আবারও আফগানিস্তানের শাসনক্ষমতা দখল করে নিয়েছে তালেবান। আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনাবাহিনী প্রত্যাহার শুরু হতে না হতেই দেশটির শহরগুলো একটির পর একটি দখল করে নিতে থাকে তালেবান গোষ্ঠী। এর ধারাবাহিকতায় ১৫ আগস্ট ২০২১, রোববার রাজধানী কাবুল দখল করে নেয় তারা। তালেবানদের এই আফগানিস্তান পুনর্দখলের ঘটনাটি এই মুহূর্তে পৃথিবীর সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। কী হতে যাচ্ছে আগামি দিনগুলোতে- সেই প্রশ্ন ও শঙ্কা নিয়ে অপেক্ষা করছে গোটা দুনিয়ার মানুষ, বিশেষ করে আফগানিস্তানের প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর বাসিন্দারা।
তালেবানদের উত্থান কি ইসলামের উত্থান বা বিজয়কে চিহ্নিত করে? তালেবানী ধ্যান-ধারণার সমর্থকদের কাছে তো অবশ্যই। তালেবানদের এই আপাত বিজয়কে তারা অভিনন্দিত করছেন, তারা মনে করছেন ইসলামের বিশ্বজুড়ে বিজয়ের যে বার্তা রসুলাল্লাহর হাদিসগুলোতে রয়েছে ঘটনাক্রম সেই পথেই এগিয়ে যাচ্ছে। পাকিস্তানের নাগরিকদের বিরাট একটি অংশ, এমন কি সরকারপ্রধানও উদ্বেলিত। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন, “দাসত্বের শৃঙ্খল ভেঙেছে আফগানিস্তান।” আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি দেশ ছেড়ে পালানোর পরপরই তালেবানের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনের ঘোষণা দিয়েছে পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত চীন। হিন্দুস্তান টাইমস-এর ৯ জুনের খবর অনুযায়ী তালেবানদের বিভিন্ন গোষ্ঠীর সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়তে আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনায় নেমেছে নয়াদিল্লিও। ভারতের বিদেশনীতিতে নাটকীয় পরিবর্তন হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে এটা।
সুতরাং পরাশক্তিগুলোর মেরুকরণ ইতমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একে মার্কিনিদের জন্য অপমানজনক পরাজয় বলেই গণ্য করছেন। তিনি উত্তরসূরী জো বাইডেনের উদ্দেশে বলেন, “আফগানিস্তানে তিনি যা ঘটতে দিয়েছেন, তাতে অপমানবোধ থেকে তাঁর (বাইডেন) পদত্যাগ করা উচিত।”
এবার আগামীর দিনগুলোতে কী হতে যাচ্ছে- এই প্রশ্নের সম্ভাব্য উত্তরগুলো খতিয়ে দেখা যাক।
ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, “তালেবানরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা নেওয়ার পরই ঘোষণা করবে তারা পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্র। তারা আরও বলবে, আমেরিকাকে যুদ্ধে পরাজিত করে আফগানিস্তানকে স্বাধীন করেছি। এর প্রেক্ষাপটে যুবকদের ভেতর (যারা জিহাদ করতে চায়) উৎসাহ তৈরি হবে। এই ঢেউ আমাদের উপমহাদেশসহ সব দেশেই লাগবে।”
আমরা যদি বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থানের বিষয়টি পর্যালোচনা করি তাহলে দেখব যে, যখন আফগানিস্তানে রাশিয়ান হস্তক্ষেপ হলো, ঠিক সেই সময় কম্যুনিস্ট বিধর্মীদের ‘পবিত্র’ ভূমি থেকে বিতাড়িত করার জন্য ‘জিহাদের’ ডাক দেওয়া হলো। এটা ছিল মূলত আমেরিকার একটা চাল। তারা রাশিয়াকে পর্যুদস্ত করার জন্য মুসলমানদের ধর্মীয় আবেগ-অনুভূতিকে গুটি বানিয়ে খেলা শুরু করল। বিভিন্ন মুসলিমপ্রধান দেশের মতো আশির দশকে বাংলাদেশ থেকেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মুসলমান এটাকে ইমানি দায়িত্ব মনে করে আফগানিস্তানে যুদ্ধ করতে যায়। সেই যুদ্ধে আমেরিকার সাহায্যে বিজয়ী হওয়ার পর বাংলাদেশে ফিরে এসে অনেকেই প্রকাশ্যে মিছিলও করেছে যে, আমরা সবাই তালেবান-বাংলা হবে আফগান”। আফগানিস্তান ফেরত বাংলাদেশিরাই পরে হরকাতুল জিহাদ (হুজি) ও জেএমবিসহ একাধিক জঙ্গিগোষ্ঠী তৈরি করেছিল। পরে বাংলাদেশেই তারা তাদের ধারণার ‘খিলাফত’ কায়েমের জন্য আন্দোলন শুরু করে। ২০০৫ সালে দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলার ঘটনার পরে জঙ্গি সংগঠনগুলোকে মোটামুটি প্রায় নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে পুলিশ। সবাই আশ্বস্ত হলো যে বাংলা ভাইদের ফাঁসি হওয়ার মাধ্যমে জঙ্গিবাদের সংকট থেকে বাংলাদেশ বেঁচে গেল।
কিন্তু জঙ্গিবাদ হাওয়ায় মিলিয়ে যায় নি। গভীর সমুদ্রের তলদেশে ভূমিকম্প হলে যে জলোচ্ছ্বাস সৃষ্টি হয় তা নিকটবর্তী তটভূমিকে কেবল প্লাবিতই করে না, একেবারে লণ্ডভণ্ড করে দেয়। আখেরি যামানায় ইসলামের বিজয় নিয়ে কোটি কোটি মুসলমান তাদের হৃদয়ে স্বপ্ন লালন করে। যখনই কোথাও কোনো জঙ্গিগোষ্ঠীর উত্থান ঘটে, দু একটা ফ্রন্টে তারা বিজয়ী হতে থাকে তখনই জলোচ্ছ্বাসের মতোই তা কোটি কোটি সমমনা মুসলমানদের স্বপ্নকে বিপুল তরঙ্গে জাগিয়ে তোলে। এর উদাহরণ হলো, যখন আবার হঠাৎ করে ইরাকে মার্কিন হস্তক্ষেপ হলো, আন্তর্জাতিকভাবে সাহায্য-সহযোগিতার মাধ্যমে আইএসের উদ্ভব হয়। তখন আবার বাংলাদেশেও দ্বিতীয় দফা জঙ্গি সংগঠন তৈরি হয়। আইএস ভাবাদর্শের নব্য জেএমবি। বাংলাদেশে জঙ্গিদের যে উত্থান হচ্ছে তা সবসময়ই আন্তর্জাতিক কোনো ঘটনার প্রেক্ষাপটের পরে উৎসাহ পাচ্ছে। এবারও তালেবানদের উত্থান হতে না হতেই জঙ্গিবাদী মতবাদে বিশ্বাসীরা উদ্যোগী হয়ে উঠেছেন কেউ আফগানিস্তানে যেতে, কেউ দেশে থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় তালেবানী ধ্যানধারণার বিস্তার ঘটাতে। পুলিশ কমিশনারের দেওয়া তথ্যমতে বিগত ছয়মাসে আফগান যুদ্ধে অংশ নিতে বাংলাদেশের ২০ যুবক নিখোঁজ হয়েছেন। তারা নব্য জেএমবি’র সদস্য বলে নিশ্চিত করেছে তাদের পরিবার। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ঢাকা থেকে বোমার সরঞ্জাম কিনে বান্দরবানের থানচি পাহাড়ে হিজরত করে ৪ মাস প্রশিক্ষণ নিয়েছে সম্প্রতি গ্রেপ্তার হওয়া নব্য জেএমবির ৩ সদস্যসহ শতাধিক তরুণ। (আরটিভি নিউজ, ১৬ আগস্ট ২০২১)। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসিও এ সম্পর্কে সংবাদ শিরোনাম করেছে, “বাংলাদেশ থেকে কিছু লোক তালেবানের সাথে যোগ দিতে হিজরত করেছে” – বলছে পুলিশ। যারা আফগানিস্তান যাচ্ছেন তারা আবার অনেকে পায়ে হেঁটে বা বিভিন্নভাবে যাওয়ার পথে ভারতের নিরাপত্তাবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হচ্ছেন। তবে যারা যেতে পারছেন না তারা দেশে থেকে কী করতে যাচ্ছেন? এই প্রশ্নটা ভাবিয়ে তোলার মতো। কারণ অতীতে এই সংখ্যাটি যা করেছে তার আলোকে আমরা বলতে পারি-
(১) তাদের মধ্যে যারা মুফতি বা নেতৃত্বদানকারী আছেন তারা কোর’আনের বিভিন্ন জেহাদের আয়াত তুলে ধরে তাদের অনুসারীদেরকে গুপ্তহত্যায় উৎসাহিত করেন। যেমন- কোর’আনে বলা হয়েছে, হে মো’মেনগণ! তোমরা তোমাদের নিকটবর্তী কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর। এবং তারা যেন তোমাদের মধ্যে কঠোরতা দেখতে পায়। (সুরা তওবা- ১২৩)। সুতরাং যারা আফগানিস্তানে যেতে পারছেন না তারা নিজেদের আশপাশেই ‘কাফের’ খুঁজে বের করে তাদের হত্যা করুন। কোর’আনের এই আয়াতগুলো রসুলাল্লাহর জীবনের কোন পর্যায়ে নাজিল হয়েছে, সংগঠন পর্যায়ে নাকি রাষ্ট্রপর্যায়ে সেটা তারা বিবেচনায় না নিয়ে বে-সামরিক মানুষের উপর চোরাগোপ্তা সন্ত্রাসী হামলা চালানো শুরু করে। একেই তারা জেহাদ মনে করে আত্মতুষ্টি লাভ করে। এজন্য আত্মঘাতী হামলাও তারা চালিয়ে থাকে।
(২) আফগানিস্তানে যে গোঁড়াপন্থী ইসলামটিকে তালেবানরা ২০ বছর আগে প্রতিষ্ঠা করেছিল, হুবহু একই আকিদার প্রশিক্ষণ আমাদের দেশের হাজার হাজার কওমী মাদ্রাসায় প্রদান করা হচ্ছে। এর পরিণামে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, কোনো ইস্যু পেলেই মাদ্রাসার লক্ষ লক্ষ ছাত্রকে জেহাদের নামে রাস্তায় টেনে আনা হয় এবং দেশের সম্পদ ধ্বংস করা হয়। নিজের দেশের সরকারকে তারা কাফের বলে ফতোয়া দিয়ে সরকারি বাহিনীর সদস্য ও জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হয়। উন্মত্ত জনতার এই বিশৃঙ্খল দাঙ্গাকেও জেহাদ বলে চালিয়ে দেওয়া হয়। কিছুদিন আগে ব্রাহ্মণবাড়ীয়া, ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর আগমনের বিরুদ্ধে তাণ্ডব সৃষ্টি করা হয়। গ্রেফতার করা হয় এর নেতৃত্বদানকারীদেরকে যারা সকলেই বিভিন্ন ইসলামী রাজনৈতিক দল ও মাদ্রাসার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন। তালেবানদের উত্থানে তাদের লক্ষ লক্ষ অনুসারীদের বিরুদ্ধে সরকারবিরোধী পুঞ্জিভূত ক্ষোভ বিস্ফোরিত হওয়া ও পরিণামে আবারও কোনো একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়া অসম্ভব নয়।
ধর্মীয় অনুভূতির চেয়ে স্পর্শকাতর কোনো কিছু আর নেই। ধর্মীয় অনুভূতি যদি ভুল পথে প্রবাহিত হয় তাহলে আল কায়েদা, তালেবান, আইএস-এর মতো ধ্বংসাত্মক সংগঠনগুলোর যাবতীয় কাজকেও ন্যায়সঙ্গত বলে, অনুসরণীয় বলে মনে হতে পারে। এমতাবস্থায় মানুষ ইহজগতের সকল সুখ-সম্ভোগকে তুচ্ছ করে নিজেদের জীবন ও সম্পদকে কথিত জিহাদের জন্য কোরবানি করাকেই সফলতার পন্থা বলে ধরে নিতে পারে, এবং নিচ্ছে। তারা এটা বুঝতে অক্ষম যে, তারা যেটাকে ইসলাম বলে বিশ্বাস করছে এবং জোর করে যে ব্যবস্থাটাকে মানুষের উপর চাপিয়ে দেওয়ার জন্য চেষ্টা করছে সেটা আদৌ আল্লাহ ও তাঁর রসুলের আনীত ইসলাম নয়। প্রকৃত ইসলাম কখনওই ইসলামভীতি বা Islamophobia সৃষ্টি করেনি। আজ যখন তালেবানরা কাবুল দখল করে নিল, তারা যদি সত্যিকারের ইসলামের ধারক হতো তাহলে কাবুলের জনগণ তাদেরকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নিত, যেমনটা মদিনাবাসী আল্লাহর রসুলকে বরণ করে নিয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে যা ঘটল তার এর সম্পূর্ণ বিপরীত। কাবুলের জনগণের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ল, বিশেষ করে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ল নারীরা। বোরকা দাম বেড়ে গেল তিনগুণ। হাজার হাজার মানুষ কাবুল ত্যাগ করার জন্য মরিয়া হয়ে গেল, ঠিক যেভাবে বৈদেশিক আগ্রাসনের শিকার হলে মানুষ জন্মভূমির মায়া ত্যাগ করে পালিয়ে যায়। বাসে ট্রেনে ওঠার জন্য যেভাবে কুস্তি করে সেভাবে বিমানগুলোতে উঠে কাবুল ত্যাগ করার জন্য মানুষ কুস্তি করছে। সেখানে মার্কিন সেনাবাহিনীর গুলিতে পাঁচজনের প্রাণ হারানোর ঘটনাও ঘটেছে, যারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য গুলি করতে বাধ্য হয়েছিল।
না, এটা ইসলামভীতি নয়। যারা তালেবানী শাসন থেকে জীবন নিয়ে পালাতে চাচ্ছেন তারা ভালো করেই জানেন যে, তালেবানের শাসন মৃত্যুর চেয়ে ভয়াবহ। মৃত্যু সহজ, কিন্তু এই জুলুম ও বর্বরতার মাঝে বেঁচে থাকা কঠিন। আর এটা কেবল তাদের বিশ্বাস নয়, এটা তাদের অভিজ্ঞতা। নারীরাই ইসলামের নামে এই চরমপন্থার সবচেয়ে বড় লক্ষ্যে পরিণত হবে। ইতোমধ্যেই আফগান নারীরা নিকটাত্মীয় পুরুষসঙ্গী ছাড়া বের হতে পারছেন না। যে কারো বাড়িঘর তালেবানরা পছন্দ হলেই জোর করে দখল করে নিচ্ছে এবং বাসিন্দাদের বের করে দিচ্ছে। বহু হাসপাতাল তারা দখল করে নিয়েছে যেখানে জরুরি অবস্থার রোগীদেরকেও ভর্তি করতে দেওয়া হচ্ছে না। যে সব পরিবারে কুমারী মেয়ে আছে তারা ভয় পাচ্ছে যে কখন তালেবানরা এসে কুমারী মেয়েদেরকে দাবি করে। কারণ ইতোপূর্বে ঐ দেশে এমনটা হয়েছে। ইতোমধ্যেই তালেবানরা জনগণকে জানিয়ে দিয়েছে যে, এখন থেকে ১২ বছরের বেশি বয়সের কোনো মেয়ে স্কুলে যেতে পারবে না। মার্কিনীরা বিগত দুই দশকে আফগানিস্তান থেকে যা নেওয়ার ছিল নিংড়িয়ে নিয়ে গেছে। এখন ইউরোপ-আমেরিকার কোনো দেশই আফগানিস্তানের সাধারণ মানুষের পাশে নেই। [সূত্র: ৯ নারীর বর্ণনায় আফগানিস্তানের বর্তমান অবস্থা- প্রথম আলো, ১৬ আগস্ট ২০২১]
কিন্তু আল্লাহর রসুল ও তাঁর সাহাবিরা যখন কোনো একটি দেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেছেন দেখা গেছে সেই এলাকার জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাঁদেরকে সহযোগিতা করেছে। বেসামরিক ব্যক্তিকে আঘাত করা আল্লাহর হুকুম পরিপন্থী। ইসলামের অনুসারীদের ভদ্রতা, চরিত্র, নৈতিকতা বিজিত ভূখণ্ডের মানুষকে তাদের বিষয়ে নির্ভয় করেছে, আস্থাশীল করেছে। কিছুদিন যেতেই তারা ইসলামের সুমহান আদর্শকে আপন করে নিয়েছে। যুদ্ধ করে রাজনৈতিক ক্ষমতা গ্রহণ করলেও ব্যক্তিজীবনের উপর কোনো প্রকার জবরদস্তি ইসলাম আরোপ করে নি। ইসলামের সেই প্রকৃত রূপ আজ নেই। যদি ইসলামের সঠিক আদর্শ বা আকিদা মানুষের সামনে উপস্থাপন করা হয় তাহলে আসল ইসলাম আর নকল ইসলামের পার্থক্যটা মানুষ সহজেই করে নিতে পারবে। জঙ্গিবাদীদের উপর কেবল শক্তিপ্রয়োগের নীতি কখনোই ধর্মীয় অনুভূতির এই উত্তাল তরঙ্গকে দাবিয়ে রাখতে পারবে না। আফগানিস্তানে ২০ বছর লড়াই করেও জঙ্গিবাদ নির্মূল হয় নি, বরং বহুগুণ বেশি শক্তি ও সামর্থ্য অর্জন করেছে। আমাদের দেশেও সন্ত্রাসবাদীদের কেবল গ্রেফতার করে, ফাঁসি দিয়ে জঙ্গিবাদকে নির্মূল করা যাবে না। প্রয়োজন মানুষের সামনে জঙ্গিবাদী গোষ্ঠীর আকিদাগত, ধারণাগত ত্রুটিগুলো তুলে ধরা, ইসলামের জেহাদ ও কেতালের সঠিক ব্যাখ্যা তুলে ধরে মানুষের ধর্মবিশ্বাসকে সঠিক খাতে পরিচালনা করা। মানুষ যখন সত্য-মিথ্যা, ন্যায়-অন্যায়, পথ ও পথভ্রষ্টতার তফাৎ নিজেদের বুদ্ধি-বিবেচনা দিয়ে বুঝতে সক্ষম হবে, তখন তাদের ঈমানকে আর কেউ হাইজ্যাক করে জঙ্গিবাদের দিকে নিয়ে যেতে পারবে না। তারা প্রকৃত উম্মতে মোহাম্মদীর শিক্ষা ও চেতনায় দীক্ষিত হবে।