আমরা আল্লাহর তওহীদ তথা আল্লাহর সার্বভৌমত্বের উপর ভিত্তি করা একটি মহান আদর্শকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছি। আদর্শ প্রতিষ্ঠার প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে সেটিকে মানুষের সামনে সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরাটা অতি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। সে সম্ভবপর সর্ব উপায়ে সে চেষ্টাটি করছি। আজকে বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ যখন পুরো মুসলিম বিশ্বটাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে আমরা তখন মাঠে ময়দানে কারো কোনো অর্থনৈতিক সহযোগিতা ছাড়াই নিজেদের অর্থ ব্যয় করে মানবতার কল্যাণে সংগ্রাম করে যাচ্ছি। সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমরা সোচ্চার। আমাদের আন্দোলনের শুরু থেকেই আমরা আমাদের মৌলিক নীতিমালার উপর অটল রয়েছি। নীতিমালাগুলো হচ্ছে-
(১) হেযবুত তওহীদ আল্লাহর রসুলের গৃহীত প্রতিটি পদক্ষেপকে অনুসরণ করতে চেষ্টা করবে।
(২) হেযবুত তওহীদের কোনোরূপ গোপন কার্যক্রম থাকবে না, সবকিছু হবে প্রকাশ্য, স্পষ্ট, দিনের আলোর মতো পরিষ্কার।
(৩) কেউ কোনো আইন ভঙ্গ করবে না, অবৈধ অস্ত্রের সংস্পর্শে যাবে না, গেলে তাকে এমাম নিজেই আইনের হাতে সোপর্দ করবেন।
(৪) শ্রেণি-পেশা, ধর্ম-বর্ণ, দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে যথাসম্ভব সঙ্গে নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করবে।
(৫) যারা হেযবুত তওহীদের সদস্য বা সমর্থক নয় তাদের কাছ থেকে আন্দোলন পরিচালনার কাজে কোনো অর্থ গ্রহণ করা হবে না।
(৬) হেযবুত তওহীদের কোনো সদস্য প্রচলিত স্বার্থভিত্তিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হতে পারবে না।
(৭) কর্মক্ষম কেউ বেকার থাকবে না, বৈধ উপায়ে উপার্জনের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করবে।
(৮) দীনের কাজ করে কেউ কোনোরূপ বিনিময় গ্রহণ করতে পারবে না, বিনিময় নিবে আল্লাহর কাছ থেকে। ইসলামের কাজ হবে সম্পূর্ণ নিঃস্বার্থভাবে, মানবতার কল্যাণে।
আমাদের আন্দোলনের ২৬ বছর চলছে। আমাদের বক্তব্য আজ পর্যন্ত কেউ ইসলামের মূল গ্রন্থ কোর’আনের নিরীখে ভুল প্রমাণ করতে পারে নি। তাই আমাদের মুখ বন্ধ করার জন্য আমাদের বিরুদ্ধবাদীরা আমাদের উপর মিথ্যা অপবাদ আরোপের পন্থা গ্রহণ করেছে গোড়া থেকেই। আমরা যা বলি নাই, যা করি নাই, যা আমাদের আকিদা নয় তা-ই আমাদের নামে জনগণের সামনে ওয়াজ করে, জুমার বক্তৃতায় বলে বেড়ানো হচ্ছে। মানুষ সেসব কথা যাচাই বাছাই না করেই বিশ্বাস করে নিচ্ছে। যারা ওয়াজ মাহফিলে মিথ্যা কথা বলেন তারা জানেন যে তাদের শ্রোতাদের বুদ্ধিমত্তা কোন স্তরের। তাই তারা অবাধে, নিশ্চিন্তে মিথ্যার ডালপালা বিস্তার করতে থাকেন। ওয়াজে কল্পকাহিনী, অতিরঞ্জিত কথা বলে বলে যারা অভ্যস্ত তারা হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধেও আজগুবি কথা বলতে চিন্তা করবে কেন?
তাদের অবিশ্রান্ত মিথ্যা প্রচারের ফলে বিগত দুই যুগে সারা দেশে আমাদের হাজার হাজার সদস্যকে অবর্ণনীয় সামাজিক ও প্রশাসনিক নির্যাতন নিপীড়নের সম্মুখীন হতে হয়েছে। শতাধিক বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে, শত শত ভাই বোন আহত-বিকলাঙ্গ হয়েছেন, চারজন ভাই বোনকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। কোনোরকম অন্যায় বা অবৈধ কাজ না করা সত্ত্বেও শত শত মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাদেরকে হয়রানি করা হয়েছে। দীর্ঘকাল বিনা দোষে কারাভোগ করার পর আমাদের সদস্যরা আদালতের রায়ে নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন। সকল আদালতের রায়ে একটা কথাই বারবার উচ্চারিত হয়েছে, হেযবুত তওহীদ জঙ্গি নয়, নিষিদ্ধ নয়, ইসলামের বিরুদ্ধে কোনো কথা তাদের বইপত্রে পাওয়া যায় নি, তারা কোনো বিদেশি গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পৃক্ত এমন প্রমাণ পাওয়া যায় নি, এমন কি তাদের সদস্যদের সামাজিক অন্যায়ে জড়িত থাকারও প্রমাণ পাওয়া যায় নি। দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ হেযবুত তওহীদের নৈতিক বিজয়ের সাক্ষী। দেশের সরকার থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ গোয়েন্দা সংস্থা পর্যন্ত দীর্ঘকাল ধরে আমাদেরকে পর্যবেক্ষণ করেছে। কাজেই হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে আজগুবি অপপ্রচার চালিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের কোনো সুযোগ আর নেই। আমাদের বইগুলো সারা দেশে ছড়িয়ে গেছে, প্রত্যেক জেলা উপজেলা কার্যালয়ে আমাদের বই রয়েছে, আমাদের হাজার হাজার ঘণ্টা ভিডিও বক্তব্য ফেসবুকে ইউটিউবে ছড়িয়ে আছে। তাই আমরা যা বলি নাই, আমরা যা করি নাই, যেটা আমাদের আকিদা নয়, যেটা আমাদের বিশ্বাস নয় সেটা আমাদের উপর চাপিয়ে দিয়ে দিয়ে জনগনকে বিভ্রান্ত করা গুরুতর অন্যায়। যার ন্যূনতম বিবেকবুদ্ধি আছে সে এই কাজ করতে পারে না।
শান্তিপূর্ণভাবে একটা আদর্শ প্রচার করার আমাদের সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার, ধর্মীয় অধিকার, মানবাধিকার। কিন্তু বার বার আমাদের এই অধিকারকে পদদলিত করা হয়েছে। দেশে আইনের শাসন আছে বলে একটা কথা সব সময় শুনেছি। কিন্তু আমরা আইনমান্যকারী নাগরিক ও বৈধ অরাজনৈতিক আন্দোলন হয়েও আমাদের উপর হওয়া নির্যাতনের কোনো প্রতিবিধান হতে দেখি নি, আমাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিলেও, জবাই করে চোখ তুলে ফেললেও এসব সুস্পষ্ট ফৌজদারী অপরাধে কাউকে সাজা পেতে দেখি নি। আইনের চোখ রাঙানি কেবল সংখ্যায় যারা কম তাদের জন্য বরাদ্দ থাকতে দেখেছি।
তাদের অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রের আরেকটি কৌশল হলো, হেযবুত তওহীদের খণ্ডিত বক্তব্য, আংশিক বক্তব্য তুলে এনে তার মনগড়া অপব্যাখ্যা করা। কোনো একটি লাইন যদি একটি সমগ্র বক্তব্য তুলে ধরতে পারতো তাহলে আর কেউ বই লিখত না, প্রবন্ধ লিখত না। লেখকের বক্তব্য বুঝতে হলে পুরো বই বা পুরোটা প্রবন্ধ পড়া আবশ্যক। কিন্তু যারা অপরকে বিভ্রান্ত করতে চায় তারা এই কৌশলটি নেয়। আমাদের কোনো একটা বইয়ের, বা পত্রিকায় প্রকাশিত কোনো একটি প্রবন্ধের গোটা বিষয়টাকে তুলে না ধরে মধ্যিখান থেকে একটা লাইন বা অর্ধেকটা লাইন তুলে এনে বাকিটা নিজেদের ব্যাখ্যা দ্বারা পূর্ণ করে নিজেদের মতো করে প্রচার করে দেয়। সঙ্গে লিখে দেয় অমুক বইয়ের অত পৃষ্ঠা। ব্যাস, ফেসবুুুুুুুকের যুগে কে আর কষ্ট করে বই সংগ্রহ করে যাচাই করতে যায়, তারা ধরেই নেয় যে বইয়ের রেফারেন্স যখন দিয়েছে তখন আছে নিশ্চয়ই। কপি পেস্ট চলতে থাকে। আমাদের ছবি ও ভিডিও বক্তব্যকেও এভাবে অপপ্রচারের সুবিধার্থে জোড়া তালি দিয়ে এডিটিং কারসাজি করে অনলাইনে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ এগুলো দেখে আমাদের বিষয়ে ভুল ধারণা করে বসে আছেন। যখন কোনোভাবে আমাদের সঠিক বক্তব্য তারা জানতে পারেন তখন তারা বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যান।
মানুষের কাছে আমাদেরকে হেয় করার জন্য অপপ্রচাকারীরা আমাদের সদস্য-সদস্যাদের ছবি জোড়াতালি দিয়ে চরিত্রহীনতার অপবাদ পর্যন্ত ছড়িয়ে দিচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে, যার কোনোটিই প্রমাণ করার সাধ্য তাদের নেই। গুজবপ্রিয় দেশের মানুষ প্রমাণ তালাশও করছে না। তারা মুখরোচক কিছু পেলেই সেটা নিয়ে চর্চা আরম্ভ করে দেয়। বাস্তবে নষ্ট চরিত্রের উদাহরণ, ধর্মীয় শিক্ষালয়ে উপাসনালয়ে ধর্ষণ বলাৎকারের মতো মহাপাপ ও অপরাধের ভুরি ভুরি উদাহরণ তারাই সৃষ্টি করেছেন। পক্ষান্তরে হেযবুত তওহীদে আজ পর্যন্ত ধর্ষণ দূরে থাক একটা ইভ টিজিং এর ঘটনাও ঘটেনি।
আমরা সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানাবো যারা এভাবে আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে তারা প্রতি পদে সাইবার ক্রাইম করছে, সংবিধান ও আইনবিরোধী কাজ করছে, দণ্ডনীয় অপরাধ করছে। আইন কেবল গুটিকয় ক্ষমতাবান ব্যক্তির জন্য নয়, আইন দেশের সকল নাগরিকের জন্য। একটি অন্যায়কেও যদি ছোট ভেবে অবজ্ঞা করা হয় তাহলে সেটা প্রশ্রয় পেয়ে একসময় এত বড় আকৃতি লাভ করে যে তাকে প্রতিহত করা আর সমাজের পক্ষে সম্ভব হয় না। আর হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে কোনো ছোট অপরাধ করা হয়নি, সাইবার ক্রাইম থেকে শুরু করে গণহত্যা পর্যন্ত সবাই করা হয়েছে। তাই হেযবুত তওহীদের উপর যারা এই অপরাধগুলো করেছে তাদেরকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হোক। আমরা বিশ্বাস করি, দেশে একটা আইনী ব্যবস্থা দাঁড়িয়ে আছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আছে, আদালত আছে। যদি সুষ্ঠুভাবে আইনী পদক্ষেপ নেওয়া হয় তবে তাদেরকে আইনের আওতায় অবশ্যই আনা যাবে।
আমরা চাই সাম্প্রদায়িকমুক্ত ধর্মান্ধতামুক্ত একটি পৃথিবী। আমরা চাই সন্ত্রাসমুক্ত একটা সুশীল সভ্য শিক্ষিত সমাজ। যেখানে জ্ঞানের চর্চা হবে যেখানে প্রযুক্তির বিকাশ ঘটবে, যেখানে অন্ধত্বের চর্চা হবে না। যেখানে আদম হাওয়ার সন্তান হিসাবে, এক জাতি হিসাবে, ভাই ভাই হিসাবে মানুষ মানুষের মত বসবাস করবে বসবাস করবে। আমরা চাই না ১৯৭১ সালে রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন হওয়া এই দেশ মধ্যযুগীয় বর্বরবতা ও অন্ধত্বের কাছে হেরে যাক। খ্রিষ্টীয় ধর্মের যাজকদের ধর্মান্ধতার প্রতাপের কাছে শত শত বছর ধরে হার মেনে থাকার পর বিদ্রোহ করেছিল ইউরোপ। তারা রেনেসাঁ ঘটিয়েছিল ধর্মের বিরুদ্ধে। তারা ধর্মহীন একটি পৃথিবী প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল। আমরা সেটা চাই না। আমরা চাই প্রকৃত ধর্মের রেনেসাঁ ঘটাতে, উজ্জীবন ঘটাতে, অভ্যূত্থান ঘটাতে। সেই প্রকৃত ধর্মের শিক্ষা ও দর্শন আমাদের কাছে রয়েছে যা দিয়ে সমস্ত পৃথিবীকে শান্তিতে পরিপূর্ণ করা সম্ভব। সরকার আমাদের এ বক্তব্য বিবেচনা করতে পারে, যাচাই করতে পারে।
জনগণের প্রতি আমাদের আহ্বান, আপনাদেরকে আল্লাহ বিবেক দিয়েছেন। আপনারা আমাদের বিষয়ে জানবেন, আমাদের বক্তব্য শুনবেন, দেখবেন। আমাদের কোনো ভুল থাকলে আমাদেরকে বলবেন আমরা সেটার সংশোধন করব। জনগণকে বিভ্রান্ত করে, তওহীদী জনতার বরাত দিয়ে একটি চিহ্নিত গোষ্ঠী ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করে যাচ্ছে। তারা সব সময় চায় উত্তেজনা সৃষ্টি করতে, জ্বালাও পোড়াও করতে, ভাঙচুর করতে। এগুলো করে তারা নিজেদেরকে ইসলামের অভিভাবক হিসাবে জারি রাখতে চায় এবং ধর্মের নাম ব্যবহার করে পার্থিব স্বার্থ লুটতে চায়। আমরা বিশ্বাস করি, জনগণ সচেতন হলে কেউ আর তাদের মাথায় আগের মতো কাঁঠাল ভেঙে খেতে পারবে না। দরকার শুধু সচেতনতা। হেযবুত তওহীদের বিষয়ে কেউ কোনো কথা শুনলে বিশ্বাস করার আগে, প্রচার করার আগে একবার যাচাই করে দেখবেন দয়া করে। আমরা আছি সর্বত্র, সবার কাছাকাছি।