হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

লেনিনকে বলছি

হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম
প্রতি বছর ‘মে’ দিবস পালিত হয়, শোষিত বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ে কতই না মিছিল-সমাবেশ চলে, আলোচনা সেমিনারও, কিন্তু দুর্বলের উপর সবলের অত্যাচার ও শোষিতের উপর শোষকের অবিচার বন্ধ হয়নি একটি দিনের জন্যও। নিপীড়িত মানুষের আর্তচিৎকারে প্রকম্পিত হচ্ছে ধরণী, বঞ্চিতের ‘দীর্ঘশ্বাস’ মানবসভ্যতাকে দিচ্ছে ধিক্কার। অথচ আজ থেকে অন্তত একশ’ বছর আগেই রব উঠেছিল- ‘পাওয়া গেছে! পাওয়া গেছে! এমন আদর্শ পাওয়া গেছে যেটা দিয়ে শোষিতের হাহাকার দূর হবে, ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান ঘুচে যাবে। আসমানের নিচে জমিনের উপর সকল মানুষ পাবে সমান অধিকার। সম্পত্তি নিয়েই যখন এত অবিচার, শোষণ আর বঞ্চনা, তাহলে সকল সম্পত্তি থাকবে রাষ্ট্রের হাতে। রাষ্ট্র সব নাগরিকের মধ্যে সুসম বণ্টন করে দিবে। কেউ খাবে কেউ তাকিয়ে থাকবে সেই বৈষম্যের দিন ফুরোবে।’
মুক্তির এই মশাল তুলে ধরল সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবীরা। আজ থেকে এক শতাব্দী আগের ঘটনা। লাখ লাখ মানুষের রক্তের বিনিময়ে সেই আদর্শটি যখন রাশিয়ায় প্রতিষ্ঠিত হলো, দিকে দিকে ধন্য ধন্য পড়ে গেল। পরিবর্তনের হাওয়া ছড়িয়ে পড়ল পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে। পঙ্গপালের মতো মানুষ ছুটতে লাগলো সমাজতন্ত্রের মশাল অভিমুখে। কিন্তু অচিরেই সেই মুক্তির মশাল নিষ্প্রভ হয়ে এলো। একটুখানি আলোর ঝলকানি শেষে ফিরে এলো ঘুটঘুটে অন্ধকার, আবারও শুরু হলো দিশাহীন মানুষের দিগ্বিদিক ছোটাছুটি। এরই মধ্যে লক্ষ লক্ষ মানুষ পুড়ে মরল সেই মশালের শিখায়।
আজ আমি হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম ২০১৮ সালে দাঁড়িয়ে একশ’ বছর আগের রুশ বিপ্লবের মহানায়ক লেনিনকে বলতে চাই- ‘একশ’ বছর হয়ে গেল আপনারা সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করলেন, শ্রমিক শ্রেণির মুক্তি কিন্তু আজও আসেনি। হ্যাঁ, আপনাদের কোরবানী, আপনাদের ত্যাগ ও সাহসিকতা অনন্য। সমাজতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য লাখ লাখ মানুষ জীবন দিয়েছেন, একে খাটো করে দেখার স্পর্ধা আমার নেই। আপনারা যতটুকু করেছেন, বিকৃত ধর্মের ধ্বজাধারী ধর্মব্যবসায়ীদের দ্বারা ওইটুকুও সম্ভব হয়নি। কিন্তু আমার কথাটা হচ্ছে- ‘ফল কী হলো?’ যে সংগ্রাম আপনারা করলেন, আদর্শের বীজ বুনলেন, তা কেন বিষবৃক্ষের জন্ম দিয়ে কোটি কোটি মানুষের স্বপ্নভঙ্গ করল? একটি বস্তুকে যে কাজের জন্য সৃষ্টি করা হলো সেটা দিয়ে ওই কাজটাই যদি না হয়, ব্যর্থ হয়, তাহলে সেটার কোনো মূল্য থাকে না। ওই বস্তুকে যত আন্তরিকভাবেই গড়ে তোলা হোক সমস্তটাই বিবেচিত হয় ‘পণ্ডশ্রম’ হিসেবে। আদর্শের ক্ষেত্রেও তা-ই। এত মানুষের জীবনের বিনিময়ে আদর্শ প্রতিষ্ঠা হবার পর সেই আদর্শের ব্যর্থতা মানে ওই লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনের ব্যর্থতা! তাই নয় কি?
আমি জানি আপনারা আন্তরিকতায়, প্রচেষ্টায়, আত্মত্যাগে দৃষ্টান্তযোগ্য ছিলেন। কিন্তু তারপরও কথা থাকে। একমাত্র আন্তরিকতাই যদি সম্বল হয় তাহলে মানুষ স্রষ্টাকে পাবার জন্য ব্যাকুল হয়ে কেউ মসজিদে যাচ্ছে, কেউ মন্দিরে যাচ্ছে, কেউ গির্জায় যাচ্ছে, কেউ প্যাগোডায় যাচ্ছে, কেউ জীবনের সমস্ত স্বাদ-আহ্লাদ উপেক্ষা করে বনে-জঙ্গলে জীবন কাটিয়ে দিচ্ছে, তারাও তো আন্তরিকতায় কম যান না। কিন্তু স্রষ্টাকে পাচ্ছেন ক’জন? ভুল পথে কখনও গন্তব্যে পৌঁছা যায় না, বরং তা গন্তব্যস্থলে পৌঁছনোর সম্ভাবনাকে আরও সুদূরপরাহত করে তোলে।
সমাজতন্ত্রের যারা উদ্ভাবক ও প্রতিষ্ঠাতা, তারা চেয়েছিলেন মানবজীবনের অর্থনৈতিক অবিচার দূর করতে যা কার্যত ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। অন্য যে কোনো সময়ের চাইতে পৃথিবীতে আজ অর্থনৈতিক বৈষম্য প্রকট, সমাজতন্ত্র দিয়ে এই বৈষম্যের কালো মেঘ অদূর ভবিষ্যতে কাটানো সম্ভব হবে তা কোনো বাস্তবজ্ঞানসম্পন্ন মানুষ এখন দাবি করেন না। এই যে শোচনীয় আদর্শিক ব্যর্থতা, এর মূল কারণ কী? ইতিহাসের ব্যবচ্ছেদ থেকে অনেকেই মৌলিক কারণগুলো খুঁজে বের করার প্রয়াস পেয়েছেন, কিন্তু আমার মনে হয় আসল কারণটা অধিকাংশেরই ধারণার বাইরে থেকে গেছে। সেগুলো হচ্ছে,
প্রথমত- সমাজতন্ত্রের পুরোধারা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছেন মানুষ কেবল দেহ নয়, তার আত্মাও আছে। তার দেহের চাহিদাই একমাত্র চাহিদা নয়, আত্মারও চাহিদা আছে। কাজেই এমন ব্যবস্থা প্রয়োজন যা একাধারে মানুষের দেহ-আত্মা উভয়েরই চাহিদা পূরণ করতে পারে। সমাজতন্ত্র এখানে ব্যর্থ।
দ্বিতীয়ত, কেবল অর্থনৈতিক সঙ্কটই মানবজীবনের একমাত্র সঙ্কট নয়, এর বাইরেও মানবজীবনের যে রাজনৈতিক, সামাজিক, পারিবারিক, সামরিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা, বিচার ইত্যাদি অঙ্গন রয়েছে সেগুলোরও সমাধান প্রয়োজন, যা নিছক একটি অর্থনৈতিক মতাদর্শ দিয়ে সম্ভব নয়।
এই সরল সত্যটি এড়িয়ে গিয়ে সমাজতন্ত্রের পুরোধারা মানবজীবনের কেবল একটি দিক অর্থাৎ অর্থনৈতিক দিকের সঙ্কটকেই একমাত্র সঙ্কট বলে প্রচার করলেন এবং অর্থনৈতিক মতাদর্শ দিয়ে সামগ্রিক জীবন পরিচালনার ব্যর্থ চেষ্টা চালাতে লাগলেন, যেই ব্যবস্থাটিও আত্মাবিবর্জিত, বস্তুসর্বস্ব ব্যবস্থা অর্থাৎ ভারসাম্যহীন। খেয়ে পরে বেঁচে থাকাটাই মানবজীবনের চ‚ড়ান্ত লক্ষ্য হতে পারে না, কিন্তু ধর্মহীন, আত্মাহীন, পরকালবর্জিত এই অর্থনৈতিক দর্শন মানুষের সামনে এর চাইতে মহৎ কোনো লক্ষ্য উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হলো। পরিণতি- কোটি কোটি মানুষের ব্যর্থ আত্মদান ও স্বপ্নভঙ্গ!
এই সমাজতন্ত্রের পুরোধারা যদি একটিবার প্রকৃত ইসলামের ইতিহাসটা পড়ে দেখতেন ও উপলব্ধি করতে পারতেন তাহলে আমার মনে হয় সমাজতন্ত্র আবিষ্কারের দরকারই পড়ত না, লক্ষ লক্ষ মানুষের রক্তের নদীতে নৌকা বেয়ে ভুল গন্তব্যেও পৌঁছতে হত না। তারা দেখতে পেতেন, তারা আজ যেটা করতে চাইছেন, হাজার বছর আগেই পৃথিবীর বুকে সেই মহাবিপ্লবের শঙ্খ বাজিয়ে গেছে ইসলাম, যার মহানায়ক ছিলেন আল্লাহর রসুল মোহাম্মদ (সা.)। তিনি পৃথিবীর ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দেন। যেই সমাজে আল্লাহর রসুলের জন্ম সেখানে দাসদেরকে গরু-ছাগলের মত হাটে বাজারে কেনাবেচা করা হত, মানুষ মানুষের প্রভু সেজে হুকুম দিত, শক্তিমানের কথাই সঠিক বিবেচিত হত, সেখানে নিপীড়িত, নির্যাতিত, শোষিত, বঞ্চিত ক্রীতদাসদের অধিকার ছিল না সমাজ নিয়ে কথা বলার, ধর্ম নিয়ে কথা বলার। প্রভুদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার সুতোয় বাঁধা থাকত তাদের জীবন।
সেই পাশবিক শৃঙ্খলে অষ্টেপৃষ্ঠে বন্দী আর্তপীড়িত বনি আদমকে আল্লাহর রসুল মাথা তুলে দাঁড়াতে শিখালেন, যাবতীয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ কণ্ঠে ঘোষণা করতে শিখালেন- ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’, আমরা আল্লাহ ছাড়া কারো হুকুম মানি না। এই ঘোষণাটি যখন নির্যাতিত-নিপীড়িত ক্রীতদাস বেলাল, আম্মার, সুমাইয়া, খাব্বাবের (রা.) কণ্ঠে ধ্বনিত হলো, আরব্য জাহেলিয়াতের ঘুরে ধরা প্রাসাদ প্রকম্পিত হতে লাগল, শোষকের কলিজা শুকিয়ে গেল, ভণ্ড প্রভুদের রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেল। অবর্ণনীয় নির্যাতন, নিপীড়ন ও রক্তপাত করে তারা চাইল এই প্রতিবাদী মূলমন্ত্রকে চিরতরে মাটিচাপা দিয়ে ফেলতে, কিন্তু পারল না। হক্বের শক্তির কাছে পরাজিত হলো যাবতীয় মিথ্যা। একদল মো’মেনের আত্মত্যাগের বিনিময়ে উদিত হলো মুক্তির রক্তিম সূর্য। সেই সূর্যের আলোয় আলোকিত হলো অর্ধপৃথিবী।
আল্লাহর রসুল যে বিপ্লবটি করলেন সেটা নিছক অর্থনেতিক বিপ্লব নয়, রাজনৈতিক বিপ্লব নয়, সাংস্কৃতিক বিপ্লব নয়, সামাজিক বিপ্লব নয় বা সামরিক বিপ্লব নয়। মানুষের সমষ্টিগত জীবনের বিপ্লব, যার ব্যাপ্তি দেহ থেকে আত্মা, ইহকাল থেকে পরকাল, শরীয়াহ থেকে মারেফাত- সমস্ত মানবজীবন জুড়ে বিস্তৃত। ইসলামপূর্ব আরবরা ছিল তৎকালীন দুনিয়ার সবচাইতে অবজ্ঞাত, উপেক্ষিত, শিক্ষা-দীক্ষাহীন, শক্তিহীন, দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত একটি জনসংখ্যামাত্র; যারা শালীনতার সঙ্গে প্রশ্রাব-পায়খানা করতে জানত না, পবিত্র হওয়ার প্রয়োজন বোধ করত না। কথা বলার আদব জানত না, খাওয়া-দাওয়ার নিয়ম জানত না, ব্রাশ করত না, শালীনতা-পবিত্রতার প্রয়োজনবোধ করত না। সেই জাতি হয়ে গেল শিক্ষকের জাতি। সমস্ত পৃথিবীর অনুকরণীয় অনুসরণীয় জাতি।
ভীরু-কাপুরুষ আরবরা রোমান-পারস্যদের নাম শুনলে ভয় পেত, তাদের মধ্যে এমন সাহসের সঞ্চার ঘটল তারা একইসাথে আক্রমণ করে রোমান ও পারস্য সাম্রাজ্যকে পরাজিত করে বিজয়মুকুট ছিনিয়ে আনল। যেই নারীদের জীবন্ত কবর দেওয়া হত, সেই নারীরা বন্দী ও দাসত্বের জীবন থেকে মুক্ত হয়ে নাঙ্গা তলোয়ার হাতে আরবীয় তেজস্বী ঘোড়ায় চড়ে যুদ্ধক্ষেত্র দাপিয়ে বেড়াল। দারিদ্র্যের বদলে এলো স্বচ্ছলতা। শত্রুতার বদলে ভ্রাতৃত্ব। শ্রেণিভেদের বদলে সাম্য।
মক্কা বিজয়ের পর আল্লাহর রসুল বেলালকে (রা.) কাবার উপরে উঠিয়ে আজান দেওয়ালেন। এই বেলাল কোন বেলাল? সেই কোরায়েশদের দ্বারা অত্যাচারিত নিপীড়িত ক্রীতদাস বেলাল, যার কোনো মতামতের স্বাধীনতা ছিল না, চলাফেরার স্বাধীনতা ছিল না, সম্মান-মর্যাদা ছিল না, যাকে জন্তুর মতই ব্যবহার করা হতো। তিনি ছিলেন সমগ্র বিশ্বের বঞ্চিত, দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ মানুষের প্রতীক। সেই ক্রীতদাস বেলালকে তিনি কাবার উপরে উঠালেন। উঠিয়ে প্রমাণ করে দিলেন মানুষ ঊর্ধ্বে, মানবতা ঊর্ধ্বে। সত্যনিষ্ঠ মানুষের মর্যাদা সেই ক্বাবার ঊর্ধ্বে যেই ক্বাবাকে কোরাইশ অভিজাত সম্প্রদায় দাড়ি দিয়ে পরিষ্কার করত।
এই হচ্ছে আল্লাহর রসুলের বিপ্লব। মানুষকে সর্বোচ্চ আসনে উঠানোর জন্যই তিনি এসেছিলেন। এখানেই রসুলাল্লাহর ‘রহমাতাল্লিল আলামিন’ নামের প্রাসঙ্গিকতা। এরপর যখন তিনি সারা জীবনের অক্লান্ত পরিশ্রম শেষে একটি জাতি গঠন করে আল্লাহর কাছে চলে যাবেন, যাওয়ার আগে জাতিকে শেষবারের মত স্মরণ করিয়ে দিলেন তাঁর সংগ্রামী জীবনের উদ্দেশ্যের কথা, সেই মূল্যবোধের কথা যার জন্য তিনি এতকিছু করেছেন। বিদায় হজ্বে তিনি জাতির উদ্দেশে এক যুগান্তকারী ভাষণ দিলেন। বললেন, ‘ওহে মানুষ! শুনে রাখো, আরবের উপর অনারবের শ্রেষ্ঠত্ব নাই। অনাবরের উপর আরবের শ্রেষ্ঠত্ব নাই। মানুষে মানুষে কোনো ভেদাভেদ নেই। সব মানুষ আদমের সন্তান, আর আদম মাটির তৈরি। আল্লাহর কাছে সেই বেশি মর্যাদাবান যে ব্যক্তি সত্যনিষ্ঠ, ন্যায়-অন্যায়ের বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বনকারী। তোমরা যা খাবে তোমাদের অধীনস্থদেরও তাই খাওয়াবে, যা পরবে তা-ই তাদেরকে পরাবে। তারা যদি ভুল করে তাদেরকে ক্ষমা করে দিও তোমাকে আল্লাহ যেমন ক্ষমা করে থাকেন। শরীরের ঘাম শুকিয়ে যাবার আগে তার মজুরি পরিশোধ করবে। সামর্থ্যরে অতিরিক্ত বোঝা কাউকে চাপিয়ে দিও না। জোর-জবরদস্তি করবে না।’
আল্লাহর রসুলের সেই বিপ্লব ব্যর্থ বিপ্লব ছিল না, সেই বিপ্লবে যারা আত্মদান করেছিলেন, তাদের আত্মদানও ব্যর্থ আত্মদান ছিল না। ইসলামের সেই প্রকৃত আদর্শটি আবার আমাদের হাতে এসেছে। সেটিকে ধারণ করে আজও কি আমরা পারি না নিপীড়িত বঞ্চিত ক্ষুধার্ত মানুষের মুক্তির মশাল নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে? মার্ক্স/লেনিন আজ নেই, তবে তাদের অনুসারীরা আছেন। তারা কি ভেবে দেখবেন এই প্রস্তাবনা?
লেখক: এমাম, হেযবুত তওহীদ
facebook/emamht

সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...