকে সমগ্র পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শান্তি, ন্যায় ও সুবিচার প্রতিষ্ঠা করতে পারেন ( সুরা সফ ৯. সুরা ফাতাহ ২৮, সুরা তওবা ৩৩)। আল্লাহর রসুল জানাতেন মহান আল্লাহ তাঁকে যে গুরুত্বপূর্ণ কাজের দায়িত্ব দিয়েছেন সেই কাজ একা একজীবনে করা সম্ভব নয়। এর ফলে তিনি তাঁর আসহাব ও আরবের অন্যান্য সকলকে নিয়ে একটি ঐক্যবদ্ধ জাতি গঠন করলেন। কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য এবং লক্ষ্য সম্পর্ক যাতে কারো কোন সংশয় না থাকে তাই তিনি তাঁর আসহাবদের প্রতিটি বিষয় সম্পর্কে সম্মক ধারণা (আকিদা, Comprehensive Concept) প্রদান করলেন। এর ফলে রসুলুল্লাহ থাকাকালীন সময়ে তাঁরা যেমন তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে সজাগ ছিল তেমনি রসুলুল্লাহর ইন্তেকালের সাথে সাথে তারা সেই লক্ষ্য বাস্তাবায়ন করার জন্য পরিবার-পরিজন রেখে, হেদায়াহ ও সত্যদীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়েন। একটি পর্যায়ে গিয়ে আকিদা বিচ্যুতির কারণে তাঁরা তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ভুলে যায় ও এর ফলে পরবর্তীতে তাদের উপর নেমে আসে আল্লাহর লা’নত। সেই লা’নতের ফল আজও মুসলিম জাতি ভোগ করছে।
আকিদা বিচ্যুতির ফলে এখনও আমরা উল্টো দিকে হাটছি। আমরা রসুলের প্রকৃত সুন্নাহ, দীন প্রতিষ্টার সংগ্রামকে বাদ দিয়ে তাঁর অনুকরণ করায় ব্যস্ত। আমরা তাঁর মত লেবাস পড়ছি, তাঁর মতো দাড়ি রাখছি, তিনি যেরূপ ডান কাত হয়ে ঘুমাতেন সেরূপ ভাবেই অনুকরণ করছি। কিন্তু সেই আসল সুন্নাহ, যার জন্য রসুলকে মহান আল্লাহ এ ধরায় প্রেরণ করেছেন, তার কী হলো? সেই সুন্নাহকে আমরা বহু পূর্বেই ভুলে বসে আছি। আপনি রসুলকে অনুকরণ করতে চাইলে আমার তাতে কোন আপত্তি নেই কিন্তু আপনি যদি আপনার নেতার মূল কাজ বাদ দিয়ে, তাঁকে অনুসরণ করা বাদ দিয়ে শুধু অনুকরণ করে মনে করেন যে আপনি যোগ্য অনুসারী হতে পেরেছেন তাহলে আমি বলব এ আপনার নিছক কল্পনা ছাড়া আর কিছ্ইু নয়। আপনি মোটেও তাঁর প্রকৃত অনুসারী হতে পারেননি, কারণ আপনি তাঁর দেয়া মূল দায়িত্বকে ভুলে বসে আছেন।
ধরুন আপনি বিপ্লবী চে গুয়েভারের অনেক বড় ভক্ত। আপনি নিজেও তার মতই হবার স্বপ্ন দেখেন। তাহলে আপনি কি তার বিপ্লবী জীবনকে বেছে নিবেন নাকি তিনি যেভাবে ঘুমাতেন, যেভাবে লিখতেন, যেভাবে বসতেন, যে কাপড় পরিধান করতেন ইত্যাদির অনুকরণ করবেন? আপনি যদি বিপ্লবী জীবনের গ্রহণের পাশাপাশি এগুলোর অনুকরণ করেন তবে আমার তাতে কোন আপত্তি নেই কিন্তু যদি আপনি মূল কাজ বাদ দিয়ে এগুলো নিয়ে পড়ে থাকেন তবে আমি বলবো আপনার দাবি মিথ্যা। আপনি কখনই তার যোগ্য অনুসারী হতে পারবেন না। আপনার সকল অনুকরণ বৃথা। তিনি কখনই আপনাকে তার অনুসারী হিসেবে স্বীকার তো করবেনই না বরং আপনার জন্য অপমানিত বোধ করবেন।
আমাদের বর্তমান ধার্মিকগণ আল্লাহর রসুলকে ঠিক একইভাবে অপমানিত করছেন। তারা রসুলকে অন্ধ অনুকরণ করে যাচ্ছে তাঁর মূল লক্ষ্যের অনুসরণকে বাদ দিয়ে। দুনিয়ার আর কোন জাতি তাদের নেতাকে এত অপমান করেনি। অতএব আমাদের উপর রসুল যে দায়িত্ব অর্পণ করেছেন সে দায়িত্বের যথাযথ পালন করতে হবে। রসুলের প্রকৃত সুন্নাহকে ধারণ করতে হবে। রসুলের প্রকৃত সুন্নাহর অনুসরণের পর কেউ যদি তাঁকে অনুকরণও করতে চায় তবে এতে আমার কোন আপত্তি নেই কারণ সেটা নিছকই তার ব্যক্তিগত বিষয়। অতএব ইসলামকে যারা ভালোবাসেন তাদের এখন প্রধান কর্তব্য অনুকরণ ত্যাগ করে রসুলের সুন্নাহর অনুসরণ করা।