মো’মেন শব্দটি এসেছে ঈমান অর্থাৎ বিশ্বাস থেকে। পবিত্র কোর’আনে আল্লাহ মো’মেনের সংজ্ঞা দিয়েছেন এভাবে,
“তারাই মো’মেন যারা আল্লাহ ও তাঁর রসুলের উপর ঈমান আনে এবং আর কোন সন্দেহ পোষণ করে না এবং জীবন ও সম্পদ দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ করে। তারাই সত্যনিষ্ঠ। (সুরা হুজরাত ১৫)।
আল্লাহর দেয়া প্রকৃত মো’মেনের এই সংজ্ঞাটা ঠিক ভাবে বুঝতে গেলে আমাদের বুঝতে হবে “যারা আল্লাহর ওপর ঈমানে”র অর্থ শুধু আল্লাহর অস্তিত্বে ও একত্বের ওপর ঈমান নয়, তাঁর উলুহিয়াতের ওপর, সার্বভৌমত্বের ওপর (Sovereignty) ঈমান, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোন আদেশদাতা, হুকুমদাতা নেই এই বিশ্বাস করা অর্থাৎ তওহীদ।
আল্লাহর দেয়া মো’মেনের এই সংজ্ঞার দ্বিতীয় ভাগ হলো প্রাণ ও সম্পদ দিয়ে জেহাদ করা। কি জন্য জেহাদ করা? আল্লাহর তওহীদের, সার্বভৌমত্বের ওপর প্রতিষ্ঠিত দীনটি যদি মানুষের জীবনে প্রতিষ্ঠা, কার্যকর না হয় তবে ওটা অর্থহীন। কাজেই আল্লাহর তওহীদ ভিত্তিক ঐ দীনুল হক, সত্য জীবন-ব্যবস্থাটা মানব জীবনে প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা, জেহাদ। এই দু’টি একত্রে প্রকৃত মো’মেনের সংজ্ঞা। এই দু’টি যার মধ্যে আছে, আল্লাহর দেয়া সংজ্ঞা মোতাবেক সে প্রকৃত মো’মেন। এই সংজ্ঞায় আল্লাহ বলেন নি, যে সালাহ পড়বে সে মো’মেন, বা যে রোযা রাখবে সে মো’মেন, বা যে হজ্ব করবে, বা অন্য যে কোন পূণ্য, সওয়াবের কাজ করবে সে মো’মেন।
এ সংজ্ঞায় শুধু আল্লাহ ছাড়া আর সমস্ত রকম প্রভূত্ব, সার্বভৌমত্ব অস্বীকার ও আল্লাহর পথে জেহাদ। এর ঠিক বিপরীতে তিনি এ সতর্কবাণীও বলেছেন যে এ তওহীদে যে বা যারা থাকবে না, যারা তাদের ব্যক্তিগত বা সমষ্টিগত জীবনের যে কোন একটি ভাগে, অঙ্গনে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো বা নিজেদের তৈরি আইন-কানুন, রীতি-নীতি গ্রহণ বা প্রয়োগ করবে, আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে ইলাহ বা সার্বভৌম হুকুমদাতা হিসাবে মানবে তারা শেরক করবে। আর শেরক ক্ষমা না করার জন্য আল্লাহ অঙ্গীকারাবদ্ধ (কোর’আন- সুরা নেসা ৪৮)।
মহান আল্লাহ মো’মেনের যে সংজ্ঞা দিয়েছেন আজ সারা পৃথিবীতে সেই সংজ্ঞা মোতাবেক মো’মেন আছে? নেই। আর মো’মেন নয় মানেই কাফের মোশরেক।