পাবনা সদর উপজেলার হেমায়েতপুর ইউনিয়নের চর ঘোষপুর গ্রামের মধ্যপড়া এলাকার মৃত আনিছুর রহমান মণ্ডলের পুত্র মো. সুজন। সমাজের আর দশজন মানুষের মতোই মা, ভাইবোন, স্ত্রীকে নিয়ে তার সংসার। সৎ, স্বল্পভাষী, শান্তিপ্রিয় এবং বন্ধুবৎসল মানুষ হিসেবে এলাকার সকলের কাছে সুপরিচিত সুজন। কিন্তু হঠাৎ করেই সব এলোমেলো হয়ে যায়।
গত মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) এক বর্বরোচিত সন্ত্রাসী হামলায় থেমে যায় তার জীবনঘণ্টা। সন্ত্রাসীদের অতর্কিত আক্রমণে দেশীয় অস্ত্রের উপর্যুপরি আঘাতে ক্ষত বিক্ষত হয় সুজনের সারা শরীর। মাথা-ঘাড়ে লেগে যায় মারাত্মক অস্ত্রের জখম। দ্রুত তাকে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখান থেকে রাজশাহী মেডিকেলে পাঠানো হয়। অর্ধরাত্রি মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে মধ্যরাতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন সুজন। গুজবসন্ত্রাস আর ধর্মান্ধতার বলি হয়ে ঝরে যায় আরও একটি তাজা সত্যনিষ্ঠ প্রাণ।
সুজন ছিলেন অরাজনৈতিক আন্দোলন হেযবুত তওহীদের একজন নিবেদিতপ্রাণ সদস্য। মানবতার কল্যাণে মহাসত্যের আলো সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার ব্রত নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন তিনি। অন্যায়-অবিচার মুক্ত ন্যায় ও শান্তিতে পূর্ণ এক নতুন সভ্যতা বিনির্মাণের স্বপ্নকে বাস্তবায়নে সচেষ্ট ছিলেন সর্বদা। নিঃস্বার্থে এ মহতী কাজে আত্মনিয়োগ করাটাই যেন কাল হয়েছিল তার! একদল ধর্মব্যবসায়ী সন্ত্রাসীর হামলায় প্রাণ দিতে হলো তাকে।
পেশায় ওয়ার্কশপ মিস্ত্রি সুজন আজ থেকে প্রায় নয় বছর আগে শাহানা খাতুনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। সুজনের ঘনিষ্ঠজনরা জানান, দাম্পত্য জীবনে বেশ সুখী ছিলেন সুজন-শাহানা। একটি সন্তান প্রাপ্তির মাধ্যমে দাম্পত্যে পূর্ণতা খুঁজছিলেন দু’জনে। স্রষ্টা তাদের সেই আশা পূরণও করেছিলেন। বর্তমানে নয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা সুজনের স্ত্রী শাহানা খাতুন। আর ক’দিন বাদেই তাদের ঘর আলোকিত করবে অনাগত এ সন্তান। কিন্তু মর্মান্তিক বিষয় হলো, নয় বছরের অপেক্ষার পর অনাগত এ সন্তানের মুখ দেখে যেতে পারলেন না সুজন।
সুজনের দুনিয়া থেকে চলে যাওয়ার ঘটনায় গভীর শোকে নিমজ্জিত তার পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ও এলাকাবাসী। কিন্তু সবকিছুকে ছাপিয়ে তার প্রিয়তমা স্ত্রীর মর্মযন্ত্রণা যেন কাঁপিয়ে দিয়েছে পাষাণের হৃদয়ও। যে সন্তানের আশায় বুক বেঁধে ছিলেন দু’জনে, আজ বাদে কাল সে সন্তান দুনিয়ার আলো দেখবে ইনশা’আল্লাহ। কিন্তু জন্মদাতা পিতার সাথে ইহজনমে তার সাক্ষাৎ হবে না- এ মর্মযন্ত্রণা কোনোভাবেই সহ্য করতে পারছেন না শাহানা। তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষাও খুঁজে পাচ্ছেন না স্বজনরা।
শোক সন্তপ্ত পরিবার ও স্বজনদের এখন একটাই দাবি- কোনোভাবেই যেন সুজনের হত্যাকারীদের একজনও বিচারের বাইরে না থাকে। তারা প্রধানমন্ত্রী ও দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে দাবি জানিয়েছেন যেন, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এ বর্বরোচিত হামলার ঘটনায় দায়ী প্রত্যেকের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হয়।