মোহাম্মদ রাকীব আল হাসান:
মক্কার কোরায়েশ বংশ ছিল পুরোহিত বংশ। তখন ক্বাবা শরীফের ভিতরে ও বাহিরে সব মিলিয়ে তিনশ ষাটটি মূর্তি ছিল যেগুলির পূজা অর্চনা করার সময় কোরায়েশরা পুরোহিতের কাজ কোরত। এই পুরোহিতরা পূজা ছাড়াও সমাজপতির দায়িত্ব পালন কোরত। রসুলাল্লাহর গোত্রীয় চাচা আমর ইবনুল হাশেম ছিল সে সময়ে আরবের মধ্যে একজন খ্যাতিমান ও বড় আলেম, পুরোহিত ও গোত্রপতি। সবাই তাকে আবুল হাকাম অর্থাৎ জ্ঞানীদের পিতা বোলে ডাকতো, যেমন আলেমরা নিজেদের নামের আগে লিখে থাকেন আল্লামা (মহাজ্ঞানী, Very high scholar)। কিন্তু যখন আল্লাহর রসুল মানবজাতির উদ্দেশ্যে তওহীদের ডাক দিলেন তখন এই আবুল হাকাম তার জ্ঞানের পরিচয় দিতে চরমভাবে ব্যর্থ হোল। সে হোয়ে দাঁড়ালো ইসলামের কট্টর শত্রু এবং কুফরের পতাকাবাহী। তার বিরোধিতামূলক কর্মকাণ্ড ও শত্রুতা এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছিল যে রসুলাল্লাহ তাকে “এই উম্মাহর ফেরাউন” বোলে আখ্যা দিয়েছিলেন। তিনি এও বোলেছিলেন, ‘যে আবু জাহেলকে আবুল হাকাম বোলে ডাকবে সে সাংঘাতিক ভুল কোরবে। তার উচিৎ হবে এই ভুলের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা’ (আনসাবুল আশরাফ-বালাজুরি)। কেবল আবু জাহেলই নয়, ইব্রাহীম (আ:) এর আনীত দীনে হানিফের বিকৃতরূপের ধ্বজাধারী মূর্তিপূজক পুরোহিত আলেম শ্রেণির সকলেই ছিলো রসুলাল্লাহর ঘোর বিরোধী। আর সমাজের যে নিরক্ষর, সাধারণ শ্রেণির মানুষগুলি যাদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন ক্রীতদাস তারা যখন ইসলাম গ্রহণ কোরলেন এবং স্বয়ং আল্লাহর রসুলের কাছ থেকে ইসলামের আকিদা শিক্ষা কোরলেন, তারা হোয়ে দাঁড়ালেন একেকজন নক্ষত্রসদৃশ অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব। ইসলাম সম্পর্কে তাদের থেকে কি কারও বেশি জানা সম্ভব? নিশ্চয় নয়। কিন্তু তাদের কেউই নামের আগে আল্লামা, মাওলানা জাতীয় কোনো খেতাব ব্যবহার কোরেছেন বোলে ইতিহাসে পাওয়া যায় না।
সুতরাং যারা সত্যিকার আলেম তারা কখনোই নিজেদেরকে ‘আলেম’ বা জ্ঞানী বোলে মনে কোরবেন না। প্রকৃত আলেম হোচ্ছেন মহান আল্লাহ। তাঁর একটি নামই হোচ্ছে ‘আলেম’। আল্লাহর সৃষ্টি এবং আল্লাহর দীন সম্পর্কে যারা জ্ঞান অর্জন কোরবেন তারাও এক প্রকার আলেম বা জ্ঞানী। যদিও বর্তমানে কেবল দীন সম্পর্কে যারা জ্ঞানী তাদেরকেই আলেম বলা হয়, এই ধারণা এক প্রকার অন্ধত্ব। আল্লাহ ‘জ্ঞান’ বোলতে কি বুঝেন? মুসা (আঃ) একবার আল্লাহকে সাতটি প্রশ্ন কোরেছিলেন। তার মধ্যে একটি প্রশ্ন ছিলো- আল্লাহ! আপনার বান্দাদের মধ্যে জ্ঞানী কে? আল্লাহ বোললেন- যে জ্ঞানার্জনে কখনো তৃপ্ত হয় না এবং মানুষের অর্জিত জ্ঞানকেও যে ব্যক্তি নিজের জ্ঞানের মধ্যে জমা কোরতে থাকে (হাদিসে কুদসী আবু হোরায়রা (রাঃ) থেকে বায়হাকী ও ইবনে আসাকির; আল্লামা মুহাম্মদ মাদানী (রঃ) এর ‘হাদিসে কুদসী’ গ্রন্থের ৩৪৪ নং হাদিস, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ)। এখানে লক্ষ্য করার বিষয় এই যে আল্লাহ জ্ঞানকে দুই ভাগে ভাগ কোরেছেন। প্রথমটি তাঁর দেয়া জ্ঞান যা তিনি সৃষ্টির প্রথম থেকে তাঁর নবী-রসুলদের মাধ্যমে তাঁর কেতাবসমূহে মানবজাতিকে অর্পণ কোরে আসছেন, যার শেষ কেতাব বা বই হোচ্ছে আল-কোরান। এটা হোচ্ছে অর্পিত জ্ঞান। আর মানুষ পড়াশোনা, চিন্তা-ভাবনা, গবেষণা, পরীক্ষা-নিরীক্ষা কোরে যে জ্ঞান অর্জন করে তা হোল অর্জিত জ্ঞান। মুসার (আঃ) প্রশ্নের জবাবে আল্লাহ নির্দিষ্ট কোরে ‘মানুষের অর্জিত জ্ঞান’ বোললেন, শব্দ ব্যবহার কোরলেন ‘আন্-নাসু’, মানুষ। অর্থাৎ যে আল্লাহর অর্পিত জ্ঞান, অর্থাৎ দীন সম্বন্ধে জ্ঞান, এবং মানুষের অর্জিত জ্ঞানÑ এই উভয় প্রকার জ্ঞান অর্জন কোরতে থাকে এবং কখনোই তৃপ্ত হয় না অর্থাৎ মনে করে না যে তার জ্ঞানার্জন সম্পূর্ণ হোয়েছে, আর প্রয়োজন নেই, সেই হোচ্ছে প্রকৃত জ্ঞানী, আলেম। বর্তমানে যারা নিজেদের আলেম, অর্থাৎ জ্ঞানী মনে করেন, আল্লাহর দেয়া জ্ঞানীর সংজ্ঞায় তারা আলেম নন, কারণ শুধু দীনের জ্ঞানের বাইরে মানুষের অর্জিত জ্ঞানের সম্বন্ধে তাদের সামান্যতম জ্ঞানও নেই এবং সেই জ্ঞান সম্বন্ধে পিপাসাও নেই।
যাই হোক, যারা সকল জ্ঞানের স্রষ্টা, উৎস আল্লাহ থেকে জ্ঞান বা এলেম অর্জন কোরবেন তাদের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য থাকবে। এখানে আমরা প্রকৃত আলেম বোলতে বুঝবো আল্লাহর রসুলের আসহাবগণকে যাদেরকে স্বয়ং রসুল নিজে ইসলাম শিখিয়ে গেছেন, ইসলামের জ্ঞান তাদের চেয়ে বেশি আর কারও থাকা সম্ভব নয়। রসুলের আসহাবগণের পরবর্তীতে যারা আলেম হোতে চান তাদের চরিত্র ও কাজ আসহাবদের মতোই হোতে হবে। তা না হোলে যতো বড় টাইটেলধারীই হোন না কেন, যত বড় আলখেল্লাধারীই হোন না কেন তারা প্রকৃত আলেম নন।
১। প্রকৃত যারা আলেম তারা কখনও অহঙ্কারী হবেন না, কারণ অহঙ্কার কেবলমাত্র আল্লাহরই সাজে। প্রকৃত আলেমরা তাদের সঞ্চিত জ্ঞানকে খুবই সামান্য মনে কোরবেন এবং সর্বদা অতৃপ্ত থাকবেন। তারা নিজেদেরকে কখনোই আলেম বোলে মনে কোরবেন না, দাবি বা প্রচার করা তো দূরের কথা।
২। তারা আল্লাহর দীন বিক্রি কোরে জীবিকা নির্বাহ কোরবেন না। এই জ্ঞান অন্যকে দেওয়া তারা নিজেদের ঈমানী দায়িত্ব বোলে মনে কোরবেন। আলী (রা:) কে রসুলাল্লাহ ‘জ্ঞান-নগরীর দ্বার’ বোলে আখ্যায়িত কোরেছেন। তিনি কি আজকের আলেমদের মতো তাঁর জ্ঞান বিক্রি কোরে জীবিকা নির্বাহ কোরতেন? জীবিকা অর্জনের জন্য তিনি কুলির কাজ কোরতেন এবং যাঁতার চাক্কি পিষে যবের আটা প্রস্তুত কোরতে গিয়ে তাঁর স্ত্রী জান্নাতের রানী মা ফাতেমার (রা:) পবিত্র হাতে কড়া পড়ে গিয়েছিল। এই জ্ঞানের দুয়ার আলীকেই (রা:) আমরা দেখি সিংহের বিক্রমে কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কোরতে। তার অনন্য সাহসিকতা ও বীরত্বের জন্য রসুলাল্লাহ তাঁকে আরেকটি উপাধি দিয়েছিলেন- সেটা হোল আসাদুল্লাহ বা আল্লাহর সিংহ। সুতরাং যিনি দীনের যত বড় আলেম হবেন তিনি ততো বড় যোদ্ধা হবেন অর্থাৎ আল্লাহর সার্বভৌমত্বের রক্ষক হবেন।
৩। দীনের জ্ঞান যিনি যতো বেশি অর্জন কোরবেন, তিনি ততো বড় দানশীল হবেন। যেমন আম্মা খাদীজা (রা:), আবু বকর (রা:)। ইসলাম গ্রহণের পূর্বে তারা প্রত্যেকেই ঐ সমাজের প্রতিষ্ঠিত ধনী ব্যবসায়ী ছিলেন। আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় কোরতে কোরতে তারা এমন দরিদ্র হোয়ে পড়েছিলেন যে, আবু বকরের (রা:) পরিবারের তিনবেলা ঠিকমত খাদ্যও জুটতো না। আর আম্মা খাদীজার (রা:) সম্পর্কে ঐতিহাসিকরা বোলে থাকেন যে, শি’আবে আবু তালেবে তিন বছর নির্মম অনাহারের ফলে তিনি মারাত্মক অপুষ্টিতে আক্রান্ত হন এবং এটাই তাঁর মৃত্যুর কারণ।
৪। প্রকৃত আলেম বা জ্ঞানীরা হবেন লোহার মতো ঐক্যবদ্ধ। কোনো দুনিয়ার সম্পদের লোভ লালসা (সামানান কালীলা) তাদের ঐক্যে ভাঙ্গন ধরাতে পারবে না। কারণ তারা জানেন ঐক্য নষ্ট করা কুফর। তারা একে অপরের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা কোরবেন না, কারও পিছনে গীবত কোরবেন না, কারণ তারা জানেন অপর মো’মেনের আড়ালে তার ব্যাপারে অপছন্দনীয় কিছু বলা মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার সমতুল্য। কারও কোনো ভুল থাকলে তারা সেটা তাকে ধরিয়ে দিবে, আড়ালে নিন্দা কোরবে না। পক্ষান্তরে আজকের সমাজে আলেমদের ব্যাপারে একটি কথা প্রচলিত আছে যে, দু’জন আলেম স্বার্থ সংক্রান্ত বিষয় ছাড়া কোন বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ হোতে পারেন না। দুনিয়ার সম্পদের দেনা-পাওনা, রাজনৈতিক স্বার্থ ইত্যাদি বহুবিধ কারণ তাদের মধ্যে অনতিক্রম্য দেওয়াল তৈরি কোরে রেখেছে, তারা একে অপরকে অনেকাংশেই প্রতিপক্ষ জ্ঞান করেন। তাদেরকে কেন্দ্র কোরে সাধারণ জনগণও হাজার হাজার তাবুতে বিভক্ত।
৫। প্রকৃত আলেমরা হবেন সুশৃঙ্খল। আল্লাহর রসুলের হুকুমের শিকলে তারা নিজেদেরকে আবদ্ধ কোরে রাখবেন। তাদের জাতি হবে একটি, তাদের এমাম হবেন একজন, দীন (জীবনব্যবস্থা) হবে একটি। তাদের সকলের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যও হবে অভিন্ন; সেটা হোচ্ছে- সংগ্রামের মাধ্যমে সমগ্র পৃথিবীতে আল্লাহর সত্যদীন প্রতিষ্ঠা করা। তারা কোনোভাবেই এমামের, আমীরের হুকুম অমান্য কোরবে না, হুকুম হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা সেটাকে বাস্তবায়ন করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়বেন। তাদের স্ত্রী, পুত্র, সহায় সম্পদ বাড়িঘর, ব্যবসা-বাণিজ্য, খেত-খামার ইত্যাদি বিসর্জন দিয়ে আল্লাহর সত্যদীন প্রতিষ্ঠা করার জন্য দুনিয়ার বুকে বেরিয়ে পড়বেন, পেছনের দিকে তাকিয়ে দেখবেন না। কিভাবে জীবনটা আল্লাহর রাস্তায় উৎসর্গ করা যায়, শহীদ হওয়া যায় এটাই হবে তাদের জীবনের একমাত্র বাসনা (Utter Desire for death). যেমন রসুলাল্লাহর কাছ থেকে ইসলামের জ্ঞান অর্জন কোরেছিলেন খালেদ (রা:)। যিনি জাহেলিয়াতের অন্ধকার থেকে বেরিয়ে এসে আল্লাহর রাস্তায় এমনভাবে বহির্গত হোয়েছিলেন যেন এক প্রচণ্ড ঝড় (Cyclone)। ইসলামের শত্র“দের উপর আঘাত হানার জন্য তিনি যে তলোয়ার কোষমুক্ত কোরেছিলেন তা কখনও কোষবদ্ধ করেন নি। লাখ লাখ সুশিক্ষিত সৈন্যের রোমান পারস্য বাহিনী কখনও তাঁকে এতটুকুও বিচলিত কোরতে পারে নি।
৬। প্রকৃত আলেম বা জ্ঞানীরা শেরক, কুফর, ফেসক ইত্যাদি থেকে এমনভাবে হেজরত কোরবে অর্থাৎ এগুলিকে এমন ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান কোরবে যে প্রয়োজনে তার জীবন যাবে [যেমন: সুমাইয়া (রা:), ইয়াসের (রা:), বেলাল (রা:)], না খেয়ে থাকবে, অবর্ণনীয় দারিদ্র্যে পতিত হবে, তাদের উপরে নির্যাতনের স্টীম রোলার চোলবে তবুও শেরক কুফরের সঙ্গে আপস কোরবে না।
মহানবীর যে সাহাবীরা রসুলের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ কোরে ইসলামের আলেম হোয়েছিলেন তাঁদের চরিত্র এইসব বৈশিষ্ট্যে সমৃদ্ধ ও মহীয়ান ছিলো। অথচ দুঃখের বিষয় হোল আজ আলেম বোলতে আমাদের সামনে সেই আসহাবদের জীবন ও চরিত্র ভেসে ওঠে না, ভেসে ওঠে রং বেরঙের পোশাকধারী মাদ্রাসা শিক্ষিত কিছু ধর্মব্যবসায়ীর শশ্র“মণ্ডিত মুখমণ্ডল, যারা ইসলাম ধর্মের পুরোহিত, যারা ধর্মকে তাদের জীবিকার বাহন হিসাবে ব্যবহার করেন যাদেরকে আল্লাহর রসুল বোলেছেন, “আসমানের নিচে সর্ব নিকৃষ্ট প্রাণী।”
আমরা চাই এ জাতির সত্যনিষ্ঠ আলেম ওলামাদের কালঘুম ভাঙুক। তারাও আল্লাহর প্রকৃত তওহীদের পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হোন। অন্ধকারাচ্ছন্ন পৃথিবীতে যখন সত্যের আগমন হয় তখন মানবজাতির সামনে সৃষ্টি হয় সত্যের সাক্ষী হওয়ার এক অনন্য সুযোগ। এ সুযোগ সব সময় থাকে না। ১৪০০ বছর আগে যখন আল্লাহর রসুল পৃথিবীতে আগমন করেন তখন মানবজাতির সামনে এমনই এক সুযোগ সৃষ্টি হোয়েছিল। তখন যারা রসুলাল্লাহর আহ্বানে সাড়া দিয়েছিলেন তারা হোয়েছিলেন সেই যুগের শ্রেষ্ঠ মানব, আজও তাঁদের নামের পর আমরা “রাদিয়াল্লাহু আনহুম ওয়া রাদু আনহু” বোলি। এমন একটি সুযোগ পেয়েও সে যুগের ‘মহাজ্ঞানী’ আবু জাহেল অহঙ্কারবশতঃ গ্রহণ কোরতে পারে নি, বরং বিরোধিতা কোরে নিকৃষ্টতম জাহান্নামের বাসিন্দা হোয়েছে, সত্যের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণের জন্য ইতিহাস আজও তাকে ধিক্কার দিচ্ছে। ঠিক তেমনই একটি সময় কালের আবর্তে আবার আমাদের সামনে উপস্থিত হোয়েছে। যারা নিজেদেরকে সত্যনিষ্ঠ আলেম বোলে ভাবছেন তারা কি এই মহাসুযোগটি গ্রহণ কোরবেন, নাকি বিরোধিতা কোরে আবু জাহেলের কাতারে, মহামূর্খের কাতারে সামিল হবেন এটা তাদের সিদ্ধান্ত। তাদের প্রতি আমাদের কথা হোচ্ছে:
আজ এই হতভাগ্য জাতিসহ সমস্ত মানবজাতি শেরক ও কুফরে ডুবে আছে, আল্লাহর সার্বভৌমত্ব বাদ দিয়ে তাগুতের সার্বভৌমত্ব মেনে নিয়েছে। অথচ আল্লাহ এই উম্মাহকে শ্রেষ্ঠতম উম্মাহ বোলেছেন (সুরা এমরান ১১০)। আপনারা সামান্য কিছু অর্থ লাভের জন্য অন্যের মুখাপেক্ষী হোয়ে ছোট হোয়ে থাকবেন না। এই হতভাগ্য জাতিকে ঐক্যবদ্ধ কোরে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব আপনাদেরও আছে। তাগুতের পূজারীরা মনে করে আপনাদেরকে অর্থের বিনিময়ে তাদের পছন্দমত ফতোয়া দেওয়ানো যায়। পরমুখাপেক্ষী যারা হয় তাদের আর মেরুদণ্ড বোলতে কিছু থাকে না। সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে তারা বেশিদূর এগুতে পারে না। বড় কোনো কোরবানি করার আত্মিক শক্তি তারা হারিয়ে ফেলে। তাই আপনারা এই জাতির কল্যাণে, মানবতার কল্যাণে ধর্মব্যবসা পরিত্যাগ কোরুন এবং ক্ষুদ্রস্বার্থ ভুলে, মতবিরোধ ত্যাগ কোরে মানবজাতির কল্যাণে তওহীদের উপরে ঐক্যবদ্ধ হোন, সত্য প্রতিষ্ঠায় আত্মনিয়োগ কোরুন। এই কাজ কোরতে গিয়ে আপনাদেরকে হয়তো কিছু অর্থকষ্ট সহ্য কোরতে হোতে পারে, তবু ভয় পাবেন না। আল্লাহর উপরে তাওয়াক্কাল রেখে হারাম উপার্জন বন্ধ কোরুন। নিশ্চয়ই আল্লাহ আপনাদেরকে উত্তম রেযেকের বন্দোবস্ত কোরে দেবেন এবং আপনাদের দুনিয়া ও আখেরাতকে সুন্দর কোরে দেবেন। এক গৌরবময় জীবন আল্লাহর পক্ষ থেকে পাবেন।
সারা দুনিয়ায় মোসলেম জাতি আজ জ্ঞান-বিজ্ঞানে পিছিয়ে আছে। বিভিন্ন কুসংস্কারে তারা নিমজ্জিত। অশিক্ষা-কুশিক্ষা তাদের আষ্টে-পৃষ্ঠে বেঁধে ফেলেছে। এ জাতিটি সংখ্যায় ১৫০ কোটি হওয়া সত্ত্বেও, বিশ্বের বিরাট ধন সম্পদের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও পাশ্চাত্য জাতিগুলির দ্বারা লাঞ্ছিত, অপমানিত, নির্যাতিত হোচ্ছে। তারা জাতীয় জীবনে আল্লাহ এবং রসুলের হুকুম বাদ দিয়ে পশ্চিমা ইহুদি-খ্রিস্টান সভ্যতা তথা দাজ্জালের হুকুম মেনে নিয়ে জাতিগতভাবে কার্যত কাফের এবং মোশরেকে পরিণত হোয়েছে। ফলে তারা একদিকে যেমন ইসলাম থেকে বহির্গত হোয়ে গেছে আবার পার্থিবভাবে অন্য জাতির ঘৃণিত দাসেও পরিণত হোয়েছে। ফলশ্র“তিতে তারা দুনিয়াতে অন্যায়-অশান্তি, অশিক্ষা-কুশিক্ষায় ডুবে আছে। আর তাদের পরকালও যে জাহান্নামের দিকে ধাবিত হোচ্ছে তাও অতি পরিস্কার। জাতির নেতারা সাধারণ শ্রেণির মানুষের অজ্ঞতার সুযোগে তাদেরকে দাবিয়ে রেখে আল্লাহ রসুলের হুকুম পরিপন্থী কাজ কোরে যাচ্ছে। এখন আমরা যখন সত্য তুলে ধরছি, পার্থিব কোন বিনিময় ছাড়াই এর প্রকাশ কোরে যাচ্ছি, এমতবস্থায় আপনারা যারা নিজেদেরকে ইসলামের কর্ণধার এবং নায়েবে রসুল বোলে দাবি করেন, তাদের কি উচিৎ নয় আমরা যে সত্য তুলে ধরছি তার পক্ষে কাজ করা?
আল্লাহ দয়া কোরে তাঁর হারিয়ে যাওয়া ইসলামের জ্ঞান এ যামানার এমাম জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নীকে দান কোরেছেন। তিনি আল্লাহ ও রসুলের বক্তব্য থেকে প্রমাণ পেশ কোরে বোলেছেন যে:
১। ধর্ম নিয়ে ব্যবসা করা, ধর্মীয় কাজের বিনিময় নেওয়া আল্লাহ নিষিদ্ধ কোরেছেন, অর্থাৎ তা অবৈধ।
২। ধর্মের নামে উগ্র সন্ত্রাসবাদ একটি ভুল পথ।
৩। ধর্মকে ব্যবহার কোরে রাজনৈতিক বা অন্য কোন স্বার্থ হাসিল করা অবৈধ।
আমরা লক্ষ্য করছি উপরোক্ত কথাগুলো প্রকাশ করায় বিভিন্ন শ্রেণির ধর্মজীবীরা ক্ষুব্ধ হোচ্ছেন এবং আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে লিপ্ত হোচ্ছেন। এই শ্রেণিটির প্রতি আমাদের কথা হোচ্ছে-
আমরা যে কথাগুলো বোলছি তা কি মিথ্যা? না। আমরা যে কথাগুলো বোলছি তা আল্লাহ এবং তাঁর রসুলেরই কথা। মানবতার কল্যাণে সত্য প্রকাশ করা আমাদের দায়িত্ব মনে কোরে আমরা তা প্রকাশ কোরেই যাবো। আমরা জানি, যারা আমাদের বিরোধিতা করেন তারা শুধুমাত্র তাদের সামাজিক অবস্থান, নিশ্চিন্ত জীবিকা ও লেবাসী মান সম্মান হারানোর ভয়েই সত্যের বিরোধিতা করেন। তারা একমাত্র নিজেদেরকেই ধর্মের ঠিকাদার হিসেবে ধরে নিয়েছেন। ইসলাম নিয়ে অন্য কেউ কথা বলার অধিকার রাখে না এই অহঙ্কারই তাদেরকে এই কাজে উৎসাহ যোগাচ্ছে। কিন্তু তাদেরকে মনে রাখতে হবে যতোদিন মিথ্যা চালু থাকবে ততোদিন অন্যায় অশান্তি দূর হবে না। আর স্বার্থান্বেষী এই ধর্মজীবীদের কথায় যারা প্রভাবিত হোয়ে আমাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন তাদের ভেবে দেখা উচিত তারা নিজেদের এবং মানবজাতির কী ক্ষতি কোরছেন। অন্যদিকে ধর্মব্যবসায়ীদের কাজকে সঠিক মনে করে নিজেদের পরকালকে কোন দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। প্রত্যেকের মনে রাখা দরকার যে সত্য প্রতিষ্ঠিত হোলে তা থেকে সবাই উপকৃত হবে। এমনকি অপরাধী চরিত্রের লোকের জন্যও তা মঙ্গলজনক। অন্যথায় তাদের এই কূপমণ্ডূকতার দায়ে ইসলামের প্রতি মানুষের ঘৃণাই বাড়বে, দিন দিন তা যেমন বেড়ে চোলেছে। সত্য ইসলামকে তুলে ধরার ক্ষেত্রে তথাকথিত আলেম সাহেবদের ব্যর্থতার জন্যই আজ আল্লাহ, রসুল এবং ইসলামের বিরুদ্ধে ইসলামবিদ্বেষী শক্তি অবস্থান নিতে সক্ষম হোচ্ছে।
তাদের আরো মনে রাখা উচিৎ যে, সত্যকে মিথ্যা দিয়ে ঢেকে রাখা যায় না। সত্য উদ্ভাসিত হবেই। যারা সত্যের আলোয় নিজেদেরকে আলোকিত কোরবে তারা নিজেদেরকেই লাভবান কোরবে। আল্লাহ বলেন, তারা চায় ফুঁৎকার দিয়ে আল্লাহর নুরকে নিভিয়ে দিতে। কিন্তু এই আলোকে উদ্ভাসিত করা আল্লাহর সিদ্ধান্ত। আমাদের এই আযান সকলের উদ্দেশ্যে, জেনে রাখুন সূর্য ওঠার সময় হোয়েছে, ঘরের দরজা বন্ধ কোরে প্রোজ্জ্বল আলোর উদ্ভাসকে ফিরিয়ে রাখতে পারবেন না। কেবল নিজেই অন্ধকারের কারারক্ষী হোয়ে থাকবেন।
লেখক: যামানার এমামের অনুসারী, হেযবুত তওহীদের সদস্য।