মানুষের এমন কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা আল্লাহ অন্য কাউকে প্রদান করেন নি। ওই বৈশিষ্ট্য বা গুণগুলোর কারণে মানুষের মর্যাদা অনন্য। আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর খলিফা হিসেবে। তিনি তাঁর নিজের রূহ থেকে মানুষকে ফুঁকে দিয়েছেন। তারপর আদমকে সেজদা করার মাধ্যমে মালায়েকদের নিযুক্ত করেছেন মানুষের সেবায়, মানুষের কল্যাণে। এই যে অনন্য মর্যাদা ও ক্ষমতা আল্লাহ মানুষকে দান করলেন সেটা লাভ করার পরও মানুষ যদি কেবল পশুর মত আত্মকেন্দ্রিক, স্বার্থপর জীবনযাপন করে তাহলে তার চেয়ে নিকৃষ্ট কিছু আর হতে পারে না। আমরা যদি নিজেদেরকে আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষ হিসেবে পরিচয় দিতে চাই তাহলে আমাদেরকে ভাবতে হবে পাঁচটি বিষয়ে। নিজেকে নিয়ে, পরিবার নিয়ে, সমাজ নিয়ে, রাষ্ট্র নিয়ে ও বিশ্ব নিয়ে।
মানুষের সাথে পশুর পার্থক্য এখানেই যে, পশু কেবল নিজের জন্য বাঁচে, খাদ্য সংগ্রহ করে-বংশ বিস্তার করে তারপর মরে যায়, কিন্তু মানুষ কেবল নিজের চিন্তা করবে না। তাকে অন্য মানুষের কল্যাণ-অকল্যাণ নিয়েও ভাবতে হবে। জগতের কল্যাণে তাকে নিজের সুখ-শান্তি বিসর্জন দিয়ে হলেও সংগ্রাম করতে হবে। সমাজের কল্যাণে আত্মনিয়োগ করাই মানুষের প্রধান এবাদত। কোনো পার্থিব স্বার্থচিন্তা থেকে নয়, একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে তাকে শান্তি ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করতে হবে।
আজ মানুষ এতটাই আত্মাহীন জড়বাদী হয়ে পড়েছে যে, যে যাকে যেভাবে পারছে প্রতারিত করছে, অন্যের স্বার্থকে পদপিষ্ঠ করে নিজের স্বার্থকে চরিতার্থ করছে। ন্যূনতম মনুষ্যত্ব না থাকায় তারা নির্বিকার চিত্তে খাদ্যে বিষ মেশাচ্ছে, ওষুধে ভেজাল দিচ্ছে, ছোট ছোট শিশুর প্রতি অমানসিক নির্যাতন চালাচ্ছে, মেরে মাটির নিচে পুঁতে রাখছে, তিন বছরের শিশু ধর্ষিত হচ্ছে। চারদিকে কেবল নির্যাতিত ও নিপীড়িতের হাহাকার শোনা যায়। সামাজিক অপরাধ মহামারীর মত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে অচীরেই আমাদের সমাজ, দেশ, সভ্যতা, সংস্কৃতি সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাবে। সুতরাং এখনই আমাদেরকে ঘুরে দাঁড়াতে হবে। ন্যায় ও সত্যের ভিত্তিতে এখনই সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ন্যায়-অন্যায়ের মধ্যে সীমানাপ্রাচীর দাঁড়া করাতে হবে। মিথ্যার মূলে কুঠারাঘাত করতে হবে। তবেই মিলবে শান্তির দেখা, তবেই অর্জিত হবে ¯্রষ্টার সন্তুষ্টি, তবেই সার্থক হবে আমাদের মানবজীবন।