আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশে শুধু মুসলিমই নয় বিরাট একটা জনসংখ্যা সনাতন ধর্মের অনুসারীও রয়েছেন। কাজেই এখানে তাদের উদ্দেশ্যে সনাতন ধর্মগ্রন্থ মহাভারত থেকে ধর্মের প্রকৃত উদ্দেশ্য কী, বলিদান বা কোরবানির মাহাত্ম কী, মানুষের প্রকৃত ধর্ম কী হওয়া উচিত ইত্যাদি প্রসঙ্গে অবতার শ্রীকৃষ্ণের (অনেকেই ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেন) অমীয় বাণী থেকে কিছু কথা সহজবোধ্যভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।
কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের পরিণতি কী হবে সেটা জানতে চাইলে মহারানী দ্রৌপদীকে অবতার শ্রীকৃষ্ণ বলেন, এ যুদ্ধ তো সমাজের সুখের জন্য করতে হবে। অধর্মের নাশ করার জন্য আর ধর্মের স্থাপনা করার জন্য আমাদের এ যুদ্ধ করতেই হবে।
সংসারে যখন দুঃখ বৃদ্ধি পায়, সংসারে স্বল্প মানুষ সুখ অনুভব করে আর অধিকতর মানুষ দুঃখ অনুভব করে তখন সংসার রোগগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এরূপ সময় সেই রোগের নিরাময় করতেই হয়। নিজে নিজেকে বলিদান দিয়েও অধর্মের বিনাশ করা অনিবার্য হয়ে পড়ে। এরূপ সময় না সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ আর না প্রেম গুরুত্বপূর্ণ। না তো স্বার্থ দেখতে হয় আর না সুখের আশা করতে হয়। এইরূপই সময় এখন আপনাদের সবার সামনে। সিদ্ধান্ত আপনাদের সবার। ফলের স্বাদ বৃক্ষের প্রাপ্তি হয় না, কদাচিৎ সেইরূপে এই বলিদান থেকে আপনাদের লাভ নাও হতে পারে। নিজের হৃদয়ে উকি দাও, এতটা করুণা কি রয়েছে ওখানে, এতটাই কি ধর্ম রয়েছে আত্মায় যে, সমগ্র সমাজের জন্য নিজের বলিদান নিশ্চিত করতে পার। এই বিষয়ে আপনারা সবাই চিন্তা করুন।
দান তাকেই বলে যাতে দানী হারায় আর যাচক প্রাপ্তিলাভ করে কিন্তু বলিদান (এই অর্থে ইসলাম ধর্মে বলিদানকেই কোরবানি বলে) সেটাই হয় যা দানী দেয় আর সমগ্র জগৎ প্রাপ্ত করে।
গুরু দ্রোণকে উদ্দেশ্য করে বাসুদেব শ্রীকৃষ্ণ বলেন, গুরু সে হয় যে বিদ্যা দান করে থাকে, বিদ্যার ব্যবসা করে না। এই কারণে গুরু নিজের শিষ্যের কাছে গুরুদক্ষিণার আশা করে না। কিন্তু আপনি নিজের অমূল্য জ্ঞানের মূল্য নির্ধারণ করেছেন। নিজের জ্ঞানের পরিবর্তে নিজের শিষ্যের নিকট প্রতিশোধ চেয়ে আপনি কেবল নিজের জীবনি বিষাক্ত করেন নি, বরং নিজের শিষ্যদের জীবন বিষাক্ত করে দিয়েছেন। আর এ সমস্ত নিজের মোহ ও অহংকারের বশে করেছেন। আপনি গুরু নন দ্রোণাচার্য। যে ব্যক্তির হৃদয়ে অহংকার আর মনে মোহ তথা লালসা থেকে থাকে তার হাতে ধর্মের কার্য তো হতেই পারে না।
মহামহীম ভীস্মকে উদ্দেশ্য করে শ্রীকৃষ্ণ বলেন, অজ্ঞনতা আপনার দোষ মহামহীম। আপনি তো ধর্মের বাস্তবিক রূপ জানার সম্মুখ প্রচেষ্টাই করেন নি কখনো। করুণার ছত্রতলে যতক্ষণ সমস্ত সংসার আশ্রয় গ্রহণ না করে ততক্ষণ সমাজে ধর্ম অসম্পূর্ণ থাকে। আপনি কেবল নিজের পরিবারের কথাই ভেবেছেন। সংসারের কল্যাণের জন্য তো চিন্তাই করেন নি আপনি। এই হেতু আপনার ত্যাগ স্বার্থেরই আরেক রূপ মাত্র।