বহু সমস্যায় আক্রান্ত বিশ্বে সবচেয়ে মারাত্মক ও প্রাণঘাতী সংকট হচ্ছে ধর্মের নামে সন্ত্রাসবাদ যা জঙ্গিবাদ নামে পরিচিত। কারণ জঙ্গিবাদ দমনের অজুহাতে এই শতাব্দীর শুরুতেই প্রায় ২৫ লক্ষ মানুষ নিহত হয়েছে পশ্চিমা পরাশক্তির হাতে। ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে একটার পর একটা দেশ।
আমাদের বাংলাদেশেও জঙ্গিবাদের ছোবলে আক্রান্ত। বড় বড় অনেকগুলো জঙ্গি হামলায় বা জঙ্গিবিরোধী অভিযানে এদেশেও শতাধিক মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে। পশ্চিমা পরাশক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর অর্থনীতির চালিকাশক্তি হচ্ছে অস্ত্রব্যবসা। তারা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতে জঙ্গিবাদের অজুহাতে যুদ্ধ সৃষ্টি করে সেখানে তাদের অস্ত্রের বাজার বসাচ্ছে। মরছেও মুসলমান, মারছেও মুসলমান।
জঙ্গিবাদীরা ইসলাম প্রতিষ্ঠার নাম করে, কোর’আন হাদিস ও রসুলাল্লাহর জীবন থেকে নিজেদের মতবাদের পক্ষে ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়ে মানুষকে তাদের আদর্শের দিকে ডাকছে। বহু তরুণ জঙ্গিবাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে মানুষ খুন করছে, এমনকি নিজেরাও আত্মঘাতী হচ্ছে।
পশ্চিমা পরাশক্তিসহ সকল দেশের সরকারই এই জঙ্গিবাদকে দমন করতে গিয়ে শক্তিপ্রয়োগের পথ বেছে নিয়েছে। কিন্তু দেখা গেছে যত বেশি শক্তি প্রয়োগ করা হয়েছে তত বেশি জঙ্গিবাদের প্রসার ঘটেছে। ফলে আমেরিকাকে পর্যন্ত আফগানিস্তানে যুদ্ধ সমাপ্ত না করেই ফিরে যেতে হয়েছে, ইরাকে যুদ্ধের আগুন দেড়যুগেও নিভে নাই।
গত দুই দশকের জঙ্গি হামলা ও তার ধরন নিয়ে গবেষকরা বিশ্লেষণ করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে জঙ্গিবাদ শক্তি, বুলেট, বোমা দিয়ে মোকাবেলা করা যাবে না। বরং তৎকালীন জাতিসংঘের মহাপরিচালক বান কি মুন বলেছিলেন, জঙ্গিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থায় জঙ্গিবাদ আরো বেড়েছে। তাহলে উপায় কী?
বিশেষজ্ঞরা অনেকেই বলছেন, জঙ্গিবাদ একটি আদর্শ তাই একে মোকাবেলা করতে পাল্টা আদর্শ (Counter narrative) লাগবে এবং সেটা সেক্যুলার আদর্শ দিয়ে হবে না, ধর্মীয় আদর্শ হতে হবে। কারণ জঙ্গিবাদ ধর্মীয় আদর্শিক বিষয়। যারা জঙ্গি হচ্ছে তারা একটি ভ্রান্ত আদর্শকে সঠিক মনে করে সেটা প্রতিষ্ঠার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছে। এর সঙ্গে তাদের ধর্মীয় আবেগ ও ঈমান জড়িত। তারা যা করছে পার্থিব লাভের আশায় করছে না, পরকালীন প্রতিদানের আশায় করছে। এজন্য শক্তি প্রয়োগ করলে তাদের ঈমান আরো বলিষ্ঠ হচ্ছে, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে সেই চেতনা প্রবাহিত হচ্ছে।
এ বিষয়টি উপলব্ধি করে হেযবুত তওহীদ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা মাননীয় এমামুয্যামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী ২০১০ সনে জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় সরকারকে কোর’আন হাদিসভিত্তিক আদর্শিক উপাদান সরবরাহ করে সহযোগিতা করার জন্য সরকারের প্রতি একটি লিখিত প্রস্তাবনা পেশ করেছিলেন।
যখন বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের প্রকোপ ভয়াবহ আকার ধারণ করল তখন হেযবুত তওহীদ জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ডকুমেন্টারি তৈরি করে, বই লিখে, হ্যান্ডবিল বিতরণ করে, পোস্টারিং করে জঙ্গিবাদ ও জিহাদের পার্থক্যগুলো তুলে ধরে ব্যাপকভাবে প্রচার চালিয়েছে। হেযবুত তওহীদের বক্তব্য শুনে লক্ষ লক্ষ মানুষ জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে।
কোর’আন হাদিসের অপব্যাখ্যার মাধ্যমে জঙ্গিবাদ নামক যে ভুল মতবাদের সৃষ্টি হয়েছে সেই আদর্শিক যুদ্ধে জয়ী হতে হলে কোর’আন হাদিসের উক্ত বিষয়গুলির সঠিক ব্যাখ্যা মানুষকে জানাতে হবে। শক্তি প্রয়োগের পাশাপাশি সঠিক আদর্শটি মানুষের সামনে উপস্থাপন করতে হবে। সেই সঠিক ব্যাখ্যাটি আছে হেযবুত তওহীদের কাছে, আর আমরা সেটা তুলে ধরছি।