হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

গল্প নয়, সত্যি- প্রত্যাবর্তন

মো’মেনজনের স্বরূপ তবে শোনো
ঠোঁটখানি তার তৃপ্তি সুখে হাসে,
মৃত্যু যবে আসে তাহার পাশে
ভয় ডর সে বোধ করে না কোনো।
                     -ইকবাল

ইয়ারমুকের যুদ্ধ। রোমক সৈন্য প্রচণ্ড বিক্রমে আক্রমণ চালাচ্ছে। মুসলিম সৈন্যবাহিনী টলমল। ইকরামা (রা.) মুসলমানদের এ বিপদ লক্ষ্য করলেন। ইসলামের নির্মম দুশমন আবু যেহেল, তারই পুত্র ইকরামা। ইকরামাও কম বিরোধী ছিলেন না। তিনি বদরের ময়দানে মুসলমানের বিরুদ্ধে অসি চালনা করেছেন, ওহুদের যুদ্ধে প্রাণপণ সংগ্রাম করেছেন, খন্দকের লড়াইয়ে বিরোধী দলের অন্যতম অগ্রণী ছিলেন, এমন কি মক্কা বিজয়ের দিনেও বাধা দিতে চেষ্ট করেছিলেন। সর্বোপরি ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধগুলোতে তিনি মুসলমানদের ক্ষতি সাধন করেছেন। পরবর্তীতে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন এবং ইসলামের জন্য নিজের জীবন বাজী রেখে লড়াই করেন। এখানে লক্ষণীয় বিষয়টি হল ইসলামের এতো ক্ষতিসাধনের পরও তাকে ক্ষমা করা হল এবং তিনি ইসলাম গ্রহণ করলে তাকে সবাই আপন করে নিল।
সেই ইকরামা আজ রোমক সৈন্যের বিরুদ্ধে লড়তে এসেছেন ইসলামের সম্মান রক্ষার জন্য। আজ তিনি সত্যের জন্য লড়বেন। যখন তিনি কাফির ছিলেন তখন তিনি তার বিশ্বাস নিয়ে মুসলমানদের বিরুদ্ধে লড়াই করেন। কিন্তু আজ তিনি মুসলিম হওয়ার পর তার সাহস দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে।
ইসলামের এই সঙ্কট মুহূর্তে ইকরামার মহত্ত্ব চরমভাবে বিকাশ লাভ করল। আবু ওবায়দা ও ইয়াজিদ (রা.) যখন যুদ্ধের ময়দান থেকে পিছু হটা শুরু করেন তখন ইকরামা (রা.) পিছু হটতে নারাজ। তিনি তার রেজিমেন্ট নিয়ে যুদ্ধের ময়দানে অবস্থান করেন এবং তাঁর সৈন্যদলকে ডেকে বললেন, “জীবন পণ করে যারা ইসলামের মর্যাদা রক্ষা করতে বদ্ধপরিকর তারা আমার সাথে অগ্রসর হও।” তখন সেই আক্রমণে ৪০০ সৈন্যের প্রায় সবাই শহীদ নয়তো গুরুতর আহত হয় এবং তারা প্রতিপক্ষের বহুগুণ ক্ষতি করতে সক্ষম হন এবং এর একটাই কারণ তারা মৃত্যুভয়হীন যোদ্ধা ছিলেন।
তার পর তারা আল্লাহু আকবর বলে তারা শত্র“র সৈন্য সাগরে ঝাঁপ দিয়ে পড়লেন লড়লেন শহীদ হলেন। ইকরামাও সমরশয্যা গ্রহণ করলেন। মহাবীর খালেদ তাঁর মুখে পানি দিতে দিতে জিজ্ঞাসা করলেন, “তবে, ভাই, সত্যিই চল্লে?” স্থির কণ্ঠে উত্তর এল, “সত্যই চল্লাম, কিন্তু ময়দানে রেখে গেলাম একজনকে।”
“কে সে একজন?”
“আজরাঈল। খলীফা উমরকে (রা.) বলো, আজরাঈলকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানতে পারবেন যে আমি বন্ধুভাবেই মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছি, শত্র“ ভেবে তাকে দেখে পালাই নি।” খালিদ (রা.) যুদ্ধের ঐ সঙ্কটময় দিনের মুসলমানদের সামর্থ্যরে সমস্ত কৃতিত্ব দেন ইকরামাকে। আর এই ইকরামাই হল খালিদ (রা.) এর প্রিয় ভাতিজা যিনি বহুদিন পর্যন্ত ছিলেন ইসলামের ঘোর শত্র“।
শিক্ষা: কেউ তার ভুল বুঝতে পারলে তাকে ক্ষমা করা উচিত কারণ হয়তো দেখা যাবে সেই শত্র“ লোকটিই একদিন তোমার চরম বিপদের সময় সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসবে।
-নজীর আহমদ চৌধুরী

লেখাটি শেয়ার করুন আপনার প্রিয়জনের সাথে

Email
Facebook
Twitter
Skype
WhatsApp
সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...