মোহাম্মদ ইয়ামিন খান:
১৯৭১ সালে সকল অন্যায়, অনাচার ও অবিচারের প্রতীক পাকিস্তানি বর্বর বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখ সমরে চূড়ান্ত বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল বাংলা মায়ের বীর সন্তানেরা। বাঙালির এই কাক্সিক্ষত বিজয় এমনি এমনি আসে নি। এর পেছনে যে জিনিসটি সবচেয়ে বেশি কাজ করেছিল তা হচ্ছে ঐক্য। আমরা জানি, সকল উন্নতি, সমৃদ্ধি এবং প্রগতির মূল হচ্ছে ঐক্য। ঐক্য ছাড়া কোনো অভিষ্ট, কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব নয়। জগতের চিরন্তন ও প্রাকৃতিক নিয়ম হচ্ছে ঐক্য অনৈক্যের ওপর বিজয় লাভ করবে। দশজন ঐক্যবদ্ধ লোক একশজন ঐক্যহীন লোকের সঙ্গে বিজয়ী হয়। এ চিরন্তন সত্যটি হাজার বছর আগেও সত্য ছিল, হাজার বছর পরেও সত্য হবে। আল্লাহ মো’মেনদের উদ্দেশে বলেছেন, “তোমরা শক্তভাবে আল্লাহর রজ্জুকে ধারণ করো, পর¯পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না।” (সুরা ইমরানঃ ১০৩)। আল্লাহ আরো বলেছেন, “আল্লাহ তাদেরকে কতোই ভালবাসেন যারা গলিত সীসা ঢালা প্রাচীরের ন্যায় সারিবদ্ধ হয়ে আল্লাহর রাস্তায় সংগ্রাম করে।” [সুরা ছফঃ ৪] ব্যক্তিগত ও ধর্মীয় মতভেদ আর রাজনৈতিক হানাহানি করে জাতির ঐক্য নষ্ট করাকে সরাসরি কুফর হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন আল্লাহর শেষ রাসুল (সাঃ) (হাদিস আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে বোখারী, মুসলিম)।
১৯৭০ সালে বাঙালি জাতি যখন ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল তখন গণতন্ত্রের রপ্তানিকারী পশ্চিমা পরাশক্তিগুলো পূর্ব বাংলার মানুষের গণতান্ত্রিক সিদ্ধান্তের পক্ষাবলম্বন না করে পশ্চিম পাকিস্তানের অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্তের প্রতি সমর্থন দিয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে রাজনীতিক ও অরাজনীতিক ধর্মব্যবসায়ী একটি গোষ্ঠী স্বাধীনতার বিরোধিতা এবং নিজ জাতির বিরুদ্ধে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর পক্ষে অস্ত্র ধারণ করেছিল; এমনকি ধর্মের নামে অসংখ্য নিরীহ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করেছিল। স্বাধীনতার বিগত ৪৬ বছরে একটি দিনের জন্য ঐক্যবদ্ধ থাকতে দেয় নি দুটি শ্রেণি; একটি হচ্ছে ধর্মব্যবসায়ী একটি গোষ্ঠী যারা ধর্মপ্রাণ মানুষের ঈমানি চেতনাকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন স্বার্থোদ্ধার, অরাজনীতি এবং জঙ্গিবাদের প্রসার ঘটিয়েছে আর আরেকটি শ্রেণি হচ্ছে পশ্চিমাদের মতবাদের উপর ভিত্তি করে তৈরি হওয়া বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী রাজনীতিক গোষ্ঠী যারা জাতির মধ্যে ধান্দাবাজি ও হানাহানির রাজনীতি চর্চা করে চলেছে সরকারি ও বিরোধী দলে বিভক্ত হয়ে। যার দরুন আজ আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশ, এই পবিত্র মাটিকে নিয়েও ষড়যন্ত্র চলছে। আজ সাম্রাজ্যবাদী অস্ত্রব্যবসায়ী পরাশক্তিগুলো জঙ্গিবাদী ইস্যু সৃষ্টি করে দিয়ে সিরিয়া, ইরাক, আফগানিস্তান, লিবিয়াসহ একটির পর একটি মুসলিম দেশগুলো ধ্বংসস্তুপে পরিণত, ল- ভ- করে দিয়েছে এবং মিয়ানমার থেকে ১০ লক্ষ রোহিঙ্গা মুসলিমদের জোর করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়া হলো। আজ পৃথিবীর সাড়ে ৬ কোটি লোক উদ্বাস্তু, যার অধিকাংশই মুসলিম। আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশ, এই পবিত্র মাটির উপর সাম্রাজ্যবাদীদের শ্যেনদৃষ্টি পড়েছে। তারা যদি এদেশকে জঙ্গিবাদী দেশ হিসেবে প্রমাণ করে দিতে পারে তাহলে সুযোগ পেলে দেশে জঙ্গি বিমান নিয়ে উড়ে আসবে; সেই সময়ে আমরা উদ্বাস্তু হবো। তাই এই আসন্ন সঙ্কট মোকাবেলায় আমরা ১৬ কোটি বাঙালি জাতি যদি সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, অপরাজনীতি ও ধর্মব্যবসাসহ যাবতীয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে সত্য, ন্যায় তথা আল্লাহর হুকুমের উপর সীসা গলানো প্রাচীরের ন্যায় ঐক্যবদ্ধ জাতি তথা প্রবল পরাশক্তি হতে পারি তখন পৃথিবীর কোনো শক্তি আমাদের দিকে চোখ রাঙিয়ে কথা বলতে পারবে না।