মুস্তাফিজ শিহাব:
আল্লাহর রসুল এমন একটি সময়ে পৃথিবীতে আসলেন যখন আরবের অবস্থা ছিল চরম অস্থিতিশীল। চারদিকে অন্যায়, অশান্তি, রক্তপাত, যুদ্ধ বিগ্রহ। দারিদ্র্য ও গোলামীর বেড়াজালে বন্দী ছিল সমাজ। নারীদের কোন সম্মান ছিল না। যুগের নীতি ছিল ‘গরমযঃ রং জরমযঃ’ – ‘জোর যার মুল্লুক তার’। ইব্রাহীম (আ.) এর রেখে যাওয়া দীনে হানিফের বিকৃতির ফলে সমাজে ধর্ম ছিল শুধু উপাসনার আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ। সমাজ চলত গোত্রপতিদের কথা মতো। এ সময়ে আল্লাহর রসুলের আগমন ঘটে এবং তিনি এসে এ জাহেলিয়াত থেকে সমাজকে উদ্ধার করেন।
বর্তমান দুনিয়াটাও আবারও জাহেলিয়াতের অন্ধকারে নিমজ্জিত। একদিকে যান্ত্রিক প্রগতি অন্যদিকে মানবতার চরম বিপর্যয়, অন্যায় অশান্তি নিরাপত্তহীন, রক্তপাতে রঞ্জিত পৃথিবী। ন্যায় অন্যায় মিলে মিশে একাকার। পারমাণবিক অস্ত্রের হুমকির সামনে ন্যায় কথা বলার সাহস সকলেই হারিয়ে বসে আছে।
কালের এমনই একটি অন্ধকারময় পর্বে সত্যের আলোকবর্তিকা নিয়ে আবির্ভূত হয়েছিলেন শেষ নবী। তিনি সেই অন্ধকারকে দূর করেছিলেন কী দিয়ে? সেটা হচ্ছে একটি কথা- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ যার ভাবার্থ হচ্ছে, জীবনের সর্ব অঙ্গনে আল্লাহর দেওয়া মানদ-কে চূড়ান্ত মানদ- হিসাবে গ্রহণ করতে হবে, আল্লাহকে সার্বভৌম কর্তৃপক্ষ হিসাবে গ্রহণ করে নিতে হবে। সেই আরবরা যখন এই কথাটির মধ্যে একমত হলো, তখন আল্লাহর রসুল আল্লাহর বিধি-বিধানগুলো তাদের জীবনের বাস্তব অঙ্গনে প্রয়োগ করতে লাগলেন। যার পরিণতিতে অশান্তির মেঘ কেটে শান্তি প্রতিষ্ঠা হলো। মানুষের আস্থা ও বিশ্বাসের দৃঢ়তা বৃদ্ধি পেল।
আজ সেই ইসলামকে বলা হচ্ছে সন্ত্রাসীর ধর্ম। বলা হচ্ছে মুসলিমরা জঙ্গি, তারা অন্ধ, অসভ্য। কোনো সভ্য দেশে থাকার যোগ্যতা আমাদের নেই। আমাদের একটার পর একটা দেশ ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে। ইরাক, সিরিয়ার মতো সমৃদ্ধ জনপদ আজকে ধ্বংসস্তূপ। যে লিবিয়া ছিল আফ্রিকার মধ্যে সবচেয়ে উন্নত রাষ্ট্র, দাতাগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত সেই লিবিয়ার মানুষ চরম অরাজকতার মধ্যে এবং অপরের দানের আশায় বসে আছে। সাগরে সাগরে অনাহারী মুসলমানরা ভেসে বেড়াচ্ছে একটু আশ্রয়ের আশায়। কেবল নারীরা নয়, পুরুষরাও ইউরোপে গিয়ে দেহব্যবসায় লিপ্ত হতে বাধ্য হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের কীভাবে দেশ থেকে বিতাড়ন করা হলো, হত্যাযজ্ঞ চালানো হলে সে কথা সকলেরই জানা।
আমাদের দেশের নব্বই ভাগ জনগোষ্ঠী ধর্মপরিচয়ে মুসলিম। তাদের এই ধর্মবিশ্বাসকে হাইজ্যাক করে নানা গোষ্ঠী রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থোদ্ধার করছে, জাতিবিনাশী কর্মকা- ঘটাচ্ছে। এর ফলে আমাদের সমাজে ধর্মব্যবসা, ধর্মের নামে অপরাজনীতি, জঙ্গিবাদ ইত্যাদি হাজারো সমস্যা আগ্রাসী রূপ লাভ করেছে। আমরাও পরিণত হয়েছি পরাশক্তিধর সা¤্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রগুলোর টার্গেটে। আমাদের অবস্থাও মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকার ধ্বংসপ্রাপ্ত দেশগুলোর মতো হবে না, এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাদের মোকাবেলা করার মতো কোনো শক্তিই আমাদের নেই। এমন কি আমাদের অভ্যন্তরীণ অবস্থা ইরাক সিরিয়া লিবিয়ার থেকে আরো বেশি নাজুক।
তাই আমরা হেযবুত তওহীদ আন্দোলন বাংলার মানুষদের সচেতন করছি। আমরা বলছি, পারমাণবিক শক্তির চেয়ে বড় শক্তি ঐক্যের শক্তি। আর মহান আল্লাহ বলেছেন, মোমেনদের সঙ্গে তিনি অভিভাবক ও রক্ষাকারী হিসাবে থাকেন। আমাদেরকে রক্ষা পেতে হলে মহান আল্লাহর সাহায্য লাগবে। আমাদেরকে সর্বপ্রথম ঐক্যবদ্ধ হতে হবে আল্লাহর তওহীদের ভিত্তিতে। মুসলিমরা সকলেই মুখে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলে থাকেন। কিন্তু আমলের ক্ষেত্রে তারা হাজারো ফেরকা মাজহাবে বিভক্ত। এখন ঐ সব বিভক্তি ভুলে যে কথাটি সবার বিশ্বাস সেই লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ-কে ঐক্যসূত্র হিসাবে গ্রহণ করতে হবে। এই কথাটির তাৎপর্য পূর্বেও বলেছি- সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে এবং ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ হচ্ছে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর দাবি। এইখানে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলে মিলে এক জাতি হতে পারে কারণ মানুষ মাত্রই ন্যায়কে ন্যায় বলবে, অন্যায়কে অন্যায় বলবে এমন মানদ-ে আসার জন্য তাদের যার যার ধর্ম ও বিশ্বাস দ্বারা দায়বদ্ধ। আমরা জানি যে মাটি না থাকলে কিছুই থাকবে না, ধর্ম থাকবে না, জীবনও থাকবে না। সুতরাং যে যে বিশ্বাসই ধারণ করি না ন্যায়ের পক্ষে অন্যায়ের বিরুদ্ধে এখন সবাইকে দাঁড়াতে হবে। বিশেষ করে যারা মুসলিম বলে নিজেদেরকে দাবি করেন তাদের এখন সবচেয়ে বড় এবাদতই হচ্ছে দেশের এই সংকটকালে, মানবজাতির এই সংকটকালে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসা। কেননা মুসলিমদেরকে সৃষ্টিই করা হয়েছে জগতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করার জন্য, বসে বসে পরিস্থিতিকে মাথা পেতে গ্রহণ করার জন্য নয়। আমরা হেযবুত তওহীদ এই সত্যটিই ষোলো কোটি মানুষের সামনে তুলে ধরার জন্য প্রাণান্তকর সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের কোনো আর্থিক বা রাজনৈতিক স্বার্থ নেই, আমরা কেবল দেশটাকে বাঁচাতে চাই, মানুষকে রক্ষা করতে চাই, পৃথিবীতে শান্তি চাই। এটা যদি আমরা করতে পারি তাহলেই আমাদের জীবন সার্থক হবে এবং আমরা পরকালেও মুক্তি পাবো বলে আমরা বিশ্বাস করি।
[লেখক: সহকারী সাহিত্য সম্পাদক, হেযবুত তওহীদ]