-অশান্তি দূর হয়ে শান্তি আসবেই:
-রুফায়দাহ পন্নী, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, দেশেরপত্র
দৈনিক দেশেরপত্রের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক রুফায়দাহ পন্নী বলেছেন ‘ধর্মব্যবসায়ীদের সৃষ্ট এই অন্যায়-অশান্তি দূর হয়ে শান্তি আসবেই’। গতকাল সোমবার কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার উত্তর সবুজপাড়া এলাকায় দেশেরপত্রের জেলা কার্যালয় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। রুফায়দাহ পন্নী বলেন, ‘বাঙালি জাতির শত শত বছরের গৌরবময় ইতিহাস রয়েছে। সেই ইতিহাসের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ সোপানে বিশেষ স্থান দখল করে আছে বাঙালি নারীদের ভূমিকা। বিশেষ করে একাত্তরে নারীদের অবদান আজও আমাদেরকে দেশের জন্য, মানুষের জন্য কাজ করার শক্তি ও সাহস যোগায়। একাত্তরে আমাদের নারীরা পাক বাহিনী ও রাজাকারদের দ্বারা কেবল যে লাঞ্ছিতই হয়েছেন তা নয়, তারা অস্ত্র হাতে পুরুষদের পাশাপাশি যুদ্ধে বিরাট অবদান রেখেছেন।’ তিনি আরো বলেন, সাড়ে সাত কোটি মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে সেদিন প্রমাণ করেছিল যে একটি জাতি যতোই দরিদ্র হোক, অবহেলিত হোক, তারা যদি ঐক্যবদ্ধ হয় তারা অবশ্যই বিজয়ী হবে। কিন্তু সেই ঐক্য আমরা ধরে রাখতে পারি নি। একাত্তরে যেমন এক শ্রেণির মানুষ ধর্মের নাম ও লেবাস ব্যবহার করে দেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে কাজ করেছিল, দেশের মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল, ঠিক তেমনিভাবে গত ৪২ বছরে ধর্মকে ব্যবহার করে জাতির ঐক্যকে ধ্বংস করে জাতিকে বহুভাগে বিভক্ত করে দেওয়া হয়েছে। আজ এক শ্রেণির ধর্মব্যবসায়ী ধর্মকে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করছে। তারা ওয়াজ মাহফিল করে, বিভিন্নরকম ফতোয়া দিয়ে জাতির অর্ধেক জনসংখ্যা নারীকে জাতীয় অঙ্গন থেকে বহিষ্কার করতে চেষ্টা করেছে। কেউ তাদের স্বার্থবিরোধী কাজ করলেই এই ধর্মজীবীরা তার বিরুদ্ধে সিন্ডিকেট গড়ে তাকে নাস্তিক, কাফের বলে ফতোয়া প্রদান করে। এই ধর্মব্যবসায়ীরা নিজেদের মহিলাদেরকেও অপপ্রচারের কাজে লাগায় যারা সহজ-সরল মেয়েদেরকে ধর্মের দোহাই দিয়ে, জান্নাতের লোভ দেখিয়ে নির্দিষ্ট মার্কায় ভোট দিতে বলে। জান্নাত, আখেরাত ইত্যাদি ধর্মীয় কথায় বিভ্রান্ত হয়ে ধর্মব্যবসায়ীদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে সাহায্য করে। ধর্মের কথা বলে অধর্ম করার সুযোগ পেয়ে যায় ধর্মব্যবসায়ীরা।
তিনি ধর্মব্যবসায়ীদের প্রতিরোধে তাঁর বাবা এমামুযযামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নীর অবদানের কথা উল্লেখ করে বলেন, এমামুযযামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নীকে আল্লাহ সত্যদীনের জ্ঞান দান করেছেন। তিনি ধর্মব্যবসায়ীদের স্বরূপ প্রকাশ করে দিয়েছেন। তিনি প্রমাণ করেছেন যে, ধর্মব্যবসায়ীরা যে ইসলাম নিয়ে ব্যবসা করে খাচ্ছে তা আল্লাহর-রসুলের ইসলাম নয়। পাশাপাশি প্রকৃত ইসলামকে তিনি মানবজাতির সামনে পেশ করেছেন। যে ইসলাম চরম দরিদ্র, ঐক্যহীন, দাঙ্গা-হাঙ্গামায় লিপ্ত আরব জাতিকে ঐক্যবদ্ধ, সুশৃঙ্খল, জ্ঞান-বিজ্ঞানে, সামরিক শক্তিতে বিশ্বের শ্রেষ্ঠত্বের আসন লাভ করিয়েছিল। তিনি প্রমাণ করে দিয়েছেন যে, ধর্মের নামে যারা ব্যবসা করে, রাজনীতি করে ও জঙ্গিবাদ করে তারা আল্লাহর-রসুলের প্রকৃত ইসলামে নেই। এটা ইসলাম তো না-ই, উপরন্তু, এটাকে আল্লাহ আগুন খাবার সমতুল্য বলে ঘোষণা করেছেন। এদেরকে আল্লাহর রসুল আখেরি যুগের আসমানের নিচে সর্বনিকৃষ্ট জীব হিসেবে অবিহিত করেছেন। বর্তমান সময় জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে দেশেরপত্রের কার্যক্রম বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, আমরা দুইটি ডকুমেন্টরি ফিল্ম নির্মাণ করে পুরো জাতির সামনে এই মহাসত্যকে তুলে ধরার চেষ্টা করছি। ইতোমধ্যেই আমরা প্রায় ২০ হাজার প্রদর্শনী অনুষ্ঠান করেছি যেখানে লক্ষ লক্ষ লোক আমাদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন।
পরিশেষে তিনি বাংলাদেশের সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘১৬ কোটি মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করার মত এতবড় কাজ আমরা আমাদের সাধ্যমত করে যাচ্ছি। কিন্তু এতবড় কাজ আমাদের একার প্রচেষ্টায় সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন রাষ্ট্রশক্তি। রাষ্ট্রশক্তিকে এই কথা বুঝতে হবে যে, এই সমস্যা জাতীয় সমস্যা। ধর্মব্যবসায়ীদের ক্রমাগত অপপ্রচারের কারণে সরকারও আজ বিব্রত। সাধারণ মানুষ, যাদেরকে ভুল বোঝানো হয়েছে তাদেরকে সেই ভুল ভাঙানোর জন্য আমাদের উত্থাপিত প্রমাণই যথেষ্ট হবে। কিন্তু সম্পূর্ণ রাষ্ট্রশক্তি যদি আমাদের পক্ষে না থাকে তাহলে এতবড় কাজ করা আমাদের জন্য কঠিন হবে। অসম্ভব বোলব না, তবে কঠিন হবে এবং প্রচুর সময় লাগবে। এনশা’আল্লাহ আল্লাহর সিদ্ধান্ত হয়েছে এই অন্যায় ও অশান্তি দূর হয়ে শান্তি আসবে।’