হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

রাজধানীর আজিমপুরে ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত

গত ২১ই জুন, ২০১৭ রোজ বুধবার রাজধানীর আজিমপুরে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও আন্দোলনের সদস্যদের নিয়ে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করল হেযবুত তওহীদ। আজিমপুর এস্টেট জনকল্যাণ সমিতি কমিউনিটি সেন্টারে এই ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। হেযবুত তওহীদের লালবাগ থানা সভাপতি মো: আল আমিন সবুজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ২৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আলহাজ্ব হাসিবুর রহমান মানিক। অনুষ্ঠানে মুখ্য আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন হেযবুত তওহীদের এমাম জনাব হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম। এসময় তিনি মানবতার কল্যাণে সমস্ত অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হবার আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন লালবাগ সেক্টর কমান্ডার ফোরামের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আওলাদ হোসেন, দৈনিক বজ্রশক্তির প্রকাশক ও সম্পাদক এস এম শামসুল হুদা, হেযবুত তওহীদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো: আলী হোসেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ হেযবুত তওহীদের সভাপতি শরিফুল ইসলাম প্রমুখ। অনুষ্ঠান শেষে দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনা করে দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।
ইফতারপূর্ব আলোচনা সভায়  মুখ্য আলোচক হিসেবে হেযবুত তওহীদের এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম উপস্থিত সদস্য-সদস্যা এবং শুভানুধ্যায়ীদের উদ্দেশে গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ প্রদান করেন। তাঁর বক্তব্যের সারাংশ নিম্নে তুলে ধরা হলো:-
১. মুসলমানরা যে ভয়াবহ সঙ্কটে পড়েছে তা সরকার থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত সবাইকে উপলব্ধি করতে হবে।
.
২. সরকারগুলো চেষ্টা করছে শক্তি দিয়ে, আইন দিয়ে এই সঙ্কট থেকে যার যার দেশকে মুক্ত রাখতে। কিন্তু পারছে না।
.
৩. জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আদর্শিক লড়াইয়ের অংশ হিসেবে বিভিন্ন ধর্মীয় নেতা, মসজিদ-মাদ্রাসার ইমাম, শিক্ষকদেরকে দিয়ে চেষ্টা করা হচ্ছে। এই প্রচেষ্টা কার্যকরী হবার শর্ত হচ্ছে-
.
প্রথমত, যারা অন্যায় ও অসত্যের বিরুদ্ধে কথা বলবে তাদের নিজেদেরকে সত্য ও ন্যায়ের ধারক হতে হবে।
.
দ্বিতীয়ত, এই কাজের পেছনে কোনো স্বার্থ থাকবে না, কাজটি করতে হবে নিঃস্বার্থভাবে, কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি ও মানুষের কল্যাণের জন্য।
.
তৃতীয়ত, তার বক্তব্যের মধ্যে মুসলিম বিশ্বের করুণ দুর্গতির কথা এবং তা থেকে উত্তরণের পথনির্দেশ থাকতে হবে। এদের মধ্যে এই শর্তগুলোর একটিও নেই, সুতরাং সরকারের উদ্যোগ ফলপ্রসূ হবার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।
.
৪. সাধারণ জনগণ এবং মুসলিম বিশ্বের সরকারের মধ্যে আস্থা, বিশ্বাসের বিরাট ফারাক সৃষ্টি হয়েছে। এটা একদিনে বা কোনো নির্দিষ্ট ইস্যুর কারণে হয় নাই। দীর্ঘদিনের সত্যত্যাগের পরিণতি এটা।
.
৫. মুসলিম বিশ্বের সরকারগুলোকে বুঝতে হবে তারা সেই জাতির নেতৃত্ব দিচ্ছেন যে জাতির মধ্যে একটি অবিকৃত ধর্মগ্রন্থ কোর’আন আছে, যেটা সর্বশেষ আসমানি কিতাব, প্রায় সকল ভাষায় সেই কোর’আনের অনুবাদ হয়েছে, ঘরে ঘরে কোর’আনের কপি আছে।
.
৬. সরকারকে আরও বুঝতে হবে তারা সেই জাতিকে নেতৃত্ব দিচ্ছে যে জাতি এমন একজন মহামানবের অনুসারী যেই মহামানব পৃথিবীর ভাগ্যাকাশে এক অত্যুজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন। যেই মহামানব ছিলেন একাধারে নবী, সেনাপ্রধান, বিচারক, সমাজসংস্কারক। যিনি এমন এক জাতি সৃষ্টি করেছিলেন যারা জ্ঞান-বিজ্ঞানে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠত্বের আসন লাভ করে। জাতিটির ব্যক্তিগত, সামরিক, রাষ্ট্রীয় জীবন পরিচালিত হত আল্লাহর দেওয়া বিধান মোতাবেক ও রসুলের সুন্নাহ মোতাবেক। রসুল ও তাঁর সাহাবীদের কর্মবহুল সেই জীবনকে জাতি এখনও কোর’আন, হাদীস, সিরাতে দেখতে পায়। এটা জীবন্ত ইতিহাস হয়ে আছে জাতির সামনে। সেই ইতিহাসের সাথে ও ধর্মগ্রন্থের সাথে সরকারের কার্যাবলীকে মিলিয়ে দেখে আজকের মুসলিম জনগোষ্ঠী। আর এখানেই তাদের সাথে পশ্চিমা দর্শনের বিরোধ লেগে আছে। জাতির সদস্যরা তাদের শাসকদেরকে পশ্চিমা মানদণ্ড দিয়ে যাচাই করে না, তারা কোর’আন-হাদীস-সিরাত দিয়ে যাচাই করে এবং অনেক অমিল দেখতে পায়। আর সেই অমিলকে ব্যবহার করেই বিভিন্ন উগ্রবাদী গোষ্ঠী মানুষকে বিভ্রান্ত করার সুযোগ পায়।
.
৭. আল্লাহর রসুল ঐক্যে, শৃঙ্খলায়, আনুগত্যের সমন্বয়ে এমন এক দুর্ধর্ষ জাতি তৈরি করেন যে জাতি একই সাথে দুই দুইটি সুপার পাওয়ারকে ধুলিস্যাত করে দিয়ে পৃথিবীর কর্তৃত্বকারী একক শক্তিতে পরিণত হয়েছিল। সে ইতিহাস এই জাতি ভুলে যায় নি, হাদীস ও সিরাত আকারে তাদের ঘরে ঘরে কোর’আনের পাশে সন্নিবেশিত আছে। উপরন্তু বর্তমানে পৃথিবীময় তাদের উপরে যে নির্যাতন-নিপীড়ন চলছে, তা দেখে তারা আরও তীব্রভাবে অনুধাবন করে তাদের সেই স্মরণীয় অতীত, যা তারা পুনরায় ফিরে পেতে চায়। কিন্তু সরকারগুলোর প্রবণতা ঠিক তার বিপরীত। সরকারগুলোর কোনটা পুঁজিবাদী গণতন্ত্রের পূজারী, কোনটা সমাজতন্ত্রের, কোনটা বা রাজতন্ত্রের, কোনটা সামরিক বা স্বৈরতন্ত্রের। জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার কোনো প্রতিফলন তাদের চিন্তা-ভাবনায় ঘটে না। ফলে এই বিপরীতমুখী দুই জীবনদর্শনের প্রভাবে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে সেটাকে সভ্যতার দ্বন্দ্ব (The clash of civilizations) বললে অত্যুক্তি হয় না। আজ এই জাতির জাতীয় জীবন পরিচালিত হচ্ছে পশ্চিমা বস্তুবাদী জীবনদর্শন দিয়ে, আর ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবন পরিচালিত হচ্ছে ধর্ম দিয়ে। অথচ এই দুই জীবনদর্শন স্পষ্টত একে অপরের সাংঘর্ষিক।
.
৮. আজকে যারা নিজেদেরকে ‘তওহীদী জনতা’ মনে করেন তাদের মধ্যে বিরাট সংখ্যা কেবল ব্যক্তিগত আমল করে যাচ্ছেন, কেউ ধর্মের নামে রাজনীতি করছেন, কেউ আন্দোলন সংগ্রাম করছেন রাষ্ট্রে ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য, কেউ জঙ্গিবাদের দিকে পা বাড়াচ্ছেন। কিন্তু তাদেকে বুঝতে হবে তারা আজ থেকে ১৩০০ বছর আগেই সত্য প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম ছেড়ে প্রথমত রসুলের উম্মাহ থেকে বহিঃস্কৃত হয়েছেন, দ্বিতীয়ত চারশ বছর আগে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীদের কাছে সম্পূর্ণভাবে পরাজিত হয়ে আল্লাহর হুকুম অকার্যকর করে দিয়ে ব্রিটিশের হুকুম, বিধান চালু হবার পরে তওহীদ থেকেই বহির্গত হয়ে গেছেন।
.
৯. তারা নিজেরা এখন আল্লাহর রসুলের সুন্নাহ বাদ দিয়ে বিভিন্ন পীরের তরিকা গ্রহণ করেছেন, কেউ ধর্মভিত্তিক দলের অনুসারী হয়েছেন, কেউ পাশ্চাত্য ব্যবস্থার অনুসরণ করে গড়ে ওঠা রাজনৈতিক দলের কর্মী হয়েছেন। অন্যদিকে শিয়া-সুন্নি, হানাফি-হাম্বলি ইত্যাদি ফেরকা-মাজহাবে বিভক্ত হয়ে রসুলাল্লাহর ভবিষ্যদ্বাণী মোতাবেক বাহাত্তর ফেরকায় বিভক্ত হয়েছেন। তারা আদর্শচ্যুত, লক্ষ্যচ্যুত হয়েছেন। এখন ফেরকাবাজি, দলবাজি নয়। আর বিক্ষিপ্ত বিচ্ছিন্ন আয়াত তুলে এনে যার যার ইচ্ছামত প্রয়োগ করার কোনো অথরিটিই তাদের নেই। এখন একটাই কর্তব্য, তওহীদের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হওয়া। সরকার জনগণ সবাই মিলে যাবতীয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেওয়া। তাহলে তাদের দেশ বাঁচবে, সমাজ বাচেবে, ঈমান বাচবে, ধর্ম বাচবে। এটাই এই মুহূর্তে বড় এবাদত।
.
১০. এই সংকট থেকে কিভাবে নিস্তার পাওয়া সম্ভব সেই রূপরেখা তুলে ধরছে হেযবুত তওহীদ।

সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...