হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

ধর্ষণ হচ্ছে ধর্মহীন বিজয়ীদের আদিম হাতিয়ার

নিজাম উদ্দিন

গত কাল নোয়াখালীতে অনুষ্ঠিত একটি কর্মী সম্মেলনে হেযবুত তওহীদ কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায় গৃহবধুকে গণধর্ষণ করার ঘটনাটি সম্পর্কে তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করেন। তিনি বলেন, “রাজনৈতিক পালাবদলে একদল পরাজিত হয়, অন্যদল বিজয়ী হয়। এই বিজয়ী শক্তি যদি ধর্মের প্রকৃত শিক্ষা দ্বারা পরিচালিত না হয় তাহলে তারা পরাজিত শক্তির উপর চরম নির্যাতন ও নিপীড়ন চালিয়ে থাকে। এটা মানবজাতির সুদূর অতীত থেকে আজ পর্যন্ত আমরা দেখতে পাই। ক্ষমতা এই পালাবদল যেভাবেই হোক- সেটা যুদ্ধের মাধ্যমে বা নির্বাচনের মাধ্যমে, পরাজিতের উপর এই নির্যাতন একটি অনিবার্য বিষয়রূপেই মানবজাতি জেনে এসেছে।”

তিনি বলেন, “নোয়াখালী আমার জেলা। বুদ্ধি হবার পর থেকে আমরা দেখে এসেছি এই জেলার মানুষ অতি রক্ষনশীল। এখানে খুব সহজেই ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করে দেওয়া যায়। একবার যদি কোনো ফতোয়াবাজ মোল্লা কাউকে কাফের বা খ্রিষ্টান বলে ফতোয়া দিতে পারে তাহলেই আর রক্ষা নেই। হাজার হাজার মুসলিস্ন ও সাধারণ মানুষ দাঙ্গাবাজ ধর্মমাতালে পরিণত হয় কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই। হেযবুত তওহীদের উপর নোয়াখালীতে মিথ্যে হুজুগ সৃষ্টি করে দিয়ে হামলা চালানোর ঘটনা ঘটেছে বারবার। হেযবুত তওহীদের উপর ২০০০ সন থেকে এ পর্যন্ত বড় ধরনের সহিংসতাির ঘটনা ঘটেছে চারবার। ২০১৬ সনের ১৪ মার্চ আমাদের দুই ভাইকে প্রকাশ্য দিবালোকে গরু জবাই করার ছুরি দিয়ে জবাই করেছে এই ধর্মব্যবসায়ী গোষ্ঠী ও তাদের ফতোয়ায় প্রভবিত দাঙ্গাবাজেরা। তাদের অভিপ্রায় ছিল হেযবুত তওহীদের ১১৪ জন সদস্য সদস্যাকেই তারা হত্যা করবে। মানবজাতি যখন নিজেকে সভ্যতার চূড়াত্ম শিখরে আরোহণ করছে বলে দাবি করছে সেই সময়ে দাঁড়িয়ে এহেন বর্বর ঘটনার সাক্ষী আমরা হচ্ছি প্রতিনিয়ত।”

যুদ্ধে পরাজিত জনগোষ্ঠীর উপর বিজয়ীদের দ্বারা সংঘটিত যৌন সহিংসতার ধারাবাহিকতা আজও বলবৎ রয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, “একাত্তর সনে পাক সেনা ও তাদের এদেশীয় দোসরেরা ধর্মের অসিলা দিয়ে এদেশের লক্ষ লক্ষ নারীকে ধর্ষণ করেছে। বিশেষ করে হিন্দু নারীদের উপর বেশি নির্যাতন চালানো হয়। আমরা সেই লাখো মা বোনের সম্ভ্রম ও শহীদের রক্তের বিনিময়ে একটি স্বাধীন দেশ পেয়েছি। কিন্তু নীতিহীন বিজয়ী শক্তির এই বর্বর ধর্ষকামিতা আজও প্রতিটি নির্বাচনের পর আমাদেরকে দেখতে হয়। কারণ হলো, আমরা যতই স্বাধীন মানচিত্র লাভ করি না কেন, আমাদের সমাজকে আমরা আল্লাহর হুকুমের পক্ষে অন্যায়ের বিপক্ষে ঐক্যবদ্ধ করতে ব্যর্থ হয়েছি। বাস্তবতা হলো, সে চেষ্টাই আমরা করি নি। ফলে আমাদের দেশের অবকাঠামোগত, বস্তুগত উন্নয়ন বহু হচ্ছে কিন্তু ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে আমাদের মানবিক মূল্যবোধ। মানুষ কতটুকু চরিত্রবান তা বোঝা যায় যখন তার হাতে ক্ষমতা আসে। আমাদের দেশে অতীতেও নির্বাচনগুলোর পর সংখ্যাগুরু সংখ্যালঘুদের নারীদের উপর ব্যাপক যৌন সহিংসতা চালানো হয়েছে। একাদশতম সংসদ নির্বাচনের পরেও এমন একটি ঘটনা সুবর্ণচরে ঘটল এটা খুবই দুঃখজনক।”
তিনি বলেন, “যুদ্ধ বা সশস্ত্র সংঘাতের সময় প্রায়ই মনত্মত্ত্বিক যুদ্ধের অংশ হিসেবে শত্রুদের অপমানিত করার উদ্দেশ্যে ধর্ষণকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়। মধ্যযুগে মুসলিম ভূখ-গুলোতে চেঙ্গিস খান, হালাকু খানের আগ্রাসনের সেই বর্বর অধ্যায়ের কথা বাদ দিলাম, আজকে যাদেরকে আমরা সভ্যজাতি বলে থাকি সেই যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ফ্রান্স ইত্যাদি দেশের সেনারা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পরাজিত জার্মানদের উপর কী যৌন সহিংসতা চালিয়েছে সেটা চিন্তা করলেও গা শিউরে ওঠে। আমি উদাহরণ হিসাবে কেবল সোভিয়েত বাহিনীর দ্বারা সংঘটিত ধর্ষণের পরিসংখ্যানটাই বলি। যুদ্ধের পর প্রায় ২০ লক্ষাধিক জার্মান নারী সোভিয়েত সৈন্যদের দ্বারা ধর্ষিত হন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এক একজন জার্মান নারী ৬০ থেকে ৭০ বার পর্যন্ত ধর্ষণের শিকার হন। প্রায় ২,৪০,০০০ জার্মান নারী সোভিয়েত সৈন্যদের হাতে ধর্ষণের ফলে প্রাণ হারান। সোভিয়েত সৈন্যরা ৮ বছর থেকে ৮০ বছর বয়সী প্রতিটি জার্মান নারীকে ধর্ষণ করেছিল। উল্লেখ্য, প্রাক্তন জার্মান চ্যান্সেলর হেলমুট কোলের স্ত্রী হান্নেলোর কোল ১৯৪৫ সালের মে মাসে ১২ বছর বয়সে সোভিয়েত সৈন্যদের দ্বারা গণধর্ষণের শিকার হন এবং ধর্ষণের পর তাঁকে ঘরের জানালা দিয়ে ছুঁড়ে ফেলা হয়। এই ঘটনার ফলে তিনি আজীবন রোগগ্রস্ত থাকেন এবং অবশেষে ২০০১ সালে আতহত্যা করেন। এমন দানবীয় বর্বরতার করম্নণ কাহিনী রাজনৈতিক ক্ষমতা পালাবদলেরত্মরে রক্তের অক্ষ লেখা আছে।”

তিনি এ অবস্থা থেকে মুক্তির পথও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “এহেন কলঙ্ক থেকে মানবজাতিকে মুক্তি দিতে পারে প্রকৃত ইসলামের আদর্শের বাস্তবায়ন। আমরা যদি ইসলামের ইতিহাসের দিকে তাকাই দেখব আল্লাহর রসুলের হাতে গড়া সেই উম্মতে মোহাম্মদী বিজিত জাতির উপর কী আচরণ করেছিলেন। সেই সভ্যতার প্রতিষ্ঠাতা স্বয়ং রসুল তাঁর মাদানি জীবনের দশ বছরে প্রায় ১০৭টি যুদ্ধাভিযান পরিচালনা করেন। এর মধ্যে এমন একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনাও নেই যে মুসলিম বাহিনীর হাতে শত্রুপক্ষে একজন নারী ধর্ষিত হয়েছে। এরপরে আরো সাতশত বছর ইসলামের সোনালি যুগ ছিল যখন ইসলামের মূল আকিদা হারিয়ে গেলেও এই নৈতিক মূল্যবোধ জাতির মধ্যে অবশিষ্ট ছিল। জাতির কোনো সৈনিক বিজয়ী হয়ে পরাজিত জাতির নারীদেরকে ধর্ষণ ও হত্যা করার মতো নিচুতে নামতে পারে নি, গণধর্ষণ তো প্রশ্নই আসে না। মুসলিম জাতির এই যে অধঃপতন, এটা ব্রিটিশ শাসনের কুফল। তারা দুশো বছরে এ জাতির নৈতিকতার গোড়া কেটে দিয়েছে। ধর্মের শিক্ষা থেকে সরিয়ে দিয়ে জড়বাদী ভোগবাদী শিড়্গায় শিড়্গতি করার ফলেই একাত্তর সালে ‘অধিকতর মুসলমান’ হওয়ার দাবিদার পাঞ্জাবিরা বাঙালি মুসলমান নারীদেরকে এভাবে গণধর্ষণ করতে পেরেছিল।”

 

সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...