হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

সত্যিকারের মানবতার কল্যাণ কোনটা?

রাকীব আল হাসান
আমাদেরকে অনেকেই প্রশ্ন করেন- আপনারা মানবতার কথা বলেন, আপনাদের শ্লোগান- “মানবতার কল্যাণে নিবেদিত অরাজনৈতিক আন্দোল” কিন্তু আপনারাতো অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারেন, সেখানে তো আপনাদের খুঁজে পাওয়া যায় না। এর উত্তরেই মূলত আমার এই লেখা।
আসলে বর্তমানে মানবতার কল্যাণ বলতে মানুষ বোঝে- শীত কালে কম্বল বিতরণ, বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ, বস্ত্র বিতরণ ইত্যাদি। কাজেই হেযবুত তওহীদকে যেহেতু তথাকথিত এই মানবতার কল্যাণে তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে দেখা যায় না তাই এমন প্রশ্ন অনেকের মনেই আসে। এটা খুবই স্বাভাবিক।
আচ্ছা, আপনার যদি কোনো অসুখ হয় তাহলে স্থায়ী ট্রিটমেন্ট করা উচিত হবে নাকি সাময়িক? অসহায় মানুষের দুঃখ, দারিদ্র্য দূর করার স্থায়ী প্রক্রিয়াটা আসলে কী হবে? তাদেরকে একদিনের আহার (ত্রাণ বিতরণ) বা শীতবস্ত্র বিতরণ বা যাকাতের কাপড় দিলে কি তাদের দুঃখ, দারিদ্র্য দূর হয়ে যাবে? না, বরং ওগুলো যারা করে তারা নিজেদের সুনাম ছড়ানোর জন্য, মানুষের চোখে সমাজসেবী, দাতা হিসাবে পরিচিতি পাবার জন্য, ভোট পাবার জন্য করে থাকে। তারা মিডিয়া ভাড়া করে তাদের মানবতার কল্যাণের বিরাট প্রচারণা চালায়। এতে ঐ হতদরিদ্র, দুঃখ-কষ্টে নিপতিত মানুষের দুঃখ দূর হয় না, কেবল দাতার জনপ্রিয়তা অর্জন হয়। ব্যতিক্রম যে এক-দু’জন নেই তা বলছি না কিন্তু অধিকাংশের চিন্তাটা এমনই।
আমাদের মূলনীতিগুলোর মধ্যে একটি হলো- আমরা প্রতিটা ক্ষেত্রে রসুলাল্লাহকে অনুসরণ করার চেষ্টা করব। প্রচলিত ধ্যান-ধারণা যেমনই হোক, আমরা দেখব- এক্ষেত্রে রসুলাল্লাহ কী করেছেন, আল্লাহ কী নির্দেশ দিয়েছেন সেটা।
এক্ষেত্রে রসুলাল্লাহ (সা.) কী করেছেন?
মক্কার মানুষের অভাব ছিল, দুঃখ-কষ্ট ছিল, বহু সমস্যা ছিল। রসুলাল্লাহ সেখানে কি বস্ত্র বিতরণ বা ত্রাণ বিতরণ করেছেন? না, আমরা হাদিস, কোর’আন ও সিরাত গ্রন্থ থেকে কিন্তু এমনটা দেখি না। বরং তিনি স্থায়ী সমাধান করেছেন। অর্থাৎ তিনি এমন সমাজ প্রতিষ্ঠা করেছেন যেন কারো অভাব না থাকে, কাউকে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ইত্যাদির কষ্টে না পড়তে হয়, কারো উপর যেন যুলুম না করা হয়, কারো সাথে যেন অন্যায় করা না হয়। এই সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্যই তিনি সংগ্রাম করে গেছেন। তবে যারা তাঁর সঙ্গী হয়েছেন, অনুসারী হয়েছেন তারা যেন অন্তত না খেয়ে কষ্ট না পায়, মাথা গোজার ঠাঁইটা অন্তত পায়, দাসত্ব থেকে মুক্তি পায় এজন্য তুলনামূলক বিত্তশালীদেরকে এ ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করেছেন। ফলে এক ভাই অন্য ভায়ের সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছেন, সবাই সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে নিয়েছেন। এতে তাদের দুঃখ-দারিদ্র অনেকাংশেই দূর হয়ে গিয়েছে।
আমরাও রসুলাল্লাহর আদর্শ অনুসরণ করে সেই সমাজ নির্মাণের জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছি যে সমাজে কেউ দুঃখ, দারিদ্রের মধ্যে নিপতিত হবে না, যে সমাজে কেউ না খেয়ে, বস্ত্রের অভাবে, চিকিৎসার অভাবে কষ্ট পাবে না, কারো উপর যুলুম করা হবে না, কোনো অন্যায় করা হবে না। এই সংগ্রামে আমরা আমাদের সর্বস্ব কোরবান করার পণ নিয়েছি। আমরা এক কলেমার উপর, তওহীদের উপর, আল্লাহর হুকুমের উপর মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য সংগ্রাম করছি। রসুলাল্লাহও (সা.) সমগ্র মানবজাতিকে এক আল্লাহর হুকুমের উপর ঐক্যবদ্ধ হবার আহ্বান করেছিলেন। যারা আল্লহর হুকুম মেনে নিয়েছে তাদের সমাজ পরিবর্তিত হয়ে গেছে। তাদের দুঃখ-কষ্ট দূর হয়ে গেছে। হেযবুত তওহীদও মানুষকে এই আহ্বানই করছে। সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছে।
পাশাপাশি হেযবুত তওহীদের যারা সদস্য তারা যেন অন্তত খাদ্যের অভাব, বস্ত্রের অভাব, বাসস্থানের অভাব, চিকিৎসার অভাবে না পড়ে সেজন্য সকল সদস্যদের নসিহত করা হয়, উদ্বুদ্ধ করা হয় (আমাদের কর্মসূচির প্রথমটিই হলো ঐক্য)। তারা সকলে তাদের দুঃখ, কষ্ট ভাগাভাগি করে নিয়েছে, আল্লাহর রহম হেযবুত তওহীদের একজন সদস্যও ইনশাল্লাহ না খেয়ে দিনাতিপাত করবে না, গাছ তলায় ঘুমাবে না, বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে না, নিদারুণ বস্ত্রের অভাবে থাকবে না।
হেযবুত তওহীদ ছোট্ট একটি আন্দোলন। এর অধিকাংশ সদস্য অতি সাধারণ মানুষ, দরিদ্র মানুষ। কাজেই পুরো জাতির দুঃখ, দারিদ্র দূর করা এই মুহূর্তে হেযবুত তওহীদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই আমাদের মাননীয় এমাম কেবল এর সদস্য-সদস্যাদের দায়িত্ব নিয়েছেন, যারা আল্লাহর হুকুম মেনে নিয়েছে, যারা নিজেদের জীবন-সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় কোরবান করে মানবসমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে যাচ্ছে তিনি কেবল তাদের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন এর চেয়ে বেশি কিছু এখন সম্ভব নয়। তবে সমগ্র মানবজাতির দুঃখ-কষ্ট দূর করার জন্য আমরা সংগ্রাম করে যাচ্ছি। ইনশাল্লাহ সেদিন বেশি দূরে নয় যেদিন সমগ্র মানবজাতির দুঃখ ঘুঁচে যাবে।
[বি. দ্র. হেযবুত তওহীদ যে ত্রাণ বিতরণ, বস্ত্র তিরণ ইত্যাদিকে নিরুৎসাহিত করছে তা নয়, হেযবুত তওহীদও ত্রাণ বিতরণ করে কিন্তু আমাদের কথা হলো- ওটা স্থায়ী সমাধান নয়। স্থায়ী সমাধান হলো সমাজ পরিবর্তন করা, সমাজে আল্লাহর হুকুম তথা ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা।]

লেখাটি শেয়ার করুন আপনার প্রিয়জনের সাথে

Email
Facebook
Twitter
Skype
WhatsApp
সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...