হেযবুত তওহীদ বাংলাদেশভিত্তিক একটি সংস্কারমূলক অরাজনৈতিক আন্দোলন। এই আন্দোলনটি প্রতিষ্ঠা করেন উপমহাদেশের ঐতিহ্যবাহী জমিদার পন্নী পরিবারের উত্তরসূরি এমামুয্যামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী। ১৯৯৫ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইলের করটিয়ার দাউদ মহলে ছোট তরফ বলে খ্যাত জমিদার বাড়িতে এই আন্দোলনটি প্রতিষ্ঠা হয়। প্রতিষ্ঠার শুরুতেই হেযবুত তওহীদ কিছু মূলনীতি ধারণ করে।
হেযবুত তওহীদের মূলনীতি:
১. কোন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে হেযবুত তওহীদ সম্পৃক্ত হবে না।
২. কোনো অবৈধ অস্ত্রের সংস্পর্শে যাবে না।
৩. ধর্মীয় কাজ করে কোনো অর্থনৈতিক বা ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিল করবে না। যারা ধর্মের কাজ করে বিনিময় নেয়, স্বার্থহাসিল করে তাদের বয়কট করবে।
৪. আন্দোলনের সদস্যরা সামর্থ্য মোতাবেক বৈধ উপায়ে উপার্জন করবে। সেই অর্থ দিয়ে তারা পরিবারের ব্যয় নির্বাহ করবে। সেই অর্থের একটি অংশ দিয়ে তারা আন্দোলন কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
৫. হেযবুত তওহীদ আন্দোলনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নীতি হচ্ছে আন্দোলনের কার্যক্রম হবে স্বচ্ছ-স্পষ্ট দিনের আলোর মত পরিষ্কার। গোপন কোনো কার্যক্রম থাকবে না।
৬. অন্য কোনো ধর্ম বা ধর্মীয় উপসনালয়কে বিদ্রূপ বা কটাক্ষ করা হবে না। নারী-পুরুষ, হিন্দু-বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান নির্বিশেষে সকল মানুষের সাথেই আন্দোলনের আদর্শ নিয়ে কাজ করবে।
এই নীতিমালাগুলোকে সামনে নিয়ে এই আন্দোলনের কার্যক্রম শুরু হয়। প্রকৃতপক্ষে হেযবুত তওহীদের মূল বক্তব্য হচ্ছে, পুরো মানবজাতি সৃষ্টিগতভাবে একজাতি, এক পরিবার, এক আদম-হাওয়ার সন্তান। সাদা-কালো, আমেরিকান, ইউরোপিয়ান, জাপানি, ভারতীয়, বাঙালি, আরব, আফ্রিকান পুরো মানবজাতি এক জাতি। তাই সমগ্র মানবজাতি যদি সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে আল্লাহ প্রদত্ত সত্য ও ন্যায়ের উপর ঐক্যবদ্ধ হতে পারে তবেই মানুষের মধ্যে শান্তি আসবে। আজকে মানুষের মাঝে বিরাজিত এই চরম অশান্তির মূল কারণ হচ্ছে আল্লাহর দেওয়া চিরন্তন নীতি, আদর্শ, সত্য থেকে বিচ্যুত হওয়া। মানুষ নিজেদের মস্তিস্কপ্রসূত জীবনবিধান দিয়ে জীবন পরিচালিত করছে। তারা আল্লাহর দেওয়া জীবনবিধান মানছে না। ফলে মানবসমাজে এত অন্যায়, অবিচার, অশান্তি বিদ্যমান। যত দিন তত মানুষের সামনে সংকট ঘনীভূত হচ্ছে। কোন তন্ত্র-মন্ত্র, ব্যবস্থা, জীবনপদ্ধতি মানুষকে এই মহাবিপর্যয়ের হাত থেকে বাচাঁতে পারছে না। গত শতাব্দীতে দুই দুইটি বিশ্বযুদ্ধ হয়েছে। সেখানে চৌদ্দ কোটি মানুষ নিহত হয়েছে। কয়েক কোটি মানুষ আহত বিকলাঙ্গ হয়েছে। বিপুল পরিমাণ প্রাকৃতিক সম্পদ, নগর-বন্দর, স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে। এত জান-মালের ক্ষয়ক্ষতি, এত কোটি কোটি মানুষের মৃত্যুর পরও কি যুদ্ধবিগ্রহ বন্ধ হয়েছে? অশান্ত পৃথিবী শান্ত হয়েছে? হয় নি। এর প্রধান কারণ সুদভিত্তিক অর্থনীতি, সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসী মনোভাব, জাতিতে জাতিতে যুদ্ধবিগ্রহ, ছোট রাষ্ট্রগুলির উপর বড় রাষ্ট্রগুলোর আগ্রাসন নীতি, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের লঙ্ঘন, মুক্তবাজার অর্থনীতির নামে ভারী শিল্প কারখানার উৎপাদিত পণ্যের দৌরাত্ম, ব্যবসায়িক সিন্ডিকেট ইত্যাদি।
যদি এক জাতিসত্তার চেতনা নিয়ে মানবজাতি থাকত তাহলে এই যুদ্ধ-রক্তপাতও হত না, মানুষ অন্যায় অশান্তিতে নিমজ্জিতও থাকত না। এই মাত্র গত শতাব্দিতে পৃথিবী দুই দুইটা বিশ্বযুদ্ধ দেখল। দুই দুইটা বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা দেখার পর এই শতাব্দিতে আবারও মানবজাতির তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে। পৃথিবীর প্রায় প্রতিটা রাষ্ট্রে যুদ্ধের দামামা বেজে উঠছে। পরাশক্তিধর রাষ্ট্রগুলো একে অপরের দিকে পারমাণবিক অস্ত্র তাঁক করে রেখেছে। তারা একে অপরের সাথে হুমকির ভাষায় কথা বলছে। যুদ্ধ-বিগ্রহ বন্ধ করে পৃথিবীকে শান্ত করতে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল জাতিপুঞ্জ, লীগ অব নেশন্স। জাতিপুঞ্জকে ব্যর্থ করে মানবজাতি যখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ঘটালো। তখন ভবিষ্যতে আর কখনো যেন এমন মানববিধ্বংসী যুদ্ধের মুখোমুখী মানুষ না হয় তাই তৈরি করা হল জাতিসংঘ। কিন্তু তাতে কী মানবজাতি রক্ষা পেয়েছে? জাতিসংঘের উদ্যোক্তারা মনে করছেন যে, তারা যুদ্ধ বন্ধ করতে পারবেন। কিন্তু কার্যত জাতিসংঘ গঠিত হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত শান্তি আনতে পারে নাই। জাতিসংঘ গঠিত হওয়ার পরও ছয়কোটি মানুষ খুন হয়েছে। সাত থেকে আট কোটি মানুষ উদ্বাস্তু। এখনো প্রায় ৩৪টি রাষ্ট্রে যুদ্ধ চলছে। প্রত্যেকটি রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে খুন, রাহাজানি, অর্থপাচার, জালিয়াতি, ঘুষ, গুম, নারী নির্যাতন, শিশু নির্যাতন, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, উগ্রবাদ, মাদকসহ সকল ক্ষেত্রে প্রতিটা রাষ্ট্রে, সমাজে অশান্তি চরম আকার ধারণ করেছে।
এই অবস্থা বেশিদিন চলতে থাকলে পৃথিবী নামক গ্রহটাই যে মানুষ ধ্বংস করে ফেলবে এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। এই পরিস্থিতিতে হেযবুত তওহীদের প্রস্তাবনা হচ্ছে, আসন্ন এই সংকট থেকে মানবজাতিকে বাঁচাতে পারে একটি মাত্র সিদ্ধান্ত। তা হল মহান আল্লাহ শেষ নবীর (সা.) মাধ্যমে যে জীবনবিধান মানুষের জন্য পাঠিয়েছেন সেই জীবনবিধান মানবজীবনে কার্যকর করা। যেহেতু আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন, তাই কোন সিস্টেম বা ব্যবস্থা মানবজীবনে প্রয়োগ করলে মানুষ শান্তি ও সুবিচারে বসবাস করতে পারবে তা একমাত্র তিনিই ভালো জানেন। তাই তাঁর দেওয়া জীবনব্যবস্থা অনুসরণ করলেই আমরা শান্তিতে বসবাস করতে পারবো এটা খুব সহজেই বুঝা যায়। অন্যদিকে আল্লাহর প্রেরিত এই জীবনব্যবস্থাকে বাদ দিয়ে নিজেদের মনগড়া আইন-কানুন, দণ্ডবিধি অনুসরণ করলে যে মানবসমাজ চরম অন্যায়, অবিচারে, রক্তপাতে ডুবে থাকবে, ভুল জীবনব্যবস্থা মানুষকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে এটা তো চিরন্তন সত্য। আজকে কিন্তু সেটাই হচ্ছে। তাই বলা যায়, এখন যদি একমাত্র আল্লাহর প্রেরিত জীবনব্যবস্থা মানবজীবনে কার্যকরী করা যায় তবেই এই সংঘাত-রক্তপাত বন্ধ হবে ঠিক যেভাবে বন্ধ হয়েছিল আজ থেকে ১৪০০ বছর আগে জাজিরাতুল আরবের আইয়ামে জাহিলিয়াতের সমাজে। হেযবুত তওহীদ মানুষকে সেই শান্তিপূর্ণ সমাজেরই প্রস্তাব দিচ্ছে।
হেযবুত তওহীদ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা এমামুয্যামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী, তিনি এমন একটি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছেন যে পরিবারের অবদান ভারতবর্ষের শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, ধর্মপ্রচারসহ সকল ক্ষেত্রে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। তিনি যখন বড় হচ্ছিলেন তখন এই ভারতবর্ষ ব্রিটিশ সাম্রাজের অধীনে ছিল। তিনি খুব নিকট থেকে ব্রিটিশ শাসন প্রত্যক্ষ করেছেন। এক সময়ের মুসলমান জাতি যারা জ্ঞানে-বিজ্ঞানে, সামরিক শক্তিতে, প্রযুক্তিতে, নতুন নতুন আবিস্কারে, শিল্প-সাহিত্য, সংস্কৃতিতে, ঐক্য, শৃঙ্খলা, রাষ্ট্র পরিচালনায়, নতুন নতুন দিগন্ত বিজয়ে দুনিয়ার সেরা জাতি ছিল। যারা আধুনিক এই বিজ্ঞান-প্রযুক্তির ভিত্তি রচনা করেছিল। সেই অখণ্ড-সর্বশ্রেষ্ঠ জাতিটি কিভাবে সময়ের পরিক্রমায় অন্য জাতির হাতে পরাজিত, অবহেলিত, লাঞ্ছিত হয়ে হাজারো রকমের ফেরকা-মাজহাব দলে ভাগ হয়ে খণ্ড-বিখণ্ড হয়ে গেল এই প্রশ্ন তাঁর চিন্তার জগতে সবসময় আলোড়ন তুলত। তাঁর মনে প্রশ্ন জাগে দুনিয়ার সেরা জাতি মুসলমানরা কিভাবে নিজেদের গৌরব-মর্যাদা হারিয়ে অন্য জাতিগুলোর হাতে পরাজিত হল? কোন ভুল মুসলমান জাতির এই অধঃপতনের পিছনে লুকিয়ে আছে? ছোটবেলা থেকেই তাঁর ভাবুক মন মুসলমান জাতির এই বর্তমান দুঃখ-দুর্র্দশার কারণ উদঘাটন করতে ব্যাকুল হয়ে উঠে। অতঃপর জীবনের একটা পর্যায়ে এসে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন উনাকে জ্ঞান দান করেন। তিনি এই মহাসত্য উপলব্ধি করেন যে, আজকে দুনিয়াজোড়া মুসলমান জাতির এই অধঃপতনের প্রধান কারণ দুইটি।
এক. ইসলাম সম্পর্কে তাদের ভুল আকিদা এবং তওহীদের যে দাবি ছিল যে, এক আল্লাহ ছাড়া আর কারো হুকুম না মানা। অর্থাৎ ইলাহ একমাত্র আল্লাহ। এই দাবি থেকে মুসলমানরা সরে গিয়েছে। ফলে আল্লাহ রসুল (সা.) তাদের হাতে যে ইসলাম দিয়ে গিয়েছিলেন সেই ইসলামটা আর তাদের কাছে নাই।
দুই. মানবজীবনে আল্লাহর সত্যদীন প্রতিষ্ঠার যে আপোষহীন সংগ্রাম তাদের উপর অর্পিত ছিল তা তারা বাদ দিয়েছে।
এই দুইটি ভুলের কারণে আজ দুনিয়াজোড়া মুসলমানদের এই অধঃপতন-দুর্দশা। যখন মুসলমান জাতি তাদের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ভুলে গেল তখন আর কোনো কিছুরই কোন মূল্য রইল না। তখন অনিবার্যরূপে তাদের মধ্যে বিভক্তি আসল। হেযবুত তওহীদের প্রতিষ্ঠাতা মহামান্য এমামুয্যামান আরোও উপলব্ধি করলেন যে, আল্লাহর রসুল (সা.) তাঁর উম্মাহর হাতে দুনিয়াময় আল্লাহর সত্যদীন প্রতিষ্ঠার যে দায়িত্ব অর্পণ করে গিয়েছিলেন তাঁর হাতে গড়া উম্মতে মোহাম্মদী জাতিটি ৬০/৭০ বছর পর্যন্ত সেই দায়িত্ব ঠিকমত পালন করতে পেরেছিল। কিন্তু রসুলাল্লাহ (সা.) ওফাতের ৬০/৭০ বছর পর যখন তাঁর হাতে গড়া আসহাবরাও একে একে দুনিয়া থেকে বিদায় নেওয়া শুরু করল তখন তারা তাদের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ভুলে গেল, আকিদা বিচ্যুত হল। ফলে তাদের অন্তর্ধানের পর পরবর্তী সুলতানরা রসুলাল্লাহর (সা.) অর্পিত দায়িত্ব ভুলে গিয়ে রাজা-বাদশাহের মতো ভোগবিলাসের রাজত্ব শুরু করল। পাশাপাশি জাতির ধর্মীয় পণ্ডিত-পুরোহিত শ্রেণিটি দীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম বাদ দিয়ে খাতা-কলম নিয়ে ঘরে বসে আল্লাহর রসুলের (সা.) সহজ-সরল ইসলাম নিয়ে চুলচেরা ব্যাখ্যা, বিশ্লেষণ ফতোয়া তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। ফলে সহজ সরল ইসলাম ক্রমেই জটিল, কঠিন, দুর্বোধ্য হয়ে সাধারণ মানুষের বোঝার বাইরে চলে গেল। আলেম শ্রেণীটি আয়াতের গুপ্ত অর্থ নিয়ে শরীয়তের মাসলা মাসায়েল নিয়ে হাজার রকমের মতভেদ সৃষ্টি করল। তারা হাজার হাজার পুস্তক রচনা করে হাজার হাজার মতবাদের জন্ম দিলো।
তৃতীয় আরেকটি শ্রেণির উদ্ভব হল। সেটা হল অন্তর্মুখী বিকৃত সুফিবাদী। সুফিবাদী শ্রেণিটি মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রামী রাস্তা বাদ দিয়ে তসবিহ নিয়ে খানকায় ঢুকে আত্মার ঘষামাজা শুরু করল। তারা দুনিয়াকে ভুলে একপেশে ভারসাম্যহীন একটি ইসলামের চর্চা করতে লাগল। তাদের হাত ধরে হাজার হাজার তরিকার জন্ম হল। সেই তরিকাগুলোতে উম্মাহ পরবর্তীতে বিভক্ত হল। এইভাবে সুলতানদের সংগ্রাম ত্যাগ ও ভোগবিলাস, পণ্ডিত, আলেম, মুফতি, ইমাম, ফকিহদের দীন নিয়ে বাড়াবাড়ি, অতি ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ এবং সুফিবাদীদের সংগ্রামবিমুখ অন্তর্মুখী মনোভাব ইত্যাদি বিভিন্ন রকম বিকৃতি প্রবেশ করে মুসলমান জাতি হাজারো খণ্ড-বিখণ্ডে ভাগ হয়ে টুকরো টুকরো হয়ে গেল। জাতিগতভাবে সংগ্রাম ত্যাগ করার অনিবার্য ফলস্বরূপ তারা নিজেদের শৌর্য হারিয়ে সামরিকভাবে অন্য জাতিগুলোর হাতে পরাজিত হয়ে তাদের গোলামে পরিণত হল। যারা কিনা একদা অর্ধ দুনিয়াকে শাসন করেছিল, ছিল সকল জাতির সেরা জাতি, শিক্ষকের জাতিতে আসীন হয়েছিল সেই জাতিটিই শক্তিহীন হয়ে ইউরোপের ছোট ছোট জাতিগুলোর আক্রমণের শিকার হল। তাদের সামরিকভাবে পরাজিত করা হল, তাদের ভূখণ্ড কেড়ে নেওয়া হল, তাদের মেয়েদের লাঞ্ছিত করা হল, শিশুদের নির্মমভাবে হত্যা করা হল। তাদের জায়গা হল উদ্বাস্তু শিবিরে। সেই থেকে চলছে এই জাতির গোলামীর ইতিহাস।
মুসলমান জাতিটি যেন কখনো এই গোলামী থেকে মুক্ত হতে না পারে এবং নিজেদের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ফিরে না পায় সেজন্য তারা নিজেরা সিলেবাস-কারিকুলাম ঠিক করে মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করল। সেই মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থাকে পাকাপোক্ত করতে ব্রিটিশরা নিজে অধ্যাপক থেকে ১৪৬ বছর পর্যন্ত শিক্ষাব্যবস্থার ভার নিজেদের হাতে রাখল। পরবর্তীতে খ্রিষ্টান প্রভুদের থেকে শিক্ষা লাভ করে হাজার হাজার ইসলামিক স্কলার, পণ্ডিত, আলেমরা বেরিয়ে এসেছেন যেটা আল্লাহ রসুলের (সা.) প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা নয়। এগুলো শিখে তারা এখন একটি পরজীবি শ্রেণীতে পরিণত হয়েছে। সেখানে তাদের দুনিয়া সম্পর্কে বাস্তবমুখী কোন জ্ঞান দেওয়া হয় নাই। ফলে এই শ্রেণিটির অর্থনীতি, রাজনীতি, কূটনীতি, সামরিকনীতি, বাণিজ্যনীতি, শিক্ষানীতি, শিল্পনীতিসহ বিশ্বকে পরিচালিত করার জন্য যে জ্ঞান প্রয়োজন সেটা তাদের নাই। এগুলোর বিপরীতে ছোট-খাটো মাসলা-মাসায়েল, দোয়া-কালামসহ অগুরুত্বপূর্ণ, তুচ্ছ, অপ্রয়োজনীয় বিষয় নিয়ে জীবনের দীর্ঘসময় পড়াশোনা করে হাজার হাজার ধর্মজীবি শ্রেণি বের হয়ে এসেছে। এখান থেকে বের হয়ে এসে জীবিকা নির্বাহের জন্য উপায়ন্তর না পেয়ে তারা ধর্মকে রুটি রোজগারের হাতিয়ারে পরিণত করে ধর্মব্যবসা করে জীবন নির্বাহ করে।
এই যখন মুসলমান জাতির অবস্থা তখন তাদের বাঁচাবে কে? একদিকে বৈশ্বিক সংকট অন্যদিকে দুনিয়াজোড়া মুসলমানরা অন্য জাতিরগুলোর দ্বারা আক্রমণ ও উচ্ছেদের শিকার, মুসলমানদের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতিও উদ্বেগজনক, এই অবস্থা বাচাঁর আর কোন পথ খোলা নাই। এখন একমাত্র আল্লাহর নাযিলকৃত আদি, সনাতন, শাশ্বত জীবনব্যবস্থাই মানবজাতিকে বাঁচতে পারে। হেযবুত তওহীদ আন্দোলন মানুষকে তওহীদের (আল্লাহ ছাড়া কারো হুকুম মানি না) উপর ঐক্যবদ্ধ হওয়ার এই আহ্বানই জানাচ্ছে। ঐক্যবদ্ধ হওয়ার এই পথটাই আল্লাহই হেযবুত তওহীদকে দান করেছেন। ঐক্যবদ্ধ হওয়ার এই মাধ্যমটা হল পাঁচদফা কর্মসূচি। এই কথাটাই হেযবুত তওহীদ বইয়ের মাধ্যমে, পত্রিকার মাধ্যমে, বক্তব্যের মাধ্যমে মানুষের সামনে উপস্থাপন করছে। কাজেই আসুন আমরা তওহীদের ছায়াতলে, এক জাতিসত্তার চেতনায়, আল্লাহর প্রেরিত দীন বা ব্যবস্থাকে আলিঙ্গন করে নেই এবং ন্যায়, সুবিচার ও শান্তিপূর্ণ একটি সমাজব্যবস্থা নির্মাণ করি।
[লেখক: শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ, তিতুমীর কলেজ; যোগাযোগ: ০১৬৭০ ১৭৪৬৪৩, ০১৭১১ ০০৫০২৫, ০১৭১১ ৫৭১৫৮১]