রাজনীতি হলো রাজ্য পরিচালনার নীতি। যে নীতি অনুসরণ করে একটি রাষ্ট্র সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে, শান্তি-পূর্ণ ও সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনা করা যাবে। এরিস্টটল, পেটোর মতো মহান দার্শনিকদের মতে রাজনীতির উদ্দেশ্য হলো সাধারণ কল্যাণ, সামাজিক শুভবোধ ও নৈতিক পূর্ণতা সাধন। এরিস্টটলের মতে রাষ্টবিজ্ঞানের লক্ষ হওয়া উচিত সর্বোচ্চ কল্যাণ সাধন। [এরিস্টটল, The Ethics; অনুবাদ: জে.এ.কে. থমসন (ইংল্যান্ড পেনগুইন বুকস, ১৯৫৩) পৃ. ৪৪]
আমরা মনে করি, রাষ্ট্র পরিচালনার নীতিগুলি যখন রাষ্ট্রের প্রতিটা জনগণের জন্য কল্যাণকর হয় তখন সেই নীতিগুলির সমষ্টিকে রাজনীতি বলা যায়। যখন কোনো দল বা প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য এমন কিছু নীতি গ্রহণ করে যা শুধুমাত্র ক্ষমতা দখল এবং ব্যক্তি ও দলীয় স্বার্থ রক্ষার হাতিয়ার হয় তখন তাকে অপরাজনীতি বলা হয়। রাজনীতি কোনো পেশা নয়। যারা রাজনীতি করবে তারা শুধুই মানুষের কল্যাণের জন্য তা করবে। এর কোনো বিনিময় নেওয়া চলবে না। মানুষের কল্যাণে কাজ করাই হবে রাজনীতিকদের এবাদত। তারা স্রষ্টার সান্নিধ্য পাবার আশায়, মানুষের ভালোবাসা পাবার জন্য রাজনীতি করবে। মানুষের সেবা করার মধ্যেই যারা জীবনের স্বার্থকতা খুঁজে পাবে, ভোগের পরিবর্তে ত্যাগেই যারা পরিতৃপ্ত থাকবে, অর্থ-সম্পত্তির চেয়ে মানুষের ভালোবাসা, দোওয়া যাদের কাছে অধিক কাম্য তারাই কেবল রাজনীতি করতে পারবে।
এখন অধিকাংশ ক্ষেত্রে রাজনীতির নামে অপরাজনীতিই চলছে। রাজনীতির নামে সংঘাত, সংঘর্ষ, জ্বালাও-পোড়াও, ভাংচুর ইত্যাদি আজ যেন নিত্য ঘটনা। এগুলিকেই মানুষ রাজনীতির অংশ হিসাবে ভাবছে। নিজের নামে ছাফাই গাওয়া, অন্যের নামে কুৎসা রটনা করা, বিরোধী দলে থাকলে কারণে-অকারণে সরকারের সকল কাজের বিরোধিতা করাই এখন রাজনীতির রীতি। রাজনীতিতে শিষ্টাচার আজ বিলুপ্ত। বিপক্ষ দলের পরলোকগত অতি সম্মানী ব্যক্তিদেরকেও অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি করাও বৈধ। রাজনীতির নামে এই অসভ্যতাকে বৈধতা দেওয়া যায় না। এগুলিকে আমরা রাজনীতি মনে করি না। এগুলিই হলো অপরাজনীতি। ধর্মব্যবসা, জঙ্গিবাদের মতো অপরাজনীতিও একটি সামাজিক ব্যাধী। এ ব্যাধী থেকে সমাজকে মুক্ত করতে হলে জনসাধারণকে অপরাজনীতির বির“দ্ধে সচেতন করে তুলতে হবে।