আপনারা নিশ্চয়ই বর্তমান বিশ্বপরিস্থিতি, আঞ্চলিক পরিস্থিতি এবং দেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি সম্পর্কে সজাগ ও সচেতন আছেন। চারদিকে দৃষ্টি মেলে দেখুন- অস্ত্র ব্যবসায়ী সাম্রাজ্যবাদী পরাশক্তিগুলো গত কয়েক শতাব্দী থেকে একে অন্যের উপর প্রাধান্য বিস্তারের প্রতিযোগিতায় মরিয়া হয়ে উঠেছে। অস্ত্রব্যবসার বাজার সৃষ্টিতে তারা কূটকৌশলের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করে দিচ্ছে। সামরিক শক্তিতে বলীয়ান দেশগুলো যুদ্ধংদেহী মনোভাব নিয়ে একে অপরের সাথে হুমকির ভাষায় কথা বলছে। বিশ্বপরিস্থিতি এখন এমন জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে, যে কোনো সময় যুদ্ধ-মহাযুদ্ধ লেগে যেতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে এবার যদি কোনো যুদ্ধ লাগে তাহলে প্রায় সমগ্র পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে; পৃথিবীর বুক থেকে মানুষ নামের এই প্রাণীটি প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। আর আঞ্চলিক পরাশক্তিগুলোও যার যার আধিপত্য ধরে রাখতে নিজেদের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করে যাচ্ছে। ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে গোলাগুলি, উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় এখন যেন এক সাধারণ ঘটনা। চীন-ভারত সীমান্তেও প্রায়শই অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। মিয়ানমারে আধিপত্য বিস্তারের নেশায় চীন ও ভারত তাদের জঘন্য হত্যাকাণ্ডের সমর্থন দিতেও কুণ্ঠিত হয়নি, যা আমরা সম্প্রতি প্রত্যক্ষ করেছি।
পাশ্চাত্য পরাশক্তিগুলো থেকে শুরু করে আঞ্চলিক শক্তিগুলোর আপাতঃ টার্গেট একটাই, আর সেটা হচ্ছে মুসলিম নিধন, মুসলিম বিতাড়ন। সমগ্র পৃথিবীতে নির্যাতিত হচ্ছে মুসলমান, উদ্বাস্তু হচ্ছে মুসলমান, দুর্ভিক্ষের কবলে পড়ে মারা যাচ্ছে মুসলমান, পানিতে ডুবে মরছে মুসলমান, বোমার আঘাতে লণ্ডভণ্ড হয়ে যাচ্ছে মুসলমানদের শহর, নগর, বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি। আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়া, লেবানন, লিবিয়া একটার পর একটা মুসলিম দেশ ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে মুসলমানদের। আর বিভিন্ন দেশে মুসলমানদের উপর যে অবর্ণনীয় নির্যাতনের ইতিহাস তা কারোরই অজানা নয়। ৭০ বছর থেকে চলছে ফিলিস্তিনি মুসলমানদের উপর অবর্ণনীয় নির্যাতন, কাশ্মিরের মুসলমানদের উপরও চলছে নির্যাতন, নিপীড়ন। কাশগড়, উইঘুর, জিংজিয়াং, বসনিয়া, চেচনিয়া, কাম্পুচিয়া এভাবে বলতে গেলে পৃথিবীর যেখানে যে যেভাবে পারছে মুসলমানদের উপর নির্যাতন চালাচ্ছে। আর সম্প্রতি ভয়ংকর গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গা মুসলমানরা আমাদেরই দেশে আশ্রয় নিয়েছে। এই হলো সারা পৃথিবীর মুসলমানদের বর্তমান করুণ অবস্থা। কিন্তু বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে পরাজিত, অপমানিত, লাঞ্ছিত জাতি হয়েও মুসলিম নামে পরিচিত এই জাতির অপমানবোধ নেই, তারা নির্বিকারভাবে খাচ্ছে-দাচ্ছে, চাকরি করছে, ব্যবসা-বাণিজ্য করছে, যেন কিছুই হয়নি, সব স্বাভাবিক আছে; ঐ পরাজয়, অপমান, লাঞ্ছনাই যেন তাদের জন্য স্বাভাবিক।
আমাদের দেশের অভ্যন্তরীণ অবস্থাও ভয়ানক। অনৈক্য, হানাহানি, সুদ, ঘুষ, দুর্নীতি, অর্থ-পাচার, অন্যায়, অবিচার, অশান্তি, ধর্ষণ, হত্যা, চুরি, ছিনতাই, গুম, মিথ্যা মামলা ইত্যাদি হাজারো সমস্যায় আজ জর্জরিত আমাদের সমাজ। বর্তমানে দেশে মহামারী আকার ধারণ করেছে অনৈক্য, বিভেদ, দলে দলে হানাহানি। ১৯৪৭-এ ব্রিটিশরা চলে যাওয়ার পর স্বাভাবিকভাবেই একটা জাতি হিসাবে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকার কথা ছিল, পুরো ভূখণ্ড জুড়ে ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেটা হয়নি। বরং অনৈক্য, হানাহানি আর শোষণ চলেছে অবিরাম। সেই শোষণের হাত থেকে বাঁচার জন্য, ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য এদেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে ৭১ এ যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে। দেশ স্বাধীনের পরও আমরা প্রিয় মাতৃভূমিতে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে পারিনি। গত ৪৭ বছরে আমরা একটি দিনের জন্যও জাতি হিসেবে ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারিনি।
মানুষ এখন ভেবে দিশেহারা! চিন্তাশীল মানুষ আজ উদ্বিগ্ন। যারা দেশ নিয়ে, সমাজ নিয়ে, কাল নিয়ে চিন্তা করেন, গবেষণা করেন তারা আজ পথ খুঁজে পাচ্ছেন না, কীভাবে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম টিকে থাকবে, কীভাবে এই প্রকৃতি টিকে থাকবে! এখন মানুষ কি নিজের চোখের সামনে এই সুন্দর ধরণী ধ্বংস হতে দিবে, নাকি এখান থেকে সে মুক্তির কোনো পথ খুঁজে পাবে?- এই প্রশ্নই সবার মনে।
আমরা বলছি এই যাবতীয় সমস্যার সমাধান মহান আল্লাহ হেযবুত তওহীদকে দান করেছেন, সেটা নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের যেহেতু একজন মহাপরাক্রমশালী স্রষ্টা আছেন যিনি এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি করেছেন, প্রতিনিয়ত যিনি আমাদের জন্য আলো, পানি, বাতাস সরবরাহ করে চলেছেন নিশ্চয় তিনি আমাদের মুক্তির জন্য, যাবতীয় সমস্যা থেকে পরিত্রাণের জন্য একটি পথও দিবেন, নিশ্চয় তিনি এমনি এমনি আমাদেরকে ছেড়ে দিবেন না। হ্যাঁ, তিনি একটি পথও আমাদেরকে দিয়েছেন। যুগে যুগে তিনি এই পথ পাঠিয়েছেন নবী-রসুলদের মাধ্যমে। এরই ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ নবী মোহাম্মদ (সা.) এর মাধ্যমে আমাদের মুক্তির পথ তিনি পাঠিয়েছেন। এই পথে আজ থেকে ১৪০০ বছর আগে যারা উঠেছিল তাদের জীবন থেকে, তাদের সমাজ থেকে যাবতীয় অন্যায়, অবিচার, অশান্তি, নিরাপত্তাহীনতা, দুঃখ, দারিদ্র্য সব চলে গিয়েছিল। তারা আসীন হয়েছিল পৃথিবীর শিক্ষকের আসনে। তাদের দায়িত্ব ছিল সমগ্র মানবজাতিকে এই পথে তুলে সমগ্র পৃথিবী থেকে যাবতীয় অন্যায়, অবিচার, অশান্তি দূর করে ন্যায়, সুবিচার, শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু তারা সেই দায়িত্ব তো ত্যাগ করলই উপরন্তু তারা রসুলাল্লাহর (সা.) দেখানো সেই পথ থেকে নিজেরাই সরে গেল। এক সময় এসে তারা ইউরোপীয় খ্রিষ্টান জাতিগুলোর গোলামে পরিণত হলো। তখন আল্লাহর হুকুম ছেড়ে পাশ্চাত্য প্রভুদের হুকুম, বিধান মেনে নিল। শুধুমাত্র ব্যক্তিগত জীবনে কিছু আমল করে তারা এখন জান্নাতের আশায় মগ্ন। কিন্তু পৃথিবীর কী অবস্থা, মানুষের কী দুর্গতি, এই মুসলিম জাতির কী দুর্দশা তা তারা একবার চোখ মেলেও দেখছে না। এখন সময় হয়েছে রসুলাল্লাহ (সা.) এর দেখানো সেই মুক্তির মন্ত্রটা আবার গ্রহণ করে মানবজাতিকে মুক্তি দেওয়ার। সেই মন্ত্র হচ্ছে- ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, মোহাম্মদুর রসুলুল্লাহ’ যার মর্মার্থ হলো- “আল্লাহ ছাড়া কোনো হুকুমদাতা নেই এবং মোহাম্মদ (সা.) তাঁর প্রেরিত রসুল”। আল্লাহর হুকুম মানে হলো যাবতীয় ন্যায়। মহান আল্লাহ যেহেতু সমগ্র মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছেন কাজেই তিনি সকল স্বার্থের উর্ধ্বে। তাঁর হুকুম, বিধান সমগ্র মানবজাতির স্বার্থ রক্ষা করবে, সমগ্র সৃষ্টির কল্যাণ করবে। অর্থাৎ সমগ্র মানবজাতির জন্য, সমগ্র সৃষ্টির জন্য যা কিছু অকল্যাণকর তথা অন্যায় তা আমরা পরিত্যাগ করব এবং যা কিছু কল্যাণকর তথা ন্যায় তা আমরা গ্রহণ করব- এই সিদ্ধান্তের উপর আজ মানবজাতিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
এর জন্য আমাদের হাতে বেশি সময় নেই, ইতোমধ্যে ১৬ হাজার এটম বোমা তৈরি করে রাখা হয়েছে, কেউ কেউ বলছে এর সংখ্যা আরও বেশি, ৪০ হাজার। অতি উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন পারমাণবিক বোমা, হাইড্রোজেন বোমা প্রস্তুত। মুসলিম নামক জাতিটির কাছে এমন শক্তি নেই যে তারা পরাশক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর বিরুদ্ধে কিছু করতে পারবে তাই তারা টার্গেট করে মুসলিম দেশগুলো একের পর এক ধ্বংস করে দিচ্ছে। সম্প্রতি রোহিঙ্গাদের উপর যে হত্যা, ধর্ষণ, ভিটামাটি থেকে উচ্ছেদ, সমস্ত সম্পত্তি লুট, আরও বিভিন্ন নির্যাতন চালানো হলো, দশ লক্ষ রোহিঙ্গাদের উদ্বাস্তু করে বিভিন্ন দেশে ঠেলে দেয়া হলো এটা আর কিছু নয়, মুসলিমদেরকে যে টার্গেট করা হয়েছে তারই ধারাবাহিকতামাত্র। সামনে আরো আছে। যেহেতু তারা ইসলামকে টার্গেট করেছে, মুসলিমদেরকে টার্গেট করেছে কাজেই বাংলাদেশও তাদের টার্গেটের বাইরে নয়। আমাদের মাতৃভূমি এই বাংলাদেশেও প্রায় ৯০ ভাগ মানুষ মুসলিম।
এখন প্রশ্ন হলো- আমাদের অর্থাৎ সাধারণ মানুষের করণীয় কী? ’৭১ সালের পরিস্থিতি আমাদের সামনে একটা বিরাট উদাহরণ। সমগ্র জাতি যখন সজাগ হয়েছে, রুখে দাঁড়িয়েছে, জীবন দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে তখনই এই জাতির মাটি রক্ষা পেয়েছে। সঙ্কটমুহূর্তে সাধারণ মানুষকে এগিয়ে আনার জন্য উদ্যোগী, সাহসী, নিঃস্বার্থ, দেশপ্রেমিক, মানবতাবাদী, সত্যিকারের ধার্মিক কিছু মানুষের প্রয়োজন হয়। বর্তমান পরিস্থিতির দিকে তাকালে এক্ষেত্রে সাধারণ মানুষকে হতাশই হতে হবে। কারণ সাধারণ মানুষকে জাতির স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য একটা আদর্শ লাগে। একটা সঠিক আদর্শের ভিত্তিতে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করার কাজে উদ্যোগ নিতে পারত আমাদের আলেম সমাজ। কিন্তু আমাদের আলেম সমাজকে জাতীয় বিষয় নিয়ে চিন্তা করতে দেখা যায় না, তারা মসজিদে, মাদ্রাসায় বসে কেবল নামাজ পড়িয়ে, ওয়াজ-মাহফিল করে, মিলাদ পড়িয়ে অর্থ উপার্জনে ব্যস্ত। তারা ইসলাম হিসাবে যেটা চর্চা করছে সেটার সাথে আল্লাহর রসুলের ইসলামের সামঞ্জস্য তো নেই-ই বরং তার ঠিক বিপরীত অবস্থাই পরিলক্ষিত হয়। আমরা দেখি রসুলাল্লাহর (সা.) ইসলাম ঐক্যহীন দাঙ্গা-হাঙ্গামায় লিপ্ত আরবের আইয়্যামে জাহেলিয়াতের অন্ধকারে নিমজ্জিত শিক্ষা-দীক্ষাহীন বর্বরতার চূড়ান্ত গহ্বরে নিমজ্জিত জাতিকে তুলে এনে সভ্য করলেন, ঐক্যবদ্ধ করলেন, ভাই-ভাই বানিয়ে দিলেন, সমৃদ্ধ করলেন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে দুর্বার এক যোদ্ধা জাতিতে পরিণত করলেন। অল্প সময়ের ব্যবধানে সেই ইসলাম অর্ধপৃথিবী আচ্ছন্ন করল। জ্ঞানে-বিজ্ঞানে, সামরিক শক্তিতে, নতুন নতুন বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তিতে, শিক্ষা-দীক্ষায়, মানবিক চরিত্রে, অর্থনীতিতে সমস্ত দিক দিয়ে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ জাতিতে পরিণত হলো সেই নবগঠিত মুসলিম জাতি। উম্মতে মোহাম্মদী হয়ে উঠল তৎকালীণ সমাজে অনুসরণীয় আদর্শ। সেই প্রকৃত ইসলাম, সেই নিখুঁত আদর্শটি এক রেনেসাঁর জন্ম দিয়েছিল। যে রেনেসাঁর ঢেউ পরবর্তীতে ইউরোপেও লেগেছে। অথচ আজকের আলেম সাহেবরা যে ইসলাম আমাদেরকে শিক্ষা দিচ্ছেন সেই বিকৃত ইসলাম আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ করার পরিবর্তে বহু মাজহাব, ফেরকা, দল-উপদলে বিভক্ত করছে, জাতীয় জীবনের চিন্তা বাদ দিয়ে চার দেয়ালের মধ্যে আবদ্ধ করছে। কাজেই এই সঙ্কটে তারা যে এগিয়ে আসবে না সেটা পরিষ্কার।
এরপর জাতীয় সঙ্কট মোকাবেলায় যাদের ভূমিকা সর্বাগ্রে থাকা উচিত তারা হচ্ছেন দেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। সাধারণ মানুষ তাদেরকে রাষ্ট্র পরিচালনার ভার দেয়, জাতির ভালো-মন্দ নিয়ে চিন্তা করার ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার দেয়। কাজেই তাদের উচিত নিজেদের স্বার্থচিন্তা বাদ দিয়ে জাতির স্বার্থে নিজেদের মেধা-মননকে কাজে লাগানো। কিন্তু এটা আজ সকলেরই জানা যে, বর্তমানে রাজনৈতিক দলগুলোর কোনো আদর্শই নেই। আজ তারা যা বলে কাল তার উপর থাকে না। স্বার্থের টানে আদর্শ বদলে যায়, বদলে যায় তাদের নীতি। তাদের কাছে কেবল নিজেদের স্বার্থই বড় হয়ে উঠে। বিগত বছরগুলোতে আমরা দেখেছি ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য, ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য, ক্ষমতা থেকে টেনে-হিচড়ে নামানোর জন্য রাজনৈতিক দলগুলো কেবল কামড়াকামড়িতে ব্যস্ত। এই কামড়াকামড়িতে জনগণের কী হাল হলো সেটা তারা বিবেচনাও করে না। প্রয়োজনে তারা সাধারণ মানুষকে মেরে হলেও, সাধারণ মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে হলেও তাদের স্বার্থ উদ্ধার করা চাই-ই চাই! যখনই নির্বাচনের সময় আসে তখনই শুরু হয় রাজনৈতিক সহিংসতা, প্রাণ হারায় সাধারণ মানুষ। অবরোধ, হরতাল, জ্বালাও-পোড়াও, পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ, ভাঙচুর ইত্যাদি করে জনগণের জীবন হুমকির মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়। অর্থাৎ তারা নিজেদের স্বার্থে সব করতে প্রস্তুত। কাজেই রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে এই সঙ্কট মোকাবেলা করার আশা করা যায় না। জাতীয় কোনো সঙ্কট মোকাবেলায় জনগণকে তারা ঐক্যবদ্ধ করতে পারবে এমন আশা তো দূরের কথা। বেশিরভাগ মানুষ এখন এই রাজনীতিকেই ঘৃণা করতে শুরু করেছে।
আজ বিভক্তিমূলক রাজনীতি, স্বার্থের রাজনীতির প্রভাবে জাতি এতভাবে খণ্ড-বিখণ্ড হয়েছে যে, বর্তমানে যেকোনো ধরনের সঙ্কট মোকাবেলা করা প্রায় অসম্ভব হয়ে গেছে। আজকের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকরা বিভক্ত রাজনৈতিক দলাদলিতে। স্কুল থেকে শুরু করে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত এই রাজনৈতিক বিভক্তির শিকার। ডাক্তাররা আজকে বিভক্ত বিভিন্ন দলের ব্যানারে, আইনজীবী এমনকি গণমাধ্যম কর্মীরাও এই বিভক্তির বেড়াজাল থেকে মুক্ত নন। ছাত্ররা তো কেবল বিভক্তই নয়, রীতিমত খুনোখুনিতে লিপ্ত। আমাদের দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পরিবেশ সৃষ্টি না করে বরং রাজনীতিকরা, শিল্পপতিরা নিজেদের সন্তানদেরকে বিদেশে পাঠান লেখা-পড়া করাতে এই অজুহাতে যে, দেশে ভাল লেখাপড়া হয় না, এখানে পরিবেশ ভাল না। এখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুরি মারামারি, বোমাবাজি, সন্ত্রাস ইত্যাদি চলে। আমাদের আলেমরা বিভক্ত, ইঞ্জিনিয়াররা বিভক্ত। পেশাজীবী, শ্রমজীবীরা বিভক্ত, এক কথায় সমগ্র জনগণ বিভক্ত। এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে বিভক্তি নেই। এটা জাতিকে বিনাশ করে দেওয়ার জন্য ধীর গতির এক মহাপরিকল্পনা। ষড়যন্ত্রের একটা অংশ। আমাদেরকে এই ষড়যন্ত্র থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
এখন আমরা হেযবুত তওহীদ উদ্যোগ নিয়েছি এই বাংলার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করার। যাবতীয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে, ন্যায়ের পক্ষে আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ হতে পারি তাহলে একদিকে যেমন আমরা দেশকে, জাতিকে আসন্ন সঙ্কট থেকে উদ্ধার করতে পারব তেমনি আল্লাহর ভাষায় আমরা মো’মেন হতে পারব। আর মো’মেন হতে পারলে আমাদের দুনিয়ার জীবনেও আল্লাহ সাহায্য করবেন এবং পরকালে দিবেন প্রতিশ্রুত জান্নাত।