নতুন সভ্যতা নির্মাণে নারী জাগরণের বার্তা নিয়ে হেযবুত তওহীদের নারী নেত্রীদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হলো হেযবুত তওহীদের কেন্দ্রীয় নারী সম্মেলন। রাজধানীর ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে মূল অনুষ্ঠান ও নগরীর ব্যস্ততম এলাকা গুলিস্তানের মহানগর নাট্যমঞ্চে এর বর্ধিত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় যথাক্রমে ৬ ও ৯ নভেম্বর। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হেযবুত তওহীদের এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন- সাধারণ সম্পাদক মো. মশিউর রহমান, প্রধান উপদেষ্টা খাদিজা খাতুন, নারী বিষয়ক সম্পাদক রুফায়দা পন্নীসহ সারাদেশ থেকে আগত জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নারী নেত্রীগণ। অনুষ্ঠানে হেযবুত তওহীদের সকল কেন্দ্রীয় সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকগণও উপস্থিত ছিলেন।
দুই দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠানের প্রতিটি মুহূর্ত ভিন্ন ভিন কর্মসূচিতে সাজানো হয়, যা অত্যন্ত শৃঙ্খলার সাথে বাস্তবায়ন করেন নারীরাই। অনুষ্ঠানের বিভিন্ন পর্যায়ে ভিন্ন ভিন্ন উপস্থাপনা অনুষ্ঠানকে করে তোলে অত্যন্ত প্রাণবন্ত। কখনো স্মৃতিচারণ, কখনো ধর্মব্যবসায়ীদের দ্বারা নির্যাতিত হওয়ার ঘটনার করুণ বর্ণনা, কখনো শহীদদের স্মরণে অশ্রুসজল, কখনো বা নারীদের আয়োজনে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে পুরো অনুষ্ঠানজুড়ে আনন্দ-বেদনা, আবেগ-উচ্ছ্বাস, কান্না-হাসির পরিবেশ সৃষ্টি হয়। সব মিলিয়ে প্রাঞ্জল এ আয়োজনের মধ্য দিয়ে হেযবুত তওহীদের নারীরা আরো ত্যাগ-তিতিক্ষা ও নতুন পৃথিবী গঠনে পুরুষের পাশাপাশি ভূমিকা রাখার জন্য উজ্জীবিত হয়েছেন।
কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে আয়োজিত সম্মেলনে পবিত্র কোর’আন থেকে তেলাওয়াতের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকতা আরম্ভ হয়। প্রথমে শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন অনুষ্ঠানের সভাপতি রুফায়দাহ পন্নী। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, ‘‘আজকে অন্য জাতির নারীরা যখন বৈমানিক হয়, নভোচারী হয়, প্লেন চালায়, সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন হয়, মেজর জেনারেল হয়, বৈজ্ঞানিক হয়, তখন কোণায় কোণায়, পাড়ায় পাড়ায়, মহল্লায় মহল্লায় আমার জাতির নারীদেরকে এই শিক্ষা দেওয়া হয় যে, ‘সাবধান! ঘরের চার দেওয়ালের মধ্যে থাকো, সুবহানাল্লাহ সুবহানাল্লাহ করো, ঘরের বাইরে যাবা না। ঘরের বাইরে বের হওয়াই পাপ!’ তাহলে দুনিয়া অন্য জাতিরা শাসন করবে না তো আমরা করব? ইসলামের নামে এই বিকৃত শিক্ষা চলতে থাকলে কখনই দাজ্জালীয় সভ্যতার হাত থেকে জাতিকে মুক্ত করা যাবে না। চিরজীবন তাদের অনুসারী হয়েই থাকতে হবে। আমার বুঝে আসে না, তারা দাজ্জালীয় সভ্যতার অনুসরণ করে সুবহানাল্লাহ সুবহানাল্লাহ তসবিহ জপে জান্নাতের আশা করে কীভাবে?’’
সভাপতির উদ্বোধনী বক্তব্যের পর শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন হেযবুত তওহীদের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রধান উপদেষ্টা খাদিজা খাতুন, সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলী হোসেন, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক উম্মুততিজান মাখদুমা পন্নী, তথ্য সম্পাদক এসএম সামসুল হুদা প্রমুখ। বক্তারা নারীদেরকে যাবতীয় ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে, অশ্লীলতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে একটি সঠিক আদর্শকে ধারণ করে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদসহ যাবতীয় অন্যায়, অবিচারের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানের মূল পর্ব শুরু হয় প্রধান অতিথির বক্তব্যের মধ্য দিয়ে। প্রধান অতিথির বক্তব্যে হেযবুত তওহীদের এমাম সারা দেশ থেকে আগত হেযবুত তওহীদের নারী সদস্যদের উদ্দেশে দিক-নির্দেশনা প্রদান করেন।
হেযবুত তওহীদের এমাম বলেন, ‘পশ্চিমা সভ্যতার ইতিহাস নারীদের জন্য কখনই সুখকর হয়নি। এই সেদিনও নারীদের ভোটাধিকার পর্যন্ত ছিল না। আর এখন অধিকারের নামে, আধুনিকতার নামে নারীদেরকে বানানো হচ্ছে বাজারের পণ্য। নারীর সম্মান, মর্যাদা হচ্ছে ভূলুণ্ঠিত। এমনটাই হবার কথা। কারণ এই সভ্যতায় আল্লাহর হুকুম বলে কিছু নেই, ন্যায়-অন্যায়ের মানদণ্ড নেই। বস্তুগত উন্নতি হয়েছে। প্রযুক্তি এসেছে অস্বীকার করি না। কিন্তু এই অগ্রগতি মানবজীবনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, অতীতের সভ্যতাগুলোতেও বস্তুগত দিক দিয়ে অনেক উন্নতি-প্রগতি হয়েছে, কিন্তু আত্মিক ও নৈতিক অবক্ষয়ের কারণে সেই বস্তুগত প্রগতি কোনো কাজে আসে নাই। সভ্যতার পতন হয়েছে। আজকের এই পাশ্চাত্য সভ্যতা এক ভারসাম্যহীন সভ্যতা। এখানে প্রযুক্তিগত চোখ ধাঁধানো উন্নতি হয়েছে, কিন্তু মানুষের উন্নতি হয় নাই। হানাহানি ভেদাভেদ দূর হয় নাই। একটা পৃথিবীকে এই সভ্যতা দুইশ’ ভাগে বিভক্ত করেছে, এক ভাগকে আরেক ভাগের বিরুদ্ধে লাগিয়ে রেখেছে। প্রযুক্তিগতভাবে মানুষ যতটা উন্নতির চূড়ায় অবস্থান করছে, আত্মিকভাবে, নৈতিকভাবে মানুষ ততটাই নিচে নেমে গেছে। প্রতিনিয়ত খুন, ধর্ষণ, লুটপাট, দুর্নীতি, যুদ্ধ, রক্তপাতে মানবজীবন আজ বিপর্যস্ত। নিরাপরাধ শিশুর রক্তে পৃথিবীর মাটি ভেজা। গত এক শতাব্দীতে যত নারী লাঞ্ছিত হয়েছে, ধর্ষিতা হয়েছে, তা পৃথিবীর ইতিহাসে অতীতে কখনও হয় নাই।’
মহানগর নাট্যমঞ্চে আয়োজিত নারী সম্মেলনের বর্ধিত সভাতেও দেশের নানা স্থান থেকে আসা নারীদের উপস্থিতিতে হলটি কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে। এমনকি স্থান সংকুলানের না হওয়ায় বাইরের লনে বড় পর্দার মাধ্যমে ভেতরের অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হয়। অনুষ্ঠানজুড়ে সারাদেশ থেকে আগত নারীদের চোখে মুখে দেখা যায় উচ্ছ্বাস ও প্রেরণার ঝলক। আগামী পৃথিবীকে নারীর শক্তিতে জাগরিত করে তোলার দৃপ্ত শপথ উচ্চারিত হয় তাদের কণ্ঠে। অনুষ্ঠানে দীর্ঘদিন যাবত হেযবুত তওহীদের পক্ষে কাজ করে যাওয়ায় নানা সময় প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নারীদের উপর কি ধরনের অত্যাচার, নির্যাতন ও প্রতিবন্ধকতা এসেছে তার বিবরণ তুলে ধরেন নারীরা। ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনে প্রচারিত তালাশের প্রতিবেদনে চট্টগ্রামের আইনুন্নাহার রত্মা ও কামরুন্নাহার স্বপ্নাদের নিয়ে যে একতরফা প্রতিবেদন প্রকাশ করে হেযবুত তওহীদের অসামান্য ক্ষতি করা হয় তা নিয়ে কথা বলেন দুই বোন। তাদের আলোচনায় উঠে আসে ঘটনার পেছনের আসল কথা। তারা তালাশের একতরফা ও বানোয়াট প্রতিবেদনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে নোয়াখালীর সোনাইমুড়িতে ধর্মব্যবসায়ীদের উসকানি ও ধ্বংস-তাণ্ডবে শাহাদাত বরণকারী শহীদ খোকনের মা শহীদ খোকনের জীবনী নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি জানান আগে থেকেই শহীদ খোকন শাহাদাতের প্রতি তীব্র আকাক্সক্ষা পোষণ করতেন। তাঁর জীবন কাহিনী শুনে অনুষ্ঠানে আগত সকলের চোখই অশ্রুসজল হয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে অনুষ্ঠানে আগত অতিথিদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন হেযবুত তওহীদের এমাম জনাব হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম। পুরো অনুষ্ঠানের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করেন হেযবুত তওহীদের নারীরাই। অনুষ্ঠানে মাটি মিউজিকের আয়োজনে পরিবেশিত মনোমুগ্ধকর সঙ্গীতায়োজন ও … নাট্যদলের পরিবেশনায় ‘যৌতুক নিয়ে কৌতুক’ নামে একটি নাটিকার আয়োজন করা হয়। সুন্দর পরিকল্পনা ও শৃঙ্খলার মাধ্যমে পুরো আয়োজনটি সার্থক হয়ে ওঠে, যার প্রভাব আগত নারী নেত্রীদেরকে সামনের দিনে আরো অনেক এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে বিশ্বাস করেন আয়োজকগণ।