সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ তাঁর মো’মেন বান্দাদের উদ্দেশে অনেক কথা বলেছেন ও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, পবিত্র কোর’আন থেকে তার কিছু অংশ উল্লেখ করা হলো।
- আল্লাহ মো’মেনদের ওলী (অভিভাবক)। (বাকারা- ২৫৭)
- তোমরা হীনবল এবং দুঃখিত হয়ো না, তোমরাই বিজয়ী হবে যদি তোমরা মো’মেন হও। (আল এমরান-১৩৯)
- মো’মেনদের শ্রমফল আল্লাহ নষ্ট করেন না। (আল এমরান-১৭১)
- মো’মেনদের বন্ধু শুধুমাত্র আল্লাহ, তাঁর রসুল এবং মো’মেনগণ। (মায়েদা-৫৫)
- মো’মেনদের জীবন-সম্পদ আল্লাহ জান্নাতের বিনিময়ে ক্রয় করে নিয়েছেন। (তওবা-১১১)
- আল্লাহ মো’মেনদের পার্থিব জীবনের লাঞ্ছনার শাস্তি দূর করবেন। (ইউনুস-৯৮)
- মো’মেনদেরকে উদ্ধার করা আল্লাহর দায়িত্ব। (ইউনুস-১০৩)
- আল্লাহ মো’মেনদেরকে অবশ্যই রক্ষা করবেন। (হজ্জ-৩৮)
- তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে ও আমলে সালেহ করে, আল্লাহ তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন যে, তিনি তাদেরকে পৃথিবীতে প্রতিনিধিত্ব দান করবেনই, যেমন তিনি প্রতিনিধিত্ব দান করেছিলেন তাদের পূর্ববর্তীদেরকে এবং তিনি অবশ্যই তাদের জন্য সুদৃঢ় করবেন তাদের দীনকে, যা তিনি তাদের জন্য মনোনীত করেছেন। এবং ভয়-ভীতির পরিবর্তে তাদেরকে অবশ্যই নিরাপত্তা দান করবেন। তারা আমার এবাদত করবে, আমার কোন শরীক করবে না, অতঃপর যারা অকৃতজ্ঞ হবে তারা তো সত্যত্যাগী। (নূর-৫৫)
- মো’মেনদেরকে সাহায্য করা আল্লাহর দায়িত্ব। (রূম-৪৭)
- আল্লাহ মো’মেনদের প্রতি পরম দয়ালু। (আহযাব-৪৩)
- আল্লাহ মো’মেনদের অভিভাবক। (মুহাম্মদ-১১)
- তোমরা হীনবল হয়ো না এবং সন্ধির প্রস্তাব করো না, তোমরাই প্রবল, আল্লাহ তোমাদের সঙ্গে আছেন। তিনি তোমাদের কর্মফল কখনও ক্ষুন্ন করবেন না। (মুহাম্মদ-৩৫)
- আল্লাহ মো’মেনদেরকে জান্নাতে দাখিল করবেন ও তাদের পাপ মোচন করবেন। (ফাত্হ-৫)
- মো’মেনগণ আল্লাহর উপর নির্ভর করুক। (তাগাবুন-১৩)
এবার আসুন দেখি বাস্তবচিত্র:
উপরোক্ত আয়াতগুলোতে আল্লাহ মো’মেনদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব, কর্তৃত্ব ও সাহায্যের যে প্রতিশ্রুতিগুলো দান করেছেন সেগুলো বর্তমানের মো’মেন দাবিদার জাতিগুলোর ক্ষেত্রে কতটুকু বাস্তবায়িত হচ্ছে সেটা বিবেচনা করুন। বর্তমানে সমগ্র পৃথিবীতে মো’মেন মুসলিম দাবিদার জাতিটি সকল জাতির দ্বারা পরাজিত, লাঞ্ছিত, অপমানিত। তারা নিজেরাও শিক্ষাদীক্ষা, মানবিক বৈশিষ্ট্য, ঐক্য-শৃঙ্খলা-ভ্রাতৃত্ব সর্বদিকে চরম অবনতির শিকার। সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের তাদের দেশগুলো ধ্বংস্তূপে পরিণত হচ্ছে, তারা ন্যুনতম প্রতিরোধও করতে পারছে না। তাদের কোটি কোটি মানুষ উদ্বাস্তু হচ্ছে, লক্ষ লক্ষ নারী সম্ভ্রম হারাচ্ছে। দুর্ভিক্ষে পড়ে মরছে, দেশ থেকে পালাতে গিয়ে সমুদ্রে ডুবে মরছে, বোমার আঘাতে মরছে।
এ প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক যে, তাহলে কি ঐ আয়াতগুলো সত্য নয়? নাউযুবিল্লাহ। আয়াতগুলো অবশ্যই সত্য কিন্তু এ জাতিই মো’মেন নয়। তাই আল্লাহর ঐ প্রতিশ্রুতিগুলো এ জনগোষ্ঠীর জন্য প্রযোজ্য নয়। এরা মো’মেন নয়, কারণ মো’মেন হওয়ার যে সংজ্ঞা আল্লাহ পবিত্র কোর’আনে দান করেছেন এ জাতি সেই সংজ্ঞা পূরণ করে নি। আল্লাহ বলেন; ‘তারাই মো’মেন যারা আল্লাহ ও তাঁর রসুলের প্রতি ঈমান আনে, পরে বিন্দুমাত্র সন্দেহ পোষণ করে না এবং জীবন ও সম্পদ দ্বারা আল্লাহর পথে সংগ্রাম করে, তারাই সত্যনিষ্ঠ।’ (সুরা হুজরাত: ১৫)।
উম্মতে মোহাম্মদীর পর্যায়সমূহ:
আল্লাহ তাঁর রসুলকে হেদায়াহ ও সত্যদীন দিয়ে প্রেরণ করলেন এবং অন্যান্য সকল দীনের উপর ইসলামকে বিজয়ী করার দায়িত্ব প্রদান করলেন।
সমগ্র মানব জাতির জীবনব্যবস্থাকে পাল্টে দেওয়া একজন ব্যক্তির পক্ষে সম্ভব নয়। তাই রসুলাল্লাহ একটি জাতি গঠন করলেন যা উম্মতে মোহাম্মদী নামে পরিচিত হলো।
আল্লাহর রসুল সেই জাতিটিকে অনুপম শিক্ষা দিয়ে তাদের সঙ্গে নিয়ে আরব উপদ্বীপে শান্তি ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করলেন। রসুলাল্লাহর এন্তেকালের পর বাকি পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব পড়ল তাঁর হাতে গড়া উম্মতের উপর। ৬০/৭০ বছর পর্যন্ত তারা একদেহ একপ্রাণ হয়ে লড়াই চালিয়ে গেলেন। ফলে অর্ধেক পৃথিবীতে অনাবিল শান্তি প্রতিষ্ঠা হলো। তারপর ঘটল এক দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। জাতি তার লক্ষ্য ভুলে গিয়ে সত্য প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম ত্যাগ করল এবং নেতৃস্থানীয়রা সীমাহীন ভোগ বিলাসিতায় নিমজ্জিত হলো। শান্তি প্রতিষ্ঠার জেহাদ সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনে রূপ নিল। এই সময় থেকে তারা আর উম্মতে মোহাম্মদী রইল না। জাতির মধ্যে জন্ম নিল অতি বিশ্লেষণকারী আলেম সমাজ যারা দীনের প্রতিটি বিষয় নিয়ে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে দীনকে জটিল বানিয়ে ফেলল। ফলে দীন একটি বিশেষ ধর্মব্যবসায়ী গোষ্ঠীর হাতে বন্দী হয়ে গেল।
জাতির মধ্যে প্রবেশ করল বিকৃত সুফিবাদ যা জাতির বহির্মুখী প্রেরণাকে ঘুরিয়ে অন্তর্মুখী করে দিল। ফলে তারা সমাজের সকল কিছু থেকে মুখ ফিরিয়ে খানকা, দরবারে প্রবেশ করল। জাতির মধ্য থেকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রামের চেতনাই লুপ্ত হয়ে গেল। সংগ্রাম ত্যাগের শাস্তি হিসাবে আল্লাহ মুসলিমদেরকে মার দিয়ে প্রথমে মঙ্গোল এবং পরে পাশ্চাত্যের জাতিগুলোর গোলাম বানিয়ে দিলেন। এ সময় থেকে তারা আর মুসলিমও রইল না। সেই দাসত্ব এখনও চলছে।
আল্লাহ আবার এই দীনের প্রকৃত আকিদা এ যামানার এমাম জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নীকে দান করলেন। তিনি পুনরায় হেযবুত তওহীদ গঠন করে মানবজাতিকে তওহীদের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান করলেন। আবার নতুন করে প্রকৃত উম্মতে মোহাম্মদী হওয়ার মহাসুযোগ মানবজাতি লাভ করল।
প্রচারে: হেযবুত তওহীদ, কেন্দ্রীয় কমিটি
০১৬৭০-১৭৪৬৪৩, ০১৬৭০-১৭৪৬৫১