আমাদের দেশের অনেক আলেম ও মুফতির দৃষ্টিতে চৈত্র সংক্রান্তি, পহেলা বৈশাখ, নবান্ন ইত্যাদি আঞ্চলিক উৎসব পালন করা প্রকৃতপক্ষে হিন্দুয়ানী সংস্কৃতির অনুসরণ। সুতরাং এগুলো শেরক। তাদের জ্ঞানের প্রতি যথাযথ সম্মান রেখেই আমরা দু’টি দিক থেকে বিষয়টি বিবেচনার চেষ্টা করছি – (ক) ইসলামের আকিদাগত দৃষ্টিকোণ থেকে, (খ) শরিয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে।
(ক) ইসলামের আকিদাগত দৃষ্টিকোণ থেকে:
আকিদাগত দৃষ্টিকোণ থেকে ইসলাম এমন একটি জীবনব্যবস্থা যা সমগ্র মানবজাতির জন্য প্রেরিত হয়েছে। তাই এতে যে বিধানগুলো স্থান পেয়েছে সেগুলো কোনোটাই কোনো নির্দিষ্ট ভৌগোলিক সীমারেখা বা আঞ্চলিকতার দ্বারা সীমাবদ্ধ নয়। এর সব বিধান সব মানুষের জন্য সমভাবে প্রযোজ্য ও গ্রহণীয়। প্রতিটি জনপদের মানুষের একটি নিজস্ব সংস্কৃতি থাকে যা তাদের ভৌগোলিক ও আর্থ-সামাজিক অবস্থার সঙ্গে সঙ্গতিশীল, যা গড়ে ওঠে হাজার হাজার বছরের সামজিক-রাজনৈতিক ক্রমবিবর্তনের মাধ্যমে। তাই ইসলামে একটি বিশেষ অঞ্চলের সংস্কৃতিকে আরেকটি অঞ্চলের মানুষের উপর চাপিয়ে দেয় নি, তেমনি কোনো এলাকার মানুষের আঞ্চলিক সংস্কৃতিকে নিষিদ্ধও করা হয় নি। ইসলাম নিষিদ্ধ করেছে কেবল অশ্লীলতা, অন্যায় ও আল্লাহর অবাধ্যতাকে। সেই নিরীখে বাংলাদেশ ও এর নিকটবর্তী অঞ্চলে আবহমান কাল থেকে চলে আসা নবান্ন উৎসব, চৈত্র সংক্রান্তি বা পহেলা বৈশাখ ইত্যাদি কোনো উৎসবই হারাম বা নিষিদ্ধ হতে পারে না। তবে এই উৎসবগুলোর নামে যদি অশ্লীলতা ও অন্যায়ের বিস্তার ঘটানো হয়, সেটা অবশ্যই নিষিদ্ধ। কেননা তার দ্বারা মানবসমাজে অশান্তি সাধিত হবে এবং যা কিছুই অশান্তির কারণ তা-ই যে কোনো মানবকল্যাণকামী জীবনব্যবস্থায় নিষিদ্ধ হওয়ার দাবি রাখে।
আল্লাহ এমন একটি জীবনবিধান দিয়েছেন যার নাম দীনুল হক অর্থাৎ সত্যভিত্তিক জীবনব্যবস্থা; দীনুল ফেতরাহ বা প্রকৃতির সঙ্গে সঙ্গতিশীল জীবনব্যবস্থা; দীনুল ওয়াসাতা অর্থাৎ ভারসাম্যপূর্ণ জীবনব্যবস্থা; দীনুল কাইয়্যেমাহ বা আবহমান ও চিরন্তন জীবনব্যবস্থা। এই দীনের মূলনীতিগুলো দীনের নামের মধ্যেই প্রকাশিত হচ্ছে অর্থাৎ এই জীবনব্যবস্থা সত্যপূর্ণ, প্রাকৃতিক ও চিরন্তন নিয়মের সঙ্গে সঙ্গতিশীল ও ভারসাম্যপূর্ণ। এই দীনের একমাত্র কাম্য হলো মানুষের সার্বিক শান্তি। তাই এর নাম আল্লাহ দিয়েছেন ইসলাম, আ¶রিক অর্থেই শান্তি। ইসলামের প্রতিটি বিধানই তাই শান্তির লক্ষ্যে প্রণীত, এর প্রতিটি বিধানই মানবপ্রকৃতি, বিশ্বপ্রকৃতির সঙ্গে এক সূত্রে গাঁথা, প্রতিটি বিধানই ভারসাম্যযুক্ত এবং চিরন্তন সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত।
আরবীয় সংস্কৃতিকে ইসলাম বলে প্রচলন করা:
আল্লাহর শেষ রসুল আরবে এসেছেন, তিনি আরবের মানুষ, তাঁর আসহাবগণও আরবের মানুষ। প্রতিটি এলাকার যেমন নিজস্ব একটি সংস্কৃতি থাকে, নিজস্ব পোষাক, ভাষা, আচার-আচরণ, রুচি-অভিরুচি থাকে তেমনি তাঁদেরও ছিল। আমাদের দেশের একজন নেতা বাংলাতে কথা বলবেন, বাংলাদেশের পোশাক পরবেন এটাই স্বাভাবিক। তেমনি রসুলাল্লাহ ও তাঁর সাহাবীরা আরবীয় পোশাক পরেছেন, আরবিতে কথা বলেছেন, আরবীয় খানা-খাদ্য খেয়েছেন। এর দ্বারা এটা প্রমাণিত হয় না, যে সারা দুনিয়ার মানুষকেই ঐভাবে আরবিতে কথা বলতে হবে, আরবীয় জোব্বা, পাগড়ি পরিধান করতে হবে, খোরমা-খেজুর খেতে হবে। তবে হ্যাঁ, কেউ যদি আরবীয় রীতি নীতি অনুসরণ করে তবে সে তা করতে পারে, কেননা যে কোনো অঞ্চলের সংস্কৃতি গ্রহণ করার স্বাধীনতা সকলের আছে।
কিন্তু আমাদের সমাজে ইসলামী সংস্কৃতি বলতে যেটা বোঝানো হয় সেটা আসলে অনেক ক্ষেত্রেই আরবীয় সংস্কৃতি। এই সংস্কৃতির বাইরে অন্য সকল অঞ্চলের শিল্প-সংস্কৃতি, পোশাক-আশাক, আচরণকে অনৈসলামিক বলে গণ্য করা হয়। যেমন ইসলামের অধিকাংশ আলেমদের সিদ্ধান্তমতে পুরুষের ছতর হলো নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত ঢাকতে হবে। এখন কেউ যদি ধুতি পরিধান করে তাহলেও কিন্তু তার ছতর আবৃত হয়। কিন্তু ধুতি পরাকে কি আলেমরা ইসলামী সংস্কৃতি বলে মেনে নেবেন? না, তারা একে হিন্দুয়ানী পোশাক বলে ঘৃণার চোখে দেখবেন। তারা চান মানুষকে তেমন জোব্বা পরাতে যেটা আরবের লোকেরা পরে থাকেন। আরবিতে কোর’আন হাদিস ছাড়া যে কোনো কিছু লেখা থাকলেও আমরা চুমু খেয়ে মাথায় করে রাখি। সুতরাং বোঝা গেল আরবীয় সংস্কৃতিকেই আমাদের সমাজে ইসলাম বলে গণ্য করা হচ্ছে।
এবার মূল প্রসঙ্গে আসি। প্রতিটি অঞ্চলের সংস্কৃতির বিনির্মাণে ধর্মের পর সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করে সে এলাকার অর্থনীতি। এ দিক থেকে বাংলার নিজস্ব সংস্কৃতি বলতে কৃষি সংস্কৃতিই বোঝায়। পলিগঠিত জমির কৃষিনির্ভর বাংলার কৃষক ধর্মে হিন্দু হোক আর মুসলিমই হোক, বৌদ্ধ হোক বা খ্রিষ্টানই হোক, তার জীবনের আনন্দ, বেদনা, উৎসব, আশা-নিরাশার সঙ্গে কৃষি ফসলের নিবিড় বন্ধন থাকবে এ কথা সাধারণ জ্ঞানেই বোঝা যায়। নতুন ধান ঘরে তোলার আনন্দ তাই এ অঞ্চলের মানুষের প্রাণের সঙ্গে যুক্ত। বাংলা ফসলি বছরের সঙ্গে এদের ভাত-কাপড়ের সম্পর্ক। তাই চৈত্রসংক্রান্তি, পহেলা বৈশাখ, নবান্ন উৎসব ইত্যাদি কৃষিনির্ভর বাঙালির জীবনমানের মানদণ্ড। এই বাস্তবতা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই।
(খ) শরিয়তের মানদণ্ডের দৃষ্টিকোণ থেকে:
এখন দেখা যাক, এই উৎসব উদ্যাপন কি ইসলামের দৃষ্টিতে বৈধ না অবৈধ? প্রথম কথা হচ্ছে- আল্লাহ দ্ব্যার্থহীনভাবে কয়েকটি জিনিসকে হারাম করেছেন, সেগুলো হারাম। কিছু খাদ্য আছে হারাম যেমন- শুকর, মদ, মৃত পশু ইত্যাদি। কিছু উপার্জন আছে হারাম যেমন- সুদ, জুয়া খেলা ইত্যাদি। কিছু কাজ আছে হারাম যেমন অশ্লীলতা, রিয়া, অপচয়, অসার কর্মকাণ্ড ইত্যাদি। কিছু কথা আছে হারাম যেমন মিথ্যাচার, গীবত ইত্যাদি। বিয়ে করার জন্য কিছু নারী আছে হারাম যেমন মা, বোন, ফুপু, খালা ইত্যাদি। এসবের বাইরে যা কিছু আছে তা বৈধ বা হালাল। কোনো বিষয় (যেমন একটি উৎসব) হালাল না হারাম তা নির্ভর করে তার উদ্দেশ্য ও ফলাফলের উপর। কোনো কাজের উদ্দেশ্য বা পরিণতি যদি মানুষের অনিষ্টের কারণ হয় তাহলে সেটা কখনোই ইসলাম সমর্থন করে না। আর যদি তার উদ্দেশ্য হয় মানুষের কল্যাণ বা ইষ্টসাধন তাহলে একে হারাম ফতোয়া দেওয়ার কোনো কারণ থাকতে পারে না।
আমরা পবিত্র কোর’আনের সুরা আন’আমের ১৪১ নম্বর আয়াতটি থেকে কৃষি-সংস্কৃতির দিবস উদ্যাপন প্রসঙ্গে আল্লাহর নীতিমালা জানতে পারি। এ আয়াতে আল্লাহ বলছেন,
তিনিই শস্য¶েত্র ও সবজি বাগান সৃষ্টি করেছেন, এবং সে সমস্ত লতা জাতীয় গাছ যা মাচার উপর তুলে দেয়া হয়, এবং যা মাচার উপর তোলা হয় না এবং খেজুর গাছ ও বিভিন্ন আকৃতি ও স্বাদের খাদ্যশস্য। এবং জলপাই জাতীয় ফল ও ডালিম সৃষ্টি করেছেন- যা একে অন্যের সাদৃশ্যশীল এবং সাদৃশ্যহীন। এগুলোর ফল খাও, যখন তা খাওয়ার উপযোগী হয় এবং ফসল তোলার দিনে এগুলোর হক আদায় করো। কিন্তু অপব্যয় করো না। নিশ্চয় তিনি অপব্যয়ীদেরকে পছন্দ করেন না।
এ আয়াতে তিনটি শব্দ ল¶ণীয়, (ক) ফসল তোলার দিন, (খ) হক আদায় করা, (গ) অপচয় না করা। কোর’আনের প্রসিদ্ধ ইংরেজি অনুবাদগুলোতে (যেমন আল্লামা ইউসুফ আলী, মারমাডিউক পিকথল) ফসল তোলার দিনের অনুবাদ করা হয়েছে Harvest day. আয়াতটিতে আমরা কয়েকটি বিষয় পাচ্ছি:
১. কৃষক যা কিছু চাষ করে তা ফল বা ফসল যাই হোক, সেটা কাটার দিন (ইয়াওমুল হাসাদ) এর হক আদায় করতে হবে। সেই হক হচ্ছে- এর এক একটি নির্দিষ্ট অংশ হিসাব করে গরিব মানুষকে বিলিয়ে দিতে হবে। ফসলের এই বাধ্যতামূলক যাকাতকে বলা হয় ওশর।
২. যেদিন নতুন ফসল কৃষকের ঘরে উঠবে সেদিন স্বভাবতই কৃষকের সীমাহীন আনন্দ হবে। এই আনন্দের ভাগিদার হবে গরিবরাও। কেননা তারা ফসলের অধিকার পেয়ে সন্তুষ্ট হবে, তাদের দারিদ্র্য ঘুঁচে যাবে। কিন্তু আল্লাহ সাবধান করে দিলেন এই আনন্দের আতিশয্যে যেন কেউ অপচয় না করে।
আমাদের দেশে ফসল কাটার দিনে আনন্দ করা হয়, বিভিন্ন ফসলের জন্য বিভিন্ন পার্বণ পালন করা হয়। এ আয়াতের প্রে¶িতে দেখা গেল এই দিবসগুলোতে উল্লিখিত কাজগুলো করা ফরদ। যারা একে অস্বীকার করবে তারা আল্লাহর বিধানকেই অস্বীকার করল। কেবল ইসলামের শেষ সংস্করণ নয়, মুসা (আ.) এর উপর যে শরিয়ত নাজেল হয়েছিল সেটিতেও ছিল উৎসব পালনের নির্দেশ। আল্লাহ বলেন,
“Celebrate the Festival of Harvest, when you bring me the first crops of your harvest.” Finally, celebrate the Festival of the Final Harvest at the end of the harvest season, when you have harvested all the crops from your fields. (Exodus 23:16)
“তুমি ফসল কাটার উৎসব অর্থাৎ ক্ষেতে যা কিছু বুনেছ তার প্রথম ফসলের উৎসব পালন করবে। বছর শেষে ক্ষেত থেকে ফসল সংগ্রহ করার সময় ফলসঞ্চয় উৎসব পালন করবে। (তওরাত: এক্সোডাস ২৩: ১৬) সুতরাং ধরে নেওয়া যায় ইসলামের পূর্বের সংস্করণগুলোতেও নবান্ন বা ফসল কাটার উৎসব পালন করার হুকুম ছিল এবং সে মোতাবেকই বিভিন্ন জনপদে এই উৎসবগুলো প্রচলিত হয়েছে।
বর্তমানে যেভাবে দিবসগুলো পালিত হচ্ছে:
পহেলা বৈশাখও ফসলি বছরের প্রথম দিন হিসাবে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। এখন কথা হচ্ছে, বর্তমানে আমাদের দেশে যেভাবে (Process) পহেলা বৈশাখ পালন করা হয় সেটা কী উদ্দেশ্যে করা হয়? তাতে কি আল্লাহর দেওয়া দরিদ্রের অধিকার ও আনন্দ উদ্যাপনের মানদণ্ড রক্ষিত হয়?
না। বর্তমানে পহেলা বৈশাখের নামে প্রকৃতপক্ষে যা করা হয় তার উদ্দেশ্য সম্পূর্ণই বাণিজ্যিক। আমরা জানি যে, ঈদ, বড়দিন, পূজা, প্রবারণা ইত্যাদি প্রকৃতপ¶ে ধর্মীয় উৎসব হলেও বাস্তবে এগুলো কিছু স্বার্থান্বেষী শ্রেণির বাণিজ্যের উৎস ছাড়া কিছুই নয়। যেমন ঈদ আসার একমাস আগে থেকেই শুরু হয় কেনাকাটা, উৎসবের নামে ধনী ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির অপচয়ের প্রদর্শনী। ধর্মব্যবসায়ী শ্রেণি সারা রমজান মাস তারাবি পড়িয়ে, মিলাদ পড়িয়ে, ফজিলত ও সদকায়ে জারিয়ার ওয়াজ করে জোব্বার পকেট ভরেন। ঈদের বকশিশ তো আছেই। টিভি চ্যানেলগুলো সাতদিনের ঈদ অনুষ্ঠান সাজায় যা দিয়ে তারা কোটি কোটি টাকা কামিয়ে নেয়। মুদি দোকান থেকে শুরু করে কোমল পানীয়, ফ্রীজ, টেলিভিশন, মোবাইল কোম্পানিগুলোর ব্যবসা ফুলে ফেঁপে ওঠে। বাজারের প্রতিটি পণ্য ও সেবার সঙ্গে যুক্ত হয় ঈদ অফার। অর্থাৎ ঈদের উদ্দেশ্য ধর্মপালন নয়, মানুষের কল্যাণসাধনও নয়, গরিবের মুখে হাসি ফোটানোও নয়, নিরেট উদ্দেশ্য বাণিজ্যিক স্বার্থ হাসিল। একইভাবে পহেলা বৈশাখের উদ্দেশ্যও বাণিজ্যিক। এক কেজি ইলিশের দাম হয়ে যায় আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা। যারা সারা বছর বার্গার খায়, তারা এই একটা দিন বাঙালি সেজে মাটির বাসনে শুকনো মরিচ দিয়ে পান্তা-ইলিশ খেয়ে সেলফি তোলে। একদিনের বাঙালিয়ানা, একদিনের মাতৃভক্তি। এটা যে বাঙালি সংস্কৃতির অসম্মান তা চিন্তা করার অবকাশও দিচ্ছে না বৈশাখ ব্যবসায়ীরা। পান্তা ও ইলিশ খাওয়াকে বাঙালি সংস্কৃতি ও ঐহিত্য বলা হচ্ছে- সেটাও কর্পোরেট প্রচারণা। পান্তা-ইলিশের চল আরম্ভ হয় ১৯৮৩ সালে রমনার বটমূলে, জনপ্রিয় হয় বিশ শতকের শেষ প্রান্তে। বাঙালি কোনোকালে পান্তা একত্রে ইলিশ খায়নি, এখন তা রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। ইলিশের সিন্ডিকেট ঠেকাতে কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, “আপনারা ইলিশ খাবেন না, ইলিশ ধরবেন না। পহেলা বৈশাখে খিচুড়ি, সবজি, শুকনো মরিচ ভাজা, ডিম ভাজা ও বেগুন ভাজা খেতে পারেন।” বলা বাহুল্য এতে কোনো লাভ হয়নি।
অনেক অশ্লীলতারও বিস্তার ঘটছে এই উৎসবকে কেন্দ্র করে। তাই বৈশাখ পালনের বিরুদ্ধে রক্ষণশীলর বিরূপ মনোভাব সৃষ্টি হওয়াটা খুবই সঙ্গত এবং স্বাভাবিক। পাশাপাশি নিজেদের আরবীয় সংস্কৃতির বাইরে কোনো কিছুকে ইসলামী সংস্কৃতি বলে মেনে নিতে না পারার সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি এই উৎসবপালনকেই হারাম ও বে’দাত বলে ফতোয়া দিতে ধর্মবেত্তাদের রসদ যুগিয়েছে। কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে বৈশাখ পালনে কোনো সমস্যা নেই, তবে অশ্লীলতা ও অপচয় যেন না হয় সেটা নিশ্চিত করা আল্লাহ হুকুম। আল্লাহ খাদ্য ও সম্পদের অপচয়কে হারাম করেছেন, কিন্তু আনন্দ করতে, সাজসজ্জা করতে বাধা দেন নি। তিনি বলেছেন, “খাও, পান কর, কিন্তু অপচয় করো না; কারণ আল্লাহ তাআলা অপচয়কারীদেরকে ভালোবাসেন না। হে রসুল! আপনি বলে দিন, কে হারাম করেছে সাজসজ্জা গ্রহণ করাকে–যা আল্লাহ তার বান্দাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন?” (সুরা আরাফ ৩১-৩২)। এই মুহূর্তে পৃথিবীতে প্রায় এক বিলিয়ন মানুষ দুর্ভিক্ষ র্পীড়িত। সেই সব ¶ুধার্ত মানুষের হক আছে এই ফল ও ফসলে। এই নবান্নে, পয়লা বৈশাখের উৎসবে, চৈত্রসংক্রান্তির পার্বনে, তাদের সেই হক আদায় করা হলেই এই উৎসব হবে পবিত্র দিন। উৎসব আর ঈদের মাঝে অর্থগত কোনো পার্থক্য নেই। আল্লাহ চান জাতিগত উৎসবে যেন কেবল ধনীরা আনন্দ না করে, যেন গরিবরাও আনন্দের ভাগ পায়। নববর্ষ উদ্যাপনের নামে আজ যে নিদারুণ অপচয় করা হচ্ছে, বাণিজ্যিক স্বার্থ হাসিল করা হচ্ছে তা না করে যদি সেই অর্থ গরিব-দুখী মানুষকে প্রদান করা হতো অর্থাৎ শষ্য, ফলমূল ইত্যাদি সকলে মিলে ভাগাভাগি করে খেত, তাহলে নবান্ন আর পহেলা বৈশাখ পালন এবাদতে পরিণত হতো।