সম্প্রতি পত্রিকায় এসেছে যে আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী ইরান যদি পারমাণবিক বোমা বানানোর সক্ষমতা অর্জন করে তবে সৌদি আরবও পিছিয়ে থাকবে না। মন্তব্যটি সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের। ২০১৫ সালে ছয় বিশ্ব শক্তির সাথে চুক্তির সূত্র ধরে পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত করে আনার ঘোষণা দিয়েছিল ইরান; যাকে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সফলতা হিসেবে দেখেছেন পর্যবেক্ষকরা। মধ্যপ্রাচ্যে একমাত্র ইসরাইলকেই পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশ হিসেবে দেখা হলেও এ বিষয়ে কখনই মুখ খোলেনি দেশটি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র্রসহ আরো যে সকল পশ্চিমা দেশ রয়েছে তাদের প্রত্যেকেরই সামরিক শক্তি বৃদ্ধিতে কোন বাঁধা নেই। তারা প্রতিনিয়ত তাদের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করে চলছে। মধ্যপ্রাচ্যে যে সকল মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ রয়েছে সে দেশগুলো থেকে ১৯৮৮ সাল থেকেই পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তাররোধ-বিরোধী চুক্তিতে সাক্ষর নিয়ে রাখা হয়। এর ফলে পূর্বে যারা পারমাণবিক প্রকল্প তৈরি করেছে শুধু তারাই পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করার বৈধতা পায় ও পরবর্তীতে কারো সামর্থ্য থাকলেও তাকে আর পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করার অনুমতি প্রদান করা হয় না।
পাশ্চাত্যের পরাশক্তিধর দেশগুলো তাদের ইচ্ছামত নিজেদের সামরিক শক্তিকে বৃদ্ধি করে চলছে কিন্তু দুর্বলতর দেশগুলোর উপর বিভিন্ন ধরনের আইন আরোপ করছে। মধ্যপ্রাচ্যের কথাই চিন্তা করা যাক। সৌদি আরব, ইরাক এরা কখনই পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে পারে নি কারণ পূর্বেই তাদের সাথে চুক্তি সাক্ষর করা হয়। ইরানের পারমাণবিক বোমা বানানোর ব্যবস্থা থাকলেও পাশ্চাত্যের চাপের ফলে তারা এতদিন এ বিষয়ে নিশ্চুপ ছিল কিন্তু বর্তমান সময়ে এসে তারা এ বিষয়ে চিন্ত-ভাবনা করছে। পারমাণবিক বোমা কিন্তু এরই মধ্যে ব্রিটেন, আমেরিকা, রাশিয়া পারমাণবিক শক্তিধর হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। তাদের হাত ধরে মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইলও পারমাণবিক শক্তি সঞ্চয় করেছে। তারা যতই সমান, সমঅধিকার ও পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমে পৃথিবী পরিচালনার কথা বলুক না কেন মূলত তারা ‘জোর যার মুল্লুক তার’ (Might is Right) এই নীতিতেই রয়েছে। জর্জ আরওয়েল বলেছিলেন, সব পশুই সমান, তবে কিছু কিছু পশু সমানের চাইতেও বেশি সমান। এ কথার সূত্র ধরে বলা যায়, পৃথিবীর সকল দেশ নীতিগতভাবে সমান হলেও পশ্চিমা পরাশক্তিধর দেশগুলো অন্যান্যদের তুলনাই বেশি সমান।
মুসলমানদের মধ্যে শিয়া ও সুন্নীর বিরোধ এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে যে মনে হতে পারে এ দুটো আলাদা ধর্ম। এই ফেরকাগত বিরোধিতার সূত্র ধরে শত শত বছর ধরে মধ্যপ্রাচ্যে জ্বলছে আগুন। এই সুযোগে পশ্চিমারা অস্ত্রব্যবসা করে নিচ্ছে যে যতটুকু পারছে। প্রতিপক্ষ ইরানের পরমাণু কর্মসূচির অসিলা ধরে সৌদি আরবও যদি পরমাণু কর্মসূচি নেয় তাহলে সেই যুদ্ধ আরো ভয়াবহ রূপ নেবে। আর এখানে পশ্চিমারা বরাবরের মতোই ইন্ধন যুগিয়ে যাবে।
পাকিস্তানকে অভ্যন্তরীণভাবে অস্থিতিশীল করে রেখেছে ভারত ও চীন। বাংলাদেশকে নিয়েও চলছে আঞ্চলিক ও পশ্চিমা ষড়যন্ত্র। রীতিমত পুরো বিশ্ব এখন মুসলমানদের বিরুদ্ধে এক হয়ে তাদেরকে ধ্বংস করার চেষ্টা করছে। মুসলমানরা এই কথা বুঝতেও পারছে না, উল্টো নিজেরাই নিজেদের সাথে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হচ্ছে আর নিজেদের প্রভুদের খুশি করে পশ্চিমা আগ্রাসনের হাত থেকে বেঁচে থাকতে চাচ্ছে। পশ্চিমা পরাশক্তিধর দেশগুলো সব সময়ই নিজেদের প্রভুত্ব অক্ষুন্ন রাখবে। এজন্য তারা তাদের সামরিক শক্তিকে ব্যবহার করবেই। কিছুদিন আগেই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন যে, “তার দেশ পৃথিবীতে না থাকলে পৃথিবী নামক গ্রহ থাকার প্রয়োজন নেই।”
আমাদের দেশ যদি সংকটাপন্ন হয় তখন কোনো পরাশক্তিধর রাষ্ট্রই আমাদের সঙ্গে থাকবে না, কারণ আমরা মুসলিমপ্রধান দেশ। আমাদের তাই এখন একটাই আশ্রয়- আমাদের মহান স্রষ্টা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। তিনি বলেছেন যে তিনি মোমেনদের ওয়ালি, অভিভাবক। তিনি মোমেনদের রক্ষাকর্তা। আমাদেরকে তাই এখন বাঁচতে হলে মোমেন হতে হবে। তাহলে আমাদের নেতা হবে একজন, সিদ্ধান্ত হবে একটি। আমরা হবো এক জাতি। আমদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হবে একটি। ঐক্যের চেয়ে বড় কোনো শক্তি নেই। একদিকে আল্লাহর অভিভাবকত্ব, আরেকদিকে আমাদের ঐক্যের শক্তি- এই দুটো মিলিয়ে আমরাই হবো একটি পরাশক্তিধর জাতি।
(লেখক- সহকারী সাহিত্য সম্পাদক, দৈনিক বজ্রশক্তি, ফেসবুক- facebook.com/glasnikmira13)