হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

চরিত্রহীন নেতৃত্ব: অশান্তি সৃষ্টির কারণ

এম আর হাসান

চরিত্রহীন নেতৃত্ব: অশান্তি সৃষ্টির কারণ
চরিত্রহীন নেতৃত্ব: অশান্তি সৃষ্টির কারণ

মহানবী (সা.) অক্লান্ত পরিশ্রম আর কঠোর অধ্যবসায় করে উম্মতে মোহাম্মদী নামক একটি জাতি গঠন করলেন, যে জাতি এমন ঐক্যবদ্ধ ছিল যেন সীসা গলানো প্রাচীর। তাদের শৃঙ্খলা, আনুগত্য এবং নেতৃত্বের প্রতি এত অগাধ ভালোবাসা ও বিশ্বাস ছিল যে, সমগ্র জাতি ঐক্যবদ্ধভাবে তাদের নেতার হুকুম তামিল করত। তা করতে গিয়ে যদি প্রত্যেকটা লোকের জান এবং সমুদয় সম্পদ বিসর্জন দিতে হতো- তারা তাও দিত। সমগ্র জাতি ছিল এক জাতি। জাতির জীবনব্যবস্থা (ঝুংঃবস ড়ভ ষরভব) ছিল আল্লাহর নাযেল করা, যেটা শেষ নবীর উপর অবতীর্ণ হয়েছিল। জাতির মধ্যে মাসলা মাসায়েল নিয়ে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম কোন ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ ছিল না। ধর্মকে ব্যবসায়ীক পণ্য করে জীবিকা নির্বাহকারী আলাদা একটি আলেম মোল্লা শ্রেণি ছিল না, আধ্যাত্মিক সাধনাকারী বিকৃত তাসাউফপন্থী অন্তর্মুখী খানকাবাসী পীর মুরিদ ছিল না। সমস্ত উম্মাহর জীবনের ল¶্য ছিল এক এবং অভিন্ন, আর তা হলো – মানবজীবন থেকে অন্যায় অবিচার দূর করে ন্যায় সুবিচার শান্তি প্রতিষ্ঠা করা।
উম্মতে মোহাম্মদীর পঁচন ও পতন
মহানবীর এন্তেকালের পর ৬০/৭০ বছর পর্যন্ত তারা জীবন উৎসর্গকারী একটি মহাজাতি ছিল যার নাম উম্মতে মোহাম্মদী। পরবর্তীদের মধ্যে দেখা দিলো দুর্ভাগ্যজনক উদ্দেশ্যচ্যুতি । তারা ভুলে গেলো কেন তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছিল। তারা অন্যান্য রাজা বাদশাহদের মতো ভোগ বিলাস ও আরাম আয়েশে মত্ত হয়ে পড়লো। এই সময়ে জাতির মধ্যে গজিয়ে উঠলো দীনের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ব্যাখ্যা বিশ্লেষণকারী ফকীহ, আলেম ও এমামগণ। তারা অখণ্ড জাতিটিকে ভেঙ্গে বহু মাজহাব, ফেরকা, দল উপদলে খণ্ড বিখণ্ড করে ফেললো। অপরদিকে ভারসাম্যহীন বিকৃত সুফি মতবাদের প্রভাবে জাতির মধ্যে বিকৃত সুফি, দরবেশ, পীর ও মুরিদের প্রকোপ শুরু হলো। তারা জাতির বহিঃর্মুখী সংগ্রামী প্রেরণাকে উল্টিয়ে অন্তর্মুখী করে দিলো। জাতি অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপসহীন চরিত্র দিন দিন অদৃশ্য হয়ে যেতে লাগলো। এখান থেকেই শুরু হলো জাতির পঁচন ক্রিয়া আর পতনের পর্ব। একদিকে জাতি পার্থিব সর্ববিষয়ে সমৃদ্ধ হয়ে উঠতে লাগলো, আর অপর দিকে শাসকগণ ভোগবিলাসিতায় ডুবে যেতে লাগল, উম্মাহর সাধারণ সদস্যগুলো অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা ভুলে যেতে থাকল ফলে উম্মতে মোহাম্মদীর হাতে একদা পরাজিত শত্রুরা এবং আভ্যন্তরীণ শত্রুরা সক্রিয় হয়ে উঠলো। কয়েকশ’ বছর শান শওকতের সঙ্গে রাজত্ব করার পর এলো তাদের পতনের পালা। এই জাতির কর্মফল হিসেবে আল্লাহ এই জাতিকে ইউরোপিয়ান জাতিগুলির গোলামে পরিণত করে দিলেন এবং তাদের হাতে মর্মন্তুদ শাস্তি দিলেন।
চাপিয়ে দেওয়া হলো স্রষ্টাহীন ব্যবস্থা
এই ইউরোপীয় প্রভুরা প্রথমেই যে কাজটি কোরল তা হচ্ছে, তারা মুসলিম দুনিয়ায় বিকৃতভাবে হলেও ইসলামের যে আইন-কানুন, অর্থনীতি, দণ্ডবিধি অর্থাৎ জীবনব্যবস্থা চালু ছিল সেটাকে বাদ দিলো এবং নিজেদের ধর্মনিরপে¶ জীবনব্যবস্থা ও আত্মাহীন বস্তুবাদী সভ্যতা কার্যকরী কোরল। তাদের জীবনব্যবস্থাটি ছিল সম্পূর্ণরূপেই বস্তুবাদী, ভোগবাদী, সেখানে ধর্মের কোন অংশ ছিল না। যেহেতু মানব সভ্যতার সকল ন্যায়-নীতি, আদর্শ, নৈতিকতার শি¶ার একমাত্র উৎস হচ্ছে ধর্ম তথা স্রষ্টা আল্লাহ। যে জীবনব্যবস্থা স্রষ্টার শি¶াহীন তাতে কোন ন্যায় নীতি আদর্শের লেশ থাকবে না এটা তো জানা কথা। তাই কয়েক শতাব্দী ধরে ঔপনিবেশিক শাসনামলে এবং তৎপরবর্তী সময়ে এই ধর্মনিরপে¶ গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, একনায়কতন্ত্র, রাজতন্ত্র ইত্যাদি ব্যবস্থার চর্চার ফলে মুসলিম নামক জাতিটি হয়ে পড়েছে আত্মাহীন, নৈতিকতাহীন, অসৎ চরিত্রের অধিকারী। বিশেষ করে সবচেয়ে দুরবস্থা এই জাতির যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের। সমস্ত মুসলিম দুনিয়াকে ৫৭ টির বেশি ভৌগোলিক রাষ্ট্রে বিভক্ত করে ফেলা হলো। পশ্চিমা বস্তুবাদী, স্রষ্টাহীন সভ্যতা দুনিয়াকে উন্নত বিশ্ব, উন্নয়নশীল বিশ্ব ইত্যাদি ভাগে ভাগ কোরল। মুসলিম দুনিয়ার নেতারা বিশেষ করে আরব বিশ্বের নেতারা যে জঘন্য ও পাশবিক বিলাসিতায় জীবন অতিবাহিত করেন তা আমাদের মতো দরিদ্র মুসলিম দেশের মানুষ কল্পনাও করতে পারবে না। আর তৃতীয় বিশ্বের নেতাদের জন্য ষড়যন্ত্র, দাঙ্গা, মিথ্যাচার, রাষ্ট্রের সম্পদ লুণ্ঠন ইত্যাদি তো অতি সাধারণ ঘটনা। তারা সর্ব¶ণ তাদের একে অপরের বিরুদ্ধে বিবাদে এবং শত্রুতায় লিপ্ত, পরস্পরকে প্রকাশ্যে অশ্লীল ভাষায় আক্রমণ করতে তারা কসুর করেন না, মিথ্যা গল্প বানিয়ে সম্মানিত ব্যক্তিদের চরিত্র হনন করা তাদের একটি প্রিয় কাজ। আজকে যেভাবে সমস্ত মুসলিম বিশ্ব জঙ্গিবাদের করাল থাবায় আক্রান্ত, একটার পর একটা দেশ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, জাতি যেন কিছুই করতে পারছে না, এই সংকট সৃষ্টি হওয়ার পেছনে ত্রুটিপূর্ণ সিস্টেম, পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদ এবং স্বার্থান্বেষী ধর্মব্যবসা দায়ী। প্রশ্ন হলো তাদের এই দুঃশ্চরিত্রের কারণ কী?
মুসলিম বিশ্বের নেতৃত্ব কেন চরিত্রহীন
এর কারণ- মানুষ কাদামাটির ন্যায়। নরম কাদামাটিকে যে ছাঁচে বা ডাইসের ভিতরে রাখা হবে সেই মানুষ সেই ডাইসের আকৃতি লাভ করবে। ডাইসটি গোলাকার হলে সেটা মাটির গোলক তৈরি করবে, ডাইসটি যদি ইটের আকৃতি হয় তবে সেটার মাধ্যমে মাটি ইটের মত দৈর্ঘ্য প্রস্থ নিয়ে বের হবে। একইভাবে মানুষকে যে সিস্টেমের মধ্যে রাখা হবে মানুষের চরিত্রও তৈরি হবে সে মোতাবেক। আজ যে আমাদের নেতারা দুর্নীতিবাজ, ওয়াদাখেলাফকারী, মিথ্যাবাদী, স্বার্থপর, বৈদেশিক শক্তির তাবেদার এবং অশ্লীল খিস্তিকারী তার কারণ, তারা দুনিয়াতে চলমান সিস্টেমের উৎপাদিত ফসল। তাই তাদের মুখে অশ্লীল গালাগালিই মানানসই। দিন দিন আরও নিকৃষ্ট চরিত্রের মানুষ জাতির নেতৃত্বে আসবেন এবং তাদের চরিত্র জঘন্য থেকে জঘন্যতর হবে যদি না এই সিস্টেমের পরিবর্তন করা হয়। ১৪০০ বছর আগের আরবের অবস্থাকে বলা হতো আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগ বা অন্ধকার যুগ। সেই যুগে আল্লাহর রসুল সত্যদীন প্রতিষ্ঠা করলেন। এই নতুন সিস্টেম বা জীবনব্যবস্থা সেখানকার মানুষকে এমন উন্নত চরিত্র দান কোরল এবং সেই সমাজকে এমন নিরাপত্তা, ন্যায় ও সুবিচারে পূর্ণ করে দিলো যে স্বয়ং মহানবীসহ পরবর্তী খলিফা আবু বকর (রা:), ওমর (রা:) কয়েক দশক পর্যন্ত অর্ধ পৃথিবী শাসন করেছেন, তাদের কোন দেহর¶ীর প্রয়োজন পড়েনি। প¶ান্তরে বর্তমানে আমরা যে সিস্টেম মেনে চলছি তা এমন একটি সমাজ আমাদের উপরে চাপিয়ে দিয়েছে যে, জনগণ ও এদের নেতাদের মধ্যে ল¶ যোজনের ব্যবধান। প্রতিটি রাষ্ট্রে জনগণ তাদের নেতাদের প্রতি তীব্র ঘৃণা ও বিদ্বেষ পোষণ করে। ফলে নেতারা ভোগেন চরম নিরাপত্তাহীনতায়, তারা সাধারণ মানুষের মধ্যে চলাচল করার সাহস পান না। তারা বিপুল অর্থ ব্যয়ে দেহর¶ী রাখেন, রাষ্ট্রীয় অর্থ ব্যয়ে আলাদা জবমরসবহঃ তৈরি করেন তবুও নিরাপদ বোধ করতে পারেন না। কেন? কারণ এই সিস্টেম তাদেরকে করে দিয়েছে অর্থলোলুপ, তারা জনগণের অর্থ চুরি করে, স্বজনপ্রীতি করে দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে নিজের আখের গোছায়। দেশের অর্থে বিদেশে বাড়ি বানায়। নির্বাচনের সময় যতো ওয়াদা তারা করেছিল অধিকাংশই তারা পূরণ করেন না। ফলে জনগণও তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। এই সিস্টেম মানুষের মধ্য থেকে সর্ব প্রকারের ঐক্য, শৃঙ্খলা, ভালোবাসা, দয়ামায়া, ভক্তি, শ্রদ্ধা ইত্যাদি তুলে নিয়ে সেখানে অনৈক্য, সন্দেহ, বিশ্বাসভঙ্গ, হানাহানি, হিংসা, ঘৃণা, প্রতিশোধপরায়ণতা ইত্যাদি প্রতিস্থাপন করেছে। এই অশান্তির বিষবাষ্পে সারা পৃথিবীতে সৃষ্টি হয়ে আছে শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশ। পশ্চিমা সভ্যতার অন্ধানুকরণকারী এই চরিত্রহীন নেতৃত্ব মুসলিম জাতিকে ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। এখন আবার জাতির মধ্যে ভয়াবহ জঙ্গিবাদী তাণ্ডব শুরু হয়েছে।
চরিত্রবান নেতৃত্ব সৃষ্টির উপায়
এই অবস্থা থেকে জাতির মুক্তি পাওয়ার একটি মাত্র পথ আছে, তা হলো এই জাতিটির কাছে আল্লাহ প্রদত্ত যে নিখুঁত জীবনব্যবস্থা রয়েছে, সেই জীবনব্যবস্থার দিকে ফিরে যাওয়া- যে জীবনব্যবস্থা কার্যকরী করার ফলে চরিত্রে ও কর্মে এমন মানুষ তৈরি করে যারা সততা, ন্যায়-নিষ্ঠা, ওয়াদার¶া, দয়া-মায়া, ভদ্রতা, শিষ্ঠাচার প্রতিরূপ। এ যামানার এমাম জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী আল্লাহর অশেষ দয়ায় সেই প্রকৃত জীবনব্যবস্থাটির প্রকৃত রূপ মানবজাতির সামনে উপস্থাপন করেছেন। এখন মানুষকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা কি চায়।

 

সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...