খণ্ড-বিখণ্ড জাতি দিয়ে সামষ্টিক লক্ষ্য অর্জিত হয় না বলে মন্তব্য করেছেন হেযবুত তওহীদের এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম। গত ২২ মে ২০১৮ মঙ্গলবার রাজধানীর ফার্মগেটের তেজগাঁও কলেজ মিলনায়তনে ঢাকা মহানগর উত্তর হেযবুত তওহীদের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এক ইফতার মাহফিলে মুখ্য আলোচকের বক্তব্যে বর্তমান মুসলিম জাতির দুর্দশার চিত্র তুলে ধরে তিনি একথা বলেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- হেযবুত তওহীদের সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ অনলাইন টেলিভিশন এসোসিয়েশনের সভাপতি ও জেটিভি অনলাইনের চেয়ারম্যান মো. মশিউর রহমান, হেযবুত তওহীদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা মহানগরীর সভাপতি মো. আলী হোসেন, হেযবুত তওহীদের প্রচার সম্পাদক এস এম সামসুল হুদা, সাহিত্য সম্পাদক রিয়াদুল হাসান, ঢাকা মহানগর উত্তর হেযবুত তওহীদের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান টিটু, তেজগাঁও থানা সভাপতি মো. আলহামদ।
মুখ্য আলোচক তার বক্তব্যে বলেন, একটি টিস্যু পেপার দিয়ে আপনি মুখমণ্ডলের ঘাম মুছতে পারবেন। কিন্তু যদি সেটাকে ছিড়তে ছিড়তে টুকরো টুকরো করে ফেলা হয় তাহলে ওই ছোট্ট ছোট্ট টুকরো দিয়ে আর ঘাম মুছতে পারবেন না। আমাদের মুসলিম জাতির অবস্থা হয়েছে তেমন। আমরা আজ বহু টুকরোয় বিভক্ত হয়ে আছি। কিন্তু প্রত্যেকে বলে আমিই সহিহ। তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, আরে ভাই, তুমি তো একটা টুকরো মাত্র। তোমাকে দিয়ে আমার জাতির লক্ষ্য অর্জন হবে না, যেই লক্ষ্যে আল্লাহর রসুল আবির্ভূত হয়েছিলেন।
হেযবুত তওহীদের এমাম বলেন, ‘আল্লাহর রসুল মারামারি কাটাকাটিতে লিপ্ত আইয়্যামে জাহেলিয়াতে নিমজ্জিত আরব জাতিকে কলেমা তওহীদের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন কেন? নিশ্চয়ই কোনো লক্ষ্য ছিল। সেই লক্ষ্যটা আমরা আজ ভুলে গেছি। আল্লাহর রসুল শুধু তাদেরকে ঐক্যবদ্ধই করেননি, শৃঙ্খলা শিখিয়েছেন, আনুগত্য শিখিয়েছেন। তারা আচার-ব্যবহার জানত না, পোশাক পরিচ্ছদের নিয়ম জানত না, পাক-পবিত্রতা বুঝত না। তাদেরকে একে একে আল্লাহর রসুল সমস্ত শৃঙ্খলা শেখালেন। তারা আনুগত্যশীল ছিল না। তাদেরকে আল্লাহর আনুগত্য, রসুলের আনুগত্য ও আমীরের আনুগত্য শেখালেন। তারপর শেখালেন যাবতীয় অন্যায় ও অসত্যকে বয়কট করতে অর্থাৎ হেজরত এবং চূড়ান্তভাবে শেখালেন সংগ্রাম।
তিনি আরও বলেন, ‘যেই মানুষগুলো একে অপরের বিরুদ্ধে রক্তারক্তি করত, এক গোত্র আরেক গোত্রের রক্ত ঝরাত, তারাই অন্যায় ও অসত্যের বিরুদ্ধে জীবন-সম্পদ উসৎসর্গকারী যোদ্ধায় পরিণত হলো, আল্লাহর রসুল তাদেরকে সেটা বানালেন। তারপর যখন তাঁর দায়িত্ব পূর্ণ করে আল্লাহর কাছে চলে গেলেন, যাবার আগে জাতিকে আবারও স্মরণ করিয়ে দিলেন সেই ঐক্য, শৃঙ্খলা, আনুগত্য, হেজরত ও জিহাদের কথা। বললেন, আমি তোমাদেরকে পাঁচটি কাজের দায়িত্ব অর্পণ করলাম- তোমরা ঐক্যবদ্ধ থাকবে, নেতার আদেশ শুনবে, পালন করবে, হেজরত করবে ও সংগ্রাম করবে। সাবধান! এ থেকে কেউ আধহাত সরে গেলেও তার গলা থেকে ইসলামের রজ্জু খুলে যাবে। সে নামাজ পড়লেও রোজা রাখলেও এবং নিজেকে মুসলমান বলে দাবি করলেও জাহান্নামের জ্বালানি পাথরে পরিণত হবে। কিন্তু আজ আমরা ঐ ঐক্য, শৃঙ্খলা ও আনুগত্যের বন্ধনী থেকে যোজন যোজন দূরে অবস্থান করছি।’
হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম বলেন, ‘যেই সমাজে আল্লাহর রসুলের জন্ম সেখানে দাসদেরকে গরু-ছাগলের মত হাটে বাজারে কেনাবেচা করা হত, মানুষ মানুষের প্রভু সেজে হুকুম দিত, শক্তিমানের কথাই সঠিক বিবেচিত হত, সেখানে নিপীড়িত, নির্যাতিত, শোষিত, বঞ্চিত ক্রীতদাসদের অধিকার ছিল না সমাজ নিয়ে কথা বলার, ধর্ম নিয়ে কথা বলার। প্রভুদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার সুতোয় বাঁধা থাকত তাদের জীবন। সেই নিপীড়িত মানুষকে মুক্তি এনে দিল ইসলাম। আল্লাহর রসুল তাঁর স্বীয় ক্রীতদাস যায়েদকে (রা.) মুক্ত করে পুত্র বলে ঘোষণা দিলেন, তাকে বাহিনীর সেনাপতি বানালেন, যায়েদের ইন্তেকালের পর তার সন্তানকেও বাহিনীর সেনাপতি বানালেন। মক্কা বিজয়ের পর যখন তিনি ক্বাবার কাছে গেলেন, মুক্ত ক্রীতদাস বেলাল (রা.) কে বললেন ক্বাবার উপর উঠে আজান দিতে। কোন ক্বাবা? যেই ক্বাবার দিকে ফিরে সমস্ত মানুষ সেজদা করে। আল্লাহর রসুল প্রমাণ করে দিলেন- আমি তোমাদের সম্পত্তি দখল করতে আসি নাই, আমি তোমাদের ধর্ম নষ্ট করতে আসি নাই, আমি বেলালের মতন নিপীড়িত নির্যাতিত নিষ্পেষিত মানুষকে মুক্ত করতে এসেছি। সেই মহান ইসলাম আজ হারিয়ে গেছে বলেই মানুষ ধর্মহীন নাস্তিকতার দিকে পা বাড়াচ্ছে। ধর্মান্ধরা তখন নাস্তিকদেরকে চাপাতি দিয়ে দমনের চেষ্টা করছে। এটা কোনো সমাধান নয়। পারলে সত্য দিয়ে জবাব দাও। তোমাদের কাছে সেই সত্য নেই বলেই তোমরা সন্ত্রাসের পথ বেছে নিচ্ছ। আমার আল্লাহ-রসুলের প্রকৃত ইসলাম কেমন ছিল, কত উদার ছিল, কত মানবিক ছিল- আমরা হেযবুত তওহীদ সেটা সর্বসম্মুখে তুলে ধরছি।
বর্তমানে ইসলামের গুরুত্বের ওলট-পালট হয়ে গেছে বলেও মন্তব্য করেন হেযবুত তওহীদের এমাম। তিনি বলেন, ‘আল্লাহ-রসুলের প্রকৃত ইসলামে গুরুত্বের এক নম্বরে ছিল তওহীদ। আমাদের গুরুত্বের এক নম্বরে দাঁড়িয়ে গেছে দাড়ি-টুপি। ওই ইসলামের দুই নম্বরে ছিল তওহীদ প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। প্রচলিত ইসলামে সেই সংগ্রাম বাদ দিয়ে আত্মার বিরুদ্ধে জিহাদকেই বড় জিহাদ হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে, যদিও এই আত্মার বিরুদ্ধে তেরোশ’ বছর ধরে জিহাদ করেও জাতির পরাজয়, গোলামী আর লাঞ্ছনাকে ঠেকিয়ে রাখা যায়নি।’
অনুষ্ঠানে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, সুধীজন ও সাধারণ মানুষের ব্যাপক সমাগম ঘটে। এসময় কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় হলরুম। সবশেষে বিশেষ মোনাজাত ও উপস্থিতদের মধ্যে ইফতার সামগ্রী বিতরণের মাধ্যমে অনুষ্ঠান সমাপ্ত হয়।