একে ধর্মের প্রকৃত শিক্ষা দ্বারা প্রতিস্থাপিত করতে হবে। সব ধর্মেই ধর্মব্যবসা নিষিদ্ধ। প্রকৃতপক্ষে মানুষের শান্তি চাইলে ধর্মব্যবসা বন্ধ করতে হবে। কীভাবে এটা করা সম্ভব সে উপায় আমাদের কাছে আছে।
এটা ইতিহাস যে, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকরা নিজেদের শাসনকে নিষ্কণ্টক ও দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য ভারত উপমহাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলেও একটি বিশেষ ধর্মীয় শিক্ষাব্যবস্থা চালু করেছিল যা একান্তভাবে তাদেরই স্বার্থরক্ষা করবে। এ শিক্ষাব্যবস্থার সিলেবাস ও কারিকুলাম তারাই প্রস্তুত করেছিল অর্থাৎ মুসলমানদেরকে ইসলামের কী কী বিষয় শিক্ষা দেওয়া যাবে আর কী কী দেওয়া যাবে না এটা ব্রিটিশ পণ্ডিতরাই ঠিক করেছিল। ১৭৮১ সনে কলকাতায় ওয়ারেন হেস্টিং- প্রতিষ্ঠিত আলিয়া মাদ্রাসায় পরবর্তী ১৪৬ বছরে ২৭ জন খ্রিস্টান প্রিন্সিপাল ছিলেন। এই শিক্ষা ব্যবস্থায় কর্মমুখী পদ্ধতি না থাকায় শিক্ষার্থীরা জীবিকার বিভিন্ন উপায়ে ধর্মকেই জীবিকার মাধ্যমে পরিণত করতে বাধ্য হয়। এই মানহীন শিক্ষার (Bellow Standard Education) পরিণামে দেশের বিরাট একটি জনগোষ্ঠীর মধ্যে সৃষ্টি হয় হীনম্মন্যতা, অপূর্ণাঙ্গতা। এক কথায় তাদের মধ্যে ধর্মব্যবসা ছাড়া আর কোনো যোগ্যতাই গড়ে ওঠে না, প্রকারান্তরে তারা দেশ ও জাতির বোঝায় পরিণত হয়। অধিক উপার্জনের জন্য তারা বিভিন্ন প্রকার প্রতারণারও আশ্রয় নেয় কিন্তু সবই ধর্মের নাম ভাঙ্গিয়ে। এটা হচ্ছে মাদ্রাসা শিক্ষার সামাজিক ক্ষতি। ধর্মব্যবসায়ীরা নিজেদের হীন স্বার্থে ধর্মকে ব্যবহার করে। ফলে সন্ত্রাস জঙ্গিবাদের মত সমস্যাগুলোর সৃষ্টি হয়। তাছাড়া ধর্ম ব্যবসায়ীরাই ধর্মকে রাজনীতিক স্বার্থে ব্যবহার করছে। স্বভাবতই মাদ্রাসাশিক্ষিতরা ধর্মের বিষয়ে অধিক প্রতিক্রিয়াশীল হয় এবং তাদেরকে ধর্মের দ্বারা সহজেই ভুল পথে চালিত করা সম্ভব হয়। তাই জঙ্গিবাদের প্রচার ও প্রসারে যারা জড়িত তাদের অধিকাংশই মাদ্রাসা শিক্ষিত।
মানবজাতি তার সুদীর্ঘ অতীতকালে ধর্মের দ্বারাই শাসিত হয়েছে এবং প্রতিটি ধর্মেরই একটি সোনালি ইতিহাস রয়েছে যখন ধর্মের শাসনে মানুষ অনাবিল সুখ, শান্তি, নিরাপত্তা, ন্যায়বিচার লাভ করেছে। কিন্তু পরবর্তীতে ধর্ম বিকৃত হয়ে গেলে সেই সুখ-শান্তি-ন্যায়বিচারও হারিয়ে যায় এবং ধর্মই হয়ে দাঁড়ায় অত্যাচার ও শোষণের হাতিয়ার। ফলে মানুষ ধর্মের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়ে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, ধর্মের এই বিকৃতি সাধন করেছে ধর্মেরই পুরোহিত শ্রেণি যারা ধর্মকে তাদের রুটি রুজির মাধ্যমে পরিণত করেছিল। সব ধর্মেই এদের অস্তিত্ব ছিল এবং আছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ধর্ম কোনো বিশেষ শ্রেণির এখতিয়ারভুক্ত নয়, ধর্ম সব মানুষের সম্পদ, মানুষের কল্যাণের জন্যই ধর্মের আবির্ভাব। কোনো ধর্মই ধর্মব্যবসাকে বৈধতা দেয় না বরং কঠোরভাবে নিষেধ করে। পবিত্র কোর’আনে ধর্মের পার্থিব বিনিময় গ্রহণকে আল্লাহ আগুন খাওয়ার সঙ্গে তুলনা করেছেন (সুরা বাকারা ১৭৪)। আল্লাহ ধর্মব্যবসায়ীদের অনুসরণ করতেও কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন (সুরা ইয়াসীন ২১)। ধর্মব্যবসা কীভাবে মানবসমাজকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায় তা আল্লাহ জানেন এবং এ পরিণাম থেকে মানুষকে রক্ষা করার জন্যই তিনি এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন। কিন্তু আমরা ধর্মব্যবসার সেই ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নই। এজন্য প্রচলিত মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে ধর্মব্যবসায়ী সৃষ্টি করে যাচ্ছি এবং ধর্মব্যবসার সব পথ খুলে রেখে সমাজ ও দেশকে শান্তিময় করতে চাচ্ছি। আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, ধর্মব্যবসায়ীরা তাদের মিথ্যা, উদ্দেশ্যমূলক ফতোয়া দ্বারা শুধু এদেশেই নয়, পৃথিবীর সকল দেশেই সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে ঘৃণা বিস্তার করে, দাঙ্গা সৃষ্টি করে, বিভিন্ন ব্যক্তিকে বা গোষ্ঠীকে কাফের-নাস্তিক ফতোয়া দিয়ে দেশকে নাজুক পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেয়। আজও প্রায় শতভাগ মানুষের মধ্যে ধর্মীয় অনুভূতি বিরাজ করে এবং এই অনুভূতির সুতো ধরা আছে ধর্মব্যবসায়ীদের হাতে। এটা আমাদের সবার জন্য একটি বিরাট ঝুঁকির বিষয়। আমরা মনে করি, মানুষকে ধর্মের নামে যারা ভুল বুঝিয়ে উত্তেজিত করে সহিংসতামূলক কাজে লিপ্ত করে তারা মানবতার শত্র“, ধর্মেরও শত্র“। এদের মুখোস খুলে দেওয়া আশু প্রয়োজন। সাধারণ মানুষের সামনে যদি এটা প্রমাণ করে দেওয়া যায় যে, ধর্মব্যবসা ইসলামে নিষিদ্ধ, এরা নিজেরাই জাহান্নামি অথচ মানুষকে জান্নাতের পথ দেখায়, এদের দ্বারা ’৭১ সালেও ধর্মের বিরাট অপব্যবহার সাধিত হয়েছে, এখনও হচ্ছে। এভাবে যদি গণসচেতনতা সৃষ্টি করা যায় তবে ধর্মব্যবসায়ীরা আর দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে সক্ষম হবে না। এটা করার জন্যও যথেষ্ট ধর্মীয় প্রমাণাদি আমাদের কাছে।