হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

জনতার প্রশ্ন- আমাদের উত্তর

প্রশ্ন: বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে আমাদের দেশে যে অরাজনৈতিক বা রাজনৈতিক আন্দোলনগুলো এ যাবৎ হয়েছে সেসব আন্দোলনে আপনাদের ব্যানারে সরব অংশগ্রহণ আমরা দেখি না কেন? ইস্যুভিত্তিক এসব আন্দোলনগুলোর বিষয়ে আপনাদের অবস্থান পরিষ্কার করলে ভালো হয়।

উত্তর:

আমরা জানি যে আন্দোলনগুলো আমাদের দেশে করা হয়েছে সেগুলোর অধিকাংশই সংশ্লিষ্ট ভুক্তভোগীদের দ্বারা সৃষ্টি হয়, তাদের কিছু দাবি দাওয়া থাকে। সেগুলোর কোনো কোনোটা গোটা জাতির মধ্যে উদ্দীপনা ও মনোযোগ সৃষ্টি করে, কোনো কোনোটা একটি গণ্ডির মধ্যে সীমিত থাকে। সম্প্রতি নিরাপদ সড়কের জন্য আন্দোলন করা হলো। আমরাও নিরাপদ সড়ক চাই কোনো সন্দেহ নেই। এর আগে কোটা সংস্কার, গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন, আদালত প্রাঙ্গণ থেকে ভাস্কর্য অপসারণের আন্দোলন, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে আন্দোলন, শিক্ষক আন্দোলন, গার্মেন্টস কর্মীদের বেতন ও নিরাপত্তা নিয়ে আন্দোলন, তনু হত্যা ইত্যাদি আরো কত কত বিষয় নিয়ে আন্দোলন হলো। আমরা চাই এসব বিষয়ে ন্যায়সঙ্গত সমাধান হোক, মানুষ তাদের অধিকার ফিরে পাক। কিন্তু প্রতিবাদ বিক্ষোভ চলাকালে সেগুলোতে আমরা আমাদের ব্যানার নিয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে মাঠে নামি না তার কারণ অতি সরল। সেটা হলো- দাবি আদায়ের যে পদ্ধতি তারা নিয়েছেন এই পদ্ধতিকে আমরা সংকট সমাধানের প্রকৃত পদ্ধতি মনে করি না। আমরা আমাদের অভিজ্ঞতায় দেখেছি, এ পর্যন্ত এসব আন্দোলন করে বিশেষ কোনো ফায়দা হয়েছে। হ্যাঁ, মিডিয়ায় তোলপাড় হয়, ফেসবুকে খুব আহাজারি হয়, সরকারি দল-বিরোধী দলের মধ্যে গরম বাগবিতণ্ডা হয়, শ্লোগান ওঠে, সুযোগসন্ধানীরা ঢুকে পড়ে, পুলিশের সঙ্গে সংঘাত হয়, মারধোর হয়, রক্তপাত ও গ্রেফতার হয়, ভাঙচুর-জ্বালাও পোড়াও হয়। এক সময় সরকার চাপে পড়ে কিছু দাবি মেনে নেয়, কিছু দাবি ঝুলে থাকে। তারপর সময় গড়িয়ে যায়। মানুষ সব ভুলে যায়। সিস্টেমটা এমনভাবে দাঁড়িয়ে গেছে যে হুট করে একটা সমস্যার সমাধান করা যায় না, কারণ সমস্যাগুলো জালের মতো। একটার সাথে আরেকটা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। দীর্ঘদিন থেকে এই জটলার সৃষ্টি হয়েছে। অর্থাৎ সিস্টেমের চাকা যেভাবে চলছিল সেভাবেই চলতে থাকে, সামান্য পরিবর্তনও হয় না, কিছুদিন বাদে নতুন করে আরেকটি জটের সৃষ্টি হয়। তাই আমাদেরকে এখন নতুনভাবে ভাবতে হবে, আমূল পরিবর্তনের চিন্তা করতে হবে।

আমরা যেটা বলতে চাই, যে সিস্টেমের ফলে এই রকম হাজারো সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে সেই সিস্টেমের গোড়ায় যেতে হবে। কয়টা ইস্যু নিয়ে আন্দোলন করবেন। সারাদেশ দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে, কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে দিচ্ছে, ইয়াবার দংশনে পুরো তরুণ সমাজ আক্রান্ত, অপসংস্কৃতির আগ্রাসনে পরিবারব্যবস্থা ধ্বসে পড়েছে, সামাজিক অবক্ষয় চূড়ান্ত রূপ নিয়েছে। এগুলো সবই বড় বড় সমস্যা। এই তালিকা দিনকেদিন বাড়তেই থাকবে। কারণ সমস্যাগুলো হলো একই বিষবৃক্ষের বিভিন্ন শাখাপ্রশাখা, ডালপালা ও ফলমাত্র। এই বিষবৃক্ষটি বহু আগেই সাম্রাজ্যবাদী দাজ্জালীয় ‘সভ্যতা’ বিশ্বের বুকে রোপণ করেছে। আমরাও দুই শতাধিক বছর তাদের প্রত্যক্ষ দাসত্ব করেছি, আর এখনও তাদের প্রবর্তিত সেই জীবনব্যবস্থাই মেনে চলছি। বিষ খাওয়ার পর শরীরে তার প্রতিক্রিয়া দেখা দেবেই। সেই প্রতিক্রিয়ার বিরুদ্ধে আন্দোলন বিক্ষোভ করে কী ফল? ঐ বিষপান বন্ধ করার জন্যই আমাদের প্রচেষ্টা।

আমাদের সোজা কথা হচ্ছে, এমন একটি জীবনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা এখন জরুরি যেটা একাধারে আমাদেরকে আত্মিকভাবে পরিশুদ্ধ করবে, পরিতৃপ্ত করবে, আমাদের পরিবারকে শান্তিপূর্ণ রাখবে, সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করবে, অর্থনৈতিক ভারসাম্য আসবে, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আসবে এক কথায় সর্ব অঙ্গনে সাম্য সুবিচার প্রতিষ্ঠা হবে। প্রশ্ন হতে পারে, তেমন জীবনব্যবস্থা কি পৃথিবীতে আছে?

আমরা বলব, হ্যাঁ, অবশ্যই আছে। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে সেই ব্যবস্থা আমরা হারিয়ে ফেলেছি। সেই জীবনব্যবস্থা দিয়ে রসুলাল্লাহ আইয়্যামে জাহেলিয়াতের ঘোর অন্ধকার দূর করে দিলেন সেই জীবনব্যবস্থা আমাদের হাতে থাকা সত্ত্বেও সেটা আমরা প্রয়োগ করছি না। এখন আমরা হেযবুত তওহীদ আমাদের সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করে যাচ্ছি মানুষের সামনে সেই সঠিক জীবনব্যবস্থার রূপরেখা তুলে ধরে ন্যায়ভিত্তিক শান্তিময় সমাজ গড়ে তোলার জন্য।

আমরা যদি ঐসব ইস্যুভিত্তিক আন্দোলন কর্মসূচিতে যোগ দিতাম তাহলে হয়তো কিছু লোকসংখ্যা বাড়তো কিন্তু মূল সমস্যার সমাধান হতো না। আমরা সমস্যগুলোর গোড়া থেকে পরিবর্তন চাই। আমরা সারাবছর মাঠেই আছি। আজকে ঈদের দিন। আন্দোলনকারীরা দুই দিন আন্দোলন করে আজ ঠিকই ঈদ পালন করছেন, কিন্তু আমরা আজও পুরো হেযবুত তওহীদ অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাঠে আছি। এভাবে সারাবছর আমরা অবিরাম সংগ্রাম করে যাচ্ছি।

লেখাটি শেয়ার করুন আপনার প্রিয়জনের সাথে

Email
Facebook
Twitter
Skype
WhatsApp
সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...