মো. মশিউর রহমান:
“বর্তমানে আমাদের দেশসহ সারা পৃথিবীতে চলমান সংকটের সমাধান একমাত্র আমাদের কাছেই আছে”- কথাটা শুনতে অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে, বিশ্বাস নাও করতে পারেন। কিন্তু যতই অবিশ্বাস্য মনে হোক সত্য এটাই যে, আলহামদুলিল্লাহ, চলমান সংকটের সমাধান মহান আল্লাহ আমাদেরকেই দিয়েছেন। এই সংকট থেকে কিভাবে মানবজাতি বাঁচতে পারবে, কিভাবে উদ্ধার পাবে দেশ, সমাজ, মানবতা, সে সমাধান আল্লাহ আমাদেরকে দিয়েছেন।
আজকে আমাদের দেশসহ সমস্ত দুনিয়াময় ভয়াবহ সংকট চলছে, রাজনৈতিক হানাহানি, অর্থনৈতিক সংকট, সামাজিক অস্থিরতা, সর্বস্তরে প্রতারণা ও দুর্নীতি, ধর্মীয় দেউলিয়াপনা ইত্যাদি সব মিলিয়ে মানুষ আজ চরম অশান্তির মধ্যে বাস করছে। এই সমস্ত রকম অন্যায় থেকে, অবিচার থেকে বাঁচার জন্য পথ খুঁজছে, এজন্য মানুষ একটার পর একটা বিভিন্ন পথ অবলম্বন করে যাচ্ছে কিন্তু শান্তি তো পাচ্ছেই না বরং দিন দিন পরিস্থিতি জটিল ও ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। হেযবুত তওহীদ এই কথাটাই বিভিন্নভাবে বলে যাচ্ছে। হেযবুত তওহীদ সম্পর্কে কিছু সত্য ও সঠিক ধারণা পেলে আপনারা বুঝতে পারবেন ইনশাল্লাহ একমাত্র হেযবুত তওহীদই পারবে মানবজাতিকে শান্তি দিতে। আমি এখানে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় তুলে ধরছি।
আন্দোলনের কর্মসূচি হিসাবে আমাদের দেশে মানুষের ¶তি করা, পথরোধ করা, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে হামলা করা, হরতাল, জ্বালাও-পোড়াও ইত্যাদি বর্তমান রাজনীতিতে চালু থাকলেও হেযবুত তওহীদ তার জন্মলগ্ন থেকে ২৭ বছর যাবৎ কারো কোন ¶তি না করে, কারো পথরোধ না করে, হরতাল, জ্বালাও-পোড়াও ইত্যাদি কোন ধ্বংসাত্মক কাজ না করে, মানুষকে একটুও কষ্ট না দিয়ে সম্পূর্ণভাবে আইনশৃঙ্খলার মধ্যে থেকে আন্দোলন করে যাচ্ছে এবং বৈধভাবে একটি মহান আদর্শ প্রচার করে যাচ্ছে। আজ হেযবুত তওহীদের ব্যাপারে আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষই অবগত, কারণ হেযবুত তওহীদের সদস্যরা দেশের প্রায় সকল স্থানে গিয়ে, সর্বস্তরের মানুষেকে এ আন্দোলনের বক্তব্য মানুষকে জানিয়েছেন। মানবজাতির মুক্তির একটা পথ আল্লাহ আমাদেরকে দিয়েছেন, সম্পূর্ণ অহিংস পদ্ধতিতে মানুষকে আমরা তা জানিয়ে যাচ্ছি এ দাবি আমরা করতে পারি। আমরা তো কারো কোন ক্ষতি করিই না বরং এ কথা বলার কারণে উল্টো আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হয়েছে, আমাদের উপর হামলা করা হয়েছে, আমাদেরকে বিভিন্ন উপায়ে নির্যাতন করা হয়েছে, বহুবার বহুস্থানে আমাদের সদস্যদের বাড়ি-ঘর ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়েছে, আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে, আমাদের লোকদের শহীদ করা হয়েছে।
এখন মানবজাতির এই সংকট থেকে, অশান্তি থেকে বাঁচার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হবে। মানুষ যখন কোনো উপায় না পেয়ে ধ্বংসের শেষ প্রান্তে এসে যায় তখন দেশ, সম্পদ, জনপথ কোন কিছুর আর নিরাপত্তা থাকে না, কে কোন ধর্মে বিশ্বাসী সেটার আর কোন বাছবিচার থাকে না। তখন মানুষকে সিদ্ধান্ত নিতে হয় এ থেকে বাঁচা যায় কিভাবে? আজ তেমনি সবাই মিলে বসে সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার। আমরা বলছি, মানবজাতির মুক্তির একমাত্র পথ হলো হেযবুত তওহীদ। কিভাবে? সেটা হচ্ছে একটি সহজ সত্য সবাইকে মেনে নিতে হবে, তা হলো আল্লাহ সমস্ত দুনিয়া ও মানুষ সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং মানুষ কিভাবে শান্তি পাবে সেজন্য একটি জীবন-ব্যবস্থাও দিয়েছেন। সেটা হলো সত্য দ্বীন, সত্য জীবন-ব্যবস্থা যেটা আখেরী নবীর উপর আল্লাহ নাযেল করেছেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো আজকে ধর্মের নামে যে সন্ত্রাস চলছে, ব্যবসা চলছে, রাজনীতি চলছে, ধর্মের বিধি-নিষেধের বেড়ি পরিয়ে নারীদেরকে ঘরের মধ্যে বন্দি করে রাখা হয়েছে, বিভিন্ন ধরনের পোশাক, লেবাস ও আচার-আচরণের মধ্যে ধর্মকে আবদ্ধ করে রাখা হয়েছে, সংগীত, সাহিত্য, কলা, সংস্কৃতি, বৈজ্ঞানিক গবেষণা ইত্যাদিকে ধর্মের সঙ্গে সম্পর্কহীন করে ফেলা হয়েছে, কেবল তাই নয় এগুলিকে ধর্মের মুখোমুখি দাঁড় করানো হয়েছে; কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ইসলাম কি তাই বলে? না, এসব কিছুই প্রকৃত ইসলামের ধারণা নয়, এইসব ধারণা অনেকাংশে মধ্যযুগীয় খ্রিস্টীয় মতবাদ যা সুপরিকল্পিতভাবে ইসলামের গায়ে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। আল্লাহর প্রকৃত ইসলামটা আকাশের মত উদার, সমুদ্রের মত বিশাল। সেই ইসলাম প্রচণ্ড গতিশীল, প্রগতিশীল। আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞানের ভিত্তি রচনা করেছিলেন প্রকৃত মুসলিমরাই। এই কথা সর্বজনবিদিত যে, ইসলাম যখন স্পেনে প্রবেশ কোরল তখন সেই স্পেন হয়ে উঠলো সমগ্র ইউরোপের শিল্প, সাহিত্য, স্থাপত্যকীর্তি, চিকিৎসা, সঙ্গীত অর্থাৎ এক কথায় সকল জ্ঞান বিজ্ঞানের কেন্দ্রবিন্দু। পরবর্তীতে ইউরোপীয় সভ্যতার যে রেনেসাঁ (Renaissance) বা নবজাগরণ হয়েছিল তার উপাদান সরবরাহ করেছিল স্পেনের মুসলিম সভ্যতা। অথচ নিদারুন পরিহাস এই যে, আধুনিক শিল্পকলা, সঙ্গীত, সাহিত্য ইত্যাদির ভিত রচনাকারী মুসলিমদের বর্তমান পশ্চাদপদ উত্তরসূরীরা মসজিদে, খানকায়, হুজরায় বসে প্রশ্ন তোলেন রেডিও শোনা, টিভি দেখা, গান শোনা জায়েজ না নাজায়েজ।
ইসলামের গতিশীলতার আরেকটি প্রমাণ হলো চৌদ্দশত বছর আগে ইসলাম এমন একটা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিল যে জাতি নিজেদের মধ্যে মারামারি, হানিহানিতে লিপ্ত ছিল, তাদের প্রগতি, উন্নতি বলে কিছু ছিল না। তাদের জীবন জীবিকার অবলম্বন ছিল অন্যের সম্পদ লুট করা। সেই জাতিটাকে যে ইসলাম তাদের সমস্ত মত-পথ ভুলিয়ে ঐক্যবদ্ধ জাতিতে রূপান্তরিত করেছিল। সে জাতি মাত্র অল্প কয়েক বছরের মধ্যে দুনিয়ার বুকে শি¶কের জাতিতে পরিণত হয়েছিলো। সদকা ও যাকাতের অর্থ নিয়ে মানুষ নগরে বন্দরে, মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াত, নেওয়ার মতো কাউকে পাওয়া যেত না। একজন যুবতী মেয়ে একা শত শত মাইল পথ পাড়ি দিতে পারতো, তার মনে কোন ধরণের কোন ¶তির আশংকা জাগ্রত হতো না। অস্ত্রের কোন লাইসেন্স ছিল না, কোন পুলিশ বাহিনী ছিল না, কিন্তু বলতে গেলে কোন অপরাধ ছিল না। এগুলি ইতিহাস। তাহলে যে জীবন-ব্যবস্থা মানবসমাজকে এমন উন্নতি, এমন প্রগতি দিয়েছিল, এমন শান্তি ও নিরাপত্তা এনে দিয়েছিল সেটা আর আমাদের আলেমরা মক্তব, মসজিদে, মাদ্রাসায়, খানকায় যে ধর্মটা চর্চা করছেন সেটা কি এক? কখনই এক নয়। আমরা আপনাদেরকে এমন একটা জীবন-ব্যবস্থার কথা বলছি যেটা ১৩০০ বছর আগে দুনিয়া থেকেই হারিয়ে গেছে, সেটি বিকৃত হতে হতে বর্তমানে একেবারে বিপরীতমুখী হয়ে গেছে। আল্লাহর দেওয়া প্রকৃত ইসলাম প্রতিষ্ঠা ও কার্য্যকরী করার ফলে ১৪০০ বছর আগে অর্দ্ধ-পৃথিবীতে উপরোক্ত শান্তি ও শৃঙ্খলা নেমে এসেছিল। সেটা যদি আবার মানবজাতি গ্রহণ করে তাহলে আবার সাদা-কালো, তামাটে-বাদামী, সমস্ত মানবজাতি হবে একটা জাতি। হ্যাঁ, আজও সমস্ত মতভেদ ভুলে মানবজাতি একটা মহাজাতিতে পরিণত হওয়া সম্ভব, এবং সেটা হবে। একথা ভুলে গেলে চলবে না যে নবী করীম (সা.)-এর উপর আল্লাহ যে জীবন-ব্যবস্থা দিয়েছেন তা সমস্ত দুনিয়ার জন্য প্রযোজ্য হবে। আপনারা নিশ্চয় চাইবেন মানবজাতি সমস্ত ভেদাভেদ ভুলে একটি জাতি হোক। আমরা সবাই এক বাবা-মা আদম (আ.) ও হাওয়া থেকে এসেছি, সেই সূত্রে আমরা সবাই ভাই-ভাই। এই হানাহানি, এই বিভেদ, এই সংঘাত আমাদের মধ্যে লাগিয়ে রেখেছে ইবলিস তথা দাজ্জাল অর্থাৎ ইহুদী খ্রিস্টান ‘সভ্যতা’। তারা চায় যেন আমরা কখনও ঐক্যবদ্ধ হতে না পারি। আমাদের মধ্যে বিভিন্ন রকমের বিভক্তি রেখা টানা হয়েছে, অর্থনৈতিক সীমারেখা, রাজনৈতিক সীমারেখা, মতবাদের সীমারেখা ইত্যাদি হাজারো রকমের সীমারেখা টেনে দেওয়া হয়েছে। আমাদের কথা হলো মানবজাতিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়া ছাড়া বাঁচার কোন পথ নাই। কিন্তু অতিগুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো:
- এই জাতি ঐক্যবদ্ধ হবে কিসের ভিত্তিতে?
- ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সূত্র কি?
এই ঐক্যের সঠিক সূত্রটিই আল্লাহ হেযবুত তওহীদকে দান করেছেন। একটি ছোট্ট কথা, আল্লাহ ছাড়া আর কোন হুকুমদাতা নেই- এ কথাটিই হচ্ছে সমগ্র মানবজাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার সূত্র। এই কথাটি মেনে নিয়ে সবাইকে একটি সার্বভৌমত্বের অধীনে আসতে হবে। আজকে যেমন একেক জন একেকটা সার্বভৌমত্বের অধীন বসবাস করেছেন, কেউ রাজা-বাদশাহ-আমীরাতের সার্বভৌমত্বের অধীনে- যেখানে সবাই এমনভাবে ভোগ-বিলাসে মত্ত যে দুনিয়ায় কত মানুষ যে না খেয়ে আছে তা তাদের দেখার বিষয় না। কেউ বসবাস করেছেন গুটিকতক পুঁজিপতির সার্বভৌমত্বের অধীনে, কেউ গণতন্ত্রের অধীনে, কেউ সমাজতন্ত্রের অধীনে। আজ সবাইকে পৃথক পৃথক সার্বভৌমত্ব ত্যাগ করে সকলের যিনি স্রষ্টা সেই আল্লাহকে সার্বভৌম হিসাবে মেনে নেওয়ার সময় এসেছে। সকলকে মানতে হবে স্রষ্টা এক, যিনি এই দুনিয়া সৃষ্টি করেছেন, আলো, বাতাস, পানি ইত্যাদি সৃষ্টি করেছেন এবং আমরা কিভাবে চলব তার একটা পথও তিনি দিয়েছেন। হিন্দুরা স্রষ্টা মানেন, খ্রিস্টানরা ঈশ্বর মানেন, মুসলমানরাও আল্লাহ মানেন, ইহুদীরাও এলিকে মানেন, অর্থাৎ অন্যান্য সমস্ত জাতি এক স্রষ্টার অস্তিত্বে বিশ্বাসী। এক স্রষ্টার সন্তুষ্টিবিধানের জন্য তারা মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা, চার্চ, সিনাগগসহ বিভিন্ন ধরনের উপাসনালয়ে যান। স্রষ্টার সান্নিধ্য পাওয়ার জন্য, পরকালীন একটা জীবনকে বিশ্বাস করে জান্নাত, স্বর্গে বা হ্যাভেনে (Heaven) যাওয়ার জন্য তারা সৎকাজ করেন অর্থাৎ সবাই কিন্তু স্রষ্টাকে মানছেন। আমাদের কথা হলো স্রষ্টা শুধুমাত্র পরকালীন মুক্তির কথা বলেননি, এই পৃথিবীতে চলার জন্য আমাদেরকে একটা জীবন-বিধানও দিয়েছেন। আসুন, সেই জীবন-বিধানের অধীনে আমরা ঐক্যবদ্ধ হই।