ইয়াছিন পাভেল:
সার্কাসের কত বিশাল দেহের হাতি! কত চমৎকার করে খেলা দেখায়। একটা ছোট বাচ্চাও তার উপর বসে খেলা দেখাতে পারে। কোন আপত্তি নেই, কোন বিদ্রোহ নেই। এই দৃঢ় আনুগত্যের পেছনে একটা ঘটনা আছে। ছোট্ট হস্তি শিশুকে যখন প্রথম জঙ্গল থেকে ধরে আনা হয় তখন তাকে ছয় ফুট লম্বা মোটা শেকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। হস্তি শিশু মুক্ত হওয়ার জন্য এ শেকল ধরে অনেক টানাটানি করে। শেকল ভাঙ্গার অনেক চেষ্টা করে, কিন্তু পারে না। তার কোমল পা ক্ষত-বিক্ষত হয়, রক্তাক্ত হয়, সে তীব্র ব্যথায় ককিয়ে উঠে। সে আবার টানে, আবার রক্তাক্ত হয়, তীব্র ব্যথা পায়। এভাবে বার বার রক্তাক্ত হতে হতে এক সময় সে শেকল ভাঙ্গার চেষ্টা ছেড়ে দেয়। এই ছয় ফুট শেকলের বন্দীত্বকে সে তার নিয়তি হিসেবে মেনে নেয়। তার দুনিয়া এই ছয় ফুট শেকলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। এভাবে হস্তি শিশু বড় হতে থাকে। যখনই তার পায়ে শেকলের টান লাগে সে নিজেকে বৃত্তের ভেতরে নিয়ে আসে। এক সময় দেখা যায় কুকুর বাধাঁর শেকল দিয়ে ছাগল বাধাঁর খ্্্্ুঁটির সাথে বেঁধে রাখলেও সে পালায়না। এমনও দেখা গেছে যে, সার্কাসের মঞ্চে আগুন লেগেছে, বাঘ, সিংহ, বানর সহ সকল প্রাণী পালিয়ে গেছে কিন্তু হাতি পালায় নি। যখনই তার গায়ে আগুনের তাপ লেগেছে সে উঠে দাঁড়িয়েছে চলে যেতে, কিন্তু শেকলে টান পড়ায় আবার নিজেকে গুটিঁয়ে নিয়েছে। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আগুনে পুড়ে মরেছে। এই বিশাল দেহী হাতির এই মৃত্যু একদিকে যেমন মর্মান্তিক অপর দিকে চরম লজ্জাস্করও বটে। অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে, আজ সারা পৃথিবীতে যে মুসলিম নামক জাতি আছে তাদের অবস্থাও এই সার্কাসের হাতির মতো। আজ মুসলিম জাতি শারীরিকভাবে স্বাধীন কিন্তু মানসিকভাবে ইহুদি-খ্রিস্টানদের গোলাম। পাশ্চাত্যের প্রভুরা এই মুসলিম বিশ্বকে স্বাধীনতা দিয়ে গেলেও তাদের তৈরি আইন-কানুন, দণ্ড-বিধি, অর্থনীতি, শিক্ষা-ব্যবস্থাকে এখনো এরা এদের রাষ্ট্রগুলোতে চালু রেখেছে। ফলশ্র“তিতে অশান্তির আগুনে পুড়ে ছারখার হচ্ছে। বিশালদেহী হাতি যেমন একটু সাহস করে চেষ্টা করলেই মুক্ত জীবন লাভ করতে পারত তেমনি ১৬০কোটি মানুষের এই জাতি এক সাথে হুঙ্কার দিলেই জুলুম ও অত্যাচারী এই ইহুদি-খ্রিস্টান সভ্যতার ধারক ও বাহকরা পালানোর পথ খুঁেজ পেতনা। কিন্তু হায়, এই বিশাল সংখ্যার জাতিটি আজ পৃথিবীতে সবচেয়ে নিকৃষ্টতম। মুসলিম ছাড়া আর যে কয়টি জাতি আছে তারা সকলেই পৃথিবীর সর্বত্র মুসলিমদের অপমান, অপদস্থ করছে, আক্রমণ করে হত্যা করছে, ধন-সম্পদ লুটে নিচ্ছে, ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দিচ্ছে, মা-বোনদের উপর পাশবিক অত্যাচার করছে। ঐ কাজগুলি খ্রিস্টানরা অতীতে করেছে স্পেনে। সেখান থেকে তারা সম্পূর্ণ মুসলিম জাতিটিকেই সমূলে উৎখাত করেছে। আজ সেখানে মুসলিম বলতে নেই এবং সাম্প্রতিক সময়ে বসনিয়ায়, হারযেগোভিনিয়ায়, সুদানে, ফিলিপাইনে তাই চলেছে। বসনিয়ায় কয়েক হাজার মসজিদের মধ্যে সারায়েভোর কয়েকটি মসজিদ ছাড়া আর সমস্ত মসজিদ ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে। হিন্দুরা করছে কাশ্মীরে, ভারতের প্রতিটি রাজ্যে। বৌদ্ধরা করছে মিয়ানমারে, আরাকানে, থাইল্যাণ্ডে, কামপুচিয়ায় ও চীনে। এগুলিতো বড় বড় জাতি। অতি ক্ষুদ্র ইহুদি জাতি ঐ কাজ করছে পশ্চিম এশিয়ায়, প্যালেস্টাইনে। এই বিশাল মুসলিম দাবীদার জাতি এগুলোকে নিয়তি হিসেবে মেনে নিয়েছে। তারা ঐ হাতির মত দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পুড়ছে কিন্তু শেকল ভাঙ্গার কোন চেষ্টাই করছে না।
এখন সময় এসেছে মনোজাগতিক শৃঙ্খল ভেঙ্গে বেরিয়ে আসার। আমাদের সবাইকে মিলে মিশে নিজেদের অস্তিত্বকে রক্ষা করার জন্য এই চলমান বস্তুবাদী সিস্টেম থেকে বেরিয়ে এসে স্রষ্টা আমাদের জাতীয় জীবনকে সুখময় করার জন্য যে সিস্টেম, জীবন-ব্যবস্থা, দীন দিয়েছেন তা গ্রহণ করতে হবে। সেই সিস্টেম, সেই জীবন ব্যবস্থা চালু করতে হবে, যে জীবন-ব্যবস্থা চালু হলে মানুষের জীবন ও সম্পত্তির নিরাপত্তা আসবে, অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক সকল ক্ষেত্রে সুবিচার আসবে, দেশে কোন পুলিশ বাহিনীর প্রয়োজন পড়বে না, অপরাধ প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে, একজন সুন্দরী যুবতী গায়ে মূল্যবান অলঙ্কার পরিহিত অবস্থায় একা শত শত মাইল পথ অতিক্রম করবে, কিন্তু তার মনে কোন রূপ ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা থাকবেনা। রাস্তায় মূল্যবান সম্পদ হারিয়ে গেলেও তা যথাস্থানে খুঁজে পাওয়া যাবে, সালাহ কায়েমের সময় মানুষ স্বর্ণের দোকান খোলা রেখেই মসজিদে যাবে, কেউ চুরি করবেনা। সমস্ত পৃথিবীতে পরিপূর্ণ ইনসাফ কায়েম হবে। এগুলো কোন স্বপ্ন নয়, এগুলো মুসলিম জাতির গর্বিত ইতিহাস। আল্লাহর দেয়া বিধান পৃথিবীতে আবার চালু করলে এই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি অবশ্যই সম্ভব।