রিয়াদুল হাসান:
বর্তমানের শতধাবিচ্ছিন্ন জনসংখ্যা নিজেরা নিজেদের উম্মতে মোহাম্মদী বলে মনে করলেও আল্লাহর দৃষ্টিতে তারা উম্মতে মোহাম্মদী তো নয়ই এমনকি মো’মেন মুসলিমও নয়। সেটা এ জনগোষ্ঠীর দিকে একবার দৃষ্টিপাত করলেই বোঝা যায়, কারণ মো’মেন মুসলিম জাতি কোনোদিন অন্য জাতির পদানত হতে পারে না।
এর আরেকটি যুক্তি হচ্ছে প্রত্যেক জাতির নেতা সেই জাতির অন্তর্ভুক্ত। অতএব রাসুলুল্লাহ (স.) তাঁর জাতিরই অংশ। তাহলে কি বর্তমানের ঘৃণিত লাঞ্ছিত গোলাম জনগোষ্ঠীর নেতা বিশ্বনবী রসুল (স.)? অবশ্যই না, অসম্ভব। যিনি সকল নবীদের সর্দার তিনি কোনো দাসজাতির নেতা হতে পারেন না এবং বর্তমানের এ জনগোষ্ঠীও যে আল্লাহর রসুলের জাতি নয় তা তিনিই বলে গেছেন, “সে জাতি কেমন করে ধ্বংস হবে যার প্রথমে আমি, মধ্যে মাহদী আর শেষে ঈসা। কিন্তু এদের ফাঁকে (অর্থাৎ মধ্যবর্তী) যারা তারা আমার নয় আমিও তাদের নই [হাদীস- জাফর (রা:) থেকে রাযিন মেশকাত]।” অতএব মহানবীর (স.) এই কথায় (তারা আমার নয় আমিও তাদের নই) স্পষ্ট বোঝা যায় যে তিনি বর্তমান জাতির নেতা নন এবং বর্তমান জাতিও উম্মতে মোহাম্মদী নয়। হলে তার জাতির অবস্থা কখনই বর্তমানের মতো হত না।
বিশ্বনবীর ওফাতের পর তাঁর সাহাবারা সংখ্যায় কম হয়েও, সর্বদিক দিয়ে নগণ্য হয়েও সংখ্যায় ও সর্ববিষয়ে বহুগুণ শক্তিশালী শত্রæর মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছিল। কারণ তাঁরাই ছিলেন প্রকৃত উম্মতে মোহাম্মদী। তারপর যখন জাতিটি আয়তনে বিরাট হলো, সামরিক ও অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হল কিন্তু তারা হয়ে গেল ভোগ বিলাস প্রবণ, অন্তর্মুখী, ফেরকা মাজহাবে বিভক্ত। তখন তারা তাদের চেয়ে অনেক দুর্বল শত্রæদের কাছে পরাজিত হতে থাকল। এক পর্যায়ে তারা যখন ঐ ছোট জাতিগুলোর ক্রীতদাসে পরিণত হয়ে গেল তখন তারা আর আল্লাহর রাসুলের উম্মত রইলো না এবং মুসলিমও রইলো না। কেননা মোমেনদেরকে আল্লাহ পৃথিবীতে শাসনক্ষমতা ও কর্তৃত্ব দান করবেন বলে ওয়াদাবদ্ধ (সুরা নূর ৫৫)। তাঁর এ ওয়াদা তিনি খেলাফ করতে পারেন না। এ কারণেই রাসুল বলেছেন, “মধ্যবর্তীরা আমরা নয়, আমিও তাদের নই।”
কিন্তু তিনি অস্বীকার করলে কী হবে – এ জাতির মুফতি, মুফাস্সির, পীর, মাশায়েখ পশ্চিমা বস্তুবাদী আত্মাহীন সভ্যতার গোলাম হয়ে থেকেও রসুলাল্লাহকে নিজেদের নেতা বলে দাবি করে তাঁকে অসম্মান করে আসছেন। আল্লাহ তাঁর প্রিয় হাবিবের এই অপমান সহ্য করেন নি এবং প্রতিশোধ নিতেও ছাড়েন নি। এ জাতি আল্লাহ প্রদত্ত লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ভুলে গিয়ে গত পাঁচশত বছর ধরে ইহুদি-খ্রিষ্টানদের দাসে পরিণত হয়ে অসহনীয় অত্যাচার, নির্যাতন ও অসম্মান ভোগ করে আসছে। ইউরোপীয়দের সাথে সংঘটিত যুদ্ধে লক্ষ লক্ষ পুরুষ নিহত হয়, লক্ষ লক্ষ নারীর ইজ্জত নষ্ট হয়, লক্ষ লক্ষ শিশুকে ট্যাংকের তলায়, বুটের তলায় পিষে মেরে ফেলা হয়। সে লাঞ্ছনা এখন চ‚ড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। এখন সমগ্র বিশ্বে তাদেরকে টার্গেট করে হত্যা করা হচ্ছে, ছুতানাতা অজুহাত বের করে তাদের ভূখণ্ডগুলোর উপর আগ্রাসন চালিয়ে সবকিছু ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে প্রায় সাত কোটি মুসলমান উদ্বাস্তু হয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবনযাপন করছে।
আল্লাহ এগুলো সবই দেখেছেন কিন্তু তিনি আঙুল তুলেও সাহায্য করেন নি। যে জাতির নেতা আল্লাহর রাসুল এবং যে জাতি মো’মেন তাদের সাথে আল্লাহ কখনই এমন করতে পারতেন না, কারণ আল্লাহর সকল সাহায্য মো’মেনদের জন্যই যার ঘোষণা আল্লাহ স্বয়ং কোর’আনে বার বার দিয়েছেন। তাই এই জাতিকে যখন ইউরোপীয়রা করতলগত করে নিজেদের তৈরি আইন ও শাসনব্যবস্থা দ্বারা শাসন শুরু করল তখন থেকেই এ জাতি আর মুসলিম নেই। মুসলিম তো তারাই যারা তাদের জীবনব্যবস্থা হিসাবে ইসলামকে গ্রহণ করে। যারা পাশ্চাত্যের তন্ত্র-মন্ত্র মেনে নেয় তারা কী করে মুসলিম হতে পারে? অতএব এ জাতির নেতা আল্লাহর রসুল নন এবং জাতিও আর উম্মতে মোহাম্মদী নয়।