“যেখানে পাবেন ধরবেন আর চামড়া তুলে ফেলবেন” – না, এটি কোনো বাংলা সিনেমার ডায়লগ নয়, কোনো রাজনৈতিক সন্ত্রাসীর হুঙ্কারও নয়। এটি এমন একজন ব্যক্তির বক্তব্য যিনি অগণিত মানুষের সামনে ওয়াজ মাহফিলে বসে ইসলামের বয়ান দেন; যিনি একটি সুফীবাদী ঘরানা চিশতিয়া সাবেরিয়া তরিকার উত্তরাধিকার; আর কেউ নন, তিনি বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের প্রখ্যাত চরমোনাই পীর আল্লামা ইসহাকের বংশধর, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমীর মুফতি ফয়জুল করিম। অবিশ্বাস্য মনে হলেও এ সন্ত্রাসী উক্তিটি তারই। হেযবুত তওহীদের সদস্যদেরকে যেখানে পাওয়া যাবে সেখানেই তাদের চামড়া তুলে ফেলার জন্য ভক্ত মুরিদানের প্রতি এভাবেই ফরমান জারি করেন শায়েখে চরমোনাই।
এ জাতীয় সন্ত্রাসী হুকুম, হুমকি, ফতোয়া ও সহিংস কর্মকাণ্ডের উস্কানি তিনি বেশ কয়েক বছর ধরেই হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে দিয়ে আসছেন। ফলে হেযবুত তওহীদের আইন মান্যকারী সদস্যরা যখন তওহীদের বাণী মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের দ্বারে দ্বারে যান, তখন এই পীরদের অনুসারীরা পীরের ফতোয়া বাস্তবায়নের জন্য তাদের উপরে চড়াও হন। তাদের উপর অকথ্য নির্যাতন করেন, তাদেরকে শারীরিকভাবে হামলা করেন, মারধর করেন, বহু জায়গায় তাদেরকে হত্যার উদ্দেশ্যে ইট দিয়ে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, হেযবুত তওহীদের কার্যক্রমে বাধা দেওয়ার জন্য, তাদেরকে এলাকা থেকে উৎখাত করে দেওয়ার জন্য এমন কোন অপতৎপরতা নেই যেটা তারা করেন না।
গত ২৮ বছর ধরে হেযবুত তওহীদের সদস্যদের উপর এই অত্যাচার-নিপীড়ন তারা চালিয়ে আসছে। এই যে একটি সত্যনিষ্ঠ আন্দোলনের উপর প্রতিনিয়ত তারা হিংস্র শ্বাপদের মত আক্রমণ করছে, আইন-আদালতকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তাদের কথা বলার নাগরিক ও সাংবিধানিক অধিকারকে পদদলিত করছে, তাদের পথকে কণ্টকাকীর্ণ করে তুলছে এটা নিয়ে তাদের মধ্যে বিন্দুমাত্র অপরাধবোধ নেই। বরং তারা এটাকে ‘বাতিল ফেরকার বিরুদ্ধে জেহাদ’ মনে করে, মানুষের ঈমান-আকিদা রক্ষার জন্য ঈমানী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে পীরের আদেশ বাস্তবায়ন করতে হেযবুত তওহীদের সদস্যদের উপর হামলা, আক্রমণ চালিয়ে আসছে।
কথা হচ্ছে, আমরা জানি যে, আমাদের বাংলাদেশে ইসলামের প্রসার ও প্রচারে অলি-আউলিয়া, সুফিসাধকদের বিরাট অবদান ছিল। শত শত বছর ধরে এই ভারতবর্ষে ওলি আউলিয়া, পীর-বুজুর্গ ব্যক্তিরা ভিন্ন ধর্মাবলম্বীরেকে ইসলামের দাওয়াত দিয়েছেন, তাদের শিক্ষা ও চরিত্র-মাধুর্য দেখে বহু মানুষ ইসলামের সৌন্দর্য উপলব্ধি করেছে, ইসলামে দাখিল হয়েছে। এ সকল সুফি-সাধকদের ঘটানো নানা কারামতের সত্য ঘটনাও অতিরঞ্জিত করে গাজাখুরি কেচ্ছা-কাহিনীতে পরিণত করা হয়েছে এবং সেগুলোও আমরা ওয়াজ মাহফিলে চিরকাল শুনে আসছি। সেসব কারামতের অলৌকিকত্বের উপরে বিশ্বাস করে বহু মানুষ তাদের মুরিদ হয়। তারা সেখানে গিয়ে জিকির আজকার করে একটা কিছু আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা লাভ করেন বলেই বিভিন্ন পীরের দরবারে বা মাজারে যান। তারা পীরের বা পীরের খলিফাদের হাতে বায়াত নেন এবং নিজেরা সেই তরিকা অনুসরণ করে আল্লাহর কুরবিয়াত অর্থাৎ সান্নিধ্য লাভের জন্য সাধনা করেন, রেয়াজত করেন, আধ্যাত্মিকতার চর্চা করেন। সেসব চর্চার মূল উদ্দেশ্যই থাকে কাম, ক্রোধ, অহঙ্কার, লোভ, মোহ, হিংসা ইত্যাদি ষড়রিপুর থেকে মুক্ত হয়ে আল্লাহর সঙ্গে একাত্ম হয়ে যাওয়া।
কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, আত্মিক পরিশুদ্ধির যারা প্রশিক্ষক অর্থাৎ পীর বা পীরের খলিফা, তারাই আজকে ষড়রিপুর দ্বারা চরমভাবে পরাজিত। তারা মানুষকে সদাচরণ ও আত্ম-নিয়ন্ত্রণের শিক্ষার পরিবর্তে ইস্যুভিত্তিক সন্ত্রাসী কর্মসূচিতে লিপ্ত হয়ে গেছেন। তারা নিজেদের অগণিত মুরিদদেরকে ভিন্নমতের মানুষের উপরে হামলা করার জন্য লেলিয়ে দিচ্ছেন। মুরিদদের ক্ষিপ্ত করে তোলার জন্য অপছন্দের গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মিথ্যাচার, অপপ্রচার করে, উস্কানিমূলক কথাবার্তা বলে বলে একটা হিংস্র, উগ্রবাদী, মারমুখী, দাঙ্গাবাদী মনোভাব তাদের মধ্যে সৃষ্টি করে দিচ্ছেন। মুরিদদেরকে চর দখলের লাঠিয়ালে পরিণত করে এই পীরগোষ্ঠী তাদের কায়েমী স্বার্থ হাসিল করছে। এই সংস্কৃতি দীর্ঘদিন থেকে বিভিন্ন আমলের সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসছে। ইতোমধ্যেই এ সুযোগসন্ধানী এ শ্রেণিটি সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে শক্তপোক্ত আসন গেঁড়ে বসে আছে। কিন্তু এটা এখন বন্ধ হতে হবে, কারণ ধর্মের নামে এই অরাজকতা জন-নিরাপত্তা, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য মারাত্মক ঝুঁকির কারণ।
আমাদের দেশে ইসলামী রাজনীতির ইতিহাস নতুন নয়। বিগত শতাব্দীর গোড়া থেকে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত আমাদের দেশে পাকিস্তান মুসলিম লীগ ইসলাম নিয়ে জোরদার রাজনীতি করেছে। ’৭১ সালে তারা ও তাদের সহযোগী ইসলামপন্থী দলবল মিলে বাংলাদেশে রাজাকার, আল বদর, আল শামস ইত্যাদি নামে হানাদারবাহিনীর লেজুড়বৃত্তি করেছে, গণহত্যা, গণধর্ষণের পক্ষে ফতোয়া দিয়েছে। এভাবে ইসলামের দোহাই দিয়ে যাবতীয় স্বার্থসিদ্ধি, লালসানিবৃত্তি ও অপকর্মকে জায়েজ বানিয়ে দেওয়ার এ সংস্কৃতি আমাদের রাজনীতিতে চলে আসছে মূলত পাকিস্তান আমল থেকে।
এ কাজটি আমাদের দেশে ব্যাপকভাবে করেছে জামায়াতে ইসলামী। তারা ইসলামকে সম্পূর্ণরূপে গণতন্ত্রের চুনকাম দিয়ে মানুষকে নিজেদের দলের দিকে আকৃষ্ট করেছে। সত্তরের সাধারণ নির্বাচনে চরমোনাই পীর সৈয়দ মোহাম্মদ ইসহাক এই জামায়াতে ইসলামির প্রার্থীর পক্ষে ভোট প্রার্থনা করেন। দেখা যাক তিনি কী ভাষায় ভোট প্রার্থনা করেন। সেই সময় একটি জাতীয় দৈনিক ‘জাহানে নও’-তে ‘আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষে চরমোনাই পীর সাহেবের আবেদন’ শিরোনামে এ বিষয়ে সংবাদও প্রকাশিত হয়। মওলানা ইসহাক মুসলিম জনগণ ও তার মুজাহিদগণের প্রতি আবেদনে বলেন- ‘ভোটের দ্বারাই পাকিস্তানে ইসলাম থাকবে, নচেৎ বিদায় নেবে। এ জন্যেই হাক্কানি আলেমরা এবার ভোটের জন্য জীবনপণ করেছেন। আপনারা নিজেদের মতো করে জীবনভর ভোট দিয়েছেন। এবার সুযোগ্য প্রার্থী মাওলানা আবদুর রহীমকে ভোট দিয়ে আল্লাহ ও রসুলকে খুশি করুন।’
শুধু তাই নয়, পীর সাহেব এ মর্মে সাবধান বাণী উচ্চারণ করেন যে, ‘এবার যদি নিঃস্বার্থ হাক্কানি আলেমদের ভোট না দেন, তবে এই পাকিস্তান, হিন্দুস্তান, কিংবা চীন-রাশিয়ায় পরিণত হবার আশঙ্কা রয়েছে।’ তিনি তার মুজাহিদদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘একেও ইসলামের একটি জেহাদ মনে করবেন এবং আমার ‘ভোট দিবেন কাহাকে’ নামের বইটি পড়ে আমল করবেন।’
পরবর্তীতে ১৯৭৯/৮০ সালের দিকে সংবিধান সংশোধন করে বহুদলীয় গণতন্ত্রের নামে আমাদের দেশে ইসলাম নিয়ে রাজনীতিকে বৈধতা প্রদান করা হল, তখন থেকে সাইনবোর্ডধারী দলগুলো নির্লজ্জভাবে ভোটের বিনিময়ে জান্নাত বিক্রি করতে মাঠে নেমে পড়ল। তারা তাদের ওয়াজ মাহফিলে, মসজিদের মিম্বরে দাঁড়িয়ে মানুষের কাছে ভোট চাওয়ার সময় বলতে লাগল, ভোট হচ্ছে জেহাদ, ব্যালট হচ্ছে জান্নাতের টিকিট। তাদের দলের মার্কায় ভোট দিলে ভোট পাবে আল্লাহ ও নবী। মুসলিম হলে তাদেরকেই ভোট দিতে হবে, নাহলে কাফের হয়ে যেতে হবে। এমনকি মুরিদদের প্রভাবিত করতে প্রার্থীর চেহারার সাথে আল্লাহর রসুলের (সা.) চেহারার মিল রয়েছে বলেও তারা জনগণের কাছ থেকে ভোট আদায় করার চেষ্টা করে থাকে। এইভাবে তারা ইসলামের মালিক বনে গিয়ে প্রতিপক্ষকে কাফের-মুশরিক বানিয়ে দিয়ে ভোটের যুদ্ধে মানুষের ধর্মীয় সেন্টিমেন্টকে কাজে লাগাল।
অন্যান্য সেক্যুলার দলগুলো রাজনৈতিক স্বার্থে যা যা করেছে ইসলামিক দলগুলোও সেই কাজগুলোই করেছে। সেক্যুলার দলগুলোর দ্বারা হরতাল ধর্মঘটের নামে জ্বালাও পোড়াও সন্ত্রাসের শিকার হয়েছে সাধারণ মানুষ, একইভাবে ইসলামিক দলগুলোর দ্বারাও সেটাই হয়েছে। পার্থক্য হচ্ছে সেক্যুলাররা তাদের অপকর্মে ধর্মের রং চড়ায় নি, এরা সেটা করেছে হেকমতের দোহাই দিয়ে। এর মাধ্যমে তারা ইসলামকে অসম্মানিত করেছে, আল্লাহ রসুলকে অপমান করেছে। আজকে তারা বলেছে, নারী নেতৃত্ব হারাম। কালকে বলেছে নারী নেতৃত্ব আরাম। দুইবারই তারা কোর’আনের বরাত দিয়েছে, রসুলের নাম বিক্রি করেছে। এমন অসংখ্য উদাহরণ দেওয়া যাবে।
মুসলমানদের ভোটকে নিজেদের বাক্সে পোরার জন্য এমন কোন অপকৌশল নেই যা তারা অবলম্বন করেননি। এমন কি তারা নিজেদের উত্তম মুসলিম বলে প্রতীয়মাণ করতে চেয়ে ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করে সংখ্যালঘু পল্লীতে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছেন। আজ এর বিরুদ্ধে, কাল ওর বিরুদ্ধে ইসলাম অবমাননার দায় আরোপ করে বহু মানুষকে নৃশংসভাবে রক্তের স্রোত বইয়ে দিয়েছেন। তারা মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে যথেচ্ছ ব্যবহার করেছেন। সমস্ত অপকর্মকে তারা জায়েজ করেছেন সাধারণ মানুষের ধর্মবিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে। অনেকে সেটাকে প্রত্যাখ্যান করলেও বহু মানুষ প্রতারিত হয়েছে, এখনও হচ্ছে।
বর্তমানে চরমোনাই পীরের অনুসারীরা আধ্যাত্মিক তরিকাপন্থী দল থেকে সম্পূর্ণরূপে একটি রাজনৈতিক দলে রূপান্তরিত হচ্ছে। কিন্তু তাদের ভোট ব্যাংক সেই ধর্মান্ধ মুসলমান, তাদের মুরিদরাই। তারা তাদের মুরিদদেরকে হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের হাতিয়ার হিসাবে কাজে লাগাতে আরম্ভ করেছে হেযবুত তওহীদের সূচনালগ্ন থেকেই। চরমোনাই পীর সৈয়দ ফজলুল করিম ১৯৮৭ সনে ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ১৯৯৮ সনে হেযবুত তওহীদের প্রতিষ্ঠাতা এমামুয্যামানকে কাফের ফতোয়া প্রদান করেন এবং হেযবুত তওহীদের বই নিষিদ্ধ করার দাবিতে সমাবেশ করেন। পরবর্তীতে তার অনুসারীরা বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় যেমন ঢাকার কেরানীগঞ্জে, লালবাগে, বরিশালে, নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় প্রচারকারীদেরকে বিনা উস্কানিতে আক্রমণ করেন, রংপুর-মাদারীপুরের অফিস ভাঙচুর করেন।
গত তিন-চার মাসের ভিতরেও হেযবুত তওহীদের উপরে প্রায় ৩০ টি আক্রমণ চালিয়েছে এই ধর্মব্যবসায়ী শ্রেণিটি। তার ভিতর ২৪ টি জায়গায় হামলা করেছে চরমোনাই এর চিহ্নিত নেতাকর্মীরা। তাদের হাতে হেযবুত তওহীদের সদস্যরা আহত হচ্ছেন, পঙ্গু হচ্ছেন। তাদের কারণে কোথাও কোথাও হেযবুত তওহীদ সদস্যদেরকে প্রাণ পর্যন্ত দিতে হচ্ছে। ২০১৬ সালে নোয়াখালীর সোনাইমুড়িতে হেযবুত তওহীদের মাননীয় এমামের মসজিদ নির্মাণে স্বেচ্ছাশ্রম দিতে আসা দুজন সদস্যকে নৃশংসভাবে জবাই করে হত্যা করা হয়। এই ধ্বংসযজ্ঞ ও হত্যাকাণ্ডের উস্কানি দিয়েছে চরমোনাই পীরের অনুসারী ইসলামী আন্দোলনের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। ঘটনার সময় তারা সোশ্যাল মিডিয়াতে ব্যাপকভাবে মানুষকে এই হত্যাযজ্ঞে যোগ দেয়ার জন্য আহ্বান করে।
সাধারণ মানুষ যেন হেযবুত তওহীদের আসল বক্তব্য জানতে না পারে সেজন্য চরমোনাই নেতাকর্মীরা হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে মানুষের কাছে জঘন্য সব মিথ্যাচার, অপপ্রচার চালিয়ে তাদেরকে এ আন্দোলনের বিষয়ে বিদ্বেষপ্রবণ করে তুলেছে। ওয়াজ মাহফিলে, মসজিদের মিম্বরে, সোশ্যাল মিডিয়ায়, পাবলিক প্লেসে তারা নিজেদের মনগড়া এমন এমন সব মিথ্যা কথা বলে দিচ্ছে যা হেযবুত তওহীদের কথা নয়, ঈমান ও আকিদাও নয়। যেমন: শায়েখে চরমোনাই ফয়জুল করিম তার একটি ওয়াজে বলেছেন, হেযবুত তওহীদের প্রতিষ্ঠাতা বায়াজীদ খান পন্নী নাকি নিজেকে ইমাম মাহদী দাবি করেছেন। নিজেকে নবী-রসুলের চেয়েও বড় মনে করেন। তিনি নাকি আসলে নিজেকে নবী দাবি করেছেন, তাঁর ওপর নাকি ওহী আসে।
এভাবে যদি তারা ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের সামনে একটি দলের নামে এ জাতীয় অপবাদ আরোপ করে তাহলে সেটা কি তাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করবে না? করাটাই স্বাভাবিক। কারণ মানুষ এই লেবাসধারী ধর্মের ধ্বজাধারী গোষ্ঠীকে সম্মান করে, বিশ্বাস করে। তাদের কথাকে আল্লাহ-রসুলের কথা মনে করে। এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে তারা হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে জনরোষ সৃষ্টি করছে, সদস্যদেরকে হত্যার জন্য লেলিয়ে দিচ্ছে। তারা এটাও জানে যে তাদের অনুসারীরা ধর্মান্ধ। তাই তারা কখনও যাচাই করে দেখবে না যে, হেযবুত তওহীদের প্রতিষ্ঠাতা আসলেই নিজেকে নবী বা মাহদি দাবি করেছেন কিনা! হুজুর যখন বলেছেন তখন কি আর মিথ্যা হতে পারে?
একটা প্রমাণ দিই। মাদারীপুরের একজন স্কুল শিক্ষক। তিনি অষ্টম শ্রেণির পরীক্ষার সৃজনশীল প্রশ্নের উদ্দীপকে লিখেছিলেন যে, হেযবুত তওহীদের এমাম মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী নবী দাবি করেছেন। সুকৌশলে একটি ডাহা মিথ্যাকথা কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মগজে ঢুকিয়ে দেওয়ার জন্য তিনি এই কাজটি করেছিলেন। তার বিরুদ্ধে যখন হেযবুত তওহীদ আইনী পদক্ষেপ নেয়, তখন সেই শিক্ষক এবং প্রশ্ন রচনার সঙ্গে জড়িত সকলেই ক্ষমা প্রার্থনা করেন। সেই শিক্ষক স্বীকার করেছেন যে, তিনি অনলাইনে কোনো বক্তার ওয়াজে এই মিথ্যা কথাটি শুনেছিলেন।
প্রশ্ন হচ্ছে, হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে চরমোনাইসহ এই ধর্মান্ধ ধর্মব্যবসায়ী গোষ্ঠীটি এত ক্ষিপ্ত কেন? কেন তারা হেযবুত তওহীদের মুখ বন্ধ করতে এত মরিয়া? এর মূল কারণ, যখন তারা দেখল হেযবুত তওহীদ প্রকৃত ইসলামের যে রূপ ইতিহাস ও কোর’আন হাদিসের আলোকে তুলে ধরছে সেটা যদি মানুষ জানতে পারে তাহলে তাহলে তাদের কায়েম করে রাখা ধর্মব্যবসা, পীর মুরিদি ব্যবসার প্রাসাদ ধুলায় মিশে যাবে। হেযবুত তওহীদের কারণে ধর্মব্যবসায়ী মোল্লা ও পীরদের নিশ্চিন্ত জীবন-জীবিকা, প্রভাব প্রতিপত্তি, মান-সম্মান, ভোগবিলাস, খাওয়া-দাওয়া, মুরিদানের দেওয়া গুরু-বকরি, ট্যাঙ্মুক্ত রোজগার, মসজিদ মাদ্রাসা দরবার শরিফের নামে দখল করা খাস জমি, অবৈধ জমি, পুকুর, মাঠ- ইত্যাদি বিষয় সম্পত্তির উপর যে আঘাত আসছে, সেটা ফেরাতেই তারা হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে এত ফতোয়ার বাণ নিক্ষেপ করে যাচ্ছেন। ইসলামের জন্য যে মায়াকান্না তারা কাঁদছেন তার পেছনে মূল কারণ হচ্ছে এটা। তারা বুঝতে পেরেছেন, হেযবুত তওহীদের বক্তব্য মানুষ একবার শুনে ফেললে তাদের পীর-মুরিদি ব্যবসা আর টিকবে না, ইসলামের নামে তাদের ধাপ্পাবাজের রাজনীতিও আর বেশিদিন চলবে না।
সাধারণ ধর্মবিশ্বাসী মানুষক জান্নাতের লোভ দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে কাড়িকাড়ি টাকা হাতিয়ে নেন এসব ধর্মব্যবসায়ী হুজুর, আলেম-ওলামা ও পীরবাবারা। মানুষ যখন জেনে যাচ্ছে যে, ধর্মের কাজ করে কোনো পার্থিব সম্পদ বা স্বার্থ হাসিল করা আল্লাহ হারাম করেছেন তখন তারা অনেকেই হুজুরদেরকে টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিচ্ছে। তাই হেযবুত তওহীদকে দমন করা, এর কণ্ঠ রোধ করাই তাদের একমাত্র লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ জন্য তারা যেখানেই হেযবুত তওহীদের প্রচার-প্রসার হতে দেখছেন সেখানেই এর সদস্যদের উপরে পাশবিক অত্যাচার, নির্যাতন, মারধোর, হামলা করছেন, প্রশাসনকে হুমকি দিয়ে ভয় দেখিয়ে এ আন্দোলনের অনুষ্ঠান বন্ধ করতে চেষ্টা করছেন। কিন্তু তাদের এই অপতৎপরতা হেযবুত তওহীদের কার্যক্রমকে আজ পর্যন্ত রুখতে পারে নি, আর কখনো রুখতে পারবেও না ইনশাল্লাহ। গত ১৪ জানুয়ারি এভাবেই তারা বরিশালের শিল্পকলা একাডেমিতে হেযবুত তওহীদের একটি কর্মীসভা পণ্ড করতে চেয়েছিল। শায়েখে চরমোনাই মুফতি ফয়জুল করিমের সরাসরি নির্দেশে এই বে-আইনী কাজটি করে চরমোনাই পীরে রাজনৈতিক দল। তাদের এই ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে হেযবুত তওহীদ ঠিক নির্ধারিত সময়ে পুরো বরিশাল শহরজুড়ে বিক্ষোভ মিছিল করে এর জবাব দিয়েছে। তারপর তারা ঝিনাইদহের কর্মীসভা বন্ধ করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। কিন্তু হেযবুত তওহীদের সদস্যরা কারো হামলা-নির্যাতনের পরোয়া করে না, ভয় পায় না। তারা অনুষ্ঠান সফল করেছে। তারা বিশ্বাস করে যুগে যুগে প্রত্যেক নবী-রসুল এবং তাঁদের অনুসারীদেরকে আল্লাহর সত্যদীন প্রতিষ্ঠার জন্য অনেক অত্যাচার, নির্যাতন, নিপীড়ন সহ্য করতে হয়েছে। যেহেতু হেযবুত তওহীদ সেই একই কাজ করতে দাঁড়িয়েছে তাই তাদেরকেও প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পড়তে হবে, এটা তো জানা কথা। তাই তারা সমস্ত নির্যাতন সহ্য করতে প্রস্তুত। এ কাজে যত বাধা-প্রতিবন্ধকতা আসবে তত হেযবুত তওহীদের সদস্যদের দৃঢ়তা, ঈমান ও কাজের গতি আরো বাড়বে। তারা আরো ত্যাগ স্বীকারের জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হবেন, তৈরি হবেন। সত্য ও মিথ্যার এ দ্বন্দ্ব চিরন্তন। জয় শেষ পর্যন্ত সত্যেরই হবে ইনশাল্লাহ।